সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। রুনার মনটা উদাস হয়ে যায়। কাজে মন বসাতে পারে না। বাড়ি ফেরার জন্য মনটা অস্হির হয়ে উঠে। আজ অবশ্য লোকজনের সমাগম বেশি নাই, সুপারভাইজারের কাছে গিয়ে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করার অনুমতি চায়। ভাগ্য ভাল আগে ভাগে কাজ শেষ করার অনুমতি মিলেও যায়। গাড়িতে উঠতে গিয়ে রুনার হঠাৎ করে শরীরটা কাঁটা দিয়ে উঠে। গত কয় দিন ধরে এরকম হচ্ছে। কোন খারাপ কিছু কি ঘটবে? সে বুঝতে পারে না। কিন্তু গাড়িটা যখন সেমেট্রির কাছে এসে বন্ধ হয়ে গেল তখন রুনার মনটা হিম হয়ে যায়।গত সপ্তাহেও ঠিক এখানেই হঠাৎ করে গাড়ি বন্ধ হয়েছিল।
কিন্তু আজ কিছুতেই গাড়ি চলছে না, কেন এমন হল ভেবে পায় না। ভাল গাড়ি অল্প কয় দিন হল সার্ভিসিংও করানো হয়েছে। মনে মনে আয়তুল কুরসী পড়তে থাকে। আচ্ছা খ্রীস্টানদের সেমেট্রিতে আয়তুল কুরসী পড়ে কোন কাজ হবে? ভয়ের মধ্যেও প্রশ্ন উঁকি দেয় মনে। আরো তাড়াহুড়া করে পড়তে থাকে।এই নিয়ে দুই দিন এরকম হল। খালি তফাৎ হল আজ মুষল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে।
সাজুকে ফোন করে। সাজু অভয় দেয়, দুঃশ্চিন্তা না করে ওর জন্য অপেক্ষা করতে বলে। মাঝে ঘড়ি দেখে কয়েক বার। হিসাব করে কতক্ষণ লাগবে সাজুর আসতে। কমপক্ষে আধঘন্টা।সাজু যে আসতে রাজি হল সেই না কত, তার আবার সময় হিসাব। বৃষ্টির ধারা দেখতে থাকে সে।একটু একটু শীত লাগে, গায়ে শালটা জড়িয়ে নেয় ভাল করে। নাহ আরো যেন বেশি করে ঠান্ডা লাগছে। ব্যাগের ভেতর থেকে সোয়েটার বের করে তার উপর শালটা জড়ালো, বেশ আরাম লাগছে।
আহারে যদি একটু চা খেতে পারত।বাসায় গিয়েই প্রথম কাজ হবে চা বানিয়ে খাওয়া। আজ রাত করে ঘুমালে কোন অসুবিধা নাই। কাল তার কাজ নাই। এক সপ্তাহের ছুটি পেয়েছে। কি শান্তি কি শান্তি। দেশের বাইরে এসে রোবটের মত হয়ে যাচ্ছে। দিনরাত যন্ত্রের মত কাজ, বাড়ি ফিরে খাওয়ার আয়োজন, ঘুমানো আবার উঠে কাজে যাওয়া। রুনা চেষ্টা করে মাস খানেক কাজের পর দিন কয়েকের ছুটি নেওয়া।কপাল ভাল থাকলে পায়,না হলে যন্ত্রের মত কাজ করে।পাশ দিয়ে অন্য গাড়িগুলো ছুটে চলে যায়। দুর আর কত দেরি হবে সাজুর। আবার ফোন করবে কিনা ভাবছে।
দীর্ঘশ্বাস পড়ল। কার দীর্ঘশ্বাস পড়ল! শরীর আবার কাঁটা দিয়ে উঠে। মনে হল ঠিক ওর ঘাড়ের উপর কেউ নিঃশ্বাস ফেললো। চট করে ঘাড় ঘুরে দেখে, জানে কেউ নাই, তবুও মনের শান্তির জন্য রুনা দেখে। কেউ নাই।তাহলে নিঃশ্বাস ফেললো কার? ভয়ে রুনার গলা বুজে আসে। ফ্যাস ফ্যাসে গলায় জানতে চায় কে!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩৩