"আমি জানি সব কিছু নষ্টদের অধিকারে
যাবে।
নষ্টদের দানবমুঠোতে ধরা পড়বে মানবিক
সব সংঘ-পরিষদ; চলে যাবে, অত্যন্ত উল্লাসে
চ’লে যাবে এই সমাজ-সভ্যতা-সমস্ত দলিল
নষ্টদের অধিকারে ধুয়েমুছে, যে-রকম রাষ্ট্র
আর রাষ্ট্রযন্ত্র দিকে দিকে চলে গেছে
নষ্টদের
অধিকারে। চ’লে যাবে শহর বন্দর ধানক্ষেত
কালো মেঘ লাল শাড়ি শাদা চাঁদ পাখির
পালক
মন্দির মসজিদ গির্জা সিনেগগ পবিত্র
প্যাগোডা।
অস্ত্র আর গণতন্ত্র চ’লে গেছে, জনতাও
যাবে;
চাষার সমস্ত স্বপ্ন আস্তাকুড়ে ছুঁড়ে একদিন
সাধের সমাজতন্ত্রও নষ্টদের অধিকারে
যাবে।
.....................................
.....................................
সবচে সুন্দর মেয়ে দুইহাতে টেনে সারারাত
চুষবে নষ্টের লিঙ্গ; লম্পটের অশ্লীল উরুতে
গাঁথা থাকবে অপার্থিব সৌন্দর্যের দেবী।
চ’লে যাবে,
কিশোরীরা চ’লে যাবে, আমাদের তীব্র
প্রেমিকারা
ওষ্ঠ আর আলিঙ্গন ঘৃণা ক’রে চ’লে যাবে,
নষ্টদের
উপপত্নী হবে। এই সব গ্রন্থ শ্লোক মুদ্রাযন্ত্র
শিশির বেহালা ধান রাজনীতি দোয়েলের
স্বর
গদ্য পদ্য আমার সমস্ত ছাত্রী মার্ক্স-লেনিন,
আর বাঙলার বনের মত আমার শ্যামল
কন্যা-
রাহুগ্রস্থ সভ্যতার অবশিষ্ট সামান্য আলোক
আমি জানি তারা সব নষ্টদের অধিকারে
যাবে।”
- হুমায়ুন আজাদ কে পছন্দ করুন বা না করুন, তাকে উপেক্ষা করতে পারবেন না। সমকালেও চিন্তাশীল মানুষদের বাইরে উনি যে খুব জনপ্রিয় ছিলেন তা কিন্তু নয়। তাছাড়া উনি জনপ্রিয়তার পথে হাটেন নি। তার ভাষায়, 'জনপ্রিয়তা হচ্ছে নেমে যাবার সিড়ি'। সময়ের অনেক আগে জন্ম নেয়াদেরকে সমকালীন মানুষ মূল্যায়ন করতে পারে না, এটা ইতিহাসের শিক্ষা। আর তাই যেখানে সমকালীন জনপ্রিয়রা হারিয়ে যান তাদের প্রস্থানের সাথে সাথে, সেখানে এই ক্ষণজন্মারা মুল্যায়িত হন শত বা হাজার বছরের স্কেলে।
আমার জীবদ্দশায় দেখেছি, সমাজের সকল বর্গকে উদ্দেশ্য করে অপ্রিয় সত্যিটা বলতে পারতেন একমাত্র একজনই, তা হুমায়ুন আজাদ। আজ এই ক্ষণজন্মা'র জন্মদিন। উপরের কবিতাংশটি উনার 'সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে' কবিতা থেকে নেয়া।
আমাদের বর্তমান বাস্তবতা কিভাবে ৩০ বছর আগের এই কবিতায় কবি তুলে ধরেছেন তা লক্ষ্যনীয়। উনার একটা কথা দিয়েই এই নাতিদীর্ঘ লেখাটি শেষ করছি - "আমার লেখার যে অংশ পাঠককে তৃপ্তি দেয় সেটুকু বর্তমানের জন্য, আর যে অংশ তাদেরকে ক্ষুব্ধ করে তা ভবিষ্যতের জন্য।"