somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বার্কলে শহরের গল্প

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এ মাসের মাঝামাঝি গ্লোবাল ওয়াননেস প্রোজেক্ট এর একটা দিনব্যাপি অনুষ্ঠানে যোগদিতে উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার বিখ্যাত শহর বার্কলেতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিলো। অনুষ্ঠানটার ভেনু্ ছিলো ইউসি বার্কলের একটা অডিটোরিয়াম।

বার্কলের শহরের সাথে সাথে এর ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে (সংক্ষেপে, ইউসি বার্কলে) -এর সুনাম আমেরিকা জোড়া। অনুষ্ঠান শেষে আমি আমার সঙ্গীকে অনুরোধ করলাম আমাকে শহরের মূল রাস্তায় পৌছে দিতে যেখানে অনেক মানুষ দেখা যাবে। কিছুক্ষনের ভিতরে বার্কলের সরু সরু রাস্তা ঘুরে শহরের সবচেয়ে জমজমাট রাস্তা, টেলিগ্রাফে পৌছলাম। বিশাল এক বইয়ের দোকানের সামনে নেমে পড়লাম গাড়ি থেকে। পুরোদিন হাতে, উদ্দেশ্য বার্কলের হরেকরকম মানুষ দেখা, বইয়ের দোকানে সময় কাটানো, পুরো টেলিগ্রাফ ঘুরে আশে পাশে যতটা দেখা যায় হন্টন পদ্ধতিতে চক্কর দেওয়া। জমজমাট এলাকা। প্রচুর ইউসি বার্কলের ছেলে ছোকরারা, এবং টু্রিস্টরাই বেশি। বলে রাখা ভালো যে এই টেলিগ্রাফ এভিনিউ একসময়ে বার্কলের হিপ্পিদের আড্ডার এলাকা হিসেবে বিখ্যাত। এখনো টেলিগ্রাফে হাটলে সেই হিপ্পি ভাবটা চোখে পড়ে।

ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট এত বড়সড় যে এক শহর থেকে আরেক শহরের হাবভাব পুরো আলাদা। সান ফ্রান্সিসকোর খুব কাছের শহর বার্কলের একটা নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। আমেরিকার বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য সময়গুলোতে বার্কলে, বিশেষ করে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে (সংক্ষেপে, ইউসি বার্কলে) সবসময় বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে বার্কলের পরিচয় মূলত সংস্কৃতিমনা, উদার, যুদ্ধবিরোধী, নাগরিক অধিকার সচেতন শহর হিসেবে। বার্কলের অধিবাসীরাও আমেরিকার অন্যতম ইন্টেলকচুয়াল, সচেতন মানুষ হিসেবে বাইরে পরিচিত।

ইউসি বার্কলের প্রতি এতটাই সমীহ ছিলো যে ভয়ে এখানে এ্যাপ্লাই করি নি। এই শহরটার আবেদন অন্যরকম, ঘুরে ফিরে দেখে মনে হচ্ছিলো এখানে থাকতে পারলে মন্দ হতো না।

দুইদিন আগে বার্কলের রেসিডেন্সিয়াল এলাকা দেখে আমার উত্তর ভারতে ছিমছাম পাহাড়ী শহর মানালির কথা মনে পড়ে গ্যালো। বার্কলে ঠিক তত পাহাড়ি না হলেও টিলার মতো উচু নিচু পথ পাওয়া যায়, রাস্তার আসে পাশের বাড়িঘরগুলো ক্যামন পুরনো পুরনো। টেলিগ্রাফ এভিনিউ ফুটপাত জোড়া বিভিন্ন হকার একেবারে দেশীয় স্টাইলে ব্যাবসা করছে। কানের দুল থেকে শুরু করে রঙ চঙ্গা টিশার্ট আর দুনিয়ার ফালতু জিনিস। এমন দৃশ্য লস এ্যাঞ্জেলেসে দেখা বিরল। গুলিস্তানের স্মৃতি বুদবুদ।

এমনিতে লস এ্যাঞ্জেলেস খুব মাল্টিকালচারাল, কিন্তু বার্কলে এসে টের পেলাম এখানে তার স্বাদ আরো কড়া। প্রচুর এথনিক দোকান, দশ মিনিটের হাটায় মনে হয় ভিয়েতনামি থেকে শুরু করে তিব্বত, থাই, ভারতীয়, মেক্সিকান, চাইনীজ ... পৃথিবীর প্রায় সব ধরনের খাবারের রেস্তোরা চোখে পড়লো। খিদে চাঙ্গা হেতে এক উপমহাদেশীয় রেস্তোরায় একেবারে স্টার কাবাবের মেনু খুজে পেলাম। এইনা হলে বার্কলে।

টেলিগ্রাফ স্ট্রেটের এক প্রান্তে বিখ্যাত ইউসি বার্কলের ক্যাম্পাস শুরু। সব ইউসির আলাদা একটা বৈশিষ্ট্য থাকে। অনেক জায়গায় ইউসি লস এ্যাঞ্জেলেসের সাথে মিল পেলেও বার্কলের ক্যাম্পাস খুবই নিজস্ব। শহরের নিজস্ব ঐতিহ্য ক্যাম্পাসেও চোখে পড়ে। খুব খোলা মেলা একটা ক্যাম্পাস। পুরোটা দেখার আগেই পা টনটন, ঐদিকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধা হওয়ার আগেই ম্যাপ খুজে বাসার পথে পা বাড়াতে হবে।

তাই ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে ফুটপাতে স্টিকার বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করলাম ডাউনটাউন কোনদিকে। সোজাগিয়ে আট ব্লক পার হয়ে ডান দিকে গেলেই ডাউনটাউন। ডাউনটাউনে একটা চমৎকার বইয়ের দোকানে কিছুক্ষন আটকা পড়ে গেলাম। তুর্কি দোকানে কফি আর মিষ্টি খেতে যাওয়ার পথে ফুটপাতে এক গ্রীনপিসের স্বেচ্ছাসেবী সুন্দরী ক্রিস্টিন পথ আটকালো। বহুক্ষন লেকচার শুনিয়ে গ্রীনপিসের সদস্য বানিয়ে তবেই পথ ছাড়বে। আমিও ক্রিস্টিনকে গ্লোবাল ওয়াননেস প্রোজেক্টের খুটিনাটি জানিয়ে তুর্কি দোকানের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম। বড় পর্দায় সেখানে তুরস্কের দুই ফুটবল ক্লাবের খেলা চলছে।

গালাতাসারে আর কোনিয়া। ওয়েটারকে যখন হাকান সুকারের কথা জিজ্ঞেস করলাম ব্যাটার মুখ হা! অবাক আমেরিকায় যেখান সকার (ফুটবল) এত অজনপ্রিয় সেখানে ওদের প্রিয় খেলোয়ারের খবর আমি ক্যামনে জানলাম!

বার্কলের ডাউনটাউন খুব ব্যস্ত কিছু না। পুরো বার্কলেটাই একটু ঠান্ডা, চুপচাপ টাইপ, অন্তত লস এ্যাঞ্জেলেসের তুলনায় ঢের। লস এ্যাঞ্জেলেস যদি ঢাকা হয় তবে বার্কলে অনেকটা সিলেটের কোন মফস্বল শহর। বার্কলেতে নেমেই আমি আমার হোস্টকে বলেছিলাম এই শহরটাকে আমি ইতিমধ্যেই মিস করতে আরম্ভ করেছি। আসলেই তাই। বার্কলের তুলনা বার্কলেই।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ২:২৭
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

১. ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ২:৫১

সাজেদ বলেছেন: অনেক দিন পরে। নিয়মিত লেখার চেষ্টা কইরো।

২. ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৩:২৭

কাস্তের মত চাদঁ বলেছেন: খুব ভালো লাগল। আপনাকে নিয়ে রীতিমত গর্ববোধ করছি, এরকম ঢাকার একজনের কাছ থেকে বার্কলের গল্প শুনতে পেরে।



মাইন্ড না করলে জিজ্ঞেস করতে চাই আপনি এখন কোথায় আছেন? পিএইচডি করছেন?



ইউএসসিটা শুনেছি খুব ব্যয়বহুল, সত্যিই? এইড পাওয়া যায়? আর পাস করে চাকুরি? এলএতে কি খন্ড কালীন চাকুরী পাওয়া যায় (শুনেছি খুব খরুচে শহর)?



আমি আগামি ২০০৯ এর ফল সেমিষ্টার ধরার চেষ্টা করব। একটু তথ্যগুলো জানালে উপকৃত হব।

৩. ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৩:৩১

সমালোচনাকারী বলেছেন:



সাদিক ভাইর দেকা নাই অনেক দিন। দৌরের উপরেমনেলয়.......৩ বচরে ক্যালিফোরনিয়া ভারচিটি গুলি কেমতে যে পেইচডি দেয় বুঝি না.....সাদিক মিয়া তোমার কোরসটা দেকলাম.....ইন্টেগ্রেটেড কোরস.....পাসের লগে লগেই মোটা কামাইবা.....হিংসা হৈটাচে..

৪. ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৩:৩৩

শাওন বলেছেন: সারা যায়গা ঘুরে বেড়াচ্ছেন না ? খুব মজা হচ্ছে । আপনার বেড রুমটাও দেখলাম । ভালই লাগল তো । অনেকদিন দেখলাম তবে ব্লগে ।

৫. ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৩:৩৮

কাস্তের মত চাদঁ বলেছেন: আপনি কি করছেন তা জেনে গেছি ব্লগ পড়ে। পিএইচডি কয় বছর বাকি? আল্লাহ আপনাকে বড় পন্ডিত হওয়ার তওফিক দিন।

৬. ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ২:২৯

ফারহান দাউদ বলেছেন: অনেকদিন পর ফিরলেন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বামী-স্ত্রী'র সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপনে মরিয়া বিএনপি

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৩ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:১৪



আপনাদের আওয়ামী স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলগা মোমেনের সেই যুগান্তকারী বাণীর কথা মনে আছে? উহা বলেছিল, ভারত বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রী'র সম্পর্কের মতো। আবার বলেছিল, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নাকি রক্তের সম্পর্ক।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেনাপ্রধান ভয় পাননি, ভয় দেখিয়েছেন।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৩ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:২৯


ভাইয়েরা এখনই এত আনন্দিত হইও না। সাবধানে থেকো। তোমাদের নেতারা তাঁকে 'ভারতের দালাল'সহ এতকিছু বলার পরেও তিনি কুল আছেন, তোমাদের দাওয়াত করে খাওয়াচ্ছেন, এটা সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে কার্টেসি দায়িত্ব... ...বাকিটুকু পড়ুন

অন্তর্দাহ

লিখেছেন মুনতাসির রাসেল, ২৪ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১২:৫০


তোমার নীরবতা আজ মহাকালের মতোই ভারী,
তোমার চোখের গভীর অশ্রুধারা
আমার প্রতিটি শ্বাসে জীবন্ত এক অভিশাপ হয়ে জেগে থাকে।
তোমার হৃদয় ভাঙার শব্দ আমি শুনিনি,
তোমার ব্যথার সুর আমি বুঝিনি—
তোমার সেই বোবা যন্ত্রণাগুলো
আমার হৃদয়ের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসনাতের বয়ানে সেনাবাহিনীর প্রস্তাব নিয়ে উত্তপ্ত রাজনীতি, সেনা সদরের অস্বীকার

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৪ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১:০১

হাসনাতের বয়ানে সেনাবাহিনীর প্রস্তাব নিয়ে উত্তপ্ত রাজনীতি, সেনা সদরের অস্বীকার

ছবি: অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ সম্প্রতি দাবি করেছেন যে, সেনাবাহিনী আওয়ামী লীগের একটি 'সংশোধিত' অংশকে রাজনৈতিকভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তবু তো ফাল্গুন রাতে এ গানের বেদনাতে আঁখি তব ছলছলো....আমার দুঃখভোলা গানগুলিরে ......

লিখেছেন ইন্দ্রনীলা, ২৪ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫



মাঝে মাঝে আমার বুকের গহীনে এক ব্যথার নদী উথলে ওঠে। উথাল পাথাল ঢেউগুলো পাড়ে এসে আছড়ে পড়ে। উত্তাল বেগে ধেয়ে এসে ভেঙ্গে খান খান হয়ে পড়ে বুকের মাঝে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×