আগের পর্ব
Click This Link
সিঙ্গাপুর তো পৌছে গেলাম। আমাদের ইচ্ছা যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফেরা। তবে তার আগে অবশ্যই বার্ডস পার্ক আর সেন্তোজা দেখে নিতে হবে। পরদিনের প্ল্যান হল সকালে বার্ডস পার্ক আর বিকেলে সেন্তোজা আইল্যান্ড যাওয়ার। সেন্তোজাতেই সারাদিন ঘুরলেও দেখা শেষ হয় না। কিন্তু আমাদের পানিতে দাপাদাপি করার ইচ্ছা নেই। ৪বছর আগে আমি একবার সেন্তোজার 'সং অব দ্য সি' দেখেছিলাম। তখনই ইচ্ছা ছিল বাসার সবাইকে এনে দেখানোর। এবারও শুধুমাত্র সং অব দ্য সি দেখব বলেই ঠিক করলাম। আরেকটা ব্যাপার আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম যে আমরা এই ট্যুরে শুধুমাত্র পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করব। ব্লগার মিজানের (Click This Link) পোস্ট থেকে সিঙ্গাপুরের এমআরটি এর ম্যাপ (Click This Link) নিয়ে নিয়েছিলাম তাই।
সকালে বের হতে দেরী হয়ে গেল। ভাবলাম পথে কিছু খেয়ে নিব। কিন্তু পথে আর তেমন কোন সুযোগ হল না। সেরাঙ্গুন থেকে জুরং বার্ডস পার্ক রওয়ানা হলাম। ফেরার পার্ক থেকে জুরং বার্ডস পার্ক এমআরটি-তে যেতে বুন লে নামতে হবে। মাঝে অবশ্য অটরাম পার্কে একবার ট্রেন বদল করতে হবে। আমি বুঝলাম না এক টিকেটে যাওয়া যাবে নাকি দুইবার টিকেট কাটতে হবে। টিকেট কাউন্টারে জিজ্ঞেস করব ভেবে স্টেষনে গিয়ে দেখি কোন কাউন্টার নেই! একটি প্যাসেন্জার কেয়ার সেন্টার আছে অবশ্য। তবে টিকেট নিজে নিজে মেশিন থেকে কাটতে হবে। যা আছে কপালে বলে একবারে লাস্ট স্টেষনের টিকেটের জন্য দিলাম। মেশিনের সাথে ম্যাপ দেয়া আছে। ম্যাপের যে জায়গায় যেতে চাই সেখানে চাপ দিলে শক্ত একটি কার্ড চলে আসে। দুইজনের জন্য দুইটি কার্ড নিয়ে যাত্রা হল শুরু। একটি চৌরাস্তার প্রায় সব দিক দিয়েই স্টেষনে ইন এবং আউট হওয়া যায়। স্টেষনের কিছু পর পরই নির্দেশিকা দেয়া আছে কোনটা কোথায়। তাই দেখে দেখে নিজেরাই গিয়ে পৌছলাম ট্রেন লাইনে। দুইদিকেই ট্রেন লাইন। শেষ স্টেষনের নামে বুঝানো আছে কোন লাইনে কোন ট্রেন যাবে। তা দেখে উঠে পড়লাম এক ট্রেনে। মাঝে আরেকটি স্টেষনে নেমে পরের ট্রেনে উঠলাম। এভাবে পৌছে গেলাম বুন লে স্টেষনে। ট্রেনে বয়স্ক, গর্ভবতী মহিলা, অসুস্থ ব্যক্তি আর বাচ্চাসহ মানুষের জন্য প্রায়োরিটি সিট আছে। আমার বাচ্চা আমাকে সিটে বসতে দিবে না। তাকে কোলে নিয়ে দাড়িয়েই থাকতে হবে। তাই আমি ট্রেনে বসি নাই। এই সময়ে কতজন এমনকি বয়স্ক ব্যাক্তিরা তাদের সিট আমাদের জন্য ছেড়ে দিতে চেয়েছে।যদিও বয়স্ক হিসেবে তারও ঐ সিটে বসার অধিকার আছে। এমনকি আমার ছেলে ট্রেনে কান্না করায় তারা আমার ছেলেকে আদর করে কান্না থামাতেও চেয়েছে। তাদের এই সহৃদয় ব্যবহার আমার মনে থাকবে। বুন লে স্টেষনের বাইরেই বাস স্টেষন। এবার সেখান থেকে নির্দিষ্ট লাইনের বাস ধরে জুরং বার্ডস পার্ক। আগে এই বার্ডস পার্কে স্কাই ট্রেন ছিল। এখন মনোকার দিয়ে পুরো পার্ক ঘুরিয়ে দেখায়। অপূর্ব সুন্দর এই বার্ডস পার্ক। আমি আর বর্ননা দিলাম না। যারা যাবেন দেখে বুঝে আসবেন। আবার আগের রুটে হোটেলে ফিরলাম। দুপুরে খেয়ে আবারো বের হলাম সেন্তোজা আউল্যান্ডের জন্য। প্রায় একই রুটে তবে এবার আর ট্রেন বদল করতে হল না। তবে আইল্যান্ডে যাবার জন্য এপার থেকে মনোরেলে উঠতে হল। কেবল কারেও যাওয়া যায়। সং অব দ্য সি এর বর্ননাও দিলাম না। দর্শনার্থীদের উপর ছেড়ে দিলাম এর আনন্দ নেবার দায়। সেখানে আমরা বসে অপেক্ষা করছি শো দেখার। এমন সময় এক বুড়ো ভদ্রলোক আর তার স্ত্রী-কে বললেন, এসো আমরা এখানে বসি, ইনারা আমাদের দেশেরই লোক।' হঠাৎ করেই এই অপরিচিত ফ্যামিলি যেন আমাদের খুব আপন হয়ে গেল। আমার ছেলে এই কয়দিন তার দাদা-নানাকে খুব মিস করেছে। এবার এই ভদ্রলোককে দেখিয়ে বলেছি 'এইটা তোমার একটা দাদা'। তারাও আমাদের সাথে খুব গল্প জুড়ে দিলেন। আমরা যার যার সাথে থাকা খাবার শেয়ার করলাম। মনে হল কত যেন আপন। এই সময়টাও খুব ভাল কেটেছে।
সেখান থেকে ফিরে ঢাকায় আমার ট্রাভেল এজেন্টকে ফোন করে পরের দিনের টিকেট বুক করতে বললাম। সে পরদিন দুপুরের টিকিট কনফার্ম করে দিল। নিবিষ্ট মনে এবার শেষ কেনাকাটা করতে বের হলাম। তবে এমন কিছুই কেনা হয় নি। এমনকি ১০০ ডলারেও শপিং হয় নি। পরদিন দুপুর ০২.৫৫ টায় ফ্লাইট। হোটেল থেকে ১২টায় বের হয়ে এমআরটি-তেই যাব বলে ঠিক করলাম। এর আগে একটা সর্ট ট্যুর দিলাম চায়না টাউন। তবে বিশেষ কিছু দেখা হয় নি। ১২টায় ফিরে আবার ট্রেনে করে চেঙ্গি। এক্ষেত্রে ৩বার ট্রেনে উঠতে হল। এমআরটি-তে টিকেট হিসেবে যে কার্ড দেয় তা আবার মেশিনে ফেরত দিলে ১সিং ডলার ফেরত দেয়। এইটা আমি জানতাম না তাই সব কার্ড ফেলে দিয়েছি। ট্রেন গিয়ে থামল ১নং টার্মিনালে। সেখান থেকে আবার স্কাই ট্রেনে চেক-ইন কাউন্টারে। আমরা সবসময় তাড়াহুড়া করে এয়ারপোর্টে যাই আর ফিরে আসি। কখনও খেয়াল করি না যে এই এয়ারপোর্টও একটা দ্রষ্টব্য হতে পারে। এইটা শুধুমাত্র ট্রানজিট যাত্রীরাই বুঝতে পরে। এয়ারপোর্টও যে মনমুগ্ধকরভাবে সাজানো যায় তা সিঙ্গাপুরের চেঙ্গি এয়ারপোর্ট দেখে বুঝলাম।
একদম শর্ট একটা ট্যুর শেষ করে ফিরে আসলাম দেশের মাটিতে। যেখানেই গিয়েছি সুন্দর সিসটেমিক সমাজ ব্যবস্থা দেখে এসেছি। কোথাও কোন কথা নেই,পুলিশ দেখছে না বলে চলে রাস্তা পার হওয়ার ভ্যাপার নেই, হর্ন নেই, রিকোয়েস্টের ব্যাপার নেই। সিসটেমে যার যার মত করে এগিয়ে যাচ্ছে। দর্শনীয় স্থান নয় বরং মানুষের সহৃদয় ব্যবহার আর সুন্দর লাইফ স্টাইলের কথা বলার জন্যই এই পোস্টগুলো লিখেছি। আশা করি পরের আরেকটি পর্ব লিখব। সেখানে ট্যুরের গল্প বাদ দিয়ে কিছু গাইড লাইন আর সমাজ ব্যবস্থা নিয়ে লেখার চেষ্টা করব। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।