ভায়োলেন্স অথবা মানসিক অত্যাচার না করেও যে মেয়েদের পটানো যায় এই লেখাটির অন্যতম উদ্দেশ্য তা প্রমাণ করা । নিজেও একজন ভালো ছেলে ক্যাটাগরির লোক হবার কারনেই আমি ভালো ছেলেদের পক্ষে । তাই বলে ভালো ছেলেরাও যে মেয়েদের গায়ে হাত তোলে না তা কিন্তু নয় । টিপিকাল ভালো ছেলেরাও মাঝে মাঝে তার ইমোশনের সুস্থ প্রকাশ না করতে পেরে পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিপ্রকাশে ভায়োলেন্স বেছে নিতে পারে । আর আমার হিসাবে এমনটা হয়েছিল গত বছরের আলোচিত ঘটনা রুমানা মঞ্জুরের স্বামী সাইদের বেলায় । সাইকোলজির ভাষায় যাকে বলা হয় প্যাসিভ-এগ্রেসিভ। টিপিকাল ভালো ছেলে এবং বিশেষ করে ইন্ট্রোভার্ট ব্যাক্তিত্বের অধিকারী মানুষের বেলায়ও প্যাসিভ-এগ্রেসিভনেস দেখা যেতে পারে । সামনে এ ব্যপারে বিস্তারিত লিখবো । পপ-সাইকোলজিতে অতিরিক্ত ভালো ছেলেদের বলা হয়েছে মানসিক ভাবে দুর্বল । তাদের মধ্যে আশেপাশের মানুষ তথা সমাজ কি ভাবলো সে ব্যপারে বিশেষ ভয় কাজ করে আর এর ফলাফল হিসাবে তার মধ্যে পুরুষসুলভ লিডারশীপ গুণাগুনগুলো কমে যেতে থাকে । ভালো ছেলে হিসাবে তার নিজস্ব রেপূটেশন রক্ষা করতে গিয়ে এরা অন্যের উপকার করলেও সবথেকে বড় ক্ষতি করে বসে নিজের। ব্যক্তিগত জীবনে তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কিছুটা হতাশাগ্রস্ত হয়ে থাকে । তবে আমি এদেরকে টিপিকাল ভালো ছেলে বলে অভিহিত করবো ঠিক করেছি । আর স্যাডিস্ট ছেলেদের বলবো অসুস্থ্ । আমি মন থেকে বিশ্বাস করি যে এই লেখাটা পড়ে ভালো ছেলেরা মেয়েদের এই ইমোশনাল চাহিদাগুলো আরো ভালোমত বুঝতে শিখবে এবং সেইমত নিজস্ব সত্বা বিসর্জন না দিয়েও সেই চাহিদাগুলো মেটানোর কোন না কোন সুস্থ উপায় ঠিকই বের করে ফেলবে । আবারো বলছি, টিপিকাল ভালো ছেলেদের আত্মসম্মান বৃদ্ধি করাটাই আমার সবচাইতে বড় উদ্দেশ্য, জীবনের লক্ষ্য যার সুনির্দিষ্ট হবে তার জন্য প্রেম-ভালোবাসা সময়ের ব্যপার মাত্র । সাথে এরকম সম্পর্কের মাঝে আটকে থাকা কোন মেয়ের জন্য যদি লেখাটা কাজে লাগে তবে তাকে বোনাস হিসাবে ধরে নেব। যাই হোক, এবার আগানো যাক । আর একটা কথা না বললেই নয় (যেটা গত পর্বেই খোলাসা করা উচিত ছিল )– এখানে টিপিকাল কলেজপড়ুয়া থেকে জীবনকে এখনো ঠিকমত ফেস না করা মেয়েদেরকেই জেনারালাইজ করা হয়ে থাকলেও কম-বেশি ম্যাচিউরড মেয়েরাও এতে আটকা পরে থাকে যা একটু চোখকান খোলা রাখলেই দেখা যাবে।
৬। একটা মেয়ের ভয় – তাকে ফেলে প্রেমিকের চলে যাওয়ার ভয়
এমনিতে প্রেমিকাকে পাত্তা না দিলেও যখনই মেয়েরা অসুস্থ ছেলেগুলোকে ছেড়ে চলে যায় বা যাবার ভয় দেখায় তখনই এই ছেলেগুলো মেয়েদের পেছনে ছুটতে শুরু করে । মাঝে মাঝে অন্যায় শক্তি খাটিয়ে আবার মাঝে মাঝে ছোট্ট একটা ছেলের মতো কাঁদতে কাঁদতে তারা প্রেমিকাকে ফিরতে বাধ্য করে । প্রেমিকাকে ছাড়া তারা বাঁচবে না বলতেও কোন দ্বিধাবোধ করেনা । অসুস্থ ছেলেরা প্রেমিকাকে একরকম তাদের নিজস্ব সম্পত্তি বলেই ঘোষণা করে এবং আর কাউকে এর ধারে কাছেও ঘেষতে দেয় না, তারা প্রচন্ড পোসেসিভ হয় এবং প্রেমিকাকে আগলে রাখে । যেখানে ভালো ছেলেরা একটি মেয়ে চলে যেতে চাইলে তাকে চলে যেতে দেয় এবং নিজেকে এই বলে সান্তনা দেয় যে- “আমার মত ভালোবাসা তাকে আর কেউ দেবে না।’’ কেউ কেউ দেবদাস রুপ ধারণ করে আর কেউ বা ভালোবাসার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে । আর অসুস্থ ছেলেরা এ ব্যপারে আর কারোর তোয়াক্কা না করে তার প্রেমিকাকে ফিরে পাবার জন্যই লড়াই করে যায় । যুক্তিগতভাবে বিপদজনক হলেও এটাই মেয়েটার অবচেতন মনে তাকে ফেলে প্রেমিকের চলে যাওয়ার ভয়টিকে কিছুটা হলেও নিস্ক্রীয় করে দেয় । আর একই কারণে মেয়েটার সেই নাটকীয়তার চাহিদাও পুর্ণ হয় এবং ফলাফল হিসাবে সে ছেলেটির কাছে আপাতত ফিরতে বাধ্য হয় । এতে নাটকটাও পুর্ণদৈর্ঘ্য চলচিত্রে রুপ নিতে থাকে । আমার গবেষণা অনুযায়ী মেয়েরা বায়লজিকালি এরকম । চিন্তা করে দেখুন একটা প্রেমের আউটপূট হিসাবে যদি মেয়েদের মত আপনারো গর্ভধারণের মত কঠিন পরিস্থিতির স্বিকার হবার ভয় থাকতো তবে কি এই ভয় টা আপনি পেতেন না ? এক্ষেত্রে মেয়েরা অনেকটা বায়োলজিকালী প্রোগ্রামড । ডারউইন এর “সারভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট” থিউরি জানেন নিশ্চয়ই ? মনে রাখতে হবে যে, মানুষের প্রতিটা কাজের পিছে সবচাইতে বড় ভূমিকা টিকে থাকার চাহিদা থেকে তৈরি। এমনকি মডার্ন সাইকোলজির বড় কিছু থিউরির ব্যাকগ্রাউন্ড হলো এই “সারভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট” থিউরি । একটা শিশুকে একা একটা মেয়ের পক্ষে লালন-পালন সম্ভব নয় তাই অটোমেটিকালী তার মধ্যে এই ভয় টা কাজ করে । আর ব্যাড বয় এর পাগলাটে আচরণে এটাই মনে হয় যে সে তার সম্পত্তি কখনোই বর্জন করবেনা ।
“তুই আমার না তো আর কারো না” – টিপিকাল স্যাডিস্ট ব্যাড বয় ডায়লগ । লজিকালি ভয়ের ব্যপার অথচ মেয়েটার অবচেতনে এর প্রভাব সম্পূর্ণ আলাদা ।
[ সত্যি কথা বলতে গেলে, একটা পুরুষ মানুষ তার জীবনে ঘটে যাওয়া খারাপ থেকে খারাপ ঘটনা সামলে নেবার ক্ষমতা রাখে । আর প্রতিটা ঘটনা থেকে কিছু না কিছু শিখে নেবার ক্ষমতা আমাদের মজ্জাগত । একটা মেয়ে চলে যেতে চাইলে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আর কিছু বলার মানে হয়না বলেই আমার ব্যক্তিগত মতামত, তবে এটাকে ছেকা হিসাবে নিয়ে মেয়েদের ওপর থেকে বিশ্বাস না হারিয়ে নিজের চরিত্রের দুর্বলতাগুলোকে কিভাবে সারিয়ে তোলা যায় সেটাই ভালো ছেলেদের লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি । চেষ্টা করা উচিত মাঝে মাঝে ভালোবাসার কথা তাকে প্রচন্ড আবেগ নিয়ে বলার তবে লক্ষ্য রাখতে হবে প্রচন্ড আবেগের বশে মেয়েলি আচরণ করবেন না । সচেতন থাকতে হবে সবসময়, আর দেবদাসদের জন্য বলার কিছুই নেই, বায়োলজিকালী তারা আসলে দুর্বল জ্বিনের অধিকারী, এজন্য সেলফ-স্যাবোটাজ অথবা আত্মহননের মধ্যে দিয়ে তার দুর্বল জ্বিনটি হারিয়ে যাওয়া খুবই নেচারাল একটা প্রসেস ।
৭। সততা- পুরুষের কাছে মেয়েদের আরেকটি চাওয়া
মেয়েদের এই চাহিদাটা এই স্যাডিস্ট ছেলেগুলো খুব ভালোভাবে পূরণ করে সে যতবড় মিথ্যাবাদীই হোক না কেন । পুরো ব্যপারটা হয় সেই অবচেতন মনে । অবচেতন মনে আমাদের সবার বিশ্বাস এই যে, কেউ যদি সততার সাথে আমাদের ভুলগুলো সামনে তুলে ধরে তবে সে নিশ্চয়ই মানুষ হিসাবে সত । দূখজনক ব্যপার এটাই যে স্যাডিস্ট ছেলেগুলো যখন অকথ্য ভাষায় তার প্রেমিকাকে গালাগালি করে তখন মেয়েদের অবচেতন মনে তারা ধরে নেয় যে সে অনেস্ট , আর এই টাইপের ছেলেগুলো এধরণের কাজগুলো নিয়মিত করে যায় । ভালো ছেলেরা যেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেয়েদের না রাগানোর ভয়ে তাকে মিথ্যা কমপ্লিমেন্ট দিয়ে পটাতে চেষ্টা করে সেখানে স্যাডিস্টদের আচরণ থাকে সম্পূর্ণ উলটো । তবে ঘনিষ্ট মুহুর্তে সে ঠিকই কমপ্লিমেন্ট দিতে জানে । ভালো ছেলেরা যেখানে এ ব্যপারে পুরোই ওয়ান-ডাইমেনশনাল । যাই হোক, এসব স্যাডিস্টদের প্রেমিকারা ধরে নেয় যে এই ছেলেটা ভালো ছেলেদের থেকে বেশি সত এবং তার মন পরিস্কার ।
অলরেডি মেয়েটার মনে অনেস্ট হিসাবে জায়গা পাওয়ার পরে এই ছেলেগুলো যখন মেয়েটাকে প্রতিনিয়ত ছোট্ট করতে থাকে তখন এক পর্যায়ে মেয়েটাও সেগুলো বিশ্বাস করতে শুরু করে এবং নিজেকে প্রচন্ড হীন ভাবতে থাকে , নিজেকে তার ওয়ার্থলেস মনে হতে থাকে । আর স্যাডিস্ট ছেলেগুলো এই সূযোগের পুর্ণ সদ্ব্যবহার করে । এক পর্যায়ে মেয়েটার আত্ম-সম্মানবোধ এতটাই নিচু হয়ে যায় যে সে এই ধরে নেয় যে এই স্যাডিস্ট ছেলেটা তাকে ছেড়ে দিলে আর কেউ তার দিকে তাকাবেও না । এর প্রভাব এই মেয়েগুলোর জীবনে ততদিন থাকে যতদিন না একজন সত সাহসের পুরুষ মানুষ তার জীবনে আসে । দুঃখজনক ।
[ প্রেম মানেই যে সবকিছু সহ্য করতে হবে এমন নয় । কিছু ভালো না লাগলে তা সাথে সাথে জানাতে হবে । চিপ কমপ্লিমেণ্ট দিলেই হবে না, একটা মেয়েকে সত্য কথা বলাবার মতো অনেস্টিও ভালো ছেলেদের আয়ত্ব করতে হবে । যেই মেয়েটাকে পছন্দ তার ফেসবুকের ছবি তে সবাই তো কমপ্লিমেন্ট দিচ্ছে । আপনিও যদি তাই করেন তাহলে তো আপনাকে আলাদা করে দেখবার আর কিছু রইলো না। ব্যাড বয়রা তাদের অনুভুতি খুব সততার সাথে প্রকাশ করতে পারে যা তাদের দুজনের কানেকশন অনেক মজবুত করে। তবে খেয়াল রাখা উচিৎ - স্যাডিস্টিক সততা প্রদর্শন করবেন না যেন । ]
৮। সিকিউরিটি – বাইরের দুনিয়ার বিপদ থেকে রক্ষা
মানুষ মাত্রই সিকিউরিটির দিকে ধাবিত । কারণ সারভাইভাল হলো মানুষের জ্বিনগত চাহিদা । আর মেয়েরা শারীরিক ভাবে দুর্বল হবার কারণে তার সারভাইভালের চাহিদা থেকেই শক্তিশালী পুরুষের প্রতি আকর্ষণটাও তার বায়োলজিকাল প্রোগ্রামিং এর একটা কোড হিসাবে কাজ করে । সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যপার হলো স্যাডিস্ট-রা মেয়েদের এই চাহিদাটা পরোক্ষভাবে পূরণ করে ফেলে যখন সে তাকে মারধোর করে । মনে রাখবেন, একটা পুরুষ মানুষের লড়াই এবং রিস্ক নেবার ক্ষমতাকেই মেয়েরা অবচেতন মনে তার শক্তিমত্তা হিসাবে ইন্টারপ্রেট করে নেয় । বিশ্বাস না হলেও সত্যি যে এক্ষেত্রে তাকে তার প্রেমিকের শারীরিকভাবে নির্যাতন করাটাকেই সে তার শক্তির নিদর্শন বলে ধরে নেয় । এই ছেলেটা যদি তার প্রেমিকাকেই এভাবে মারতে পারে তবে নিশ্চয়ই তাদের জীবনে আসা বাইরের যে কোন বিপদকেও তার এই অ্যাগ্রেসিভ মনোভাব নিয়ে ফেস করবার ক্ষমতা আছে ছেলেটির – এটাই ধরে নেয় মেয়েটির মনের অবচেতন অংশ । আর এসব ক্ষেত্রে তৈরি হওয়া বেশিরভাগ ত্রিভুজ প্রেমের বেলায় ভালো ছেলেরা মেয়েদের শুধু কাউন্সিলিংটাই করে যায়, সত সাহস নিয়ে ঐ স্যাডিস্ট ছেলেটার সাথে সাধারণত মুখোমুখি হতে ভয় পায় ভালো ছেলেরা , সে শুধু লজিক দিয়ে মেয়েটাকে তার সাধ্যমত বোঝাতে চেষ্টা করে কেন তার প্রেমিককে ছেড়ে যাওয়া উচিত আর ভুলে যায় যে মেয়েরা লজিক না বরং আবেগ-নির্ভর । যদিও মেয়েটার সচেতন মন বলছে যে তার প্রেমিক তাকে গুরুতর জখম থেকে শুরু করে মেরেও ফেলতে পারে, তার আবেগ বলতে থাকে যে – দুজনের মধ্যে এই ছেলেটার ব্যক্তিত্ব বেশি ।
[ ভাল ছেলেদের এই একটা ব্যপারে অনেক কিছু শেখার আছে বলে আমি মনে করি । যদিও বর্তমান সমাজের শিক্ষা ব্যবস্থাই এমন যে এই জেনারেশনের ভালো ছেলেরা আস্তে আস্তে পড়ালেখায় হয়তবা ভালো করছে কিন্তু তাদের পুরুষসুলভ গূনাগুনগুলো হারিয়ে ফেলছে । শান্তি এবং ভালোবাসার গান গাইতে গিয়ে তার নিজস্ব শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতা এবং সাহস হারিয়ে ফেলছে তারা । আর যে কোন গেঞ্জাম থেকে সবসময় গা বাচিয়ে চলার বাজে ফলাফল পড়ছে সাব-কনশাস মাইন্ডের অদ্ভুত জগতে – ভিডিও গেমের জগত থেকে বেড়িয়ে বাস্তবে পদার্পণ করতে হবে, ব্যক্তিগত এবং কর্মক্ষেত্রে রিস্ক নেবার মত মানসিকতা তৈরি করতে হবে, পরাজয় থেকে শেখার জন্য মানসিক এবং শারীরিক ভাবে শক্ত হতে হবে এই যুগের টিপিকাল ভালো ছেলেদের ।]
১ম পর্ব - Click This Link
পরের পর্ব - Click This Link
আগামী পর্বে শেষ
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১৪ সকাল ১১:০৪