আমার বাবুটা যখন আরো বেশি বাবু ছিলো তখন টিকা এবং রেগুলার চেক আপের জন্যে প্রতি মাসেই ডাক্তারের চেম্বারে যেতে হতো। ওয়েটিং রুমের টিভিতে সবসময় একটা চ্যানেলই চলতো - জি বাংলা। বাচ্চার মা-রা বোধহয় এই চ্যানেলের খুব ভক্ত, কেননা বাচ্চার কান্নায় তেমন ব্যথিত না হলেও সিরিয়ালের নায়িকার নাকি কান্নায় অনেকের চোখই ছলছল করে উঠতো। তবে সবচেয়ে অবাক লাগতো কাহিনীর শম্বুক গতি দেখে। আমার মেয়ের জ্বরের সাথে সাথে কোন এক সিরিয়ালের নায়িকারও একবার জ্বর আসলো। একমাস পরে যেয়ে দেখি সেই নায়িকার জ্বর এখনো আছে, বুঝলাম না এইটা কি আগের জ্বরটাই নাকি নতুন করে জ্বর বাধাইসে!
ভাইরে, ইলাস্টিকও এতো লম্বা হয় না, যতোটা এইসব সিরিয়ালগুলো হয়! নাটক/সিনেমায় পুরো জীবনের কাহিনী ৩ ঘন্টায় দেখায়, আর এদের দেখলাম একদিনের কাহিনীই মাসের পর মাস চলে। আবার দেখবেন, তিন মাস ধরে একটা ঘটনা দেখলেন, এরপর নায়িকার ঘুম ভাঙ্গলো সকাল বেলায়। মানে, এই তিন মাসের ঘটনা পুরোটাই তার স্বপ্নে দেখা।
এদের বেশিরভাগ সিরিয়ালে কমন কিছু চরিত্র থাকে:
১. কুটনামি স্পেশালিস্ট: এর কাজ হলো সব জায়গায় গিট্টু লাগানো। তাও যেনোতেনো গিট্টু না, একটা ছুটাইতেই ২৬ এপিসোড পার।
২. অলরাউন্ডার নায়িকা: এরা পারেনা এমন কাজ নাই। অনন্ত জলিলের মহিলা সংস্করণ, অসম্ভবকে সম্ভব করাই এদের কাজ।
৩. ভাদাইম্যা পুরুষ চরিত্র: এদের বেশিরভাগ পুরুষ চরিত্র সাধারণত ভাদাইম্যা হয়, বিশ মিনিটের এপিসোডে এদের ডায়ালগ থাকে ২ থেকে ৩ মিনিট। বেশিরভাগ ফুটেজ খায় নায়িকা আর কুটনামি স্পেশালিস্ট।
বিশ মিনিটের এপিসোডে ফ্ল্যাশ ব্যাক থাকে দশ মিনিট। ঘটনা দুই পা আগায় তো তিন পা পেছায়। এপিসোড বছরের পর বছর চলতে থাকে। একশতম পর্বে এসে নতুন নায়কের আবির্ভাব ঘটে, সাথে যোগ হয় আরো নতুন নতুন চরিত্র। প্রথম আর শেষ পর্বের কুশীলবদের মধ্যে কমন থেকে যায় শুধু নায়িকা আর কুটনামি স্পেশালিস্ট। একটা সিরিয়াল শেষ হয়ে আরেকটা শুরু হয় আর দর্শকেরা রুটিনমতো সেঁটে থাকে টিভি সেটের সামনে।
আমাদের রাজনীতির সিরিয়ালের সাথে এগুলোর কোনোই কি খুঁজে পান কেউ? সিরিয়াল দেখে যাচ্ছি আমরা একের পর এক।
দর্শক হিসেবে আসলেও নোবেল প্রাইজ পাওয়া উচিত আমাদের!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০০