একটা সময় ছিল সারা বছর দুটি ঈদের অপেক্ষায় থাকতাম কখন বাড়ীতে যাবো। কারন বাড়ীতে ঈদ মানে সীমাহীন আনন্দ হৈ হুল্লোড় পটকা-তারাবাতী জালানো আরো কত কী। দাদা বাড়ী নানা বাড়ী একেবারেই কাছাকাছি। দাদা বাড়ীর রাস্তায় দাড়িয়ে জোড়ে ডাক দিলেই নানা বাড়ী থেকে শোনা যায়। এত কাছাকাছি হওয়াতে স্পেশাল ভাবে কোথাও ঈদ করা হত না। সারাদিন দুই বাড়ী দিয়ে ঘোরাঘুরি।
ইফতার করেই গ্যাং নিয়ে দৌড়ে রাস্তায় চলে যেতাম চাঁদ দেখতে। চাঁদ দেখা গেলে বাড়ী এসে শুরু হত পটকা ফোটানো আর তারাবাতী জ্বালানো। ঈদের আগের রাতে শেষ রাতেই আম্মা,কাকী, দাদী উঠে রান্না শুরু করতেন। আমি আমাদের বাড়ীতে ঘুমালেও অন্ধকার থাকতেই উঠে আমার জামা-কাপড়, সাজুগুজুর জিনিস নিয়ে সাথে এক ফুপুকে বডিগার্ড নিয়ে লাইট একটা জ্বালিয়ে নানা বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতাম। কখনও কখনও তারা বাতি জ্বালিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে চলে যেতাম। কারন ঈদ হত শীতের সময় আর গরম পানি ছাড়া সকাল সকাল গোসল করবো কিভাবে। নানু আবার যত রান্নাই করুক গরম পানি করতেই থাকতেন কারন নানাভাই, আমার ভাইয়া, মামারা ঈদের নামাজ পড়তে যাবেন গোসল করে। কখনও আব্বাও চলে আসতেন গরম পানি দিয়ে গোসল করার জন্যে। গোসল করে সাজুগুজু করে চাচাত বোনদের সাথে বের হতাম ঘুরতে। সকালের সালামীটা সংগ্রহ করতে ভুল করতাম না
অর্ধেক দিন আশেপাশে ঘোরা হলে চাচাত বোনদের ওদের বাড়ীতে কাজ শেষ হলে বড় চাচার মেয়েদের সাথে যেতাম ওদের মামার বাড়ী। বাড়ীটা ছিল একটু দূরে সারা দিন ঘুরে-টুরে পায়ে ফোসকা পরে যেতো তার পরেও যেতাম কারন সেই বাড়ীতে মজার মজার রং বেরংয়ের পিঠা খেতে দিতো যা আমার কাছে খুব মজা এবং আকর্ষনীয়
লাগত। ওরা ওদের ভাই-বোনদের সাথে গল্পগুজব করত আর আমি মনের সুখে পিঠা খেতাম
সেখান থেকে বড় চাচাত বোনরা ওদের জামাই নিয়ে উপজেলা শহরে যেতো সিনেমা দেখতে। ছোট হওয়ায় ওদের সাথে যাওয়ার অনুমতই পেতাম না। আমাকে আর আমার ছোট চাচাত বোনটা কে বাড়ীতে পাঠিয়ে দিতো
বাড়ীতে ফিরে সকালের উপার্জনটা হিসেব-নিকেষ করে দোকানে চলে যেতাম খাওয়ার জন্যে। বিকেল হলে খুব খারাপ লাগত এত তাড়াতাড়ি দিনটা শেষ হওয়ার জন্যে
এখনও ঈদের দিন বিকেলে খারাপ লাগে। মনে হয় দেড়মাস যাবত যে দিনটার জন্যে প্রস্তুতি নিতে থাকি সেই দিনটা এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল
আর এখন গ্রামে যাওয়ার জন্যে অধীর অপেক্ষায় থাকি না। কারন ঢাকা এবং গ্রামের ঈদ এক রকম ই মনে হয়। ঢাকায় থাকলে তাও বিকেলে বান্ধবী এসে জোড় করে নিয়ে যায় গ্রামে গেলে তাও কোথাও যাওয়া হয়না। শুধু নানা বাড়ী আর নিজেদের বাড়ী এই গন্ডীর মাঝেই ঘোরাফেরা আর খাওয়া দাওয়া। তবে এখনও গ্রামে গেলে আব্বা তারাবাতি কিনে দেন যা ছোট ছোট চাচাত ভাই এবং মামাত বোনের সাথে মজা করে জ্বালানো হয়।
গ্রামেও এখন আর সেই আগের মত হৈ-হুল্লোড় হয় না। ঘুরতে ঘুরতে পায়ে ফোস্কা পরে গেলেও গ্রামের সেই ঈদকে খুউব মিস করি। জানি সেই দিনগুলো আর ফিরে আসবে না। যা সম্ভব তা হল বসে বসে স্মৃতি রোমন্থন করা। এখন সেটাই করি।
ঈদ মোবারক সবাইকে। আপণ জনের সাথে সবার ঈদের দিনটি কাটুক অননে...ক আনন্দে। সেই কামনাই রইল সবার জন্যে