কেস স্টাডি ১ : কণা ও আবিরের সাত বছরের প্রেমের সম্পর্কের সমাপ্তি ঘটে দুই পরিবারের বিয়ের সম্মতিতে।আবির চাকরি করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আর কনা বেসরকারি ব্যাংকে। বিয়ের চার বছর পর যখন কণা কনসিভ করল এবং টুইন বেবি জানা গেল তখন কণা ইচ্ছে করে চাকরি ছেড়ে দেয়। আবিরের মন কখনো চাইতো না কণা চাকরি করুক। কিন্তু কণা একটু প্রতিবাদী হওয়ায় এক প্রকার সংগ্রাম করেই চাকরি করতো।
কনার সারাদিন কাটে অনাগত সন্তানদের কথা চিন্তা করে। দেখতে কেমন হবে ,তার কি নাম রাখবে ছেলেদের এবং দুটোকে কিভাবে মানুষ করবে এইসব নানা চিন্তা ভাবনা মাথায় এসে ভর করে ।ভার্সিটির দিনশেষে কর্মক্ষেত্র থেকে অবসর নিয়ে কোন যখন একাকীত্ব পড়ে, আবির এর কাছ থেকে সময় পাওয়া যেনো দুর্ভাগ্য পরিণত হলো ।আবির সকালে অফিসে যায় আর রাতে ফিরে। এভাবে দেখতে দেখতে বাচ্চাগুলো ঘর আলো করে এলো।বাচ্চাদের পেয়ে আবির গর্ববোধ করে। আর কণা বাচ্চা দুটো সামলে নিতে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
কিন্তু দিনকে দিন আবিরের একটু একটু করে পরিবর্তন কনা টের পাচ্ছে। দাম্পত্য সম্পর্কতো নেই, তারপর কথায় কথায় আবির মেজাজ দেখায় এবং কনাকে যথেষ্ট অবহেলা , অপমান করে থাকে।
কনা একদিন আবিরের মোবাইলে দেখে একটি নাম্বারে শুধু বেশি কথা বলে এবং সেটা সুজন দিয়ে সেভ করা। আসলে তিনি সুজন না সুজানা ভৌমিক। সদ্য জয়েন করা এবং চাকরিও পার্মানেন্ট না , ৫ মাস হলো কাজে যোগ দিয়েছে। অর্থাৎ আবিরের সাথে সম্পর্ক ৫/৬ মাস যাবত এবং কনা সমস্ত তথ্য কালেকশন করলো ।
কনা এখন কি করবে ? নিজের ও বাচ্চাদের অধিকার এত সহজে ছেড়ে দিবে ? আত্মসম্মান টিকাবে , না আবিরকে ফেরাবে ? শেষ পর্যন্ত লড়াই করে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় কনা নিজের ও বাচ্চাদের কথা ভেবে।আবির যদি ফিরে তবে ভালো আর না ফিরলে হয়তো সব শেষ হয়ে যাবে।কিন্তু কণা এত সহজে হাল ছেড়ে দেওয়ার মত মেয়ে না প্রচন্ড জেদী ও বুদ্ধিমতী।সুজানার পরিবারে খুবই নমনীয় ভাবে জানানো হয় এই বিষয়টি।আবির বিবাহিত ও মুসলিম এবং দুটো বাচ্চা আছে। সুজানার পরিবারের পুরো আশ্বাসেই যেন কনা আবার উঠে দাঁড়ানোর শক্তি ফিরে পায়।এদিকে সুজানা পরিবারের চাপের মুখে চাকরি ছেড়ে দেয়।
আবিরের মা ,বড় ভাই ও অফিসের ঘনিষ্ঠ দুজন কলিকের চাপের মুখে লজ্জায় নিজেও লজ্জিত । কারণ আবির চাকরির উপরই নির্ভরশীল।
চাকরি ছাড়া চলা সম্ভব না। সবশেষে আবির বিবেকের অনুতাপে নিজের ভুল বুঝতে পারলো ।
কনার ধৈর্য্য ও ভালোবাসা এবং ছেলে দুটোর ভাগ্যে নিজেকে শুধরানোর সুযোগ পেলো ।
কেস স্টাডি ২ : দশজনের মধ্যে সাদিয়া একজন তা যে কেউ সাদিয়াকে দেখলেই বুঝতে পারবে। মাস্টার্সে পড়াকালীন সময়ে
সাদিয়া কে দেখতে আসে বরপক্ষ। সবাই এতোটাই মুগ্ধ এ মেয়েকে কিছুতেই হাতছাড়া করা যাবে না। পাত্র ইঞ্জিনিয়ার, নাম পুলক।
দু পক্ষের আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত হলো আগামী সপ্তাহেই আকদ এবং আগামী দু'মাসের মধ্যেই বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে । সাদিয়ার এতে একটু মনটা বিষণ্ণ বোধ করে কারণ সাদিয়া চেয়েছিল যেদিন বিয়ের অনুষ্ঠান সেদিনই আজ আকদ হবে।কিন্তু পুলক এম এস করার জন্য দেশের বাইরে যাবে সে জন্যই এই দ্রুত আয়োজন ।
সাদিয়া ও পুলকের একে অপরের সাথে চেনাজানা এবং কক্সবাজারে বেড়ানো সব মিলিয়ে ভালোই ।
এদিকে বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য হল বুকিং ,কেনাকাটা , দাওয়াত দেওয়া মোটামুটি শেষ পর্যায়ে দিকে।
বিয়ের অনুষ্ঠানের তারিখ থেকে ঠিক ১৭ দিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় পুলক মারা যায়। একেবারে সব কিছু যেনো মুহূর্তেই এলোমেলো হয়ে গেল । সাদিয়ার যেখানে লাল বেনারসি শাড়ি পরে শশুর বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল , সেখানে সাদিয়া গেল বিধবার বেশে।
দুই বছর পর সাদিয়ার বিয়ে হলো ,
সাদিয়ার খালার দূর সম্পর্কের আত্মীয় সোহেল এর সাথে। সাদিয়ার সমস্ত অতীত জেনে সোহেল এই বিয়েতে অগ্রসর হয়। সোহেল অন্ধের মতোই ভালবাসে সাদিয়াকে । সাদিয়া মনে মনে ভাবে , এক জীবনে যা কষ্ট পেয়েছি তাই হয়তো আল্লাহ আরেক জীবনে এমন ভালো জীবনসঙ্গী মিলিয়ে দিয়েছেন । সোনালী সুখেই কাটছিল সুখের সংসারের দিনগুলো ।বিয়ের দু'বছর পর থেকে সোহেল ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য হলে অতীত নিয়ে কথা বলে,মন খারাপ দেখলে কবর জিয়ারত করতে যাবে নাকি এবং আরো অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে কথা বলে ।
সাদিয়া আর সহ্য করতে পারে না ।সবকিছু জেনেশুনে বিয়ের পর যদি এরকম কথা শুনতে হয় তাহলে তার সাথে আর যাই হোক সংসার করে জীবন পার করা যায় না । অনেক ভেবেচিন্তে সাদিয়া চলে আসে বাবার বাড়িতে ।আর ফিরে যাবে না সোহেলের কাছে এ সিদ্ধান্তে অটল
সোহেল নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চেয়ে সাদিয়া কে ফিরিয়ে নিতে আসে কিন্তু সাদিয়া তখন ফিরে যায় নাই।
আরেকটি ব্যাপারে সাদিয়া ভীষণ কষ্ট পেয়েছিল , সাদিয়ার পরিবার থেকে বুঝানো হচ্ছে-- এরকম হয় -ই এসব কিছু নয় মেনে নিতে হয় ।
বেশ ক'মাস পর সোহেলের বাবা-মাকে সাদিয়া আর ফিরিয়ে দিতে পারেনি ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:১৮