পাম চাষঃ একটি গাছে বছরে ৫ হাজার টাকার তেল
পামের চাষ করে দেশে বিপ্লব সৃষ্টি করা সম্ভব, কারণ একটি গাছ থেকে বছরে কমপক্ষে ৫ হাজার টাকার তেল পাওয়া যায়। একটি গাছে বছরে ৮ থেকে ১৪টি কাদি হয়। প্রতিটি কাদিতে ৪০ থেকে ৮০ কেজি ফল হয়। সামান্য গরম পানিতে সিদ্ধ করে ঘরে বসে পাম তেল নিষ্কাশন করা সম্ভব অথবা মেশিনের সাহায্যেও তেল নিষ্কাশন করা যেতে পারে।
রোদের জায়গায় ২০ ফুট দূরত্ব বাজায় রেখে ২' বাই ২' গর্ত করে ২০ কেজি গোবর সার দিয়ে রোপণ করতে হয়। রোপণের ৩ থেকে ৪ বছর পর ফল দেয়া শুরু হয় এবং একটানা ৩০ থেকে ৩৫ বছর পূর্ণ ফলন পাওয়া যায়। পাম চাষকে অনেকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং বেশ সফলও হয়েছেন। বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৩ লাখ টন ভোজ্যতেলের প্রয়োজন হয়। দেশে উত্পন্ন হয় মাত্র ২ লাখ টন আর বাকিটা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশের সব অনাবাদী ও পতিত জমিতে এবং রাস্তার দু’পাশে পামের আবাদ করতে পারলে অদূর ভবিষ্যতে মালয়েশিয়ার মতো এ দেশেও অর্থনৈতিক বিপ্লব সাধন করা সম্ভব।
প্রতি পরিবারে একটি বা দুটি গাছ রোপণ করেও আমরা পরিবারের ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণ করতে পারি। নারকেল গাছের মতো এ গাছ সারা বছর ফল দেয়। একটি কাদিতে ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত বীজ হয়, যার বাজার মূল্য অনেক। একেকটি বীজ এক টাকা, দু’টাকা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিন টাকা দামেও বিক্রি হয়। পামের বীজ থেকে সুপারির মতো খুব সহজেই চারা উত্পন্ন করা সম্ভব। সাধারণত একেকটি চারা ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়। সুতরাং পামের রয়েছে উজ্জ্বল ভবিষ্যত্।
বিশ্বে ভোজ্যতেলের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মালয়েশিয়া বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ ভোজ্যতেল সরবরাহ করে থাকে। বাংলাদেশের মাটি, পানি ও আবহাওয়া মালয়েশিয়ার চেয়ে উন্নত। সে কারণে এদেশে ফলনও হয় বেশি। মালয়েশিয়ায় যেখানে একটি কাদিতে ফলের ওজন হয় সর্বোচ্চ ৪০ কেজি পর্যন্ত, সেখানে বাংলাদেশে ৮৪ থেকে ১০৪ কেজি পর্যন্ত ফল পাওয়া গেছে। সুতরাং পামের জন্য বাংলাদেশে উজ্জ্বল ভবিষ্যত্ অপেক্ষা করছে। পামের তেল ১০০ শতাংশ কোলস্টেরল ও ফ্যাটমুক্ত। হৃদরোগ, রক্তচাপ ও ক্যান্সার প্রতিরোধে এটা সফল ভূমিকা পালন করছে।
সম্ভাবনাময় এ গাছের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানার উত্তর পাশে ২০১০ সালে শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে পুরস্কারপ্রাপ্ত লতিফপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে গড়ে তোলা হয়েছে একটি প্রদর্শনী প্লট। পামের আবাদ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যের জন্য নিকটস্থ সরকারি কৃষি অফিসে যোগাযোগ করা যেতে পারে।