বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় উদারপন্থী, ধর্মনিরেপক্ষ, অসামপ্রদায়িক যেসব কবি সাহিত্যিক কিংবা লেখক রয়েছেন তাদের মধ্যে সৈয়দ শামসুল হকের অবস্থান অনেক উর্ধ্বে। দীর্ঘদিন যাবত বাংলা সাহিত্যে তার অবস্থান বেশ শক্তিশালী। জাতীয় পুরস্কার সহ বিভিন্ন পুরস্কারে উজ্জল হয়ে আছে তার দীর্ঘ পথ পরিক্রমা। যদিও বর্তমানে জাতীয় পুরস্কারের বিষয়টি বিতর্কিত। যাহোক পূর্বের সমস্ত ঘটনাকে ছাপিয়ে বর্তমানের একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই কথাগুলো বিশিষ্ট কবি সৈয়দ শামসুল হক সমীপে।
সাইয়্যেদ/সৈয়দ শব্দটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদবী। নবী বংশের ব্যক্তিদের নামের পূর্বে সাইয়্যেদ শব্দটি ব্যবহৃত হত। এছাড়া ইসলামের প্রাক যুগে সম্মাণিত ব্যক্তিদের নামের পূর্বে ব্যবহৃত হত। বর্তমানে যা নতুন করে লাগানোর সুযোগ নেই। এছাড়াও সাইয়্যেদ বংশের ব্যক্তিদের বেলায়ও কিছু ইসলামি দিক নির্দেশনা রয়েছে। সেটা ভিন্ন বিষয়। এখানে সাইয়্যেদ/সৈয়দ শব্দটির উল্লেখ এ কারণে হল যা কবি শামসুল হক সাহেবের নামের পূর্বে ব্যবহৃত। এমনিতেই উনি বাংলার একজন খ্যাতিযশা সম্মাণিত ব্যক্তি তার উপর সৈয়দ, যা ইসলামেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দু দিক দিয়েই তিনি সম্মাণিত। অথচ ওনার মত একজন সম্মাণিত ব্যক্তির কাছে থেকে ইসলাম এমন এক অসম্মাণ পেল যা কল্পনাতীত।
গেল ঈদুল ফিতরে দৈনিক প্রথম আলোর বিশেষ সংখ্যায় ‘মরা ময়ূর’ নামে তার একটি কাব্যনাট্য বা নাট্যকাব্য প্রকাশ পেয়েছে। যাতে তিনি ভোরের কাককে আহ্বান করেছেন খুব জোরে কা কা করতে, যাতে মুয়াজ্জিনের আজানটা যেন ডুবে যায় বা শোনা না যায়।
জানা নেই আজানের সাথে তার কি শত্রুতা, যার জন্য তিনি কাকের কাছে আকুতি পেশ করছেন। এর পূর্বেও বাংলাদেশের কিছু বিখ্যাত ব্যক্তি আজানকে নিয়ে কটুক্তি করেছিল। তাদের অনেকেই এ ধরায় নেই। কিন্তু আজান আছে, চলছে, আগামী দিনেও চলবে। যদিও এই বিষয়টি হল হাইলাইট হওয়ার এক চমৎকার মাধ্যম। বেশকিছু এই ধারা অব্যহত রাখতে পারলে জুটে যায় জাতীয় পুরস্কার। হয়ত কবির কাছে আজানের সুর অপেক্ষা কাকের সুর বেশি মধুর লেগেছে, তাই হয়ত কাকের সুরকে আজানের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন কিংবা আজানকে মুছে দিয়ে কাকের সুরকে চালু রাখতে চাইছেন। কিন্তু মজার বিষয় হল ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন (যিনি আজান দেন) হযরত বিলাল রা. ছিলেন সাইয়্যেদ/সৈয়দ।
আজান একটি ধর্ম বিশ্বাসের সাথে জড়িত। ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই আজান। বিভিন্ন ধর্ম বিশ্বাসে বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। যেমন: হিন্দুরা ঘন্টা বাজিয়ে পূজা বা প্রার্থনা করে, উলুধ্বনি দেয়। খ্রিষ্টানদের গির্জা থেকে নকুশ বা ঘন্টা বাজানো হয়। ইহুদিরা শিঙ্গায় ফুক দেয়। এগুলো ধর্মীয় বিধি নিষেধ। যা মানুষের আবেগের সাথে জড়িত। কিন্তু একজন মুসলমান হয়ে কিভাবে আজানের সাথে বিরোধিতা পোষন করে তা বোধগম্য নয়। শুধু বিরোধিতা নয় তাকে কতটুকু নিকৃষ্ট পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায় তার নগ্ন উদাহরণ পেশ করলেন কবি শামসুল হক।
আজান নিয়ে এমন বাজে কটুক্তি নতুন নয়। পূর্বেও কবি শামসুর রহমান, যিনি বাংলার অলিখিত জাতীয় কবি, তিনিও আজানকে বেশ্যার গানের সাথে তুলনা করেছেন। বর্তমানে ধর্ম নিরেপক্ষতা মানে কি আমার তা জানা নেই। হয়ত কোন ধর্ম পালন না করার নাম ধর্ম নিরেপক্ষতা কিংবা সকল ধর্ম পালন করার নাম। এতে কোন সমস্য নেই। কেউ ধর্ম পালন না করলে এতে কারো কিছু যায় আসে না। কিছু বলারও নেই। কিন্তু অন্য ধর্মকে আঘাত করার সংজ্ঞা কি তা হয়ত আবার নতুন করে জানতে হবে। বিশেষ করে ইসলামকে। আর সে আঘাত যদি আসে স্বধর্মীয়দের কাছে থেকে। এর আগেও ইসলামকে কটাক্ষ করে অনেকেই অনেক কিছু বলেছেন। জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কৃত হয়েছেন। নাম যশ হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন তসলিমা নাসরিন। বর্তমানে তিনি নির্বাসিতা। আমার জানা নেই কবি শামসুল হকের ধর্ম বিশ্বাস কি? জানার আগ্রহও নেই। কিন্তু তার সমীপে কিছু বলার আছে। আপনারা ধর্ম কর্ম পালন করুন বা না করুন, তাতে কারও কিছু বলার নেই। দয়া করে ধর্ম বিশ্বাসীদের মনে আঘাত দিবেন না। আপনাদের যদি কোন আদর্শ থাকে তা প্রচার করুন। কেউ তো বাধা দিচ্ছে না। যদি ইসলামকে পছন্দ না হয় তবে অন্য ধর্ম বিশ্বাস গ্রহণে কোন বাধা নেই। তাই বলে নিজের মত, আদর্শ প্রচার করতে গিয়ে অন্য ধর্মকে বিদ্রুপ করা নিদেনপক্ষে জ্ঞানী লোকের কাজ না।