
মনে পড়ে লাভ স্টোরি? অলিভার আর জেনিফার? বড়লোক ছেলে আর গরীবের মেয়ে? পারিবারিক বাধা আর যাবতীয় প্রতিকুলতার বিরুদ্ধে দুর্দমনীয় প্রেম... তারপর মেয়েটার লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত হওয়া- মারা যাওয়া...? মনে পড়ে সেই বিখ্যাত ডায়ালগ “লাভ মিনস নট এভার হ্যাভিং টু সে য়্যু আর সরি”...
...২৫ বছর বয়সের যে মেয়েটা মারা গেছে, তার সম্পর্কে বলার মতো কি কি থাকতে পারে? যেমন সে খুব সুন্দরী ছিল, আর ব্রিলিয়ান্ট। খুব ভালবাসতো মোজার্ট আর বাখ। আর বিটলসও। আর আমাকে...
এ ভাবেই খুব সহজ সরল ভাষায় শুরু হয়েছিল এরিখ সেগালের লাভ স্টোরি। প্রথমে লেখা হয়েছিল চিত্রনাট্য হিসাবে, কিন্তু ছবিটা বানানোর জন্য আগ্রহী কোন প্রডাকশন হাউস এগিয়ে না আসায় এক সময় এই চিত্রনাট্যের ওপর ভিত্তি করে এরিখ সেগাল লেখা শুরু করেন লাভ স্টোরি উপন্যাস।সালটা ১৯৭০। ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে এরিখ সে সময় গ্রীক ও রোমান ধ্রুপদি সাহিত্যের শিক্ষক। গানের লিরিক লেখা, চিত্রনাট্য লেখা নিয়ে সিনেমা জগতের সাথে সে সময় থেকেই এরিখ কিছুটা ঘনিষ্ঠ। এর পর লাভস্টোরি যখন প্রকাশিত হয়, ততদিনে অবশ্য প্যারামাউন্ট লাভ স্টোরির কাহিনী নিয়ে মুভি বানানো শুরু করে দিয়েছে।
ভাবলে অবাক হতে হয়, লাভ স্টোরি তো এ যাবত কত জনই লিখলো, সে সব নিয়ে কত মুভিও বানানো হলো, অথচ এখনও পর্যন্ত লাভ স্টোরি একটাই- এরিখ সেগালের লাভ স্টোরি। আর কি দারুন ভাবে সফল প্রেম কাহিনী লেখার এই ফর্মুলা! ভালবাসার গল্প লেখার এই স্টাইল যেন নতুন একটা ধারা হিসাবে চালু হয়ে যায়। সেই ৭০ সালে লাভ স্টোরি প্রথম প্রকাশ হয়, তারপর থেকে এই ফর্মুলায় কত যে লাভ স্টোরি বানানো হলো। আমাদের দেশেও অন্ততঃ কয়েক ডজন টিভি নাটক, মিলনের উপন্যাস সব কিছুর ওপর এরিক সেগালের আছর। এমনকি আমাদের মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, তার আকাশ বাড়িয়ে দাও উপন্যাসেও লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত (এখানে নায়ক) সেই নায়ক নায়িকার প্রেম হওয়া।
হার্ভাডে পড়তে গিয়ে অলিভার ব্যারেটের সাথে পরিচয় হয় জেনিফার ক্যাভিলেরি (জেনি)র। অলিভারের পছন্দ খেলাধুলা জেনির পছন্দ মিউজিক। অলিভার বিশাল ধনী জেনি ততোটাই গরীব। পরিচয়ের শুরু থেকেই তারা দুজনে তর্ক করে, ঝগড়া লড়াই করে- কিন্তু এক সময় দুজনেই দুজনার প্রেমে পড়ে। তো তারা একদিন বিয়ে করে, সংসার সাজায়। দুজনেই পরিশ্রম করে প্রচুর, প্রাণ ভরে জীবনকে উপভোগ করার জন্য। স্বপ্ন দেখে এক অনাগত শিশুর। জেনি গর্ভধারনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্ত ব্যর্থ হয়ে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে অকষ্ম্যাৎ তারা জানতে পারে জেনির মরন ব্যাধির কথা, আবিস্কার করে তাদের হাতে একদমই সময় নাই...
জেনি অলিভার দুই আমেরিকান আন্ডার গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী, তাদের প্রেম- বিয়ে আর সবশেষে জেনির ক্যান্সারে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তাদের বিচ্ছেদ- এ নিয়েই কাহিনী লাভ স্টোরির। অলিভার ধনীর সন্তান, তার প্রেম নিয়ে বাবার সাথে লড়াই করে, তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে, তার যাবতীয় উত্তরাধিকার থেকে নিজকে সরিয়ে নিয়ে মেয়েটিকে বিয়ে করে। অথচ ভাগ্যের করুণ লিখনে মেয়েটা মারা যায় ক্যান্সারে। হাসপাতালের বাইরে দেখা হয় ছেলে আর বাবার। ছেলে কি ফিরে আসে বাবার কাছে...?
লাভ স্টোরির শেষ কয়েকটা লাইন- এখানে অনুবাদ করেছি-
“অলিভার, বাবা ব্যাকুল হয়ে বললেন, আমি তোমার সাথে আছি,”
“জেনি মারা গেছে,” আমি বললাম
“ওঃ আমি সরি! জমে যাওয়া পাথরের ফিসফিসানি বাবার গলায়।
এই চমৎকার মেয়েটা- এই মুহুর্তে যে মৃত, অনেক অনেক দিন আগে আমাকে যে কথাটা শিখিয়ে দিয়েছিল, আমি জানি না কেন, বাবার সামনে সেই কথাটা আবার পুনরাবৃত্তি করলাম। “লাভ মিনস নট এভার হ্যাভিং টু সে য়্যু আর সরি। (ভালবাসা মানে তো এই নয়, তোমাকে কখনও ক্ষমা চাইতে হবে)
তারপর বাবার সাথে যে কাজটা আমি জীবনে কখনও করি নাই, কিংবা তাকে জড়িয়ে ধরার মুহুর্তে তো নয়ই- আমি কেঁদে উঠলাম।
গত ১৭ই জানুয়ারী ২০১০, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন “লাভ স্টোরি” কিংবদন্তীর জনক এরিখ সেগাল। তার মৃত্যুতে গভীর শ্রদ্ধা এই লেখকের প্রতি।
লাভ স্টোরি ই বুকের জন্য দেখুন
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৩:০৪