অজপাড়াগাঁয়ে যখন প্রবল কোন্দল শুরু হইল, ডাগদর সাব দারাপুত্রপরিবার লইয়া গ্রামত্যাগ করিলেন। বলিলেন, পুরস্কার পাইয়াছি, গঞ্জে গিয়া দিন কতক বেড়াইয়া আসিব, কন্যাটি আব্দার ধরিয়াছে মেলা দেখিবে। গাঁয়ের লোক তখন কোন্দল নিয়া ব্যস্ত, তাই তাঁহাকে পাত্তা দিল না।
ডাগদর সাব গঞ্জে গিয়া হেটো মেঠো বক্তৃতা দিয়া গঞ্জ গরম করিয়া ফেলিলেন। বলিলেন, এই যে দেখিতেছেন আমার হাতে ক্ষুদ্রসূঁচিকা, ইহাই সর্বরোগের মহৌষধ। মরার পোঁদে দিলে সে জ্যান্ত হইয়া উঠিয়া হাঁটাহাঁটি করে। কলেরার রোগীকে দিলে সে টাটকা হইয়া মশারি কাচা শুরু করিয়া দেয়। বাতের রোগীকে দিলে সে লাঠি খেলায় রুস্তম হইয়া ওঠে। ভাইসব, এর মূল্য দশ টাকা, কিন্তু আপনাদের জন্য মাত্র দুই টাকা দুই টাকা দুই টাকা।
ঐদিকে স্বগ্রামে চলিতেছে তুমুল কোন্দল। লাঠালাঠি গোলাগুলি। লোকক্ষয় হইতেছে সমানে।
ডাগদর সাব কিন্তু গঞ্জ হইতে গঞ্জে ঔষধ ফেরি করিয়া চলিতেছেন। সাথে দারাপুত্রপরিবার। তারা মেলা দেখে, মুড়কি খায়।
গাঁয়ে কোন্দল একটু স্তিমিত হইবার পর ডাগদর সাব ফিরিলেন। গাঁয়ের এক পক্ষের চাঁই খোকা মুনশি বলিল, ডাগদর সাবকে সংবর্ধনা দিতে হইবে। তিনি প্রকান্ড এক খেমটা নাচের আসর বসাইলেন। পাঁচ গাঁয়ের লোক আসিল সেই নাচ দেখিতে। নাচগান শেষে ডাগদর সাব উঠিয়া বলিলেন, গতকাল আমি স্বপ্নে এক আশ্চর্য ঔষধ পাইয়াছি। এক সাধুবাবা আমাকে আসিয়া বলিলেন, ওরে ডাগদর, তোর গাঁয়ে দেখিতেছি কাক তিষ্ঠাতে পারে না, এত হল্লা মারপিট। ইহা বন্ধ করিতে হইবে। সকলে মিলিয়া খাইতে হইবে। কেউ খাইবে, কেউ খাইবে না, তাহা হইবে না হইবে না। এক কাজ কর, গাঁয়ের লোকদের বল তিনটা করিয়া বিবাহ করিতে। তার মধ্যে দুটি বউ সে নিজে ভোগ করিবে, তৃতীয়টিকে বর্গা দিবে পড়শির কাছে। সকলেই এই কর্ম বৃত্তাকারে করিলে সকলের সাথে সকলের বউতুতো ভাই সম্পর্ক স্থাপিত হইবে। তখন আর কেহ মারপিট করিবে না। কুটুম্বিতাই উৎকৃষ্ট পন্থা। ইহা হইল গিয়া শান্তির "এক তৃতীয়াংশ" ফরমূলা।
গ্রামের আবালবৃদ্ধবণিতা এই আবাল ফরমূলা শুনিয়া স্তব্ধ, ডাগদর সাব বলে কী? কিন্তু অনেকেই আবার হইহই রইরই করিয়া তাঁহার নামে জয়ধ্বনি আর নারা তুলিল।
হাউকাউয়ের ফাঁকে ডাগদর সাব মিহি গলায় বলিলেন, আর নদীর ঘাটটা উন্মুক্ত করিয়া দিতে হইবে। এই গাঁয়ের লোক এত গ্রামপ্রেমিক, তাহারা সকলের সাথে মিলিয়া উন্নয়ন করিবে, পাঁচ গ্রামের লোক এই গ্রামের ঘাট ব্যবহার করিয়া উন্নতি লভিবে, এখন সময় এগিয়ে যাওয়ার, লেটস মুভ লেটস মুভ।
যেইসব রোগী ডাগদর সাবের পুরাতন ফরমূলা ব্যবহার করিয়াও রোগের উপশম পায় নাই, তাহারা চুপিসারে উঠিয়া গেল, শক্ত দেখিয়া লাঠির সন্ধানে। ফেরিওয়ালা ডাগদর বহুৎ আবঝাব বকিয়াছে, এখন প্যাঁদানিই তাকে আরোগ্য করিবার সবের্াৎকৃষ্ট ফরমূলা।