somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খেজুর: ঈশ্বরের প্রাকৃতিক মিষ্টি

০৪ ঠা জুলাই, ২০২৪ সকাল ৮:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



খেজুরের নাম জানা নাই এমন মানুষ বাংলাদেশে পাওয়া কঠিন বৈকি। যদিও এই ফলের এতটা জনপ্রিয়তা পাওয়ার মতন কোন ভৌগলিক কারণ নেই,কেননা এর আবাদ আমাদের দেশের আবহাওয়ার জন্য আদর্শ নয়। তার মানে হলো এটার ফলন ভাল হয় না এখানে। কিন্তু তার পরেও এর জনপ্রিয়তার মূলে যে কারণ থাকে তা হলো রমজান মাসের রোজা। এখানে অন্য মাসের রোজাও হতে পারে কিন্তু ব্যপ্তির দিক থেকে রমজান মাসে এই খেজুর কে যেভাবে প্রাধান্য দেয়া হয় তা অন্য কোন সময় দেয়া হয়না বলেই ধরে নেয়া যায়।

ইফতারের সময় খেজুর দিয়ে ইফতার করার ব্যপারে নানান মতবাদ প্রচলিত আছে। সালমান ইবনু আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,তোমাদের কেউ যখন ইফতার করে তখন সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে। ইবনু উআইনার বর্ণনায় আরো আছে,এতে বারকাত রয়েছে। কেউ যদি তা না পায় তবে সে যেন পানি দিয়ে ইফতার করে। কেননা পানি পবিত্র বা পবিত্রকারী। [ সুনান আত তিরমিজী : ৬৯৫]

ধর্মের সাথেও এই খেজুরের সংযোগ প্রাচীন। আদি পিতা ইব্রাহিম (আঃ) থেকে যে তিনটি প্রধান ধর্মের সূচনা - ইহুদি, খ্রিষ্টান, ইসলাম। এই তিন ধর্মে খেজুরের উল্লেখ যথেষ্ট।

তোরাহ কিতাবে ‘সেভেন স্পাইস বা সাত মসলা’র কথা উল্লেখ আছে [জুতোরনুমি ৮:৮] যা তাদের মূল উৎপাদিক কৃষিপন্য হিসেবে এখন বহাল তবিয়তে আছে। এই সাতটি মসলা হলো - গম, বার্লি, আঙ্গুর, ফিগ, ডালিম, তেল হয় এমন জলপাই এবং খেজুর। এই সাত মশলার উৎপাদন এবং বিপননে তারা এখনও পৃথিবীর প্রথম দিকের দেশগুলোর একটি। ইহুদি পঞ্জিকার শভত মাসের ১৫ তারিখের ‘তু-বিশ্বত’ হলো বৃক্ষ নববর্ষ (নিউ ইয়ার ফর ট্রিজ)। বিশেষত এই দিনে এই সাত ধরনের খাবারের রেওয়াজ ইহুদি ধর্মে বিদ্যমান।

আবার ইঞ্জিল কিতাবে খেজুর গাছকে সবসময় শান্তি, বিজয় আর অনন্ত জীবনের নিয়ামক হিসেবে দেখানো হয়েছে। আর খেজুরকে দেখানো হয়েছে সততা আর ন্যয়পরায়নতার নিয়ামক হিসেবে। এক্সোডাস ১৫ : ২৭ উল্লেখ করা হয় এই খেজুর গাছের পাতা থেকে তারা ঝুড়ি, রশি, মাদুর, ঘরের ছাদ বানানো হতো আর ফল (খেজুর) ছিল খাওয়ার জন্যে। আদি পুস্তক / ওল্ড টেস্টামেন্ট এ খেজুর কে উর্বরতা এবং জীবনীশক্তির উদাহরন হিসেবে বলা হয়েছে।

খেজুরের সাথে ধর্মের এই সংযোগ আরও গভীর হতে পারে। পারসীক ধর্মের দিকে তাকালে হয়তো আরও বিস্তার উদাহরণ পাওয়া যাবে। কেননা খেজুরের ফলনের বা চাষবাসের সূচনা সেই দিক থেকেই।

জরোয়াস্ট্রিয়ানিজম, যা মাজদায়াসনা হিসেবেও পরিচিত, বিশ্বের প্রাথমিক সংগঠিত ধর্মের মধ্যে পরিগণিত হয়, যার শিক্ষা বৌদ্ধধর্ম, ইহুদীধর্ম, খ্রিস্টীয়ধর্ম এবং ইসলামের পূর্ব হতে আরম্ভ হয়েছিল। এটাও এক ইশ্বরবাদী ধর্ম। জরোয়াস্ট্রিয়ানিজম একটি ইরানী ধর্ম, যা দ্বিতীয় সহস্রাব্দের শেষ দিকে মধ্য এশিয়ান স্টেপল্যান্ডের পশুপালকদের মধ্যে উত্থান করে। হিন্দুধর্মকে সাধারণত পূর্ণ গ্রন্থবিচারের পৃথিবীর সব থেকে প্রাচীন ধর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয় আর যার বয়স প্রায় ৩,০০০ বছর, কিন্তু ধারাবাহিক কোডিফিকেশনের দিকে জরোয়াস্ট্রিয়ানিজম হিন্দুধর্মের চেয়ে পুরোনো। জরোয়াস্ট্রিয়ানিজমের প্রভাব আব্রাহামিক (ইব্রাহিম আঃ পরবর্তী ধর্ম) ধর্মে দেখতে পাওয়া যায়। এই ধর্মেও খেজুর গাছকে সবথেকে বেশি মূল্যবান গাছ হিসেবে বলা হয়েছে। Zoroastrians regarded the date palm as the most valuable of all trees except the mythical Gōkirin (Bundahišn, tr. Anklesaria, p. 157).

খেজুর যে উপকারী তার আর প্রমান বা ব্যাখ্যার দরকার পড়ে না। একটা কথা আছে টেস্টেড বাই টাইম বা সময় দ্বারা পরীক্ষিত। আসলেও তাই। খেজুরের উপকারীতা এবং এর গ্রহণযোগ্যতা শুধু যে ইসলাম বা মুসলমাদের মাঝেই বিদ্যমান, তা নয়। যদিও আমরা, মুসলমানরা খেজুরকে শুধু ইফতারেই বেশি খেয়ে থাকি।

খেজুরের গুনগত দিক নিয়ে অনেক। একটু গুগল করলেই সেটা দেখতে পাওয়া যায়। যদিও আমরা বেশির ভাগই বুঝতে পারিনা আসলে
কি বলা হচ্ছে। কিন্তু যেহেতু ধর্মীর দৃষ্টিভঙ্গির ব্যপারটা আমরা খুব সহজে অনুধাবন করতে পারি তাই, খেজুরের সাথে ধর্মের একটা সরাসরি সংযোগ দেখতে পাওয়া যায়। এটা ইসলাম শুধু না। সেই আদ্দিকালে যখন ইব্রাহিম (আঃ) থেকে শুরু হওয়া সকল ধর্মের আগে থেকেই এই খেজুর মানুষ খেত ক্ষুধা নিবারন থেকে ধর্মীয় আচার চারিতায়। এখানে ভাবার মত বিষয় হলো ভৌগলিকভাবে এই পুরো এলাকায় খাদ্য শস্যগুলোর মধ্যে খেজুর অন্যতম। খেজুরের জন্মভূমি মেসপোর্টেমিয়া বা বর্তমানের ইরাক। আর এর আশেপাশের পারস্য, ভূ-মধ্য সাগর হয়ে উত্তর - দক্ষিণে খেজুরের প্রচলন এগিয়েছে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে।

আমরা এই লেখাটা পড়তে পড়তে যদি গুগল করি পৃথিবীর সবথেকে বেশি খেজুর কোথায় হয় আর কারা বেশি রপ্তানি করে। তবে তা অবাক করাই হবে। পৃথিবীর সবথেকে বেশি খেজুর মিশরে উৎপাদিত হলেও, কাচা এবং শুকানো খেজুর সবথেকে বেশি রপ্তানি করে ইসরায়েল। এর মধ্যে মেদজুল অন্যতম প্রধান। প্রায় ৬০ ভাগের উপরে। এটা আপনারা নিজেরাই খুঁজে দেখে মিলিয়ে নিতে পারেন।

খেজুরের স্বাস্থ্যগত গুনাগুন অনেক। যদি তা নাই হতো, তবে সকল ধর্মেই কেন এর গুরুত্ব থাকবে?
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০২৪ সকাল ৮:১৩
২৬০ বার পঠিত
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যৌবনে চারটি বিয়ে করা কি সুন্নাত?

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:৫২

আপনি যদি বিয়ে করে সুন্নাত পালন করতে হয় তাহলে তা আপনার প্রথম স্ত্রী যদি মারা যায় তা ও আপনার বয়স ৫০ এর অধিক হলে, ত‌খন করতে পারবেন কারণ প্রথম স্ত্রী... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭২-এর স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র ২০২৪-এর অর্জন না

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৫:৩৯


৭২-এর রক্তস্নাত সংবিধান বাতিল করে । নিজেদের আদর্শের সংবিধান রচনা করতে চায় এরা‼️বাংলাদেশের পতাকা বদলে দিতে চায়! বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ভালো লাগেনা এদের!জাতিয় শ্লোগানে গায়ে ফোস্কা পরা প্রজন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আয়নাঘর শুধু ক্যান্টনমেন্টেই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়েও ছিল

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, আয়নাঘর শুধু ক্যান্টনমেন্টেই ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়, হোটেল এমনকি ব্যক্তিগত বাড়িতেও ছিল। আপনারা শুধু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:০০

প্রতিযোগিতার এই দুনিয়ায় এখন আর কেউ নিজের মতো হতে চাই না, হতে চাই বিশ্ববরেণ্যদের মতো। শিশুকাল থেকেই শুরু হয় প্রতিযোগিতা। সব ছাত্রদের মাথায় জিপিএ ৫, গোল্ডেন পেতে হবে! সবাইকেই ডাক্তার,... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। এইচএমপিভি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৩




করোনা মহামারির ৫ বছরের মাথায় নতুন একটি ভাইরাসের উত্থান ঘটেছে চীনে। হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস বা এইচএমপিভি নামের নতুন এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে দেশটিতে।চীনের সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×