একেবারে ছোট্টবেলায়, যখন ঠিক মত রোজা রাখতাম না তখন শীতের দিনে রোজা হতো। আমার খুব ভাল মনে আছে যে আম্মা সেহরীর জন্যে মটরশুটি-টমেটো দিয়ে কোন একটা তরকারী ভুনা করতেন। আর তা দেখে অনেক বড় হয়েও ভাবতাম সেহরী মানেই মনে হয় মটরসুটি! কি হাস্যকর।
খুব ছোট থাকতে বাসার সবাই রোজা থাকতো, মাঝে মাঝে আমাকে শেষটাতে ডাকতো। তো যেদিন দেখতাম মুরগীর মাংস বা আমার পছন্দের কোন তরকারী সেদিন উঠতাম। টয়লেটে গিয়ে শুধু কুলি করে আসতাম। আম্মা বলতেন, "কিরে মুখ ধোস নাই যে"। আমি কারন দেখাতাম মুখে পানি দিলে আমার ঘুম চলে যাবে। কত বুদ্ধি ছিলো!!
বাসার সবাই রোজা রাখতো বলে শেষ রাতে উঠতো নামাজের পর আবার ঘুমাতে হতো। আমিতো তা করতাম না। আমি উঠতাম সব সময়ের মত ফজরের পরে। তো ঘুম থেকে উঠে দুধ দিয়ে টোস্ট বিস্কুট ভিজিয়ে খেতাম। একা একাই এই-সেই করতাম। কিছুক্ষন পর বিরক্ত হয়ে আম্মাকে ডাকা শুরু করতাম। আম্মার যে ঘুম পেয়েছে বা ঘুমানো দরকার সেটা আর চিন্তা করতাম না। কি অত্যাচারটাই না করতাম!
বাড়ীতে গেলে আমার সব সময়ের সঙ্গী ছিলো আমার দশ মাসের ছোট চাচাত বোন। সারাদিন ত একসাথে থাকতাম-ই ঘুমাতামও একসাথে। ও ওদের বাড়ী থেকে দাদুর বাড়ী চলে আসতো। রাতে সেহরী খেতাম দুজনে একসাথে। দুধ ভাত টা সেহরীতে খুব জনপ্রিয় খাবার হলেও আমি নরমালিই খাইনা, সেহরীতে ত কল্পনাই করা যায়না। আমি কোন রকমে তরকারী দিয়ে ভাত খেতাম আর আমার চাচাতবোন তরকারী দিয়ে খেয়েও পরে দুধ-ভাত খেতো। তো আম্মা বলতেন তানজি (আমার চাচাত বোন) কি খায় আর তুই কি খাস দেখ!। তানজি দেখাযোতো ঠিকই রোজা রেখেছে কিন্তু আমি কেন যেনো পারতাম না। দশটা-এগারোটায় খিদে লেগে যেতো। আর আমার দাদুত ছিলেন আরেক পাবলিক! রোজা থাকলেই শুরু হতো খাওয়ানোর জন্যে তার চাপাচাপি! উনার চাপাচাপি আর খিদের যন্ত্রনায় রোজা ভেংগে ফেলতাম!
আমি পুরো পুরি রোজা শুরু করি ক্লাস সিক্স থেকে। তখন খুব কষ্ট হতো। এখন চিন্তা করি তখন ছোট ছিলাম দিনও ছোট ছিলো কিন্তু কত কষ্টই না হতো। আর এখন বড় হয়েছি, দিন বড় হয়েছে অথচ তেমন কোন কষ্ট-ই হয় না। সবার কাছে কত কি শুনেছি। আষাঢ় মাসের রোজা, অনেক বড় দিন, অনেক গরম। কিন্তু এতটা গরম ত-এতটা কষ্ট ত হয় না। আল্লাহর রহমতের মাসে রহমত বলেই এমন।
আমরা আগে যে বাসায় থাকতাম সেখানে রোজার সময় অন্য রকম একটা আমেজ ছিলো। সবার সাথে এতটাই ক্লোজ ছিলাম যে এমনো দেখা গেছে সেহরীতে কারো বাসায় যদি খাবার পানির টান পরতো তবে আরেক জনের বাসা থেকে নিয়ে আসতাম। সেহরীর পরও একজন আরেক জনের বাসায় যেয়ে গল্প করতাম। কিন্তু এখনকার বাসায় এসে ভয়াবহ রকম অসামাজিক এক পরিবেশে পড়েগিয়েছিলাম। কারো সাথে কোন যোগাযোগ নেই। এমনো দিন গিয়েছে হলুদ ছাড়া মাছের তরকারী রান্না করে খেয়েছি। কারন আগে খেয়াল ছিলোনা আর আম্মা রান্না করতে যেয়ে দেখেন হলুদ শেষ। আশেপাশের কারো সাথে যাওয়া আশা নেই আর পাঁচ তলা নেমে দোকানে যাওয়ার মত অবস্থাও ছিলোনা। আর ভাইয়া পড়েছিলো বাজে একটা সমস্যায়। আমাদের পাশে দুটো ফ্ল্যাটেই হিন্দু ফ্যামিলি থাকেন। সন্ধ্যায় তারা আগরবাতি-ধুপ কি যেনো দেন যার কড়া গন্ধ। রোজা থেকে সন্ধ্যার আগে সেই কড়া গন্ধে ভাইয়ার খুব সমস্যা হতো। এখন অবশ্য কিছুটা সয়ে গেছে।
কয়েকদিন যাবত টুকরো টুকরো স্মৃতিগুলো বেশ মনে পড়ছিলো। তাই সেগুলোকে একসাথে জড়ো করার চেষ্টায় লেখাটা।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:১৪