রাইসুডাঙা আর ডটরাসেলপুরের বাসিন্দাদের মধ্যে প্রপিতামহের কাল হইতে কোন্দল বিরাজমান। তাহারা একে অন্যের প্রপিতামহীকে লইয়া অসম্মানজনক উক্তি করে, ক্ষণে ক্ষণে নিজেদের গুপ্তকেশের রেফারেনস টানিয়া আনিয়া শ্লেষোক্তি করে, এবং একে অন্যের কীর্তি লইয়া বিদ্রুপের শেল হানে। যদিও হাটবারে বাকিবিল্লারহাটে উভয় গ্রামের মানুষই সমবেত হয়, গুড় দিয়া মুড়ি খায় আর চা পান করে, মৃদুমন্দ তর্কাতর্কিও হয়, কিন্তু স্ব স্বগ্রামে ফিরিয়া তাহারা একে অন্যের মুন্ড চিবাইয়া খায়। দুই গ্রামের মাঝে খরস্রোতা পিয়াল নদী বহমান, তাহারা নদীর দুই কূলে দাঁড়াইয়া মাঝে সাঝে একে অন্যের দিকে মধ্যমা প্রদর্শন করিয়া থাকে, এমনও দেখা গিয়াছে। সাক্ষাতে অহিংস হইলেও আবডালে তাহারা বড় মারকুটিয়া।
তবে বিশ্বকাপ ক্রিকেট শুরু হইবার পর দৃশ্যত দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে মহব্বত বৃদ্ধি পাইলো। রাইসুডাঙার লোকেরা ডটরাসেলপুরের বংশঝাড় হইতে বাঁশ কাটিয়া লইয়া তাহাতে লালসবুজ পতাকা টাঙ্গাইলো, আবার ডটরাসেলপুরের বাসিন্দারা জনৈক লাল পিরান ও সবুজ লুঙ্গিপরিহিত রাইসুডাঙাবিকে পাকড়াও করিয়া নিজেদের ডান্ডায় পতাকা আঁটাইয়া উড়াইলো। আশেপাশের কয়েকটি গ্রামেও এই উৎসাহ ছড়াইয়া পড়িলো। রাগিমন্দহ গ্রামের থিয়েটার দল ক্রিকেট উপলক্ষে মর্মান্তিক করুণ নাটক মঞ্চস্থ করিলো, অরূপকাঠির মিস্ত্রিরা বিনামূল্যে পাঁচগ্রামের রেডিও মেরামত করিয়া দিতে লাগিলো। ক্রিকেট বলিয়া কথা। সকলকে শুনিতে হইবে, জানিতে হইবে, নাচিতে হইবে।
সকলেই দেশকে লইয়া নাচানাচি করিতেছে, শুধু ত্রিভূজনাইয়ার অধিবাসীদের মন খারাপ। তাহাদের পাকি পিতার পুত্ররা হারিয়া গিয়াছে। মনের দুঃখে তাহারা গ্রামের বিকৃতমস্তিষ্ক আশুপাগলাকে উসকাইয়া দিয়াছে নতুন করিয়া ইতিহাস রচনার। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আশু পাগলা যা মুখে আসে বকিতেছে।