somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মজার খেলা গলফ

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গলফ খেলার প্রতি কখনই তেমন একটা আগ্রহী ছিলাম না। তবে ছোটবেলায় বিটিভির খবরে প্রায়ই এরশাদ চাচাকে গলফ খেলতে দেখা যেতো। আর আমাদের সিদ্দিকুর দেশের বাইরে গলফ খেলতে শুরু করায় একটু একটু আগ্রহ তৈরী হচ্ছিলো। এবার তো সে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বকাপেই খেললো। সিদ্দিকুরের বয়েস মাত্র ২৯, টাইগার উডসের ৩৮; কাজেই সিদ্দিকুর যে সামনে আরো অনেক দুরে যাবে, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

গলফ খেলাটা আমরা অনেকেই বুঝি না। খালি দেখি লম্বা একটা লাঠি দিয়ে বলটা জোরসে বাড়ি মারে আর বলটা কোনো এক গর্তের আশেপাশে পড়ে। এরপর এরা সব হাটতে হাটতে বলের কাছে যায়। আবার মারে, আবার হাটে। সেইদিন মাত্র জানলাম যে লাঠিটাকে বলা হয় 'ক্লাব'... এক এক সেট-এ নাকি ১৪টা ক্লাব থাকে। এগুলোর কোনোটা কাঠের তৈরী, কোনটা স্টিলের আবার কোনটা মিক্সড। কাঠেরগুলো দিয়ে নাকি দুরের বল মারতে হয়।

গলফ এর বলটা দেখতে খুবই সুন্দর লাগে। তবে ক্রিকেটের বলের মতো এই বলেরও নির্দিষ্ট মাপ আছে, ওজন ক্রিকেট বলের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ। তবে গলফ খেলতে যেই পরিমান জায়গা লাগে, সেটা আমাদের দেশের মতো জনবসতিপূর্ণ দেশের জন্যে খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন ব্যাপার। ভাগ্যিস সিদ্দিকুর কুর্মিটোলায় সেনাবাহিনীর গলফ ক্লাবে 'বলবয়' এর কাজ টা পেয়েছিলেন! এরপর একসময় 'বলবয়' থেকে 'ক্যাডি' পদে পদোন্নতি পেয়ে যান। 'বলবয়' তো বুঝলাম যারা বল কুড়ায়, কিন্তু 'ক্যাডি' আবার কি? প্রত্যেক প্লেয়ারের সাথে একজন ক্যাডি থাকে যার কাজ হচ্ছে ব্যাগ কাধে নিয়ে ঘোরা এবং সেই প্লেয়ারকে মোরাল সাপোর্ট এবং উপদেশ কিংবা সাজেশন দেয়া। সাধারণত গলফে একজন প্লেয়ার অন্য কোনো প্লেয়ারকে উপদেশ দিতে পারে না, এজন্যেই ক্যাডিদের দরকার হয়।

আজকে পত্রিকায় দেখলাম প্রথমবারের মতো গলফ বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে ৫৫তম হয়েছেন সিদ্দিকুর রহমান। দুটি বার্ডির পাশাপাশি করেছেন দুটি বগি ও একটি ডাবল বগি। সব মিলিয়ে পারের চেয়ে ১৪ শট বেশি খেলে চীনের লিয়াং ওয়েন-চংয়ের সঙ্গে স্থান ভাগাভাগি করেছেন সিদ্দিকুর ।

বার্ডি, বগি, ডাবল বগি, পার - এসব আবার কি জিনিস? হা হা আসলে এগুলি খুব কঠিন কিছু না।

ফুটবল যেমন গোলের খেলা, ক্রিকেট যেমন রানের খেলা, গলফেও তেমন জয় পরাজয় নির্ধারিত হয় যে কতো কম শট খেলে সবগুলো গর্তে বল ফেলতে পারে। একটা বিরাট বড় গলফ কোর্সে (অর্থাৎ গলফ মাঠে) নাকি ১৮টা এরকম গর্ত থাকে। গর্তের দূরত্ব ভেদে একটা স্ট্যান্ডার্ড আগে থেকেই ঠিক করা থাকে, কোনো গর্তের স্ট্যান্ডার্ড হয়তো ৪টা শট আবার কোনোটার ৫টা। কাজেই, ৪ শটের গর্তে যদি কেউ ৪ শটেই বল ফেলতে পারে, তাহলে সেটাকে পার শট বলা হয়। আবার ৫ শটের গর্তে যদি কেউ ৫ শটেই বল ফেলতে পারে, তাহলে সেটাকে পার শট বলা হয়। সাধারণত ১৮টা গর্তের মধ্যে দশটাই থাকে ৪ শটের গর্ত, চারটা থাকে ৩ শটের গর্ত আর বাকি চারটা থাকে ৫ শটের গর্ত।

যারা বিশ্বের নামকরা প্লেয়ার, এরা সব পারের থেকে কম শটে খেলা শেষ করেন। যে সবচেয়ে কম শটে পুরো টুর্নামেন্ট শেষ করতে পারে, সে-ই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়। একেকটা গর্তে যদি পারের থেকেও ১ শট বেশি লেগে যায়, তাহলে সেটাকে বলে বগি। আবার ২ শট বেশি লেগে গেলে সেটাকে বলে ডাবল বগি। সিদ্দিকুর বেশ কিছু বগি আর ডাবল বগি করাতে পয়েন্টে অনেক পিছিয়ে পড়তে হয়েছিলো। আবার পারের থেকে যদি এক শট কম খেলেই গর্তে বল ঢুকাতে পারেন তাহলে আপনি পাবেন 'বার্ডি'; বার্ডি কথাটা এসেছে বার্ড থেকে। পারের থেকে ২ শট কম খেলে গর্তে বল ঢোকানো খুবই দুরূহ ব্যাপার। তবে সেটা করতে পারলে সেটাকে 'ঈগল' বলা হয়। অর্থাৎ, আপনার ঈগল চোখ। তবে পারের থেকে তিন শট কম খেলে যদি কেউ গর্তে বল ফেলতে পারে, তাহলে তো কথাই নেই। সেটাকে বলা হয় 'আলবাট্রস'; তবে সবচাইতে দামী শট হলো 'কনডোর', মানে পারের থেকেও চার শট কম খেলে যদি কেউ গর্তে বল ফেলে দিতে পারে। 'কনডোর' মানে তো বুঝতেই পারছেন, শকুন। অর্থাৎ, আপনার দৃষ্টি শকুনের মতো।

টুর্নামেন্টভেদে একটা গলফ টুর্নামেন্ট তিন/চারদিন ধরে চলে। প্রথম দিন শেষে কারো পয়েন্ট যদি হয় +৭ আর কারো যদি হয় -৪ তাহলে কে এগিয়ে আছেন বলুন তো? হ্যা, ঠিক ধরেছেন, যিনি মাইনাসে আছেন, তিনিই এগিয়ে কারণ তিনি সব মিলিয়ে পারের থেকে ৪টি শট কম খেলে সবগুলো গর্তে বল ফেলতে পেরেছেন। আর যার স্কোর +৭, তিনি সব মিলিয়ে পারের থেকে ৭টি শট বেশি খেলেছেন।

আপনি যদি এখনো এই লেখা পড়তে থাকেন তাহলে আপনার ধৈর্য আসলেও অনেক ভাবলাম, গলফের নিয়ম কানুন যদি নিজের ভাষায় শেয়ার করি, অনেকেই হয়তো এই খেলার ব্যাপারে আরো বেশী আগ্রহী হবে।

তবে ঢাকার বাইরে একটা গলফ কোর্স তৈরী করে কিছু ইচ্ছুক ছেলেপেলেকে যদি ঠিকমত প্রশিক্ষণ দেয়া যায়, আমার ধারণা আমরা এই খেলায় ভালোই করবো। এই খেলার প্রাইজমানিও খারাপ না। বয়েস ৪০ পার করি, এরপর নিজেও শুরু করে দিবো চিন্তা করছি। :-)
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×