আম্মা-আব্বা বাড়ীতে গিয়েছেন কিছু কাজ করতে। আব্বার বিশ দিনের ছুটি। তো রান্না-বান্না আমাকেই করতে হয়। শুক্রবার দুপুরে স্পেশাল কিছু না দেখলে মেজাজ বিলা হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার থেকেই ভাবছিলাম কি রান্না করা যায়। খিচুড়ি না বিরিয়ানী। খিচুড়ী মোটামুটি প্রেশার কুরাকে রান্না করা গেলেও একবার বিরিয়ানী চেষ্টা করেছিলাম। সেটা চরম একটা জিনিস হয়ে গিয়েছিল যদিও এখন আর সে রকম হবে না বরং ভালই হবে ইনশা আল্লাহ। তো শুক্রবার ঠিক করলাম বিয়িয়ানীই করি। যেই ভাবা সেই কাজ। ফ্রীজে দেখি ফার্মের মুরগী আছে(যা সাধারনত আমাদের বাসায় আনা হয় না) সেটাকেই বের করলাম। বিরিয়ানীর সাথে ঠিক করেছিলাম সুরন্জ্ঞনা আপুর বাহারী ইলিশ এর রেসিপী দেখে সর্ষে ইলিশ ভাজা করবো। তো সেই অনুযায়ী একটা ইলিশ মাছে বের করে রাখলাম। এর মাঝে আম্মাকে ফোন দিয়ে মাংস কষানোর সিস্টেম জেনে নিলাম। আমি জানি বিরিয়ানীতে কাঁচা জিরা বেটে দিতে হয় নয়তো কালো হয়ে যায়, বাসায় আছে ভাজা জিরা। আম্মা বললেন ভাজাটাই অল্প করে দিতে। আমি কিন্তু কোন রেসিপি ফলো করে রান্না করিনাই সুতরাং পাক্কা রাধুনীগণের নিকট ভূল-ত্রুটি হলে শোধরানোর দাবী রাখছি
উপকরন:
পোলার চাল= ২ পট(ড্যানিশ দুধের পট)
মুরগীর মাংস= আধা কেজী হবে মনে হয়(জানিনা)
পেঁয়াজ=নানু কাটছে(আমি জানিনা)
আদা+রসুন বাটা= ৩.৫০/৪.৫০ চামচ হবে হয়ত(আমি খুন্তী দিয়ে উঠিয়ে দিয়েছি)
জিরা গুঁড়া= এক চা চামচ(ট্যাংয়ের সাথে যে চামচ ফ্রী দিতো সেই চামচ কিন্তু)
মরিচ= ৪/৫টা হয়ত
গুড়ো দুধ=৪/৫ চামচ
তেতুল= এক চামচ পরিমান তেতুল নিয়ে গোলানো
এলাচি= ৬ টুকরা মনে হয়
দারচিনি=৪/৫ টুকরা(ছোট ছোট করে কিন্তু)
তেল= আন্দাজ মত অনেক বেশী দিছি
লবন যে পরিমান মত দিতে হবে সে আর বলার দরকার নেই
প্রণালী:
মাংস ধুয়ে একটু লবন, আদা রসুন বাটা দিয়ে হালকা ভেজে নিয়েছি। পরে বেশী করে তেল দিয়ে পেঁয়াজ, আদা রসুন বাটা, জিরা দিয়ে নেড়েচেড়ে গুঁড়ো দুধ গুলে দিলাম। আম্মা সাধারনত টক দই এর বদলে লেবু দেন, এরকম গল্প করার সময় এক আন্টিকে বলতে শুনি উনি নাকি লেবু না থাকলে তেতুল গুলে দেন। লেবু ছিল না বাসায় তেতুল খুজে না পেয়ে ভাবলাম সয়াসস দিয়ে দেখি কেমন হয় । পরে সে চিন্তা বাদ দিয়ে তেতুল খুজে বের করে তাই দিলাম। মাংস কষানো হলে চাল ধুয়ে নন স্টিকের পাতিলে আবার আন্দাজ করে তেল দিয়ে পেঁয়াজ ভেজে চাল দিয়ে দিলাম সাথে কিন্তু ২/৩টা তেজপাতা, দারচিনি এলাচি ছিল। চাল পাতিলে লেগে লেগে এলে মাংস দিয়ে কিছুক্ষন কষিয়ে তিন কর পরিমান পানি দিলাম। পানি ফুটে উঠলে পাতিল একটু ঢেকে চুলা থেকে নামিয়ে রেখে দিলাম(আম্মাকে দেখি এরকম করে রাখে তাই ) এর মাঝে মাছ গুলো ভেজে নিলাম। কিছুক্ষন পরে চুলাটা একদম কমিয়ে পাতিল রেখে দিলাম চুলার উপর আর কতক্ষন পর পর উল্টে পাল্টে দিলাম। আম্মাকে দেখি খালি পোলাও রান্না করলে মাঝে মাঝে হালকা জর্দা রং দেন। দেখতে ভাল লাগে। ভাবলাম আমিও একটু বিয়ানীটা রং চং করিনা কেন। দিয়ে দিলাম একটু জর্দা রং।
কিছক্ষন পরে চিন্তা করতে লাগলাম আর কিছু বাকী আছে কি। এর মাঝে চোখে পড়ল ঘি র বৈয়ামটা। ভাবলাম এটাইবা বাদ থাকবে কেন। দিলাম এক চামচ(চা চামচের চেয়ে বড় চামচ গুলো)। এবার ঢেকে দিয়ে গোসল করতে গেলাম। গোসল করে বের হয়ে দেখি এত্ত সুন্দর ঘ্রান বের হয়েছে যে আমিই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না সত্যিই কি এটা আমি রান্না করেছি!!
এর পরে কাহিনীটা না বললেও নিশ্চই সবাই আন্দাজ করেতে পারছেন
এইতো, এভাবেই শেষ হল নীলু'স বিরিয়ানীর অধ্যায়।
খেতে সত্যিই খুব ভাল না হলেও খারাপ হয়নি। কে বলেছে নিলু রান্না পারেনা
পোষ্ট টা দিতে চেয়েছিলাম না, সুরন্জ্ঞনা আপুকে বলাতে আপু বললেন দিতে তাই সাহস করলাম। এজন্যই শুক্রবারের রেসিপি মঙ্গলবার মানে দেরী হয়ে গেল।