somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিন্দু শিক্ষককে কান ধরে উঠ-বস: আসল ঘটনাটা কী

১৮ ই মে, ২০১৬ সকাল ৭:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঘটনাস্থল পিয়ার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের নির্দেশনায় এক ব্যক্তি কান ধরে উঠ-বস করছেন।
যে ব্যক্তিকে কান ধরে উঠ-বস করতে দেখা যাচ্ছে তিনি নারায়ণগঞ্জের কল্যান্দি এলাকার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত।

সে শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে তিনি ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করে শ্রেণীকক্ষে মন্তব্য করেছেন।

কিন্তু শ্রেণীকক্ষের এই কথিত ইসলাম বিরুদ্ধে মন্তব্য কিভাবে এতটা জটিল আকার ধারণ করলো? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে মঙ্গলবার আমি গিয়েছিলাম কল্যান্দি গ্রামে।

প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত।

গ্রামের সবার মাঝেই এখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। গ্রামে ঢুকেই দেখলাম একদল কিশোর স্কুলের মাঠে ফুটবল খেলছে। এদের মধ্যে একজন পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র। তার নাম মো: মৃদুল। এই দশম শ্রেণীর একটি ক্লাসেই প্রধান শিক্ষক ইসলাম ধর্ম অবমাননা করে মন্তব্য করেছেন।

কী ছিল সে মন্তব্য? দশম শ্রেণীর ছাত্র মো: মৃদুল বলেন, একজন শিক্ষকের ক্লাসে শিক্ষার্থীরা হট্টগোল করছিল। এমন সময় প্রধান শিক্ষক সে ক্লাসের পাশ দিয়ে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত যাচ্ছিলেন।

ছাত্র মৃদুলের বর্ণনায়, “হেড স্যার আইয়া ক্লাসের ভিতরে দাঁড়াইছে। তারপর বলতাছে তোগো আর শিক্ষা হবে না। তোরা অনেক কথা বলছ। শিক্ষকদের কথা শুনছ না। শুনবি কিভাবে? তোগো আল্লাহও নাপাক তোরাও নাপাক। ”

দশম শ্রেনীর ছাত্র রিফাত হাসান।
যেদিন এ ঘটনা ঘটে সেদিন ছিল রোববার। সে একই দিন বিকেলে দশম শ্রেণীর আরেকজন ছাত্র রিফাত হাসানকে প্রধান শিক্ষক বেধড়ক পিটিয়েছে বলে অভিযোগ উঠে।

এ বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থী রিফাত হাসান স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির কাছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত নালিশ করেন। সে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার সকাল দশটায় স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির বৈঠক বসে।

কিন্তু প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত জানালেন তিনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আগে থেকে জানতেন না। ম্যানেজিং কমিটির বৈঠকে এসে তিনি এটি জানতে পারেন।

প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত বলেন, সে একই বৈঠকে তার বিরুদ্ধে আকস্মিকভাবে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনা হয়।

কিন্তু প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধ অভিযোগকারী ছাত্র বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, তিনি তার লিখিত অভিযোগে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম অবমাননার কোন অভিযোগ আনেননি।

কিন্তু প্রধান শিক্ষক ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করে মন্তব্য করেছেন বলে দাবী করেন অভিযোগকারী ছাত্র রিফাত হাসান।
তিনি বলেন , “ আমার ক্লাসে একশ ছাত্র-ছাত্রী আছিলো। এই ব্যাপারটা সবাই শুনছে। শুধু আমি একলা শুনি নাই। ” যদি প্রধান শিক্ষক ইসলাম ধর্মকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেই থাকেন তাহলে লিখিত অভিযোগ সে বিষয়টি উল্লেখ করা হলো না কেন?
জবাবে ছাত্র রিফাত হাসান বলেন, “ সব ছাত্ররা একলগে কইছে আন্দোলন করব। সেজন্য উল্লেখ করি নাই।”

পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কিছুটা দুরেই একটি মসজিদ আছে।

শুক্রবার ম্যানেজিং কমিটির বৈঠক যখন চলছিল তখন সে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলা হয় প্রধান শিক্ষক ইসলামকে অবমাননা করেছে এবং এলাকার মুরুব্বিদের স্কুলের আসতে আহবান জানানো হয়। কিন্তু মসজিদের ভেতরে ঢুকে মাইকে ঘোষণা দিল কে? এটি এক বড় প্রশ্ন। মসজিদের ইমাম মাহমুদুল হাসান বিবিসিকে জানিয়েছেন, কে এই ঘোষণা দিয়েছে সেটি তার জানা নেই।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, এই ঘোষণার পর স্কুলের মাঠে কয়েকশত মানুষ জড়ো হয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় তখন তাদের মধ্যে কয়েকজন মিটিং রুমের ভেতরে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে পিটিয়েছেন।

এমন অবস্থায় উপজেলা কর্মকর্তা মৌসুমী হামিদকে খবর দেয়া হয়। তিনি ঘটনাস্থলে আসেন দুপুর সাড়ে ১২টায়।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান , “ ম্যানেজিং কমিটির কাছে অভিযোগ ছিল যে উনি (প্রধান শিক্ষক) ছাত্রকে মেরেছেন। সেটার বিচার হচ্ছিল।”

তিনি বলেন, উত্তেজিত জনতাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেখানে যায়। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেবার অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তেজিত মানুষজন সেখানে জড়ো হয়েছিল বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান।

তিনি বলেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবার আশংকায় স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে খবর দেয়া হয়। বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ সেলিম ওসমান সেখানে উপস্থিত হন

কোন কোন গ্রামবাসী এবং সেলিম ওসমানের সমর্থকরা বলছেন প্রধান শিক্ষককে কোন অপমান করার উদ্দেশ্যে নয়, বরং তাকে উত্তেজিত জনতার হাত থেকে রক্ষার জন্যই কানে ধরে উঠ-বস করানো হয়েছে।



সংবাদটি এক ক্লিকে পড়তে
http://www.bbc.com/bengali/news/2016/05/160517_narayanganj_school_teacher_humiliation_selim_osman#share-tools
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৬ সকাল ৭:৩১
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুহাম্মদ ইউনূসকে একঘরে করে দিন

লিখেছেন sabbir2cool, ২৪ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৭


জুলাই ষড়যন্ত্রের অপমৃত্যু ঘটতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। গত বছরের জুলাইয়ের মেটিকুলাস ডিজাইনড প্ল্যানে দেশবিরোধী যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, সেটার অপমৃত্যু ঘটতে যাচ্ছে। দখলদার ইউনূস সরকার প্রবল চাপে পড়েছে। এখন তাদের সব কূল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না : ড. ইউনূসের মনে কেন এমন আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৪ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৯


দৈনিক সমকাল থেকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর বরাতে আমরা জানতে পারি —প্রশাসন, পুলিশ এবং নির্বাচন কমিশনের ওপর সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই—নির্বাচনের পূর্বপ্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে এক গভীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার নাই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৪ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৩

একটা পোস্ট দেখে লেখার সাধ জাগলো। যা নিয়ে লিখবো তা আমার নেই।
আমার দাদা-দাদি, নানা-নানি কেউ নেই। বাবা মা যখন ছোট ছিলেন তখনই তারা পরপারে উড়াল দিয়েছেন। বাবার বয়স যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনৈতিক সংকটে বিএনপি খেলছে পিছনে থেকে, কিনতু কেন?

লিখেছেন সরলপাঠ, ২৪ শে মে, ২০২৫ রাত ১০:২১

রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্বশীলতা শুধুমাত্র রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ এখনও ক্ষমতায় থাকত। রাজনীতি গড়ে উঠে গণমানুষের পারসেপসনের উপর ভিত্তি করে। প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিএনপির বৈঠকের পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ই সঠিক

লিখেছেন ইশতিয়াক ফাহাদ, ২৪ শে মে, ২০২৫ রাত ১০:৫৯

কিছু মানুষ পুরোপুরি ভুল ধারণার উপর ভিত্তি করে বাঁচে। তারা বারবার যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে চায় যে, তাদের কথাই একমাত্র সত্য। এই প্রক্রিয়াটি এক ধরনের লজিক্যাল ফ্যালাসি বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×