সাক্ষাৎকারটি পুরনো হলেও বিষয়গুলো সময়োচিত। একটু দেখে নিতে পারেন।
হেফাজতে ইসলাম। এই সময়ের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে সবচেয়ে আলোচিত সংগঠন। গত ৬ এপ্রিল ২০১৩ইং ঢাকার মতিঝিলে লংমার্চ পরবর্তী মহাসমাবেশ করেন তারা। বিপুলসংখ্যক উপস্থিতির মধ্য দিয়ে শেষ হওয়া এই মহাসমাবেশকে ঘিরে দেশজুড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার শেষ ছিল না। অবশেষে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ায় স্বস্তি আসে পুরো দেশজুড়ে।
মহাসমাবেশ থেকে তাদের পক্ষ থেকে ১৩ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এসব দাবি নিয়ে এখনও আলোচনা-সমালোচনা চলছে প্রায় সব মিডিয়ায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সাপ্তাহিক-এর পক্ষ থেকে কথা বলা হয় হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগর শাখার আহবায়ক নূর হোসেন কাশেমীর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাহরাম খান।
সাপ্তাহিক : সম্প্রতি আপনাদের হয়ে যাওয়া লংমার্চ-মহাসমাবেশসহ আন্দোলনের ক্ষেত্রে ব্লগ বিতর্কটিই মুখ্য হয়েছে। আপনার কাছে জানতে চাইব আপনি ব্লগ, ব্লগিং বা ব্লগার বিষয়গুলোকে কিভাবে জানেন?
নূর হোসেন কাশেমী : এখন এই বিষয়ে প্রশ্ন করার সময় না। ব্লগ, ব্লগার কি এগুলো অনেক আগেই কথা হয়েছে। ব্লগে কি আছে, না আছে এগুলো দিবালোকের মতো স্পষ্ট। সমাজের সবাই জানেন। তাই এই বিষয়ে প্রশ্ন আসার প্রয়োজন হয় না।
সাপ্তাহিক : এগুলো নিয়ে আগেও কথা হয়েছে। এখনও কিন্তু হচ্ছে। আমরা পুরো বিষয়টা নিয়েই আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই।
নূর হোসেন কাশেমী : ব্লগে কি আছে না আছে সবই দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। সরকার তদন্ত করছে। সেখানে সমস্যা আছে বিধায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছেন। এখনও করছেন। এটা এখন গোপন বিষয় না।
সাপ্তাহিক : তারপরও একটি আন্দোলনের অন্যতম নেতা হিসেবে আপনার কাছ থেকে ব্লগ বিষয়ে জানতে চাচ্ছিলাম। আপনি নিজে ব্লগ দেখেছেন বা পড়েছেন কি?
নূর হোসেন কাশেমী : দেখেছি, পড়েছিও। অনেক বিষয় পড়েছি।
সাপ্তাহিক : কি ধরনের বিষয়গুলো আপনার দৃষ্টিগোচর হয়েছে?
নূর হোসেন কাশেমী : ইসলামের সঙ্গে, নবী করীম (সা) এর সঙ্গে বেয়াদবি করা হয়েছে, কটূক্তি করা হয়েছে, আল্লাহ পাককে নিয়ে, শরিয়তের বিভিন্ন বিধিবিধান নিয়ে কটূক্তি করা হয়েছে।
সাপ্তাহিক : কোন ব্লগ দেখেছেন আপনি?
নূর হোসেন কাশেমী : অনেক ব্লগই দেখা হয়েছে। এত তো স্মরণে নেই। এর আগে ব্লগ নিয়ে মামলাও হয়েছে। আমাদের ছেলেরা অনেকে ব্লগিং করে। আমরা বৃদ্ধ মানুষ। আমরা তো ব্লগিং করি না। তারা আপত্তিকর বিষয়গুলো দেখে আমাদেরকে জানিয়েছে।
সাপ্তাহিক : আপনি যখন নেতা, তখন কি এই বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ধারণা রাখা দরকার মনে করেন না?
নূর হোসেন কাশেমী : আমাদের ছাত্ররা ব্লগের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে। তাদের মাধ্যমেই আমরা জানতে পারি। পত্রপত্রিকা, সরকার সবাই এই বিষয় নিয়ে কাজ করছে। সবই তো দিবালোকের মতো স্পষ্ট। এখানে গোপন করার তো কিছু নেই।
সাপ্তাহিক : বলছিলাম একজন নেতা নানাভাবে তথ্য পেতেই পারেন। কিন্তু তিনি কারও দ্বারা পরিচালিত না হয়ে উল্টো পরিচালনা করেন। এই ক্ষেত্রে আপনাদের এত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে আরও সরাসরি জানার বা দেখার দরকার ছিল বলে মনে করেন না?
নূর হোসেন কাশেমী : আমি আগেই বলেছি। এগুলো আমরা দেখেছি। এসব বিষয়ে যেহেতু আমরা অভ্যস্ত নই, তাই ছেলেরা দেখেশুনে আমাদের জানায়। এগুলো যদি মিথ্যা হতো তাহলে তো পত্রিকায় লেখা হতো না। সরকার কাউকে গ্রেপ্তার করত না।
সাপ্তাহিক : মহাসমাবেশ প্রসঙ্গে আসি। অনেকে নাকি চেয়েছিলেন আপনাদের বিপুল জনসমাবেশকে দীর্ঘায়িত করতে.....
নূর হোসেন কাশেমী : পূর্ব থেকেই আমাদের কর্মসূচি ছিল লংমার্চ এবং সমাবেশ। পাঁচটার সময় সমাবেশ শেষ হয়ে যাবে। আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাজ করেছি। কে কি বলতে চেয়েছিল সেটা আমাদের দেখার বিষয় না।
সাপ্তাহিক : আপনাদের লংমার্চ-সমাবেশকে কেন্দ্র করে কয়েকটি সংগঠনের পক্ষ থেকে হরতাল আহ্বান করেছিল।
আপনারা বলেছিলেন হরতাল প্রত্যাহার না করলে লাগাতার হরতাল দিবেন। কিন্তু দিলেন একদিনের হরতাল...
নূর হোসেন কাশেমী : আমরা বলেছিলাম সমাবেশের অনুমতি না দিলে লাগাতার কর্মসূচি দিব। সরকার আমাদের সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। সেই সঙ্গে লংমার্চ বাধা দেয়ার জন্য একদিনের হরতাল দিয়েছি।
সাপ্তাহিক : পরবর্তী কর্মসূচি কী আসছে?
নূর হোসেন কাশেমী : সাতটি বিভাগীয় শহরে এবং ময়মনসিংহ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মোট ৯টি সমাবেশের ঘোষণা দেয়া আছে। আগামী ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি রয়েছে।
সাপ্তাহিক : আর ১৩ দফা দাবি...
নূর হোসেন কাশেমী : এই দাবি নিয়েই আমরা মাঠে আছি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ঘরে না ফেরার ঘোষণা দিয়েছি। আমাদের দাবি মানতেই হবে। সফলকাম হবই ইনশাআল্লাহ।
সাপ্তাহিক : প্রধানমন্ত্রী একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে বলেছেন ব্লাসফেমি আইন করা হবে না...
নূর হোসেন কাশেমী : এর উত্তর আমরা দিয়েছি। আমরা বলেছি আমাদের এই দাবি মানতে হবে। ক্ষমতায় থাকতে এবং ক্ষমতায় আসতে হলে আমাদের দাবি মানতে হবে।
সাপ্তাহিক : যুক্তি কী?
নূর হোসেন কাশেমী : শাহবাগের মঞ্চের দাবির প্রেক্ষিতে যদি ৩ দিনের মধ্যে সংসদে আইন সংশোধন করা যায় তাহলে আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কেন আইন পরিবর্তন করা যাবে না?
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এর প্রতি বেয়াদবি, আল্লাহকে কটাক্ষ করা, শরিয়তের বিধানকে কটূক্তি করার পরিপ্রেক্ষিতে আইন পরিবর্তন করে মুরতাদের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য আইন পরিবর্তন কেন করা যাবে না?
সাপ্তাহিক : এই দাবিগুলো গণজাগরণ মঞ্চ তৈরির পর কেন তুলছেন। এর আগেও তো তুলতে পারতেনÑ
নূর হোসেন কাশেমী : আমরা নারী নীতি, শিক্ষা নীতিসহ শরিয়তবিরোধী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সব সময় আন্দোলন করে আসছি। প্রত্যেকটা ইস্যুতেই আন্দোলন করে আসছি। ব্লগারদের লেখালেখির বিষয়ে মামলাও হয়েছে।
সাপ্তাহিক : আপনাদের এসব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কি?
নূর হোসেন কাশেমী : সরকার আমাদের দাবিকে আমলে নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই তো আমরা আন্দোলনে নেমেছি।
সাপ্তাহিক : আপনাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য কি?
নূর হোসেন কাশেমী : আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়ন।
সাপ্তাহিক : ১৩ দফা দাবি পূরণ হলেই কি ইসলামি শাসন বা শরিয়ত রক্ষা পাবে?
নূর হোসেন কাশেমী : আমরা ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করছি না।
সাপ্তাহিক : তাহলে এগুলো কিসের দাবি।
নূর হোসেন কাশেমী : ১৩ দফার আন্দোলন হলো আমাদের ঈমানি দাবি। ঈমানি দাবি পূরণ হলেই আমাদের আন্দোলন শেষ হয়ে যাবে। আমরা আগেই বলেছি আমাদের এই দাবিগুলোর মাধ্যমে আমরা কোনো রাজনীতি করতে চাই না। আমরা নিজেরা ক্ষমতায় যেতে চাই না। কাউকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চাই না এবং ক্ষমতায় বসাতেও চাই না।
সাপ্তাহিক : ক্ষমতাসীনদের ছাড়া তো এই দাবি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।
নূর হোসেন কাশেমী : একজন মুসলমান হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার তাদেরও উচিত আমাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করা। আল্লাহর হাবিবের প্রতি অসম্মান করা হয়েছে। এরচেয়ে বড় বেয়াদবি হতে পারে না। আল্লাহ পাকের হাবিবের সঙ্গে যারা বেয়াদবি করে তারা মুরতাদ হয়ে যায়। সেই মুরতাদদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা ঈমানি দায়িত্ব।
সাপ্তাহিক : আপনাদের দাবিগুলো কি ইসলামি শাসন ব্যবস্থা ছাড়া বাস্তবায়ন হওয়া সম্ভব মনে করেন?
নূর হোসেন কাশেমী : আমি আগেই বলেছি আমাদের আন্দোলন ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নয়। ইসলামি শাসন ব্যবস্থার জন্য নয়। ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠান জন্য অনেক ইসলামি দল আন্দোলন করছে। সেটা তারা দেখবেন।
সাপ্তাহিক : নারী নেতৃত্বকে কিভাবে দেখেন?
নূর হোসেন কাশেমী : নারীদের অবাধ মেলামেশাকে আমরা নেতিবাচকভাবে দেখি।
সাপ্তাহিক : যেমন-
নূর হোসেন কাশেমী : গণজাগরণ মঞ্চে আমরা দেখতে পাই ছেলেমেয়ে একই ক্যাম্পে একসঙ্গে রাত যাপন করছে। অবাধে। এটাকে আমরা কোনো অবস্থাতেই মেনে নিতে পারি না।
সাপ্তাহিক : নারীরা তো কর্মক্ষেত্রেও আছেন?
নূর হোসেন কাশেমী : কর্মক্ষেত্রে কোনো মহিলার কাজে আমরা বাধা দেই না। এ ব্যাপারে আমাদের নেতিবাচক কোনো অভিমত নেই। কর্মক্ষেত্রে নারীরা যাতে তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করতে পারে সেটাতে আমাদের সমর্থন আছে।
সাপ্তাহিক : নারী নেতৃত্ব নিয়ে জানতে চেয়েছিলাম।
নূর হোসেন কাশেমী : এটা একটা বিতর্কিত ইস্যু। আমাদের আগের বিশিষ্ট ফেকাহবিদদের মতে দেশের শীর্ষস্থানে নারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত নয়। তবে যদি কোনোভাবে নারী নেতৃত্ব এসেই যায় তাকে অমান্য করা উচিত না।
সাপ্তাহিক : তার মানে আপনারা অনিচ্ছা সত্ত্বেও মানছেন। অন্যদিকে তার কাছেই দাবি পূরণের জন্য আন্দোলন করছেন?
নূর হোসেন কাশেমী : দেখুন, আমাদের দাবিটা দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে। কোনো নারীর কাছে না। আপনি বিষয়টাকে এভাবেও দেখতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী একটি পদ। এখানে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অনেকে এসেছেন বা আসবেন। আমরা যেহেতু প্রচলিত আইন মেনে জীবনযাপন করি। তাই সেখানে প্রধানমন্ত্রীকেও মানতে হবে। শরিয়ত উচ্ছৃঙ্খলা শিক্ষা দেয় না।
সাপ্তাহিক : আপনারা নিজেদের অরাজনৈতিক আন্দোলনকারী হিসেবে দাবি করছেন। কিন্তু কোনো দাবি নিয়ে সভা-সমাবেশ-স্লোগান-আল্টিমেটাম পরবর্তী কর্মসূচির মতো বিষয়গুলোত রাজনৈতিক চরিত্রই ধারণ করে বলে মনে করা হয়।
নূর হোসেন কাশেমী : নবী করীম (সা), কোরান মজীদ-এর উপর আক্রমণ হয়েছে। এই আক্রমণের জায়গায় একটা মোমিন মুসলমানের শরিক হওয়া উচিত বলে মনে করি। তাই আমি আবারো বলতে চাই এটা আমাদের ঈমানি আন্দোলন।
সাপ্তাহিক : শান্তিপূর্ণ সমাবেশের প্রশংসা সবাই করেছেন। কিন্তু একটি অংশ শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চে আক্রমণের জন্য এসেছিল বলে অভিযোগ।
নূর হোসেন কাশেমী : আমাদের যদি এ রকম পরিকল্পনা থাকত বা কথার কথা অর্ডার দিতাম তাহলে কি হতো আপনি চিন্তা করে দেখেন। আপনারাও দেখেছেন আমাদের সমাবেশ। বক্তৃতা শুনেছেন। এমন কোনো পরিকল্পনা আমাদের চিন্তাতেও ছিল না। এমন করার পরিকল্পনা থাকলে মুখ দিয়ে বলতে দেরি হতো। মঞ্চ-টঞ্চ সব মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে সময় লাগত? হটকারী সিদ্ধান্ত আমরা সমর্থন করি না।
সাপ্তাহিক : তাহলে আক্রমণ হলো কিভাবে?
নূর হোসেন কাশেমী : আমরা যতটুকু খবর নিয়ে জেনেছি, পথ ভুলে এমন হয়েছে। অনেকে শাহবাগ চিনেন না। সমাবেশ থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় এ ভুল বোঝাবুঝিটা হয়েছে।
সাপ্তাহিক : সমাবেশ পূর্বাপর অনেক আলোচনা মতামত প্রকাশ করছেন। সরকার আপনাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেনÑ কারণ আপনারা নাকি কারো দ্বারা ব্যবহার হননি।
নূর হোসেন কাশেমী : দেখুন, আমরা অনেক আগে থেকেই বলেছি জামায়াতের সঙ্গে বা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নেই। আমরা ঈমানি দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি।
সাপ্তাহিক : টাকা পয়সার সংস্থান নিয়ে বেশ সমালোচনা হচ্ছে?
নূর হোসেন কাশেমী : নিজেদের গাঁটের পয়সা খরচ করে আমরা আন্দোলন করছি। অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে আমরা আর্থিক সহযোগিতা নেইনি। আমাদের নেতাকর্মীদের প্রথম থেকেই বলে এসেছি নিজেদের জানমাল কোরবান করে আন্দোলন করতে হবে। ১০০ থেকে ৫০০ টাকা যে যা পারেন তা দিয়েই সবাই অংশগ্রহণ করেছেন।
সাপ্তাহিক : আপনাদের ভাষায় এই ঈমানি আন্দোলনের সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। যারা এতে যোগ দিয়েছেন তারা সবাই কি অরাজনৈতিক ব্যক্তি?
নূর হোসেন কাশেমী : রাজনৈতিক ব্যক্তি বলতে আপনি কাকে বুঝাতে চাইছেন?
সাপ্তাহিক : আমি বলছিলাম অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিভিন্ন দলীয় নেতাকর্মীও তো ছিলেন।
নূর হোসেন কাশেমী : একজন রাজনীতিবিদ খানা খান, গোসল করেন সেগুলোও কি রাজনীতি হয়ে যাবে? একজন রাজনীতিবিদের অনেক কাজ আছে। তার মধ্যে ঈমানি কাজও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় বলে মনে করি।
সাপ্তাহিক : একটি টিভি চ্যানেলের রিপোর্টে প্রকাশ, আপনাদের একজন বক্তা তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন ‘আমাদের দেহে মওদুদীর রক্ত প্রবাহিত’...
নূর হোসেন কাশেমী : এই বক্তৃতা বিকৃত করা হয়েছে। বক্তার নাম এমরান মাজহারী। তিনি সাইফুল ইসলাম মদনীর নাম বলেছেন। কিছু মিডিয়া সেটি না বুঝে বা বিকৃত করে মওদুদীর নাম বলে চালিয়েছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি। সংশ্লিষ্ট বক্তাও আমাকে ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছেন। তাই এ বিষয়ে আর কোনো সন্দেহের অবকাশ থাকা উচিত না।
সাপ্তাহিক : এবার ১৩ দফা প্রসঙ্গে আসি। প্রথম দাবি জানিয়েছেন সংবিধানে মহান আল্লাহর উপর আস্থা বিশ্বাসের কথা লিখতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে পুরো সংবিধানের ভেতরে যাই থাকল না থাকল সেটা নিয়ে কথা বলছেন না। শুধু এই কথাটি লিখলে কি এমন লাভ হবে?
নূর হোসেন কাশেমী : এটা দিয়ে সারা ইসলাম হবে না। কিন্তু একটা অংশ তো হলো। প্রত্যেক মোমেন মুসলমানেরই তো আল্লাহর উপর আস্থা আছে। তাহলে সংবিধানে থাকলে সমস্যা কী?
সাপ্তাহিক : সংবিধান রাষ্ট্রীয় দলিল। এখানে অনেক ধর্মের মানুষের বসবাস। এ দলিলে সবার ধর্মকে সমান গুরুত্ব দিয়ে রচনা করা দরকার না?
নূর হোসেন কাশেমী : এটা মুসলমানের দেশ। গণতন্ত্রের নিয়ম কি। অধিকাংশ মানুষের মতের প্রতিফলন। বাংলাদেশে শতকরা নব্বইজন মানুষ মুসলমান। এই দেশের সংবিধান অধিকাংশ মতের মানুষের মতের প্রতিফলন থাকাটাই তো স্বাভাবিক।
একটা কথা ক্লিয়ার হওয়া দরকার। মুসলিম রাষ্ট্রে প্রত্যেক ধর্মের মানুষের জানমালের নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে। ইসলাম কখনও বলেনি মসজিদ, মন্দির, গির্জা ভেঙে ফেল।আলহামদুলিল্লাহ। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আমরা এখানে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বাস করছি।
সাপ্তাহিক : সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ভাঙা হয়েছে। এমন খবর নিশ্চয়ই দেখেছেন।
নূর হোসেন কাশেমী : এগুলোকে আমরা অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখি। এগুলোর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। যারা এসব কাজ করেছেন তারা অন্যায় কাজ করেছেন। এটা কোনো ঈমানদার মানুষ মেনে নিতে পারেন না। তারা দুষ্কৃতকারী। এটা ভালো মানুষের কাজ হতে পারে না। এসব ঘটনার সুষ্ঠু বিচার করা হোক।
সাপ্তাহিক : আপনি মুসলিম রাষ্ট্রের কথা বললেন। কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ তো মুসলিম রাষ্ট্রের নাম ধারণ করে না।
নূর হোসেন কাশেমী : দেশের শতকরা ৯০ জন মুসলমান। বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসেবে অভিহিত করা হয়। আপনি স্বীকার করেন আর না করেন। বিশ্বে এটাই আমাদের পরিচয়। আমি ইসলামি রাষ্ট্রের কথা বলিনি। মুসলিম রাষ্ট্রের কথা বলেছি।
সাপ্তাহিক : অনেকেই বলছেন আপনাদের এসব দাবি মেনে নিলে বাংলাদেশ আফগানিস্তানের মতো হয়ে যাবে।
নূর হোসেন কাশেমী : এ সরকার সর্বশেষ সংবিধান সংশোধনের আগেও আল্লাহর উপর বিশ্বাসের কথা সংবিধানে ছিল। তখন কি বাংলাদেশ আফগানিস্তান হয়ে গিয়েছিল?
সাপ্তাহিক : শায়খ রহমান, বাংলা ভাইদের উদাহরণ দেন কেউ কেউÑ
নূর হোসেন কাশেমী : আপনারা ভালোভাবে জানেন, ওই সময়ে শায়খ রহমান, বাংলা ভাইদের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে পল্টন ময়দানে মহাসমাবেশ করেছি। আমরা পরিষ্কারভাবে বলি ইসলামের সঙ্গে জঙ্গিবাদের কোনো সম্পর্ক নেই। নবী করীম (সা) বিদায় হজের ভাষণে সকল ধর্মের মানুষের অধিকার রক্ষার কথা বলেছেন। আমরা সেই নীতি মেনে চলি।
সাপ্তাহিক : আপনাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকজন ব্লগারকে গ্রেফতার করেছে সরকার। এতে আপনাদের প্রতিক্রিয়া কি?
নূর হোসেন কাশেমী : এতে আমরা সন্তুষ্ট না। যতক্ষণ তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করে শাস্তি কার্যকর না হয়। গ্রেফতার করা হয়েছে মাত্র কয়েকজনকে। আরও তো অনেকে আছেন।
সাপ্তাহিক : আপনারা কি ব্লগারদের কোনো তালিকা সরকারের কাছে দিয়েছেন?
নূর হোসেন কাশেমী : আমাদের মাধ্যমে কোনো তালিকা যায়নি। সরকারের মাধ্যমে একটি তালিকা হয়েছে বলে শুনেছি। সেই ৮৪ জনকেই আগে ধরুক দেখি।
সাপ্তাহিক : আপনাদের ১১ নম্বর দাবিটা হলো রাসুলপ্রেমিক আলেম ওলামাদের ওপর হামলা, মামলা গুলিবর্ষণ বন্ধ করার কথা বলেছেন। এমন প্রতিবাদীদের ওপর কোনো হামলা হয়েছে?
নূর হোসেন কাশেমী : হ্যাঁ, অবশ্যই হয়েছে।
সাপ্তাহিক : কোথায়?
নূর হোসেন কাশেমী : মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর-এ চারজনকে গুলি করে মারল। অগণিত মানুষের নামে মামলা দিল।
সাপ্তাহিক : মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে চাঁদে তার মুখ দেখার গুজবকে কেন্দ্র করে সেই সংঘর্ষ হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ।
নূর হোসেন কাশেমী : আপনারা হয়তো ভুলে গেছেন। নবী করীম (সা) এর প্রতি বেয়াদবির পরিপ্রেক্ষিতে হরতাল ডাকা হয়েছিল। সেদিন তাদের হত্যা করা হয়। অনেকের নামে মামলা দিয়েছে। অনেক ঈমামের চাকরি গেছে। লাঞ্ছিত হয়েছেন।
সাপ্তাহিক : এমন কোনো ঘটনার অভিযোগ কি প্রত্যক্ষভাবে পেয়েছেন?
নূর হোসেন কাশেমী : আমার মাদ্রাসায় দুইজন শিক্ষক এখনো জেলে আছেন।
সাপ্তাহিক : এই মাদ্রাসাটা কোন জায়গায়?
নূর হোসেন কাশেমী : তুরাগ থানায়।
সাপ্তাহিক : আপনাদের ৮ নম্বর দাবিতে জাতীয় মসজিদে নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ের বিষয়ে দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে সরকার বলছে মসজিদের ভেতরে যারা আগুন লাগায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়।
নূর হোসেন কাশেমী : জামায়াত শিবিরের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের কথা বলে সরকার সব কিছুই জায়েজ করতে চায়। জামায়াত শিবির ঘরে থাকলে আপনি ঘরে বসবাস করা বন্ধ করে দেবেন নাকি। আল্লাহর ঘর মসজিদ। এখানে সবাই নিরিবিলি নামাজ আদায় করতে আসে।
মসজিদে এসে যদি জামায়াত-শিবির অন্যায় করে থাকে তাহলে বিচার করার দায়িত্ব সরকারের। সেখানে সবাইকে দুর্ভোগ পোহাতে হবে কেন? মসজিদের গেট বন্ধ করে দিতে হবে এটা কেমন কথা?
সাপ্তাহিক : জামায়াত-শিবির নিয়ে অনেক বিতর্ক। আপনারাও বলছেন তাদের সঙ্গে আপনাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এ পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে বলছেন হেফাজতে ইসলাম যদি তাদের কর্মসূচিতে সুনির্দিষ্টভাবে জামায়াত শিবিরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করত তাহলে আপনাদের ভাষায়- ঈমান রক্ষার আন্দোলন আরও সুস্পষ্ট হতো...
নূর হোসেন কাশেমী : এখানে অস্পষ্টতার কিছু নেই। আপনি অস্পষ্টতার কি দেখছেন?
সাপ্তাহিক : এটা আমার দেখা নয়। মানুষের পর্যবেক্ষণের কথা তুলে ধরলাম।
নূর হোসেন কাশেমী : জামায়াতকে তো আমরা কাফের বলি না। তারা মুসলমান। ঈমানি আন্দোলনে যে কোনো দল মতের ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি আসতে পারেন। তাই এই জায়গায় সুনির্দিষ্ট একটি দলের নেতাকর্মীদের আমরা নিষিদ্ধ করার নৈতিক অধিকার রাখি না। এটা আমাদের এখতিয়ারে পড়ে না।
সাপ্তাহিক : এই রাজনৈতিক দলটি বিতর্কিত হওয়ায় অনেকের আপত্তিÑ
নূর হোসেন কাশেমী : তাদের দলগত অবস্থানে বিতর্ক আছে সেটা ভিন্ন ব্যাখ্যা।
সাপ্তাহিক : সেই ভিন্নতাই তো আপত্তির জায়গা। যারা বাংলাদেশ জন্মের বিরোধিতা করেছেন। এখন পর্যন্ত তারা অনুতপ্ত নন...
নূর হোসেন কাশেমী : স্বাধীনতার সময় তাদের ভূমিকা কি ছিল, সেটা নিয়ে সরকার ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছেন, বিচারের আয়োজন করেছেন। সেই কাজও চলছে। সেটাতে আমাদের কোনো আপত্তির কথা তো বলিনি। ওটার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কি?
সাপ্তাহিক : একটি দাবিতে আপনারা কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণার দাবি জানিয়েছেনÑ
নূর হোসেন কাশেমী : কাদিয়ানিরা নবী করীম (সা) কে শেষ নবী মনে করেন না। তাই তারা অমুসলিম হয়ে গেছেন। আমরা চাই রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের অমুসলিম হিসেবে ঘোষণা দেয়া হোক।
সাপ্তাহিক : অমুসলমান ঘোষণা করলে লাভ কি?
নূর হোসেন কাশেমী : ইসলামের নাম ব্যবহার করে অ-ইসলামি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। যেমন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান। তারা অমুসলমান।
সাপ্তাহিক : রাষ্ট্র কি কারও ধর্ম নির্ধারণ করে দেয়?
নূর হোসেন কাশেমী : রাষ্ট্রে হিন্দুকে হিন্দুই বলা হয়। খ্রিষ্টানকে খ্রিষ্টানই বলা হয়। এক ধর্মের নাম ব্যবহার করে আপনি সেই ধর্মের রীতিনীতির বিরুদ্ধে কাজ করবেন সেটা গ্রহণযোগ্য নয়।
সাপ্তাহিক : গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকে। আপনিও বলেছেন মুসলিম দেশেও সবার ধর্ম পালনের স্বাধীনতা আছে। সে ক্ষেত্রে কাদিয়ানিদের চিন্তাটাও তো একটা ধারা হতে পারে। তাদের চিন্তাকে হস্তক্ষেপ করলে কি স্বাধীন মত প্রকাশের দরজা রুদ্ধ হয় না?
নূর হোসেন কাশেমী : ট্রেডমার্ক সম্পর্কে জানেন নিশ্চয়ই। সবার স্বাধীনতা থাকা সত্ত্বেও একটি কোম্পানির ট্রেডমার্ক আরেকটি কোম্পানি ব্যবহার করতে পারে না কেন?
তেমনি মুসলমানরা যা বিশ্বাস করে সেই বিশ্বাসের কাতারে না থেকে যারা নিজেদের মুসলমান হিসেবে পরিচিতি দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াতে চায় তারা মুসলমান হতে পারে না।
দেশের সবারই তো ব্যক্তি স্বাধীনতা আছে। কোনো হিন্দু বা খ্রিষ্টান ব্যক্তি কি ইচ্ছে করলেই মুসলমান হিসেবে পরিচয় দিতে পারবে?
কাদিয়ানিরা তাদের নামে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়, বসবাস করতে চায়, তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু মুসলমান পরিচয় দিতে পারবে না।
সাপ্তাহিক : অনাচার ব্যভিচারের কথা উল্লেখ করেছেন ৪ নম্বর দাবিতে। বিষয়টা যদি পরিষ্কার করতেনÑ
নূর হোসেন কাশেমী : ব্যাখ্যা করার দরকার আছে? সামাজিক মূল্যবোধ কত নিচে নেমে গেছে। এগুলো বিশ্লেষণ করার আছে? শাহবাগে ছেলেমেয়েরা আন্দোলনের নামে একই তাঁবুতে রাত্রিযাপন করছে। এগুলো কি সমাজবিরোধী কাজ না?
সাপ্তাহিক : মেলামেশায় চলাফেরার ক্ষেত্রে আপনার আমার ধর্ম মতের সঙ্গে সবার মিলতে হবে এমন কোনো কথা তো নেই।
নূর হোসেন কাশেমী : কোনো সভ্য সমাজেই এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কেউ মানবে না।
সাপ্তাহিক : ভদ্র-সভ্য সমাজের স্ট্যান্ডার্ড কি?
নূর হোসেন কাশেমী : যে দেশের নব্বইভাগ মানুষ মুসলমান সে দেশের মূল্যবোধ, সভ্যতার স্ট্যান্ডার্ড কেমন হবে সেটা কি বলার অপেক্ষা রাখে?
সাপ্তাহিক : ভাস্কর্য নিয়েও আপনারা আপত্তি তুলেছেন?
নূর হোসেন কাশেমী : এগুলো মূর্তির মতো ব্যাপার, অনেকে পূজা করা শুরু করে। এটাও গর্হিত কাজ।
সাপ্তাহিক : আমরা জেনেছি সৌদি আরবসহ সব মুসলিম দেশেই ভাস্কর্য আছে। এটা স্বীকৃত একটা শিল্প মাধ্যমও।
নূর হোসেন কাশেমী : সৌদি আরবে মুষ্টিবদ্ধ হাতের কথা বলা হচ্ছে। এটা তো পূর্ণাঙ্গ মানুষের বা জানোয়ারের ছবি বা মূর্তি না।
সাপ্তাহিক : হাতটা তো মানুষেরই শরীরের অংশ।
নূর হোসেন কাশেমী : এটা ঠিক আছে। এটাতে সমস্যা নেই। পুরো মানুষের ছবি তৈরি করলে সেটা মূর্তি।
সাপ্তাহিক : যদি পায়ের ভাস্কর্য কেউ করে?
নূর হোসেন কাশেমী : সেটা আংশিক। তাতে আপত্তি নেই।
সাপ্তাহিক : বিষয়টা স্ববিরোধী হয়ে গেল না? মানুষের মূর্তি করা যাবে না। তার হাত পায়েরটা করা যাবে...
নূর হোসেন কাশেমী : আল্লাহ তায়ালা মানুষকে রুহ দান করেন। কেউ মূর্তি বানিয়ে সেটাকে কি জীবন দান করতে পারে?
সাপ্তাহিক : এটা যদি মনে করেন যে নকল করা হলো। আমরা তো অনেক কিছুর ডামি করি, বা প্রতীকী অর্থে ব্যবহার করি। সে ক্ষেত্রে ভাস্কর্য আপত্তি থাকবে কেন। কেউ তো দাবি করেননি যে আমি মূর্তি বানিয়ে, সেখানে প্রাণ দিয়ে জীবন্ত মানুষ তৈরি করেছি?
নূর হোসেন কাশেমী : দেখুন শরীয়তের বিধান মানতে এতো যুক্তির দরকার হয় না।
সাপ্তাহিক : একটা দাবিতে বলেছেন উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বাধ্যতামূলক ইসলামি শিক্ষার জন্য। এর পরে কি ইসলামি শিক্ষার দরকার নেই?
নূর হোসেন কাশেমী : এটা হচ্ছে একটা মানুষ গড়ে উঠার মৌলিক সময়। এটাকে আপনি ফাউন্ডেশন বলতে পারেন। ফাউন্ডেশন ঠিকভাবে গড়ে উঠলে বাকি কাজ সহজ হয়। এরপর জ্ঞানার্জনের অনেক পথ আছে। যে যেকোনটাই গ্রহণ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে ইসলামি শিক্ষা তাকে বরং সহযোগিতা করতে পারে। ভালো পথে থাকা, আদর্শবান হওয়া, নৈতিকতা বজায় রাখা ইত্যাদি।
সাপ্তাহিক : নাস্তিকতা বিষয়ে আপনার কাছে জানতে চাই।
নূর হোসেন কাশেমী : যারা আল্লাহ মানেন না। ইসলামের নবীকে মানেন না। তাদের আমরা নাস্তিক বলি।
সাপ্তাহিক : অন্যান্য ধর্মের সবাই কি নাস্তিক?
নূর হোসেন কাশেমী : আমি সেটা বলেছি নাকি?
সাপ্তাহিক : হিন্দু-খ্রিষ্টানসহ অন্য ধর্মাবলম্বী লোকেরা কি নবীকে মানেন।
নূর হোসেন কাশেমী : আমি বুঝাতে চেয়েছি যারা কোনো ঐশ্বরিক শক্তি বিশ্বাস করেন না তারাই নাস্তিক।
সাপ্তাহিক : কেউ একজন যদি কোনো ঐশ্বরিক শক্তিকে বিশ্বাস না করে তার জীবনযাপন করতে চান, তাতে সমস্যা কোথায়?
নূর হোসেন কাশেমী : কেউ তার নিজের মতো জীবনযাপন করতে সমস্যা নেই। কিন্তু নিজেকে নাস্তিক হাজির করে ইসলামের নামে কুৎসা রটানোর অধিকারও তার নেই। আপত্তি এই জায়গায়।
সাপ্তাহিক : তাই বলে মৃত্যুদণ্ডের আইন চাইতে হবে?
নূর হোসেন কাশেমী : রাষ্ট্রদ্রোহের শাস্তি যদি মৃত্যুদণ্ড হয় তাহলে ধর্মের অবমাননাকারীদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হতে বাধা কোথায়?
সাপ্তাহিক : বিশ্বের চারটি দেশে ব্লাসফেমি আইন রয়েছে। অন্যদিকে অধিকাংশ দেশেই মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠ হচ্ছেন। এ জায়গায় নতুনভাবে ব্লাসফেমি আইনের প্রাসঙ্গিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয় কি না?
নূর হোসেন কাশেমী : আপনি এইমাত্র যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করলেন। আর আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই মৃত্যুদণ্ড বিতর্কিত হয়ে গেল?
সাপ্তাহিক : খ্রিষ্টান মিশনারিগুলো নিয়েও আপত্তি জানিয়েছেন।
নূর হোসেন কাশেমী : এসব প্রতিষ্ঠানে কি হয়, না হয় রাষ্ট্রীয়ভাবে তদারকির কোনো ব্যবস্থা নেই। তাদের মিশনারিগুলোতে প্রশাসন ঢুকতে পারে না। জোর করে মুসলমানদের খ্রিষ্টান বানানো হয়। এসব সহ্য করা যায় না।
সাপ্তাহিক : এমন কোনো একটি কেইসের প্রমাণ আছে?
নূর হোসেন কাশেমী : গত বছর ময়মনসিংহে ৪২ জনকে কাজের কথা বলে, অনেক টাকার লোভ দেখিয়ে ধর্মান্তরিত করতে চেয়েছিল। পরে পারেনি। এছাড়া লালমনিরহাটসহ অভাবী এলাকা থেকে লোকজনকে ধোঁকা দিয়ে ধর্মান্তরিত করার বিষয়টি অনেকেই জানেন।
সাপ্তাহিক : আপনারা যেসব দাবি উত্থাপন করেছেন সরকার যদি সেগুলো পূরণ না করেন তখন কি করবেন?
নূর হোসেন কাশেমী : আমাদের আন্দোলন কর্মসূচি দেয়া আছে। কর্মসূচি বাস্তবায়ন করব।
সাপ্তাহিক : সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এসব দাবি পূরণ করার মতো যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছে না।
নূর হোসেন কাশেমী : আমাদের ঘোষণাপত্রে আছে ক্ষমতায় থাকতে হলে আমাদের দাবি মানতে হবে। ক্ষমতায় আসতে হলেও আমাদের দাবি মানতে হবে।
সাপ্তাহিক : আন্দোলনের তো অনেক কৌশল থাকে। কেউ যদি আপনাদের দাবি না মানে তখন কি করবেন?
নূর হোসেন কাশেমী : আমাদের আন্দোলন ১৩ দফা নিয়ে। সোজা কথা। এর বাইরে আমাদের কোনো চিন্তা নেই।
সাপ্তাহিক : এসব যদি না মানে, তাহলে কি অন্য কোনো শক্তিকে ক্ষমতায় এনে দাবি পূরণের পথে যেতে চান আপনারা?
নূর হোসেন কাশেমী : আমরা সেই কথা বলি না। আমাদের দাবি সরকারের কাছে। যেই সরকারই হোক। আমরা তাদের কাছেই আমাদের এসব দাবি জানাই।
সাপ্তাহিক : আমাদের সাংবিধানিক কাঠামো অনুযায়ী কি ১৩ দফা মানা সম্ভব বলে মনে করেন?
নূর হোসেন কাশেমী : নানান কারণে সংবিধান ১৫ বার সংশোধন করা হয়েছে। আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে সংবিধান পরিবর্তনে সমস্যা কোথায়?
হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা
১ সংবিধান রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে ‘মহান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন করতে হবে।
২ আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে।
৩ শাহবাগ আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী নাস্তিক-মুরতাদ এবং প্রিয়নবী সা. এর শানে কুৎসা রটনাকারী ব্লগার ও ইসলাম বিদ্বেষীদের সকল অপপ্রচার বন্ধ করে গ্রেফতার পূর্বক কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪ রাসূলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদ্রাসার ছাত্র এবং তৌহিদী জনতার উপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচারে গুলিবর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে।
৫ অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত সকল আলেম-ওলামা, মাদ্রাসা ছাত্র ও তৌহিদী জনতাকে মুক্তিদান, দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
৬ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সকল মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘেœ নামাজ আদায়ে বাধাবিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ নসীহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করতে হবে।
৭ কাদিয়ানিদের সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সকল অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
৮ ব্যক্তি ও বাক স্বাধীনতার নামে সকল বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বলনসহ সকল বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
৯ মসজিদের নগরী ঢাকাকে মূর্তির নগরীতে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করতে হবে।
১০ ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলামি শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
১১ সারা দেশের ক্বওমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ এবং মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দানসহ তাদের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।
১২ রেডিও, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় দাড়ি, টুপি ও ইসলামি কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসি-ঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় খল ও নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করতে হবে।
১৩ পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও, কাদিয়ানিদের অপতৎপরতা এবং খ্রিস্টান মিশনারীদের ধর্মান্তকরণসহ সকল অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
(সুত্র, সাপ্তাহিক, ১৮/০৪/২০১৩)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৭:৩৫