somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মওলানা দিগন্ত পীর কেবলা

২৬ শে জুন, ২০১১ সকাল ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চারি দিকে পাপ আর পাপ। এত পাপ দেখে ঠিক থাকা যায় না। দিগন্ত তার ইংরেজি সাহিত্যের বইখানা ভাজ করে রাখল। কিছু একটা করতেই হবে। সমগ্র মানব জাতিকে যে কোন মূল্যে হেদায়েতের পথে আনতে হবে। তবেই না জীবনের সার্থকতা। আর দেরী করা যায় না। ইসলামের বানী পৌঁছে দিতে হবে সমাজের প্রতিটা ক্ষেত্রে। ভাবতে ভাবতে দিগন্তের শরীরের লোম খারা হয়ে ওঠে। এর জন্য সঠিক বেশ নিতে হবে। দেরী না করে বাজারে গিয়ে ফিনফিনে সাদা কাপড়ের একটা পাঞ্জাবী কিনে ফেলল। দাড়ি আগে থেকেই ছিল। মাথায় লাগাল রাসুলের সুন্নত টুপি। এই পোশাকে ছবি তুলে টাঙ্গিয়ে দিল পাড়ার প্রতিটি মোড়ে। তার উদ্দেশ্য ছিল সবাই তাকে দেখুক। জানুক, বুঝুক- দিগন্ত কত বড় মওলানা হয়ে গেছে। কিন্তু দুষ্ট লোকেরা তার এই পোস্টারিং এর ভুল মিনিং করল। সবার ধারনা, দিগন্তর মনে ফরজ কাজটা জলদি শেষ করার খায়েশ জেগেছে। তাই পাড়ায় পাড়ায় পাত্রী চাই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।
খালি ইসলামিক লেবাস পড়লেই লোকে মওলানা বলে না। এর জন্য চাই ধর্মীয় জ্ঞান। দিগন্ত ইংরেজি সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি ধর্মীয় লেখা ও পড়তে শুরু করল। কিন্তু বিধি বাম! এই পাঠ লব্ধ জ্ঞান সে কোথাও দেখাতে পারে না। লোকে বুঝতেও পারে না, দিগন্তের ধর্মীয় জ্ঞান কতটা বেড়েছে। একদিন হটাৎ একটা বুদ্ধি পেল। একটা মাইক যোগার করে শুরু করল তার পছন্দর দুই চারজন লেখকের লেখা পাঠ করা। বলা বাহুল্য, একবার ও লেখকের নাম সে উল্লেখ করল না। তার বক্তব্য শুনে সবাই মহা মুগ্ধ। আরে, আমাদের দিগন্ত দেখি মহা বড় মওলানা হয়ে গেছে। অনেকেই তার কাছে ধর্মীয় সমস্যা নিয়ে হাজির হল। দিগন্ত মহা খুশি। তার উদ্দেশ্য পূরণ হতে চলেছে। লোকে এখন তাকে দাম দেয়। দুষ্ট লোক সব জায়গাতেই থাকে। তেমনই এক দুষ্ট লোক তার সুখের ঘরে দুঃখের আগুন জ্বেলে দিল। জন সম্মুখে বলে দিল, "এতদিন যা বলেছেন কোনটাই আপনার কথা নয়। সব কপিপেষ্ট।" শুনে দিগন্তর মেজাজ চরম গরম হল। দিক বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে বলল, "ধর্মীয় লেখার উদ্দেশ্য হল চারিদিকে ছড়িয়ে দেয়া। এর আবার কপিরাইট কি?" অনেক ক্যাচাল শেষে দুষ্ট লোকটারই জয় হল। সমাজে দুষ্ট লোকদের ক্ষমতা বেশি। দিগন্তের মত ভাল মানুষের জায়গা নাই। এ কারণে সবাই মিলে তার উপর নিষেধাজ্ঞা দিল, "মাইকে যদি চেঁচাইতেই হয় তবে যেন অরিজিনাল লেখকের নাম বলে নেয়।" মন খারাপ করে দিগন্ত আর মাইক ধরে না।
এদিকে কয়েকদিন পরেই আবার তার বোধহয় ঘটল। তিনি লোকজন দেখলেই তাদের ডেকে নিয়ে ধর্মীয় জ্ঞান দেয়া শুরু করলেন। তিনি সবাইকে বোঝালেন, "ছবি আঁকা ঠিক নয়। ছবি আঁকলে জাহান্নামে যেতে হবে।" আবারও দুষ্ট ছেলের দল হানা দিল। বলল, "আপনি তাইলে ছবি উঠছেন কেন? পাড়ায় পাড়ায় আপনার যে ছবি ছিল, সেটা কি পাপ নয়।" দিগন্তের মেজাজ আরো খারাপ হল। দুষ্ট ছেলেরা বিজ্ঞানও বোঝে না। আরে, এইটা হল ছায়া। ক্যামেরার মাধ্যমে আমার ছায়াকে ধরা হয়েছে। তার ব্যাখ্যা শুনে ক্লাস ফাইভের বিজ্ঞান পড়া ছাত্রও হেসে ফেলল। কিন্তু সে তার সিদ্ধান্তে অটল রইল।
হটাৎ কি হইল কে জানে। আবার তাকে মাইক হাতে মঞ্চে দেখা গেল। সে টিয়া পাখির মত সুদ, ভাগ্যগণনা বিষয়ক অন্যের বক্তব্য রিলে করতে শুরু করলেন। কেউ প্রশ্ন করলেই ক্ষেপে যান। প্রশ্ন কর্তার প্রশ্ন করার পিছনে উদ্দেশ্য খোঁজেন। কিন্তু প্রশ্নের উত্তর দেন না। সকলে মুখ টিপিয়া হাসে। কিন্তু তিনি আর তার সাঙ্গাতরা খুশি হন। এভাবেই চলছিল তার দিন। একদিন তার এক অনুসারী তার সাথে দেখা করতে এসে বলল-
: হুজুর। আমার অতি প্রিয় গরু মারা গেছে।
:তো, আমি কি করব? তুমি ভাল মানুষ নও। তুমি সুদের কারবার কর।
:নাউযুবিল্লাহ। আমি আবার কবে সুদের কারবার করলাম?
: তুমি করিম মোল্লার কাছে ৫০০০০ টাকার বিনিময়ে জমি বন্ধক রাখছিলা। ১ বছর পরে ৫০০০০ টাকা দিয়ে সেই জমি ছাড়ায়া নিছ। করিম মোল্লা ১ বছর সেই জমি চাষাবাদ করে খেয়েছে। মানে সে সুদ খেয়েছে। তুমি সুদ দিয়েছ।
: কিন্তু হুজুর, আমি যদি করিম মোল্লার কাছে জমি বন্ধক না রেখে বিক্রি করতাম এই শর্তে যে আগামী ১ বছর পর আবার ৫০০০০ টাকা দিয়েই আমি জমি কিনে নেব, তবে এই ১ বছর জমির ফসল কে খেত?
দিগন্ত এইবার খুক খুক করে কাশে। কোন জবাব দয়ে না। "বাদ দেন হুজুর" তার অনুসারী আবার শুরু করে
: আমার গরুটার স্মরণে একটা মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করছি। আপনি এলে খুশি হতাম।

দিগন্তের খুশি আর ধরে না। মিলাদ মাহফিল মানেই অতিরিক্ত খাওয়া। মাছ-মাংস, পোলাও; আরও কত কি? দাওয়াতের দিন সকাল থেকে সে না খেয়ে থাকল। দাওয়াত খেতে গিয়ে সে দেখল, সে একাই এসেছে। আর কেউ নাই। কোন রকমে মিলাদ শেষ করে সে খেতে বসল। কিন্তু হায় হায়! কোথায় মাছ, কোথায় মাংস? লোকটা তাকে পাটের শাক দিয়ে খেতে দিল। দিগন্ত তাড়াহুড়া করে পাটের শাক শেষ করল। ভাবল, এবার মাংস আসবে। লোকটা দিগন্তের গপগপ করে পাটের শাক খাওয়া দেখে ভাবল, পাটের শাক খুব ভাল হয়েছে। "হুজুর, আরো একটু দেই" বলে সে আরো দিল। দিগন্ত আবার খুব দ্রুত শাক শেষ করল। "আরো একটু দেই" বলে লোকটা আবার পাটের শাক দিতে গেল। দিগন্ত এইবার ক্ষেপে গিয়ে বলল, "তারচেয়ে আমাকে পাটক্ষেতটা দেখায়া দে। আমি নিজেই যতপারি খেয়ে আসি।"
লোকটা বুঝতে পারল এবং লজ্জা পেল। বলল, "আমি গরীব মানুষ। কি করতে পারি হুজুর?"
: কোন মাংস টাংস নাই?
: হুজুর, কি আর বলব? আছে তবে তা আপনি খাবেন না। যে গরুটা মারা গছে তার কিছু মাংস কেটে রান্না করা হয়েছে।
: নাউযুবিল্লাহ। জানিস না? মরা গরুর মাংস খাওয়া হারাম?
:জানি দেখেই তো আপনাকে দিচ্ছি না। দিগন্তের মন খারাপ হয়ে গেল। ভীষণ ক্ষুধা লেগেছে।
: দেখ, কোরআন হাদিসে লেখা মরা গরুর মাংস খাওয়া হারাম। তাই বলে কোথাও লেখা নাই মরা গরুর ঝোল খাওয়া হারাম। তাই আমাকে একটু ঝোল দে।
লোকটা দিগন্ত হুজুর কে ঝোল ঢেলে দিতে গিয়ে একটুকরা মাংস দিগন্তের পাতে পরল। লোকটা সেই মাংস তুলতে যেতেই দিগন্ত বলল-
: আরে ব্যাটা, জানিস না? আল্লাহ যার ভাগ্যে যা রাখে সেটা গড়ায়া গড়ায়া তার কাছে চলে আসে। এটা আমার ভাগ্যে লেখা ছিল। তুই তুলে নেবার কে?

নোট: সকল দুঃশ্চরিত্র কাল্পনিক। কেউ মওলানা সাহেবের সাথে নিচের চরিত্র গুলায়া ফেললে লেখক দায়ী না।
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×