ঈদ আসলে প্রায় প্রতিবার-ই আমাদের বাসায় একটা কাহিনী হয়ে যায়, যেটা ঘরে ক্যামেরা বসিয়ে রেকর্ড করলে একটা টেলিফিল্ম হয়ে যাবে। যেমন: রোজার ঈদে আব্বা চান আমরা প্রথম রোজার দিকেই চলে যাই! কোন একসময় ত শবেবরাতের আগেও চলে যেতাম বাড়ীতে আর ফিরতাম ঈদের পরে, এখন কি আর সেই দিন আছে, আব্বাকে সেটা বোঝানো মুশকিল।
ঈদে বাড়ী যাওয়ার আগে ঝামেলা হয় আম্মার, একদিকে আব্বাকে ঠান্ডা রাখে আরেক দিকে ভাইয়াকে ম্যানেজ করে। ভাইয়াতো আরেক পাবলিক। গ্রামে তার ভাল লাগে না, সমবয়সী কেউ নাই তাই সে ঈদের আগের দিন যাবে আর পরের দিন চলে আসবে। এই নিয়ে চলে মিটিং-যুদ্ধ। আমি ভাল মানুষ বাড়ী যাওয়া নিয়ে ঝামেলা-টামেলা তেমন করিনা(আসলে সব সময়-ই করতে থাকিতো )। তবে আমি চিল্লাই এই কারনে, "যেই ভীড়টাই-না পড়বো মইরা যামু" ইদানিং দেখা যায় আমি-আম্মা আগে যাই ভাইয়া একা অথবা আব্বার সাথে যায়।
এই ত গেলো যাওয়া নিয়ে। আমাদের আরেকটা কমন ব্যাপার হলো, দেখা যায় সবাইকে বললাম ঢাকায় ঈদ করবো অথচ ইদের আগের দিন বাড়ীতে! (এখন অবশ্য এরকম হয় না)
০৩ সালে জীবনের প্রথম রোজার ঈদ ঢাকায় করি ভাইয়ার দাখিল পরীক্ষার জন্যে। ঈদের দিন ত কষ্টে বুকটা ফাইট্টা যাইতেসিলো
ঈদের পর দিন গাট্টি-বোচকা নিয়ে বাড়ী
একবার রোজার ঈদের আগে ঠিক হয়েছে ঈদ ঢাকায় করবো। ফ্রেন্ডদের সবাইকে বলে বেড়িয়েছি। আমরা গ্রামে ঈদ করতাম বলে ওদেরও আফসোস ছিলো, তাই ঢাকায় ঈদ করবো বলে ওরাও খুশী। ঈদের সেমাই-চিনি দুধ সব কেনা শেষ। শেষ রোজার দিন সেহরী খেয়ে ভাইয়া নামাজ পড়ে এসে বলে, "ঢাকায় কেউ ঈদ করে! যাদের বাড়ী-ঘর নাই তারা করে ঢাকায় ঈদ"! শুনে আম্মা ব্যাগ গুছিয়ে সেমাই-দুধ-চিনি ব্যাগে নিয়ে রওয়ানা! কিন্তু বাড়ীতে গিয়ে গাল ফুলিয়ে বসে কান্না করছিলাম বান্ধবীদের দাওয়াত দিয়ে চলে এসেছি বলে। সেবার নাকি ওরা আমাদের বাসায় এসে দেখে তালা ঝুলছে বাসায়!
ঈদের আমেজ মোটামুটি সপ্তাহখানে থাকে। তাই ঈদের পরেও ঘোরাঘুরি চলে। দেখা যায় ঈদ ঢাকায় করলেও ঈদের পরের দিন বা তার দুই তিন দিন পরে আমরা গ্রামে চলে যাই আর বান্ধবীরা ফোন দিলে বলি গ্রামে আছি।
আমাদের এই সব তাল বাহানায় সবাই এখন অভ্যস্ত। সবাই জিজ্ঞেস করে ঈদ কোথায় করছি। তখন বলি ঈদের দিন ফোন করে জেনে নিতে কোথায় আছি। আর ঈদের দিন ঢাকায় থাকলেও পরের দিনের নিশ্চয়তা নাই
এবারও একটু দোটানার মধ্যে কাটিয়ে পরে ঠিক-ঠাক হলো ঢাকায় হবে ঈদ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:০৩