আজ ব্লগে আমার পোস্ট লেখার এক বছর হল। সবাই দেখি কি সুন্দর সুন্দর পোস্ট দেয়। আমি তো অত ভাল লিখতে পারি না। আর তাছাড়া মনও ভাল নাই।সবার যেমন সদ্য দেশ থেকে ঘুরে আসলে মন খারাপ থাকে আমারও তাই হচ্ছে এখন।
জেবতিক আরিফের (আরিফ জেবতিক) সেই বিখ্যাত পোস্ট (ভ্যালরী সংক্রান্ত )পড়ে আমি সাইনের খোঁজ পাই। অনেক দিন ভিজিটর থেকে পরে একদিন নাম লিখে নিজেই ব্লগার হয়ে গেলাম।
আমার প্রথম পোস্টে বিহংগ কমেন্ট করেছিলেন। তারপর একে একে অনেকের সাথে যোগাযোগ হয়। হুজুগের মাথায় এক সিরিজ শুরু করি। কীবোর্ডে ঠিক মত লিখতে পারিনা।তখন ভার্চুয়াল কিবোর্ড ব্যবহার করতাম। উহ্ কি যে কষ্ট করে লিখতাম। বিহংগের পরামর্শে ফোনেটিক ব্যবহার শুরু করি। অনেক ধন্যবাদ বিহংগ আপনাকে।
ব্লগে এসে আমার চমৎকার কিছু বন্ধু জুটে গেছে। মানব মানিক, নীভা উনাদের কথা না বললেই না। আমার লেখা প্রথম থেকে যারা পড়তেন ইনারা দুজন অন্যতম ছিলেন, এখন অনিয়মিত হয়ে গেছেন,আমি ওদের কে মিস করি। প্রীটি সোনিয়া, সুলতানা শিরীন সাজি এরা আমার সাথে আছেন সব সময়, ভাল মন্দ যাই লিখি দিনের পর দিন উৎসাহ দিয়ে যান, অনেকটা সময় উনাদের কথা ভেবে লিখে যাই যে অন্তত আর কেউ না পড়ুক প্রীটি সোনিয়া আর সাজি আমার লেখা পড়বেনই! যখনই সময় পাই আমিও উনাদের লেখা পড়ি, ভাল লাগে মন্তব্য করতে।
মানুষের লেখাও ভাল লাগে। ওর কিছু প্রলাপ ভীষন ভাল লেগেছিল।মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কুকুর নিয়ে এপিটাফ লেখাটা দারুন ছিল।
ব্লগে আসার পর আমার কিছু ছোট বোন আর ভাই জুটে গেছে।তানজু,আউলা, বিমা, রাশেদ, তামিম ইরফান, রন্টি চৌধুরী, রাতমজুর,যাদের ছাড়া এই ব্লগ পানসে হয়ে যায়। বিমা যার পোস্ট মনে হয় কোনটা বাদ রাখি নাই পড়ার! প্রথমে ভীষন ভয়ে ভয়ে যেতাম ওর ব্লগে। লোকজন দেখতাম ধমাধম রিকোয়েস্ট করে গানের জন্য আর সেও মজাসে গান পোস্ট করত। শেষে একদি ন থাকতে না পেরে আমিও রিকুস(বিমার বানান নকল) করি গানের জন্য। আমার গান আর দেয় না। ওর মনেই নাই। (আসলে এমন কিছু নাম করা লোক নাতো সেজন্য মন্তব্য পড়েই নাই) বিমাকে আবার বলার পর সে গান পোস্ট করে। মহা সুখে কয়দিন গান শুনি। কয়দিন আগে বিমা রাগ করে সব পোস্ট ড্রাফটে নিয়ে গেছিল এখন আবার আস্তে আস্তে ফিরিয়ে আনছে।
রাশেদ উপকারি। আমি পোস্টে ছবি দিতে পারছিলাম না, তখন সে খুব সহজ ভাষায় ধৈর্য্য সহকারে ব্যাপারটা বুঝিয়ে দেয়(মাথায় সহজে কিছু ঢোকে না)। তাতে মনে হয় রাশেদ যদি ভবিষ্যতে শিক্ষক হয় সাধারন ছাত্র ছাত্রীদের অনেক উপকার হবে। রন্টিও সাহায্য করেছিল। রন্টির কমেন্ট পড়ে মনে হয় ভীষন বড় একটা মানুষ! আসলে মোটেও তা নয়। ছোট একটা লালু ভাই আমার!
আউলার লেখা ভীষন ভাল লাগে। আমি যখন ব্লগে নতুন তখন সে বাঙলা সিনেমা লিখত। সত্যি সত্যি লিখত। কি যে মজার মজার ব্যাপার। আমি অপেক্ষা করে থাকতাম কখন আউলা সিনেমা পোস্ট করবে! গোগ্রাসে পড়তাম, নিজেই হেসে কুটিকুটি। বাসায় সবাই জানতে চায় কি ব্যাপার এত কি মজার জিনিস পড়ছ? তখন আবার ওদেরকেও পড়ে শোনাতাম। আউলা এখন আর সিনেমা লিখেন না, মনে হয় পড়া শেষ করে চাকুরি জীবনে ঢুকে বেচারির মধ্যে যে ছেলেমানুষী ছিল তার বারোটা বেজে গেছে। সে আর সবার মত ধরা বাঁধা জীবনের গন্ডীতে ঢুকে গেছে। জীবন থেকে সবার ছেলেমানুষী চলে যাচ্ছে! পরিচিত ব্লগারদের নিয়ে আউলার সিনেমার চরিত্রগুলো ছিল। সবাই অনুরোধ করত সিনেমায় নেয়ার জন্য। আমিও। আমাকেও আউলা তার" আশকা তুমি কার" কয়েকটা পর্বে নিয়েছিল। অনেক অনেক ধন্যবাদ আউলাকে সেজন্য।
দুরন্তের তথ্য ভিত্তিক লেখাগুলো গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। বিশেষ করে পৃথিবীর জলবায়ুর উষ্ণতা নিয়ে। রেটিং এর ধোঁয়া উঠা ভাত আর ঝাল গরুর গোস্ত নিয়ে পোস্ট পড়ে সাথে সাথে রান্না করতে শুরু করছিলাম।ভাইকে অনেক দিন দেখি না, মনে হয় উনার পড়ার চাপ বেড়ে গেছে।
তামিম ইরফানের সাথে যোগাযোগ ঘটে গত বছরের শেষ দিকে। ওর লেখারও ভক্ত ছিলাম। কিন্তু কখনো কমেন্ট করা হয়নি। কি একটা বান্দরের ছবি দিয়ে রাখছে। মনে হত ছেলেটার কোন গন্ডগোল আছে। কারন প্রায়ই ব্যান খেত! এবং সেটা ছিল(বেশির ভাগ)গালাগালি আর আজে বাজে কথার জন্য! যা পছন্দ করি না। কিন্তু ব্লগের এই এক বছরের ইতিহাসে দেখলাম গালিবাজদেরও দরকার আছে। না হলে আমরা যারা সাধারন ব্লগার তারা টিকতে পারতাম না। জামাতি-শিবির-রাজাকার-নব্যরাজাকার আর মাদ্রাসিদের অত্যাচারে। ওরাতো ব্লগ দখল করেই ফেলেছিল। দিনের পর দিন ভুল ইতিহাস, তথ্য বিকৃতি চলছিল। কিন্তু তামিম ইরফান, রাশেদ, বিমা আর ওদের বন্ধুরা মিলে এইসব পরগাছাদের কে ব্লগছাড়া করে ফেলেছে। বলা যায় ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছে! আমরা যে যার খুশি মত লিখতে পারছি এবং টিকে আছি তা এই সব ব্লগারদের জন্য। নতুন ব্লগাররা তো জানে না কি সব সময় পার করে আমরা আসছি গত এক বছরে! তামিম ইরফান ও তার বন্ধুদের অশেষ ধন্যবাদ আমাদেরকে এই ব্লগে টিকে থাকার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
এখানে অবশ্য কিছু ভাব ব্লগারও আছেন। যারা নিজেদেরকে অনেক কিছু মনে করেন। আমি সযত্নে এসব ব্লগারদের এড়িয়ে চলি।
শাশ্বতের চিকিৎসার জন্য ব্লগের পরোপকারি টুটুলের লেখা পড়ি। ভাল লাগে ওর সুন্দর মনের পরিচয় পেয়ে। বিয়ে করে প্রত্যু আর বেশি সময় দিতে পারছে না। ভীষন ব্যস্ত হয়ে গেছে নতুন জীবনে। এখানের চমকপ্রদ চিকনমিয়ার কথা না বললেই নয়। ওর যে দুটো পরিচয় তা আমি অনেক দিন বুঝতেই পারিনি। যাইহোক, ওর পরিচয় পেয়ে আমার লাভ বই ক্ষতি হয়নি! জনারণ্যে নিসংগ পথিকের লেখাও ভাল লাগে। জেবিনের কয়েকটা লেখা পড়েছি, খুব ভাল লেগেছিল। কাঁকনের কয়েকটা কবিতা পড়ছি, ভালই। মুকুলের লেখা নিয়ে আমি আর কি বলবো। এত সুন্দর করে লিখেন, মনে হচ্ছে আমি যদি এরকম লিখতে পারতাম। যদি সত্যি গন্তব্য ঠিক করে চলে যেতে পারতাম, খালি দীর্ঘশ্বাস ফেলি এজনমে তা আর হবে না।
জীনের বাদশা, মানবী, কাল্বেলা,মাহবুব সুমন,আসিফ আহমেদ, হনুলুলু, খোলাচিঠি,নাফিস ইফতেখার,ছন্নছাড়ার পেন্সিল, আরাশির লেখা ভাল লাগে।এছাড়া রাহাত আহমেদ, ডাক্তার আইজউদ্দিন, কৌশিক, রাগ ইমন, রাগিব,অমি রহমান পিয়ালের লেখা ভাল লাগে। সময়ের অভাবে অনেক সময় অনেকের লেখায় কমেন্ট করা হয় না।
ভালই লাগে সাইনে সময় কাটাতে। বিদেশে আত্নীয় স্বজন ছাড়া থাকতে যে কি মানসিক কষ্ট আমরা ভোগ করি, তার কিছুটা কেটে যায় সাইনে ব্লগিং এর সময়। নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি, ব্লগিং এর সময় মনেই থাকেনা যে আমি দেশে নাই। বাংলাদেশকে আরো কাছে পাই ব্লগ লেখা ও পড়ার সময়। সবাই ভাল থাকুন।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০০৯ ভোর ৫:১২