somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামী সভ্যতা পর্ব - ১

২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে ইসলামী সভ্যতার উপর কিছু লেখালেখি জরুরি মনে করছি , যেহেতু চারিদিকে সর্বত্রই চলছে ইসলাম সম্বন্ধে নানা অপপ্রচার ! এই অপপ্রচারের ফলে অনেকের কাছেই ইসলামকে একটি অনাগ্রসর , মধ্যযুগীয় ধর্ম হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে !
আসলে ইসলামী সভ্যতা কি ?
সেটা বুঝতে হলে এর আগে আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে ইসলামের যাত্রার শুরুতে অর্থাৎ কোথায় , কোন সময় , কিভাবে ইসলামের যাত্রা শুরু হয়েছে , আর কেনই বা ইসলামের প্রয়োজন হলো ? আর ইসলাম আমাদেরকে কিইবা দিয়েছে ?
এর পুর্বে আমাদের জানা দরকার ইসলাম পুর্ব তৎকালীন সেই সমাজের অবস্থা কি ছিলো ? তাদের ধর্মীয় , সামাজিক , রাজনৈতিক , অর্থনৈতিক , নীতি নৈতিকতার অবস্থা কিরূপ ছিলো ?
এগুলো বিশ্লেষণ করলেই ইনশাআল্লাহ ইসলামের অবদানের কথা পরিস্কার হবে ইনশাআল্লাহ "

প্রথমত:
ইসলামের প্রাথমিক যাত্রা শুরু হয়েছিল , বর্তমান সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে , এবং সারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়েছে মদীনা নগরী কেন্দ্রীক , অর্থাৎ আরব সমাজে এর যাত্রা শুরু , এবার চলে যাই তৎকালীন আরব সমাজে ।

তৎকালীন আরবের ধর্মীয় অবস্থা :
আরবে বসবাসকারী সাধারণ লোকজন ইসমাইল ( আলাইহিস সালাম ) এর দাওয়াতের ও প্রচারের বদৌলতে ইব্রাহিম ( আলাইহিস সালাম ) প্রচারিত ধর্মের অনুসারী ছিলেন , এ কারণেই তারা আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী এবং একমাত্র আল্লাহরই উপসনা করতেন । কিন্তু কালক্রমে তারা আল্লাহর একত্ববাদ ছেড়ে পৌত্তলিকতা , মূর্তিপূজার পথে পা বাড়ায় ! এর পেছনে প্রধান ভূমিকা ছিলো , বনু খুযায়াহ্ গোত্রের সর্দার আমর বিন লুহাই ।
অত্যাধিক ধার্মিক , দান খয়রাত , ধর্মীয় বিষয়াদির প্রতি তার গভীর অনুরাগের কারণে লোকজন তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা পোষণ করতেন এবং তাকে বড় আলেম এবং সম্মানিত ওলীদের দলভুক্ত ধরে নিয়ে তার অনুসরণ করতে থাকেন ।
এমতাবস্থায় তিনি একদা সিরিয়া সফরে গিয়ে দেখলেন , সেখানে মূর্তি পূজা আর্চনার জমকালো চর্চা হচ্ছে ! সিরিয়া অনেক নবীগণের জন্মভূমি হওয়ায় ঐ সকল মূর্তি পূজোকে তিনি অধিকতর ভালো মনে করলেন এবং সত্য বলে ধারণা করলেন , তাই দেশে ফেরার সময় তিনি "হুবল" নামক মূর্তি সঙ্গে নিয়ে আসেন এবং তা পবিত্র ক্বাবা শরীফের মধ্যে রেখে পূজা আর্চনা শুরু করেন সঙ্গে সঙ্গে মক্কাবাসীগণকে পূজা করার জন্য আহবান জানান , মক্কাবাসীগণ তার আহবানে সারা দিয়ে মূর্তি হুবলের পূজা শুরু করেন , কাল বিলম্ব না করে হিজাজবাসীগণও তাদের অনুসরণ শুরু করে , এভাবে একত্ববাদী আরববাসী অবলীলাক্রমে মূর্তিপূজার মতো এক অতি জঘন্য এবং ঘৃণিত পাপাচার ও দুষ্কর্মে লিপ্ত হয়ে পড়েন !
এভাবে সমগ্র আরবভূমি পৌত্তলিকতার এক লীলাভূমিতে পরিণত হয় ! একে একে আরও অনেকগুলো মূর্তি তারা আবিষ্কার করে যথাক্রমে , লাত , ওযযা , মানাত , ওয়াদ্দ , সুওয়া , ইয়াগুস , নাসর ইত্যাদি !
এভাবে অসংখ্য মূর্তি ছড়িয়ে পড়তে পড়তে একসময় সমগ্র আরব উপদ্বীপের প্রত্যেক গোত্র এবং ঘরে ঘরে তা স্থান করে নেয় ! এরপর মক্কার মুশরিকগণ মূর্তি দিয়ে ক্বাবা শরীফকেও পরিপূর্ণ করে তোলেন , শোনা যায় সেখানে ৩৬০ টি পর্যন্ত মূর্তি ছিলো !
মোটকথা মূর্তিপূজা ও অংশীবাদিতা ধর্মের ক্ষেত্রে সবচেয়ে নিকৃষ্ট অনাচার এবং পাপাচার হওয়া সত্ত্বেও তৎকালীন আরববাসীগণের অসার অহংকার এবং ভ্রান্ত ধারণা ছিলো যে , তারা ইব্রাহিম ( আলাইহিস সালাম ) এর ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে !

রাজনৈতিক অবস্থা :
তৎকালীন আরবের রাজনৈতিক অবস্থা দারুণ অস্থিতীশিল , বিশৃঙ্খল এবং পতনোন্মুখ ছিল ।
সমাজের মানবগোষ্ঠী হয় মনিব , নয়তো দাস , কিংবা হয় রাজা নয়তো প্রজা এ দু শ্রেণীতে বিভক্ত ছিলো ।
প্রজারা ছিল যেন শস্যক্ষেত্র স্বরূপ যেখান থেকে সংস্থান হতো রাষ্ট্রের যাবতীয় আয় উপার্জনের ।
রাষ্ট্র নায়কগণ এ সকল উপার্জন তাদের ভোগ বিলাস , কাম - প্রবৃত্তি চরিতার্থ , এবং নানাবিধ দুষ্কর্মে ব্যবহার করতেন , সাধারণ মানুষের ইচ্ছে কিংবা অনিচ্ছার কোনই মূল্য থাকতো না , শত ধারায় বর্ষিত হতে থাকতো তাদের উপর নির্যাতন , অত্যাচার - উৎপীড়নের অগ্নিধারা , এককথায় স্বৈরাচারী শাসন বলতে যা বোঝায় তা চরমে পৌঁছেছিল !

সামাজিক অবস্থা :
তৎকালীন আরব সমাজে বিভিন্ন শ্রেণীর লোকজন বসবাস করতো , অভিজাত শ্রেণীর পরিবারে পুরুষ এবং মহিলাগণের পারস্পরিক সম্পর্ক ছিল মর্যাদার উপর প্রতিষ্ঠিত , বহু ব্যাপারে মহিলাদের স্বাধীনতা দেওয়া হতো , তাদের যুক্তিসংগত কথাবার্তার যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হতো , তাদের ব্যাক্তি বৈশিষ্ট্যকে মর্যাদা দেওয়া হতো ,
এক দিকে যখন সম্ভ্রান্ত এবং অভিজাত পরিবারসমূহের জন্য প্রচলিত ছিল এ ব্যবস্থা , অপরপক্ষে , তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে নারী পুরুষের সম্পর্ক এবং মেলামেশার ক্ষেত্রে এমন সব ঘৃণ্য ব্যবস্থা এবং জঘন্য প্রথা প্রচলিত ছিল যাকে , অশ্লীলতা , পাশবিকতা এবং ব্যাভিচার ছাড়া অন্য কিছুই বলা যেতে পারেনা , অন্ধকার যুগে আরব সমাজে বিবাহের ক্ষেত্রে চারটি প্রথা প্রচলিত ছিল , যার একটি হলো সেই প্রথা যা আজও চালু রয়েছে অর্থাৎ , বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে ছেলে অথবা মেয়ের পক্ষ থেকে প্রস্তাব পাঠিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়ার মাধ্যমে স্বীকৃতি লাভের পর বর কনেকে ধার্য মোহর দিয়ে বিয়ে করত ।
নারী পুরুষের মিলনের দ্বিতীয় প্রথা ছিল , জ্ঞানী গুণী ও শক্তিধর কোন সুপুরুষের সাথে সঙ্গম ক্রিয়ায় লিপ্ত হবার মাধ্যমে উৎকৃষ্ট শ্রেণীর সন্তান লাভ । এক্ষেত্রে স্বীকৃত বিবাহ অর্থাৎ প্রথম প্রথার ধার ধারা হতোনা ! অর্থাৎ স্বীকৃত বিবাহ বহির্ভুত সঙ্গম , যা সম্পূর্ণ ব্যাভিচার !

বিস্তারিত পরবর্তী পর্ব গুলোতে তুলে ধরা হবে ইনশাআল্লাহ "
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৮
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মি. চুপ্পুর পক্ষ নিয়েছে বিএনপি-জামাত; কারণ কী?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬


বিএনপি গত ১৬ বছর আম্লিগের এগুচ্ছ কেশও ছিড়তে পারেনি অথচ যখন ছাত্ররা গণহত্যাকারীদের হটিয়েছে তখন কেন বিএনপি চু্প্পুর পক্ষ নিচ্ছে? অনেকেই বলছে সাংবিধানিক শুন্যতা সৃষ্টি হবে তার সংগে বিএনপিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এতো কাঁদাও কেনো=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৬




আয়না হতে চেয়েছিলে আমার। মেনে নিয়ে কথা, তোমায় আয়না ভেবে বসি, দেখতে চাই তোমাতে আমি আর আমার সুখ দু:খ আনন্দ বেদনা। রোদ্দুরের আলোয় কিংবা রাতের আঁধারে আলোয় আলোকিত মনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×