যুগে যুগে এমন অনেক শাসক অতিবাহিত হয়ে গেছে যারা তাদের জুলুম, নির্যাতন ও হত্যার কারণে ইতিহাসের পাতায় কলঙ্কিত হয়ে আছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সকল জালেমই ছিল আলেমদের রক্ত পিয়াসী। কালের পরিক্রমায় তাদের প্রেতাত্মারা আজো আমাদের মাঝে আছে। কিন্তু জালেমরা আলেমদের রক্ত ঝরাতে কেন এত ভালবাসে? এর পরিণতিই বা কী হয়? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই এক জালেম কর্তৃক আলেম হত্যার পরিণতি চিত্রিত হয়েছে এই দৃশ্যকাব্যে..........
(প্রথম অঙ্ক)
‘সাঈদ ইবনে যুবাইর মসজিদে নামাজরত। তিনি দীর্ঘ সময় নিয়ে কিয়াম, রুকু, সিজদা এবং দু‘সিজদার মাঝেকার বৈঠকগুলো আদায় করছিলেন। প্রকৃত নামায যেমন সুন্দর হয় ঠিক তেমন করে ।
কয়েক মিটার দূরত্বে বসে আছেন একদল মানুষ। এদের মধ্যে মিনহাল বিন আমর, আমর বিন আলা, ওয়াফা বিন আয়াস ও ইসমাইল বিন আবদুল মালেক উল্লেখযোগ্য।
একজন অপরিচিত ব্যক্তি তাদের দিকে এগিয়ে এল। সবাই একযোগে তার দিকে তাকাল। সাঈদ ইবনে যুবাইর তখন নামাজ পড়ছিলেন.........।
আগন্তুক : কে এই কৃষ্ণকায় শায়খ যিনি এমন বিনয়-ন¤্রতার সাথে নামায পড়ছেন?
মিনহাল : ভাই, মনে হচ্ছে আপনি কোন ভিনদেশী লোক?
আগন্তুক : হ্যাঁ ভাই, আমি একজন ব্যবসায়ী ও মুসাফির মানুষ। কিন্তু এই কৃষ্ণকায় ব্যক্তিটি কে?
আমর : তিনি সুপ্রসিদ্ধ ও বিখ্যাত আলেমেদীন সাঈদ ইবনে যুবাইর। কুফার অন্যতম বড় তাবেঈ।
আগন্তুক : আহ!.... কী চমৎকার তার নামায!
আমর : কেনইবা তার নামায এত সুন্দর ও চমৎকার হবে না? তিনিতো হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর ছাত্র, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. এর ছাত্র।
মিনহাল : একদিন তার উস্তাদ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. তাকে বললেন, তুমি আমাকে হাদীস বর্ণনা করে শোনাও। তখন সাঈদ বললেন, আমি আপনার সামনে হাদীস বর্ণনা করব?
আমর : এ কথা শুনে ইবনে আব্বাস রা. বললেন, আমার সামনে হাদীস বর্ণনা করার এমন সুযোগ তোমার উপর আল্লাহর তাআলার নেয়ামত নয় কি? যদি ঠিক ঠিক বল তাহলে তা আপন অবস্থায় বাকী থাকবে। আর যদি কোন ভুল করে ফেল তাহলে আমি তোমাকে সংশোধন করে দিব।
আগন্তুক : তার এই বৈশিষ্ট্য চিরঞ্জীব হোক। তিনি আপন উস্তাদ নির্বাচনে যথার্থতার পরিচয় দিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. ....।
আমর : যখন আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. অন্ধ হয়ে গেলেন, সাঈদ তার পক্ষ থেকে ফতোয়া লিখে নিতেন।
মিনহাল : সাঈদ ইবনে আব্বাস রা. থেকে অনেক ইলম অর্জন করেছেন। ইলমে ক্বিরাআত অর্জন করেছেন। তাফসীর শিখেছেন এবং তার সূত্রে অনেক হাদীস বর্ণনা করেছেন।
আগন্তুক : তার বৈশিষ্ট্য, গুণাবলী ও শ্রেষ্ঠত্ব দীর্ঘায়িত হোক।
মিনহাল : আমি সাঈদের কাছ থেকে ইলমে ক্বিরাআত অর্জন করেছি।
আমর : আমি করেছি। তিনি আমার উস্তাদ এবং মিনহালেরও উস্তাদ। অসংখ্য মানুষ তার কাছ তেকে ইলম অর্জন করেছে।
মিনহাল : ইলম অর্জনের পাশাপাশি তারা তার কাছ থেকে পরকাল মুখীতা, তাকওয়া ও খোদাভীতি এবং সত্যবাদিতার সরল পাঠও শিখেছে।
আমর : কিন্তু তারা এই বিষয়গুলোতে তার মত শীর্ষচূাড়ায় পৌঁছতে পারেনি। তিনি অনুপম চরিত্র মাধুর্যতাকে পছন্দ করেন এবং নিজেও এ গুণে গুনান্বিত। আমরা তার অবস্থান থেকে কোথায় পড়ে আছি...!
আমর : (ওয়াফা বিন ইয়াসের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন) তুমি কথা বলছ না কেন ওয়াফা? তোমার কি কিছু বলার নেই?
ওয়াফা : অবশ্যই... এক রমযানে সাঈদ আমাকে বললেন, আমার জন্য একটা কুরআন শরীফ নিয়ে আস। আমি নিয়ে এলাম। তিনি এক বৈঠক কুরআন খতম করে ফেললেন।
ইসমাইল : সাঈদ ইবনে যুবাইর এক রমযানে আমাদের ইমামতি করলেন। এক রাতে তিনি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের কিরাআতে তিলাওয়াত করলেন। একরাতে পড়লেন যায়েদ ইবনে ছাবিতের ক্বিরাআত। আরেক রাতে অন্যজনের ক্বিরাআত। এভাবে একেক রাতে একেক ক্বিরাআত দিয়ে তিনি নাময পড়ালেন।
আগন্তুক : মাশাআল্লাহ...।
ওয়াফা : আমি সাঈদকে বলতে শুনেছি যে, আমি বায়তুল্লায় এক রাকাতে পুরো কুরআন তিলাওয়াত করেছি।
আগন্তুক : আল্লাহু আকবার!
ইসমাইল : একবার এক লোক সাঈদ ইবনে যুবাইরের কাছে কুরআনের তাফসীর লিখে দেয়ার আবেদন করল। এতে সাইদ প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন, আমার কোন পার্শ্বদেহ ধ্বংস হয়ে যাওয়াও আামর কাছে এরচেয়ে অধিক প্রিয়।
আগন্তুক : কেন?
মিনহাল : কারণ, প্রচন্ড আল্লাহভীতি এবং তার কিতাবের ব্যপারে এমন কোন কথা বলে ফেলা যা সত্য নয়।
আমর : উলামায়ে কেরামের নিকট প্রসিদ্ধি আছে যে, তালাকের মাসআলার ব্যপারে তাবেঈদের মধ্যে সবচেয়ে বিজ্ঞ হলেন- সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব।
হজের মাসআলায়- আতা।
হালাল-হারামের ব্যাপারে- তাউস।
তাফসীরে- আবূল হাজ্জাজ মুজাহিদ বিন জাব্র।
আর সমষ্টিগত সকল বিষয়ে অভিজ্ঞ হলেন- সাঈদ ইবনে যুবাইর।
আগন্তুক: মাশাআল্লাহ...মাশাআল্লাহ...!
মিনহাল: (লোকটিকে উদ্দেশ্য করে) ব্যবসায়ী ভাই, শোন, তোমাকে সাঈদ ইবনে যুবাইরের একটি বাণী শোনাই।
যখন সাঈদ ইবনে যুবাইর ইস্পাহানে ছিলেন, লোকেরা তার কাছ থেকে হাদীস শনতে চাইত। তিনি হাদীস বর্ননা করতেন না, কিন্তু যখন তিনি কুফায় ফিরে এলেন, হাদীস বর্ণনা শুরু করলেন। তখন লোকজন তাকে জিজ্ঞেস করল, হে আবূ মুহাম্মদ আপনি ইস্পাহানে থাকাকালে অনেক অনুরোধের পরও হাদীস বর্ণনা করতেন না। কিন্তু এখন আপনার কী হল যে, কুফায় এসেই আপনি হাদীস বর্ণনা শুরু করে দিলেন?
তখন সাঈদ ইবনে যুবাইর তাদেরকে বললেন, তুমি পরিচিত স্থানেই তোমার ইলমকে ছড়িয়ে দাও।
আগন্তুক : (উচ্চ কণ্ঠে) সাঈদ সত্য বলেছেন.... ‘ তুমি পরিচিত স্থানেই তোমার ইলমকে ছড়িয়ে দাও’... তিনি সত্য বলেছেন।
মিনহাল : লোকটিকে উদ্দেশ্য করে) আস্তে কথা বলুন, আপনি মসজিদে আছেন।
আগন্তুক : ওহহো.... সাঈদতো নামাজ পড়ছেন... তিনি ঠিকই বলেছেন (বিড়বিড় করে) তুমি পরিচিত স্থানেই তোমার ইলমকে ছড়িয়ে দাও।
(দ্বিতীয় অঙ্ক)
সাঈদ ইবনে যুবাইর তার বেশ কিছু প্রিয় ছাত্রের মাঝে বসে আছেন। যাদের মধ্যে কাসেম, ওহাব বিন ইসমাইল এবং দাউ; বিন হিন্দ অন্যতম।
সাঈদ : (তিনি বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করছিলেনন। এক পর্যায়ে বললেন) রাসূল সা. যখন একথা বলেছেন যে, হামযা বিন আবদুল মুত্তালিব শহীদদের সর্দার। তার অন্তর্ভুক্ত সেই ব্যাক্তিত্ব যে অত্যাচারি শাসকের সমানে দাঁড়িয়ে তাকে সৎকাজে আদেশ করে, অসৎকাজে নিষেধ করে। যার ফলে সে তাকে সে হত্যা করে ফেলে। আমি বলতে চাই, রাসূল সা. এই গুরত্বপূর্ণ কথাটি কিন্তু অনর্থক বলেননি। তিনি অপ্রয়োজনীয় কথা বলা থেকে মুক্ত। অতিরঞ্জিত বা বাহুল্য কথা তার শান ও মানের বিপরীত। অনর্থক কথা বলা তার জন্য সমীচিনও নয়। তিনিত মানব জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষক এবং জীবনের অনধকারে দিকদিশারী। আমরা তার উম্মত হিসেবে আামদের জন্য উচিৎ নয় যে, আমরা রাসূলের শুধু শিক্ষা দেওয়া বা নেয়া কিংবা মুখস্থ করার ন্য গ্রহণ করব। এটাতো কখনো হতে পারে না যে, আমরা তার কথা হৃদয়াঙ্গম করব উলামায়েকেরামের সাথে তর্ক বিতর্ক কিংবা কথা কটাকাটি করার জন্য কিংবা বিভিন্ন মজলিশে তা নিয়ে গর্ববোশ করার জন্য! অথচ আামদের যাপিত জীবন ও ব্যবহারিক জীবনে তার আদর্শের কোন ছায়া থাকবে না!
কাসিম : শায়েখ, আমরাত এমন কিছু বলিনি। কল্পনার উপর েিদয় ভেসে যাওয়ার জন্য একমুহুর্তের জন্যও রাসূলের সুন্নাহকে ছেড়ে দিব! এমনটিও কখনো ভাবিনি! অবশ্যই আমরা রাসূলের হাদীস শিক্ষা করি আদর্শ হিসাবে। যেন জীবনভর তা অনুসরণ করে চলতে পারি। কিন্তু....
সাঈদ : (তার কথা টেনে নিয়ে) বৎস! কিন্তু কী...?
ওহাব : মনিব, লোকটাত হাজ্জাজ...
সাঈদ : (দৃঢ়তার সাথে) কিন্তু... থাক না হাজ্জাজ, তাতে কী, আল্লাহর রাসূলে কোন আদেশ কিংবা নিষেধকে বাধাগ্রস্ত করার কোন অধিকার কি হাজ্জাজ বা তার মত অত্যাচির আছে?
কাসিম : কিন্তু মনিব, হাজআজ অন্যান্য জালেমদের মত নয়। তার তরবারি তার কথার আগে চলে।
সাঈদ : নাহ, বৎসরা........ মহান আল্লাহ তাআলা হাজ্জাজ এবং ভূপৃষ্ঠের অন্যান্য জালিম শাসকদের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। যদি সকল মানুষ জালিমদের তরবারি দেখে ভয় পেয়ে যায়, তাহলে জীবন েেতম যাবে। আলো আঁধারে ছেয়ে যাবে এবং জালেমের জুলুম ব্যপকতা লাভ করবে। দুনিয়ার প্রত্যেক বড় তেকে আলআহ অনেক বড়। আর প্রত্যেক ব্যক্তি কেবল সুনির্দারিত সময়ে আরøাহর আদেশে মৃত্যুবরণ করবে।
দাউদ : শায়েখ, সর্বাবস্থায় আমরা আপনার সামেন আছে। আমরা আপনার নির্দেশের অনুগত। আপনি আমাদেরকে আদেশ করুন। অবশ্যই তা বাস্তবায়নে আমাদেরকে অগ্রগামী দেখতে পাবেন। এক্ষেত্রে আমাদের কাউকে ভিন্ন মতের পাবেন না।
কাসিম : মনিব, আমি যা বলেছি তােেকবল আপনার জীবন নিয়ে সঙ্কত হওয়ার কারণেই বলেছি।
সাঈদ : যখন তাদের মৃত্যুক্ষণ চলে আসবে তখন তারা তা একমুহূর্তও অগ্র-পশ্চাত করতে পারবে না।
উপস্থিত লোকজন : মহান আল্লাহ তাআলা সত্য বলেছেন।
দাউদ : শায়েখ, আমারা অবশ্যই সবসময়ে স্বরণে রাখি আনতারার সেই উক্তি যা আপনি আমাদেরকে অনেকবার শুনিয়েছেন- (কবিতা) আমি পিছিয়ে পড়েছিলাম জীবনকে ধরে রাখার প্রতিযোগিতায়, কিন্তু মৃত্যুর এগিয়ে যযাওয়ার মত নতুন কোন জীবন খুজে পাইনি।
সাঈদ : আল্লাহ তোমাদের মঙ্গল করুন। এটাত আমার প্রতি তোমাদের সুধারণা মাত্র। আমি জানি, তোমরা এসব কিছু বলে কী বুঝাতে চাচ্ছ............... তোমরা আমার জীবন নিয়ে সংকিত। তোমাদের সবচেয়ে বড় ভয়-হাজ্জাজের তরবারি আমার গর্দান উড়িয়ে দিবে। কিন্তু আমি তোমাদেরকে বলতে চাই-শহীদ হওয়ার মর্যাদার চেয়ে আমার অবস্থান অনেক নিচে। কেননা, ‘শহীদ হতে পারা’ এমন একটি মর্যদা ও গৌরব যাতে কেবল আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের মর্যদা উন্নীত করা হয়। তাদের মোকাবেলায় কোথায় আছি আমি!
ওয়াহাব : মনিব, আপনি তাদের অন্তর্ভূক্ত... আপনি তাবেয়ীদের সরদার।
সাঈদ : আসতাগফিরুল্লাহ, কী বল বৎস!... আমি আমার সম্পর্কে তোমাদের চেয়ে ভাল জানি... আচ্ছা, তোমরা যেমনটি বললে যদি আমি তেমনটি হয়েই থাকি তাহলে কেন তোমরা আমার শাহাদাতকে বড় মনে করছো?আল্লাহর পানাহ, তোমরাতো আমাকে শহীদী কাফেলার আহল মনে করনা।
কাসিম: মনিব, আল্লাহর নিকট এ ব্যাপারে পানাহ চাই।
ওয়াহাব : আসতাগফিরুল্লাহ, এ কী বলেন শায়েখ....!
দাউদ : মনিব, আপনিতো ইবাদতগুজার ও দুনিয়া বিমূখদের নেতা।
সাঈদ : তাহলে আমি তোমাদেরকে যা বলছি তা ভালভাবে শুনে রাখো-
নিশ্চই হাজ্জাজের জুলুম ও বাড়াবাড়ি সীমা ছাড়িয়েচে। তাই প্রত্যেক সক্ষম ব্যাক্তির উপর ওয়াজীব তার বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করা। এইতো সেদিন আবদুর রহমান ইবনে আশআস হাজ্জাজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। অসংখ্য আলেম ও ফকীহ তার সাথে যোগ দিয়েছেন। মানুষের প্রতি জুলুম ও মুসলামানদের রক্ত প্রবাহিত করা থেকে বিরত থাকার জন্য তারা হাজ্জাজে ক অনেক পরামর্ম দিয়েছেন।কিন্তু সে তা মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং তাদের উপদেশকে প্রত্যাক্যান করেছে। উপরন্তু সে অনেককে অমানবিক নির্যাতন করেছে। তাই আমি ইবনুল আশআসের দলে যোগ গেদওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সেই সাথে আমিও হাজ্জাজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণা দিব। তোমাদের মধ্যে যে মাসসিকভাবে এই বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করতে প্রস্তুত, সে যেন আমার সাথে যোগদান করে। নিশ্চই আল্লাহ তাআলা সামর্থের বাইরে কারো উপর কোন কিছু চাপিয়ে দেন না।
উপস্থিত সকল : মনিব, আমরা সকলেই আপনার সাথে আছি।... আমরা আপনার পাশে আছি।...
(তৃতীয় অঙ্ক)
‘সাঈদ তার কতিপয় ছাত্রকে সাথে নিয়ে এক স্থানে আত্মগোপন করে আছে’।
সাঈদ : (স্বগতোক্তিতে) আমরা আল্লাহর বান্দা, তার কাছেই ফিরে যাব। তার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তিনি সাহায্য করেন।
প্রথম ব্যাক্তি : (সাইদকে উদ্দেশ্য করে) মনিব, আমি মনে করি, মসজিদে হারামের কাছের এই আত্মগোপন স্থানেই আপনার থাকা উচিৎ। কেননা হাজ্জাজ আপনাকে হন্য হয়ে খুঁজছে।
দ্বিতীয় ব্যক্তি : বেদ্বীনটা আপনাকে সর্বত্রই খুঁজে বেড়াচ্ছে। দ্রুত হাতের কাছে পেতে চাইছে।
তৃতীয় ব্যক্তি : শুনেছি নাসারা (খৃষ্টান) পুত বালিকায় তার মায়ের জন্য গির্জা নির্মাণ সম্পন্ন করেছে।
সাঈদ : বাদা দাও তোমাদের এই নাসারা পুত প্রসংগটা।.... আমি বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করতে চাচ্ছি।
প্রথম ব্যক্তি ; না, না, না হযরত! কিছুতেই না.....
সাঈদ : ব্যস, তুমি কি আমার ব্যাপারে কোন কিছুর আশংকা করছ?
প্রথমব্যক্তি : নিঃসন্দেহে। আমমি আপনার এবং আমার ব্যাপরে অনাকাক্সিক্ষত কিছুর ভয় করছি। বিশেষত তারা যখন জানতে পারবে যে, আপন আমার এখানেই আত্মগোপনে ছিলেন.....
সাঈদ : ভয় পেয়োনা বৎস। আমি নিজেই শাহাদাত বরণের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
প্রথম ব্যক্তি : হযরত, আমার পিতামাতা আপনার উপর উৎসর্গ হোক। আল্লাহর শপথ!আমাদের নিজেদের ব্যাপারে ভয়ের চেয়ে আপনার ব্যাপারে আমাদের ভয় ও শংকা বহুগুণ বেশী। আমরা আশংকা করছি হাজ্জাজ আপনাকে হত্যা করলে মুসলমান টরম বিপদে নিপতিত হবে।
সাঈদ : তোমরা বিচলিত হয়ো না। .... আমি আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের অপেক্ষায় আছি। আমি ব্যকুল হয়ে পড়েছি আমার প্রিয়জন-মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার সাহাবাদেরকে দেখার জন্য....
উপস্থিত সকলেই : সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
দ্বিতীয় ব্যক্তি : রাযিআল্লাহু আনহুম আজমাইন...।
প্রথম ব্যক্তি : আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ঠ। তিনিই উত্তম অভিভাবক।
(চতুর্থ অঙ্ক)
‘সাঈদ হাজ্জাজের সামনে উপবিষ্ট। তার হাতে পায়ে লৌহ শিকল তাদের চারপাশে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে অনেক মানুষ।’
হাজ্জাজ : তোমার নাম কী?
সাঈদ : সাঈদ ইবনে যুবাইর।
হাজ্জাজ : তুমি দুর্ভাগা ইবনে হতভাগা।
সাঈদ : আমার মা আমার নামের ব্যাপারে তোমার চেয়ে ভাল জানেন।
হাজ্জাজ : তুমি এক দৃর্ভাগা আর তোমার মা এক হতভাগিনি।
সাঈদ : গায়েব একজনই জানেন আর সেটি তুমি নও।
হাজ্জাজ : আমি তোমার পৃথিবীকে কিনাশী আগুনের ছায়া দিয়ে ঢেকে দিব।
সাঈদ : যদি আমি জানতাম যে, এই ক্ষমতা তোমার আছে তাহলে আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমি তোমার ইবাদত করতাম।
হাজ্জাজ : এ্যাই.... মুহাম্মাদরে ব্যাপারে তোমার বক্তব্য কী?
সাঈদ : তিনি রহমতের নবী এবং হেদায়েতের দিশারী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
হাজ্জাজ : আচ্ছা, আলীর ব্যাপারে তোমার অভিমত কী? তিনি কি জাহান্নামী না জান্নাতী?
সাঈদ : যদি আমি সেখানে প্রবেশ করতাম এবং সেখানে কে কে আছে তা দেখতে পারতাম তাহলে আমি বলতে পারতাম কে কে তার অধিবাসী!
হাজ্জাজ : খোলাফাদের ব্যাপারে মতামত কী?
সাঈদ : আমি তাদের কর্মবিধায়ক নই।
হাজ্জাজ : তাদের মধ্যে কে বেশী প্রিয় তোমার নিকট?
সাঈদ : যার প্রতি আমার প্রভু অধিক সন্তষ্ট।
হাজ্জাজ : তাহলে বল, কার প্রতি স্রষ্টা অধিক সন্তষ্ট?
সাঈদ : এ বিষয়ের জ্ঞান তার কাছেই রয়েছে যিনি তাদের প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সকল খবর জানেন।
হাজ্জাজ : আমি চাই তুমি আমার সাথে সত্য কথা বলবে।
সাঈদ : তোমাকে আমি পছন্দ না করলেও তোমার সাথে আমি মিথ্যা বলব না।
হাজ্জাজ : (কিছুক্ষণ নিরবতার পর) আচ্ছা সাঈদ, তুমি আমাকে ব্যাপারটি খুলে বল... আমি শুনেছি তুমি নাকি হসে না। কেন হাস না?
সাঈদ : কিভাবে এমন মাটির তৈরি মানুষ হাসতে পারে, যে মাটিকে আবার আগুন গ্রাস করে ফেলে!
হাজ্জাজ : তাহলে আমরা কেন হাসি?
সাঈদ : হাজ্জাজ..., সব হৃদয় বরাবর নয়।
হাজ্জাজ : (তার লোকদের উদ্দেশ্য চিৎকার করে) যাও, তোমাদের কাছে যত মণি-মুক্তা আছে নিয়ে আস। নিয়ে আস যত হীরা-হরত-ইয়াকুত আছে...
(তারা সেগুলো এনে হাজ্জাজের সামনে জমা করল আর সে তাকিয়ে চির সাঈদের দিকে)
সাঈদ : তুমি যদি এগুলো জমা করে থাক এই আশায় যে, কেয়ামত দিবসের ভীতিকর অবস্থা থেকে এগুলোর মাদ্যমে পরিত্রাণ লাভ করবে, তাহলে এখনো সময় আছে, তুমি সংশোধন হয়ে যাও। নতুবা তোমাকে সেই ভীতিকর শব্দ গ্রাস করবে যা প্রত্যেক দুগ্ধপানকারিনীকে ভুলিয়ে দিবে কাকে সে দুধ পান করিয়েছে। দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে যা জমা করা হয় তাতে কোন কল্যাণ নেই। তবে শুভ ও পরিশুদ্ধ পন্থায় যা অর্জিত হয় তার কথা ভিন্ন।
হাজ্জাজ : (তার রক্ষীদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে) বীণবাদক ও বংশীবাদকে আমার কাছে নিয়ে এসো।
বীণবাদক (তার বীণা নিয়ে) হাজীর হয়ে বলল, হুজুরে আমি হাজীর।
বাঁশিওয়ালা (তার বাঁশি নিয়ে) উপস্থিত হয়ে বলল, আদেশ করুণ জাঁহাপনা।
হাজ্জাজ : তুমি বীণায় সূর তোল আর তুমি বাঁশি বাজাও।
(সাঈদ বীণার ও বাঁশির সূর শুনে কাঁদছিলেন)
হাজ্জাজ : তোমার আবার কী হল? কাঁদছ কেন? এতো একু খেলতামাশা মাত্র!
সাঈদ : বরং তা দুঃখবোধকে নতুন করে জাগিয়ে দেয়। কেননা বাঁশির ফু৭ক আমাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে সেই ভতিময় দিনের কথা, যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হবে। আর বীণা হল অন্যায়ভাবে কর্তিত গাছের খন্ডিত অংশ মাত্র। সুতরাং এসবের প্রতি আগ্রহীদের কিয়ামতের দিন বীণার তার সহ পূণরাত্থান করা হবে।
হাজ্জাজ : তোমার কপালে দৃর্ভোগ আছে সাঈদ!
সাঈদ : ...তবে ঐ ব্যক্তির কোন দুর্ভাগ্য নেই যাকে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়।
হাজ্জাজ : (উত্তেজিত হয়ে) তুমি কেন আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছ? আমি কি তোমাকে সম্মান করিনি? তোমার সম সাময়িকদের থেকে তোমাকে প্রাধান্য দেইনি?
সাঈদ : হাজ্জাজ : আমরা তোমাকে কতবার উপদেশ দিয়েছি মুসলমানদের গর্দান থেকে তোমার তরবারিকে সংযত রাখতে। কিন্তু তুমি তা প্রত্যাখ্যান করেছ। উদ্ধত প্রকাশ করেছ। একে একে তোমার জুলুম ও অবাধ্যতাকে বাড়িয়ে চলেছ।
হাজ্জাজ : আমি কিন্তু তোমাকে অনেক সম্মান করতাম...!!
সাঈদ : হাজ্জাজ, তোমার সম্মানের কোন প্রয়োজন আমার নেই। যেখানে তোমার তরবারি অনবরত মুসলমানদের গরদান কেটে যাচ্ছে সেখানে আমার মত একজন ব্যাক্তির প্রতি তোমার এই সম্মান প্রদর্শন তাদের কোন উপকার আসবে কী?
হাজ্জাজ : তুমি তাহলে দৃর্ভাগাদের একজন... সুতরাং তুমি তোমার জন্য এমন পদ্ধতির মৃত্যুকে বেছে নাও যার মাধ্যমে আমরা তোমাকে দন্ডিত করব।
সাঈদ : বরং তুমি নিজের জন্য তা বেছে নিতে পার হাজ্জাজ! আমি আল্লাহর কসম করে বলছি, তুমি আমাকে যেভাবে হত্যা করবে আখেরাতে আল্লাহ তোমাকে অনুরুপভাবে হত্যা করবেন।
হাজ্জাজ : তুমি কি চাও যে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিই?
সাঈদ : ক্ষমা যদি চাই তাহলে আল্লাহর কাছেই চাইবো। তোমার নিকট কোন ওজর-আপত্তি বা মুক্তিকামনা নয়।
হাজ্জাজ : (চিৎকার করে) তাকে ধর... ধর... হত্যা কর... হত্যা কর....।
সাঈদ : (উচ্চস্বরে হাসতে লাগলেন। আর হাজ্জাজের প্রহরীরা তাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগল)
হাজ্জাজ : থামাও একে।
(প্রহরীরা সাঈদকে নিয়ে থামল)
হাজ্জাজ : এ্যাই ইবনে যুবাইর! তুমি কি বলনি যে তমি হাস না!তাহলে এখন হাসছ কেন?
সাঈদ : হাজ্জাজ, আমি হেসেছি আল্লাহর উপর তোমার দুঃসাহসিকতা দেখে এবং তোমার উপর আল্লাহর সহনশীলতা এবং দয়া দেখে।
হাজ্জাজ : (উত্তেজিত হয়ে বলল) আমার কাছে তরবারী ও চামড়ার বিছানা ( মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে যাতে কতল করা হয়) নিয়ে আস।
(তার কাছে তরবারী, চামড়ার বিছানা ও তামার পাত্র নিয়ে আসা হল)।
সাঈদ : (কিবলামুকী হয়ে) আমি অভিমুখী হলাম সেই সত্ত¡ার দিকে যিনি আসমান ও যমীনকে যথার্থভাবে সৃষ্টি করেছেন। আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।
হাজ্জাজ : তোমরা তার চেহারাকে কিবলা থেে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দাও।
(তারা তার চেহারাকে কিবলার থেকে ঘুরিয়ে দিল)
সাঈদ :.... তোমরা যেদিকেই ফির না কেন সেদিকেই আল্লাহর অবস্থান রয়েছে।
হাজ্জাজ : (উত্তেজিত হয়ে বলল) দাকে উপুর করে শোয়াও।
সাঈদ : (শান্ত মনে, খুব ধীরস্থিরভাবে বলতে লাগলেন যেমনটি কুরআনে বর্ণিত) আমি তোমাদেরকে তা (মাটি) দিয়ে সৃষ্টি করেছি। তোমরা সেখানেই ফিরে যাবে এবং সেখান থেকেই তোমাদেরকে পুরায় উত্থিত করব।
হাজ্জাজ : তোমরা তাকে ধরে হত্যা কর...।
সাঈদ : (দুহাত আকাশের দিকে উত্তোলন করে) আয় আল্লাহ! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আনি একক। আপনি ছাড়া আর কোন মাবূদ নেই। আপনার কোন শরীক নেই। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার বান্দা ও রাসূল। (হাজ্জাজের দিকে ফিরে) হে আল্লাহ! আপনি আমার পক্ষ হয়ে তাকে কিয়ামতের দিন পাকড়াও করুন যেভাবে সে আজ আমাকে পাকড়াও করেছে। হে আল্লাহ! আমার মৃত্যুর অন্য কাউকে হত্যা করার সুযোগ দান করো না।
(পঞ্চম অঙ্ক)
হাজ্জাজ বিবর্ণ চেহারায় বসে আছে। কিছুক্ষণ পর চোখে-মুখে ভীতিকর বিহŸলতা নিয়ে সে আশেপাশের লোকদের দিকে তাকাতে লাগল।
হাজ্জাজ : (উচ্চ কণ্ঠে) ডাক্তাররা কোথায়?
প্রহরী : দরজার কাছে জাঁহাপনা।
হাজ্জাজ : নিয়ে আস তাদেরকে... নিয়ে আস ডাক্তারদেরকে।
পহরী : ডাক্তাররা হাজীর...
(তিন ডাক্তার প্রবেশ করলেন)
ডাক্তারগণ : আস সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।
হাজ্জাজ : তোমরা তাড়াতাড়ি বল আমাকে...
১ম ডাক্তার : কী বিষয়ে আমরা আপনাকে বলব?
হাজ্জাজ : আমি অসংখ্য মানুষে হত্যা করেছি। কিন্তু তাদের কারো রক্ত সাঈদ ইবনে যুবাইরের রক্তের মত দেখিনি।
১ম ডাক্তার : তার রক্তে আপনি কী দেখেছেন?
হাজ্জাজ : আমি দেখলাম, পাত্রে সাঈদের রক্ত টগবগ করে উপচে পড়ছে। তাছাড়া অন্য মানুষের রক্তের মত সাঈদের রক্তের পরিমাণ অল্প নয় বরং তারচেয়ে অনেক বেমী। আর রক্তের রংও ভিন্নরকম...
১ম ডাক্তার : এর ব্যাখ্যা অনেক দীর্ঘ...
হাজ্জাজ : কী তা বল...
১ম ডাক্তার : তাহলে শুনুন... ইতোপূর্বে আপনি যাদেরকে হত্যার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাদেরকে হত্যা করেছেন ঠিক; কিন্তু তাদের সাথে তাদের আত্মা ছিল না। বরং তা মৃত্যু ভয়ে আগেই মারা গিয়েছিল।
হাজ্জাজ : সাঈদের আত্মা?
১ম ডাক্তার : আর সাঈদ ইবনে যুবাইরকে আপনি হত্যা করেছেন। হত্যার সময় তার আত্মা তার সাথেই ছিল। রক্ত ছিল তার আত্মার অনুগামী।
হাজ্জাজ : তার মানে, সে মৃত্যু ভয়ে ভীত ছিল না?
১ম ডাক্তার : আমীর... আপনি তাকে হত্যার সময় নিশ্চয় প্রত্যক্ষ করেছেন... তার অবস্থা আপনি কেমন দেখতে পেয়েছেন তা মনে আছে কি?
হাজ্জাজ : হুম...কী অদ্ভুত মানুষ... বড় অদ্ভুত মানুষ।
(৬ষ্ঠ অঙ্ক)
(হাজ্জাজের শয়নকক্ষে...)
হাজ্জাজ খাটের উপর তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করছে।
হাজ্জাজ : (ডেকে উঠে) প্রহরী....
প্রহরী : (দ্রুত প্রবেশ করে বলল)
কী হয়েছে হুজুর? এইতো আমি।
হাজ্জাজ : (চিৎকার করে) আমার কাছ থেকে সাঈদকে সরাও... সাঈদকে দূরে সরাও...
প্রহরী : আপনি কেন সাঈদের কথা লছেন? কামরায়তো আমি ছাড়া আর কেউ নেই।
হাজ্জাজ : সাঈদের হাত থেকে আমাকে বাঁচাও... ইবনে যুবাইরকে দূরে সরাও... আমার কাছ থেকে তাকে সরাও...
প্রহরী : লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। আপনি এসব কী বলছেন জাাঁহাপনা!
হাজ্জাজ : তোমার ধ্বংস হোক... আমি তোমাকে বলছি সাঈদ ইবনে যুবাইরকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিতে। আর তুমি কি না লা হাওলা ... পড়ছো!
প্রহরী : সাঈদ ইবনে যুবাইরত আগেই মারা গিয়েছে, এবং আপনি তাকে হত্যা করেছেন।
হাজ্জাজ : এইহতভাগা কমীনা... এইত সে এইখানে... সে আমার উপর আক্রমনের প্রস্তুতি নিচ্ছে.. সে আামকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করতে চায়...
প্রহরী : লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। আমি কি আপনার জন্য ডাক্তার ডেকে আনব?
হাজ্জাজ : না ... না... না। এই মুহূর্তে আমি তাদের চেহারা দেখতে চাইনা। আমি হাসানের সাথে কথা বলতে চাই।
প্রহরী : (দ্বিধান্বিত কণ্ঠে) আপনি কোন হাসানের কথা বলছেন?
হাজ্জাজ : আরে হতভাগা... হাসান বসরীর কথা বলছি।
প্রহলী : (উৎকণ্ঠিত হয়ে) তাকে আপনি কী করতে চান?
হাজ্জাজ : এই মুহূর্তে তার খোঁজে লোক পাঠাও....
প্রহরী : (ভীত কণ্ঠে) তাকে দিয়ে আপনি কী করবেন?
হাজ্জাজ : আরে অভাগা... আমি তার সাথে দেকা করতে চাই....
প্রহরী : কেন? কী কারণে...?
হাজ্জাজ : (তীব্র ব্যথায় কোকিয়ে উঠে) আহ... আহ... আমি হাসান বসরীর সাক্সাত পেতে চাই... তার খোঁজে লোক পাঠাও... হয়ত সেই আামর ব্যথা ও যন্ত্রণাকে হালকা করে পাঠাতে পারবে... আমি হাসানকে চাই... তাকে আন... তার কাছে লোক পাঠাও...
প্রহরী : (আশ্বস্ত হয়ে) হুযুর, এখনই তার খোঁজ লোক পাঠাচ্ছি।
(৭ম অঙ্ক)
(হাজ্জাজের শয়নকক্ষে...)
হাজ্জাজ তীব্র ব্যথা ও যন্ত্রণায় রিিতমত কাতরাচ্ছে। প্রহরী তার এই অবস্থা দেখে সামনে দাঁড়িয়ে দাঁেড়য়ে ইন্না লিল্লাহ পড়ছে।
হাজ্জাজ : (ভীতবিহবল ও অস্থির কণ্ঠে) হাসান কোথায়? তিনি কি এখনো উপস্থিত হন নি?
প্রহরী : তিনি দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন।
হাজ্জাজ : (ক্ষীণ ও দূর্বল কণ্ঠে বলল) তিনি দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন কেন? হাসানকে নিয়ে আস... নিয়ে আস তাকে...
প্রহরী : এক্ষণই যাচ্ছি।
হাসান : ঞবিড়বিড় করে বলছেন) হে আল্লাহ! আল্লাহর কসম, যদি পূর্ব-পশ্চিমের সকল মানুষও একত্রিত হয়ে সাঈদ ইবনে যুবাইরকে হত্যায় অংশগ্রহণ করত, অবশ্যই আল্লাহ তাআলা তাদের সবাইকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করতেন।
(হাসান বসরী ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ধীরস্থিরভাবে প্রবেশ করলেন এবং করুণার দৃষ্টিতে হাজ্জাজের দিকে তাকালেন)
হাসান : কী ব্যপার হাজ্জাজ... আমি কি তোমাকে বলিনি যে আল্লাহর ওলীদের উপর তোমার তরবারি চালিও না!
হাজ্জাজ : (ভীত ও নতজানু হয়ে) হাসান, এই ব্যাপারে তাকদীরের ফায়সালা যা হবার তা হয়ে গেছে..
হাসান : তুমি আল্লাহর ওলীদের হত্যা করে তাকদীরের দোহাই দিচ্ছ?
হাজ্জাজ : (কান্নাজড়িত কণ্ঠে) আমার জন্য একটু দুআ কর হাসান... আমার জন্য একটু দুআ কর...
হাসান : দুর্ভোগ তােমার জন্য হে ইউসুফ পূত্র, কিভাবে আমি তোমার জন্য দুআ করব? তুমিত আলেমকূল শিরমণিকে হত্যা করেছ! তুমি কি উপল্িধ রতে পারছ না যে, তুমি এমন ব্যক্তিকে শহীদ করে দিয়েছ- সমগ্র দুনিয়াবাসী যার তগভীর ইলমের মুখাপেক্ষী!
হাজ্জাজ : (ওসীলা কামনা করে) আমি তোমার নিকট রোগ মুক্তির দুআ চাই না হাসন....
হাসান : মানে কী... তাহলে কোন বিষয়ে আমি তোমার জন্য দুআ করব?
হাজ্জাজ : তুমি আল্লাহর কাছে দুআ কর তিনি যেন আামকে মৃত্যু দান করেন। আমি এই অসহনীয় ব্যথা ও যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চাই এবং সাঈদ থেকেও... আহ... আ... আহ....!
হাসান : লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
প্রহরী : (হাসানকে উদ্দেশ্য করেশ) শায়খ, আপনি তার জন্য কেটু দুআ করুন।
হাজ্জাজ : (চরমভাবে ভী হয়ে চিৎকার করে বলতে লাড়ল) সাঈদ... সাঈদ... সাঈদদের হাত থেকে আামকে বাঁচাও... তাকে... আমার কাছ থেকে দুরে নিয়ে যাও... হাসান, তাকে দূরে সরাও...
হাসান : লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিইয়িল আজীম...
প্রহরী : হযরত, তার জন্য একটু দুআ করুন। নিশ্চই তিনি খুব কষ্ট পাচ্ছেন। তিনি তার মৃত্যুশয্যায় ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন।
হাসান : লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
(এরপর হাসান আসমানের দিকে দুহাত তুলে দুআ করতে লাগলেন) হে আল্লাহ! আপনি তাকে আপনার কাছে নিয়ে নিন... হে আলআহ আপনি হাজ্জাজক মৃত্যু দান করুন... হে আল্লাহ! আপনি সাঈদ ইবনে যুবাইরের দুআ কবুল করুন যা সে আপনার দরবারে করেছিল- ‘আমার (সাঈদের) মৃত্যুর পর হাজ্জাজ যেন অন্যায়ভাবে আর কোন মুসলমানের রক্ত ঝরাতে না পারে এবং তার যেন কোন কর্তৃত্বও না থাকে।’
হাজ্জাজ : (ভীত বিহবল হয়ে দু হাত দিয়ে কারো থেকে যেন আত্মরক্ষা করতে চাইছে এবং চিৎকার করে বলছে) সাঈদ... সাঈদ... সাঈদ আসছে... সাঈদ আসছে... সাঈদের হাত থেকে আামকে বাঁচাও... তাকে আমার কাছ থেকে দূরে সরাও... সে আামকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করতে চাইছে... তাকে দূরে নিয়ে যাও..... তাকে..... আঁ..... মা.......র.......কা.......ছ ...... থে......... কে.......... দূ........রে........ স........রা.........ও............ আ্যা...........। ( সমাপ্ত)
মূল : আবদুল্লাহ তানতাভী
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৪১