বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে ইসলামী সভ্যতার উপর কিছু লেখালেখি জরুরি মনে করছি , যেহেতু চারিদিকে সর্বত্রই চলছে ইসলাম সম্বন্ধে নানা অপপ্রচার ! এই অপপ্রচারের ফলে অনেকের কাছেই ইসলামকে একটি অনাগ্রসর , মধ্যযুগীয় ধর্ম হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে !
আসলে ইসলামী সভ্যতা কি ?
সেটা বুঝতে হলে এর আগে আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে ইসলামের যাত্রার শুরুতে অর্থাৎ কোথায় , কোন সময় , কিভাবে ইসলামের যাত্রা শুরু হয়েছে , আর কেনই বা ইসলামের প্রয়োজন হলো ? আর ইসলাম আমাদেরকে কিইবা দিয়েছে ?
এর পুর্বে আমাদের জানা দরকার ইসলাম পুর্ব তৎকালীন সেই সমাজের অবস্থা কি ছিলো ? তাদের ধর্মীয় , সামাজিক , রাজনৈতিক , অর্থনৈতিক , নীতি নৈতিকতার অবস্থা কিরূপ ছিলো ?
এগুলো বিশ্লেষণ করলেই ইনশাআল্লাহ ইসলামের অবদানের কথা পরিস্কার হবে ইনশাআল্লাহ "
প্রথমত:
ইসলামের প্রাথমিক যাত্রা শুরু হয়েছিল , বর্তমান সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে , এবং সারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়েছে মদীনা নগরী কেন্দ্রীক , অর্থাৎ আরব সমাজে এর যাত্রা শুরু , এবার চলে যাই তৎকালীন আরব সমাজে ।
তৎকালীন আরবের ধর্মীয় অবস্থা :
আরবে বসবাসকারী সাধারণ লোকজন ইসমাইল ( আলাইহিস সালাম ) এর দাওয়াতের ও প্রচারের বদৌলতে ইব্রাহিম ( আলাইহিস সালাম ) প্রচারিত ধর্মের অনুসারী ছিলেন , এ কারণেই তারা আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী এবং একমাত্র আল্লাহরই উপসনা করতেন । কিন্তু কালক্রমে তারা আল্লাহর একত্ববাদ ছেড়ে পৌত্তলিকতা , মূর্তিপূজার পথে পা বাড়ায় ! এর পেছনে প্রধান ভূমিকা ছিলো , বনু খুযায়াহ্ গোত্রের সর্দার আমর বিন লুহাই ।
অত্যাধিক ধার্মিক , দান খয়রাত , ধর্মীয় বিষয়াদির প্রতি তার গভীর অনুরাগের কারণে লোকজন তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা পোষণ করতেন এবং তাকে বড় আলেম এবং সম্মানিত ওলীদের দলভুক্ত ধরে নিয়ে তার অনুসরণ করতে থাকেন ।
এমতাবস্থায় তিনি একদা সিরিয়া সফরে গিয়ে দেখলেন , সেখানে মূর্তি পূজা আর্চনার জমকালো চর্চা হচ্ছে ! সিরিয়া অনেক নবীগণের জন্মভূমি হওয়ায় ঐ সকল মূর্তি পূজোকে তিনি অধিকতর ভালো মনে করলেন এবং সত্য বলে ধারণা করলেন , তাই দেশে ফেরার সময় তিনি "হুবল" নামক মূর্তি সঙ্গে নিয়ে আসেন এবং তা পবিত্র ক্বাবা শরীফের মধ্যে রেখে পূজা আর্চনা শুরু করেন সঙ্গে সঙ্গে মক্কাবাসীগণকে পূজা করার জন্য আহবান জানান , মক্কাবাসীগণ তার আহবানে সারা দিয়ে মূর্তি হুবলের পূজা শুরু করেন , কাল বিলম্ব না করে হিজাজবাসীগণও তাদের অনুসরণ শুরু করে , এভাবে একত্ববাদী আরববাসী অবলীলাক্রমে মূর্তিপূজার মতো এক অতি জঘন্য এবং ঘৃণিত পাপাচার ও দুষ্কর্মে লিপ্ত হয়ে পড়েন !
এভাবে সমগ্র আরবভূমি পৌত্তলিকতার এক লীলাভূমিতে পরিণত হয় ! একে একে আরও অনেকগুলো মূর্তি তারা আবিষ্কার করে যথাক্রমে , লাত , ওযযা , মানাত , ওয়াদ্দ , সুওয়া , ইয়াগুস , নাসর ইত্যাদি !
এভাবে অসংখ্য মূর্তি ছড়িয়ে পড়তে পড়তে একসময় সমগ্র আরব উপদ্বীপের প্রত্যেক গোত্র এবং ঘরে ঘরে তা স্থান করে নেয় ! এরপর মক্কার মুশরিকগণ মূর্তি দিয়ে ক্বাবা শরীফকেও পরিপূর্ণ করে তোলেন , শোনা যায় সেখানে ৩৬০ টি পর্যন্ত মূর্তি ছিলো !
মোটকথা মূর্তিপূজা ও অংশীবাদিতা ধর্মের ক্ষেত্রে সবচেয়ে নিকৃষ্ট অনাচার এবং পাপাচার হওয়া সত্ত্বেও তৎকালীন আরববাসীগণের অসার অহংকার এবং ভ্রান্ত ধারণা ছিলো যে , তারা ইব্রাহিম ( আলাইহিস সালাম ) এর ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে !
রাজনৈতিক অবস্থা :
তৎকালীন আরবের রাজনৈতিক অবস্থা দারুণ অস্থিতীশিল , বিশৃঙ্খল এবং পতনোন্মুখ ছিল ।
সমাজের মানবগোষ্ঠী হয় মনিব , নয়তো দাস , কিংবা হয় রাজা নয়তো প্রজা এ দু শ্রেণীতে বিভক্ত ছিলো ।
প্রজারা ছিল যেন শস্যক্ষেত্র স্বরূপ যেখান থেকে সংস্থান হতো রাষ্ট্রের যাবতীয় আয় উপার্জনের ।
রাষ্ট্র নায়কগণ এ সকল উপার্জন তাদের ভোগ বিলাস , কাম - প্রবৃত্তি চরিতার্থ , এবং নানাবিধ দুষ্কর্মে ব্যবহার করতেন , সাধারণ মানুষের ইচ্ছে কিংবা অনিচ্ছার কোনই মূল্য থাকতো না , শত ধারায় বর্ষিত হতে থাকতো তাদের উপর নির্যাতন , অত্যাচার - উৎপীড়নের অগ্নিধারা , এককথায় স্বৈরাচারী শাসন বলতে যা বোঝায় তা চরমে পৌঁছেছিল !
সামাজিক অবস্থা :
তৎকালীন আরব সমাজে বিভিন্ন শ্রেণীর লোকজন বসবাস করতো , অভিজাত শ্রেণীর পরিবারে পুরুষ এবং মহিলাগণের পারস্পরিক সম্পর্ক ছিল মর্যাদার উপর প্রতিষ্ঠিত , বহু ব্যাপারে মহিলাদের স্বাধীনতা দেওয়া হতো , তাদের যুক্তিসংগত কথাবার্তার যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হতো , তাদের ব্যাক্তি বৈশিষ্ট্যকে মর্যাদা দেওয়া হতো ,
এক দিকে যখন সম্ভ্রান্ত এবং অভিজাত পরিবারসমূহের জন্য প্রচলিত ছিল এ ব্যবস্থা , অপরপক্ষে , তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে নারী পুরুষের সম্পর্ক এবং মেলামেশার ক্ষেত্রে এমন সব ঘৃণ্য ব্যবস্থা এবং জঘন্য প্রথা প্রচলিত ছিল যাকে , অশ্লীলতা , পাশবিকতা এবং ব্যাভিচার ছাড়া অন্য কিছুই বলা যেতে পারেনা , অন্ধকার যুগে আরব সমাজে বিবাহের ক্ষেত্রে চারটি প্রথা প্রচলিত ছিল , যার একটি হলো সেই প্রথা যা আজও চালু রয়েছে অর্থাৎ , বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে ছেলে অথবা মেয়ের পক্ষ থেকে প্রস্তাব পাঠিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়ার মাধ্যমে স্বীকৃতি লাভের পর বর কনেকে ধার্য মোহর দিয়ে বিয়ে করত ।
নারী পুরুষের মিলনের দ্বিতীয় প্রথা ছিল , জ্ঞানী গুণী ও শক্তিধর কোন সুপুরুষের সাথে সঙ্গম ক্রিয়ায় লিপ্ত হবার মাধ্যমে উৎকৃষ্ট শ্রেণীর সন্তান লাভ । এক্ষেত্রে স্বীকৃত বিবাহ অর্থাৎ প্রথম প্রথার ধার ধারা হতোনা ! অর্থাৎ স্বীকৃত বিবাহ বহির্ভুত সঙ্গম , যা সম্পূর্ণ ব্যাভিচার !
বিস্তারিত পরবর্তী পর্ব গুলোতে তুলে ধরা হবে ইনশাআল্লাহ "
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৮