কোন শিরোনাম খুঁজে পাচ্ছিলাম না তাই দিয়ে দিলাম একটা।
সকাল ৫টার দিকেই উঠেছিলাম পহেলা বৈশাখে উঠেই পিসির সামনে আসলাম মেইল চেক করতে এসে দেখি নেট ডাউন, মেজাজটাই বিগড়ে গেল। তারপরে রেগে-মেগে আবার গেলাম বিছানায়। সকাল ৮টায় আমার বেস্ট ফ্রেন্ড বেলালের ফোনে ঘুম ভাঙ্গল উঠে চটপট দৌড় দিলাম ফ্রেন্ডের বাসায়, নাস্তা খাবার মত টাইম ছিলো না। তাই খিদে পেটেই বের হলাম...
গেলাম সেখান থেকে বঙ্গবাজার আরেকটা ফ্রেন্ডের বাসায়। ততক্ষনে আমরা ৮ জন হয়ে গেছি সংখ্যায়। সবার গায়েই একই কালারের ফতুয়া... প্রথমে ভাবছিলাম ভালো হবে এইটা একটা অন্যরকম মজা। পরে রাস্তায় নেমে দেখি যেই আমাদের পাশ দিয়ে যায় একবার হলেও আড়চোখে তাকায়। ইশ কি অবস্থা তখনই ইচ্ছে হচ্ছিলো বাসায় গিয়ে ড্রেস বদলে আসি। তবে শেষ পর্যন্ত আর ব্যাক করতে পারি নাই সবাই জোরাজুরি করল তাই সেই ফতুয়া পড়েই শুরু করতে হল আমাদের লম্বা ভ্রমণের প্রথম অংশ।
ততক্ষনে দেখলাম ঘড়ির কাঁটায় ৯টা বাজে তাই আর দেরী না করে নাস্তা করতে বসলাম ঢাকা ভার্সিটির হলের ভিতর। গরম গরম সিংগাড়া আর রোল দিয়ে জমজমাট নাস্তা হল। সবাই হলের ভিতর ছিমছাম পরিবেশে গল্প গুজব করলাম কিছুক্ষন পরে দেখলাম ভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীরা প্রোগ্রাম করছে, সেই উপলক্ষে খাওয়া দাওয়া প্রদান করা হচ্ছে। তখন সেখানে থাকাটা সুবিধাজনক মনে হল না তাই দ্রুত পায়ে বের হয়ে আসলাম।
সবচেয়ে বড় ভুল করেছি আমরা আগে থেকে ডিসিশন নেই নি কোথায় ঘুরতে যাবো? তাই সেইদিন সবার মতামত নিতে গিয়ে এমন গেঞ্জাম তৈরী হল যে তার কিছু অংশ তুলে ধরলেই আপনারা ভালো বুঝতে পারবেন...
বেলালঃ তাইলে এইবার ডিসিশন নাও কই যাইবা
আমিঃ প্রথম অপশন গুলশান ইয়ুথ ক্লাব- কনসার্ট হবে দ্বিতীয় অপশন ধানমন্ডি লেক নাহলে রমনার বটমূলে অথবা মিরপুরে বেড়িবাধ আর বসুন্ধরা সিটিতে তো অবশ্যই যাচ্ছি...
নাহিদঃ বটমূলে যাবো না পঁচা বাসি পান্তা খেয়ে কোন লাভ নাই। সারা বছর পান্তা খাই না আজকে লোক দেখানোর জন্য কোন দুঃখে পান্তা খাইতে যাব?
তারিকঃ নাহ বটমূলে আসলেই আব্বু আসব আমার, একটু পরেই সো কোন মতেই যাওয়া যাইবো না। আব্বুর সামনে থেইকা আমি ১০০ হাত দূরে থাকতে চাই।
জুয়েলঃ তোমরা যা কইবা তাই হবে। সুতরাং ডিসিশন যা নেয়ার তাড়াতাড়ি নাও
জাহিদঃ হ তুমি তো কোন কিছুরই আগে পিছে থাকবা না পরে আবার কোন ভুল হইলে চিল্লা চিল্লি ঠিকই করবা
জুয়েলঃ দরকার নাই আমার এইসবের মধ্যে থাকার আমি ঝামেলা মুক্ত মানুষ ঝামেলা মুক্তই থাকতে চাই
আমিঃ আরে অফ যাও কি লাগাইছ, বেলাল তুই কিছু বল কই যাওয়া যায় ?? তুই যা বলবি তাই হবে...
বেলালঃ এখন আমি একা আর কি বলব সবাই মিলে একটা ঠিক করুক আগে
আমিঃ বটমূলে মানুষের এইরকম ফালতু ভীড় চিন্তা কইরাই আমার যাওয়ার ইচ্ছা মইরা গেছে। তার মানে ঐটা বাদ... এখন কনসার্টে যাইবা কে কে তাই বল।
নাহিদঃ তোর কি মাথা খারাপ ? কনসার্ট ! হেহেহেহে
সবাই এক সপ্তাহ আগে থেকে টিকেট কিনা রাখছে আর আজকে তুমি গিয়া টিকেট চাইলেই তোমাকে দিবে? তাই না??
বেলালঃ হুম আসলেই তাইলে
তারিকঃ কনসার্ট বাদ ধানমন্ডি লেক চল ভালো হইবো অনেক জোড়া আসবে, জ্বালাতন করতে পারব tongue_smile
আমিঃ এটা একটা ভালো বুদ্ধি তবে আমি যাবো না ধানমন্ডি লেকে যাইতে যাইতে তেতো হয়ে গেছি সুতরাং তোমরা ঐখানে আজকে গেলে সত্যিই আমি বাসায় চলে যাবো
নাহিদঃ আচ্ছা ধানমন্ডি লেকে আজকে যাবো না তাহলে বাকি রইলো কি বেড়িবাধ
বেলালঃ জট্টিল হবে ক্রাউড থেকে অনেক দূরে থাকতে পারব
আমিঃ এইত চাই... আমি রাজী চল মিরপুর... নৌকা ভ্রমণ হবে পার্কে শান্তি মত হাওয়া খাইতে পারব...
নাহিদঃ হে হে হে... এখন পার্ক বন্ধ থাকবে বিকেলের আগে খোলে না পার্ক
আমিঃ ভাই তুমি কি সিওর? আমাদের শেষ অপশন টা এইভাবে বাতিল কইরো না ভেবে চিন্তে বল নইলে এইখান থেকেই আজকে বিদায় নিয়ে হবে... কি করা যায়? আমাদের প্ল্যান তো সন্ধ্যা পর্যন্ত একসাথে থাকা তাই না?? এতে তো কারও সমস্যা নাই, আছে কি??
সবাই একত্রেঃ না নাই
তারিকঃ আজকে রাত ৮টায় বাসায় গেলেও সমস্যা নাই
বেলালঃ তাহলে আগে বেড়িবাধ যাই দেখি কি অবস্থা পরে এসে বসুন্ধরায় বৈশাখী মেলায় যাবো নে, আর তারপরেও সময় পেলে শেরাটনে আরেকটা imaging fair হচ্ছে সেখানে যাবো
আমিঃ একমত! তাহলে যদি বন্ধ পাই বেড়িবাধ??
নাহিদঃ সেইটাই একটা সমস্যা আর এক কাঠফাটা রোদে বেড়িবাধ যাইয়া করবি টা কি?? আজিড়া ...
বেলালঃ এখন যেইখানেই যাও তোমার জন্য আলগা ছায়ার ব্যবস্থা কেউ করবে না রোদের মধ্যেই থাকতে হবে সুতরাং এইসব ফাও চিন্তা কইরা লাভ নাই...
আমিঃ কথা ঠিক আগে যাই বেড়িবাধ তারপরে দেখা যাবে
এরপরেও সবাই একেকটা যুক্তি দাঁড় করাতে লাগল কেউ যাবে কেউ যাবে না... মেজাজটা মারাত্নক খারাপ হয়ে গেল এক পর্যায়ে এইসব তর্কাতর্কি করেই আমরা ১ ঘন্টা যখন পার করলাম তখন বাধ্য হয়ে ফাইনাল ডিসিশন নিলাম আমি বেড়িবাধই যাবো এখন কেউ গেলে যাও না গেলে বাসায় গিয়া ঘুম দাও নইলে গান শুনো।
এরপরে কথা বার্তা না বাড়িয়ে রওনা দিলাম বাস-স্ট্যান্ডে এসে দাঁড়িয়ে আছি ১ ঘন্টা বাস যাচ্ছে না। সামনে হাটতে শুরু করলাম সমস্যা কি দেখার জন্য... মানুষ দেখে মাথা খারাপ হবার যোগাড় মানুষ সব রাস্তার দখল নিয়া রাখছে কেমনে কি বাস যাবে কি করে??? যাই হোক হেঁটে হেঁটে শাহবাগ পর্যন্ত যাওয়া ছাড়া উপায় নাই। অনেক আগ্রহ নিয়া শাহবাগের উদ্দেশ্য সেই প্রচন্ড গরমে হাঁটতে লাগলাম। হাঁটার সময় অবশ্য ভালোই মজা করেছি একটা ছোট খাট মিছিলের মত তৈরী করে ফেলেছিলাম... হাহাহাহ
যাই হোক শাহবাগ গিয়ে দেখি সেইম কেইস... কোন যানবাহন চলাচল করছে না... তাই চিন্তা করলাম এখন আর বেড়িবাধ যেয়ে লাভ নাই যেহেতু যাবার মত কোন যানবাহন পাচ্ছি না... হাটতে শুরু করলাম পাগলের মত শাহবাগ ধরে সোজা মাথায় পুরোদমা আগুন জ্বলছে... মেজাজ অষ্টমে চড়ে আছে... এক বোতল ঠান্ডা পানি কিনে সবাই মিলে ঢক ঢক করে গিলে আবার শুরু করলাম হণ্টন। কোথায় গিয়ে শেষ হবে জানি না। পরে একটু চিন্তা করে দেখলাম সামনেই বসুন্ধরা ওদিকে লাঞ্চের টাইম ও হয়ে আসছে এক দৌড়ে সেই চেনা পরিচিন ১১ তলায় গিয়ে দুপুরের খাওয়াটা খেয়ে আসলে খারাপ হয় না। এই ফাঁকে এই বিরক্তিকর গরম থেকেও মুক্তি পাবো। সবাইকে বলতেই এইবার এক কথায় রাজী হয়ে গেল। দ্রুত পায়ে গন্তব্য স্থির হওয়াতে পৌঁছে গেলাম বসুন্ধরার ফুড কোর্টে... শান্তি মত গরম খিচুড়ি দিয়ে দুপুরের খাওয়া সেরে নিলাম ততক্ষনে খেয়ালই করি নাই ঘড়িতে ২টা বাজে... কিছুক্ষন বৈশাখী মেলায় ঘুর ঘুর করলাম দেখি সব মেয়েদের জিনিস দিয়া ভরা ধুরু বোরিং। তারপরে নামলাম আমার প্রিয় ডিভিডি ফ্লোরে... ঘুরে ঘুরে নতুন সব মুভি গুলা দেখে নিলাম এক নজর... এইভাবেই পার করে দিলাম আরও দেড় ঘন্টা... এইবার ভাবলাম সময় হয়ে এসেছে বেড়িবাধে যাবার। ও হ্যা সুখবর কাওরান বাজারের মোড়ে প্রথমবারের মত যানবাহনের দেখা পেলাম... কি যে শান্তি পেলাম দেখে... বসুন্ধরা থেকে সোজা নেমে চড়ে বসলাম বাসে সোজা ঢাকা কমার্স কলেজ (তারিক আর নাহিদ যেখানে পড়ে)।
সেখানে গিয়ে সবার চোখে মুখেই একটা উত্তেজনা লক্ষ করলাম...তাই দেরী না করেই রিকশা ঠিক করার জন্য ঘুরতে লাগলাম অনেক কষ্টে ডাবল ভাড়ায় রিকশা পেলাম ২খান। সোজা বেড়িবাধের সামনে নামলাম আমি বেলাল আর সালেহ(সবচেয়ে চুপচাপ)। নেমে বাদাম-বুট চিবুতে লাগলাম...
এখন থেকেই মূলত আমাদের মজা শুরু হল। খোলা পরিবেশে সবার মুড ভালো হয়ে সময়ই লাগলো না... সবাই শুরু করলাম চিরাচরিত ফাইযলামি খুঁচা-খুঁচি। কিছু স্ন্যাক্স নিয়ে উঠলাম নৌকায়, ঘন্টায় গুনতে হল ৩০০টাকা। অন্যসময় ঘুরি সাধারণত ৮০-১০০ টাকায় সেদিন যে কেন এত নিল বুঝলাম না... যাই হোক নৌকায় উঠার পরবর্তি ৩/৪ ঘন্টার বর্ণনা দেয়া অনেক কষ্টকর। এত ফাযিল পোলাপাইন... নৌকা থামায়া একটা খালী জায়গায় উঠলো কেউ নাই যেদিকে চোখ যায় শুধু ধান ক্ষেত আর ক্ষেত... সবুজে সবুজে নেশা লেগে যাবার মত অবস্থা... সেইখানে শুরু হল ৭ জনের চরম পাগলামি...... এইদিকে মাঝির চিল্লাচিল্লি ভাই ২ ঘন্টা হয়া গেল যাইবেন না সন্ধ্যা হয়ে আসবো তো...তখন একটু হুঁশ হইলো আরে আজব আমাদের তো বাসায় ফিরা লাগবে আসলেই... এত পাগল হইলে কেমনে চলবে?? আসলে গ্রামে যায় না কেউ... তাই একটু খোলা মেলা দেখলেই আমাদের অনেক ভালো লাগে। বিশেষ করে আমার... আমি ১৪ বছর আগে গ্রামে গিয়েছিলাম লাস্ট। তাই এখন ঢাকার বাহিরে আসলেই মনটা অন্যরকম হয়ে যায়।
যাই হোক কোন মতে যেখান থেকে নৌকায় উঠেছি সেখানে নামলাম তবে অনেক ভয়ে ভয়ে। অন্য নৌকার মানুষকে এতক্ষন যেইভাবে জ্বালাতন করেছি তাতে আমাদের এখন দেখলে তাড়া করবে, নিশ্চিত। হা হা হা
ভাগ্যের জোরেই সুন্দর মত নামতে পারলাম... আমরা আবার ২ জন বাদে কেউ সাঁতার জানতাম না তাই রিস্ক আরো বেশী ছিলো... পরে নেমে চিন্তা করলাম একটু আগে এই ভালো-ভদ্র-শান্ত লেজ বিশিষ্ট ছেলে গুলাই এমন পাগলামী করেছিলো... অসম্ভব!!! তবে আমাদের মোবাইলের ভিডিও গুলাই তার জ্বলন্ত স্বাক্ষী!
নেমে মাঝির হাতে ১২০০ টাকা গুঁজে দিতে গিয়ে মাথা খারাপ হয়ে যাবার যোগাড়। এত টাকা খরচ করলে আমরা তো ফ্যান্টাসির ওয়াটারেই যাইতে পারতাম। ধুর শুধু শুধু কষ্ট করে এখানে আসা...
পরে আবার শান্তনা দিলাম নাহ কষ্ট করলেও কেষ্ট মিলে... মু-হা-হা-হা-হা-হা
ফেরার পালা ১ ঘন্টা লাগল কমার্স কলেজের সামনে ফিরে আসতে রিকশা করে এত জ্যাম ছিলো ইশ!
কমার্স কলেজ থেকে প্রেস ক্লাব নামলাম নেমে পাগলামীর ফিনিশিং দিলাম রাতের খাবারের পরিবর্তে হালিম আর রুটি খেয়ে... hehe
বাসায় ফিরার সময় দেখি পুরা শরীর চুলকাচ্ছে তখন মনে পড়ল ঘাসের উপর আমরা যেই পরিমানে গড়াগড়ি লাফালাফি করেছি তাতে তো অবস্থা আরোও খারাপ হবার কথা...
বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ১০টা ঢুকেই আম্মুর লাম্বা ঝাড়ি... তারপরে আরামের একটা গোসল ডিনার করলাম ৫ চামুচ ভাত দিয়ে এরপরে আর বলতে এক ঘুমে কলেজ যাইতে পারি নাই আজকে উঠলাম সকাল ১০টায়...
[এত বিশাল লেখা পড়তে কোন রকম বিরক্তি লাগলে ক্ষমাপ্রার্থী]
[তবে কালকের মত মজা আগামী কবে করা হবে আমিও জানি না]