somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্রোত (ইতিহাসের গল্প)

২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জানালার পাশে বসে শেষ বিকেলের মায়াবী চেহারাটা দেখছিলেন আলেয়া বেগম। অবসর সময়টা বড্ড একাকী কাটে তার। মাঝে মাঝে তিনি এখানে বসেই কোমল দুপুরে সূর্যস্নান করেন। তাকিয়ে থাকেন দিগন্তজোড়া আকাশের দিকে। কখনো আনমনা হয়ে গেলে হৃদয়ের নীরব অলিন্দ পেরিয়ে প্রবেশ করেন কল্পনার সরব আঙিনায়। দু’চোখে স্বপ্নরা নেমে আসে। ইচ্ছেমত আঁকতে থাকেন জীবনের আল্পনা। সূখের আল্পনা, দুখের আল্পনা। ধূমায়িত বর্তমান আর অনাহূত ভবিষ্যতের আল্পনা। হারিয়ে যেতে চান অসীমের সীমানায়। কিন্তু একসময় এমন ভাবনার চোরাগলি দিয়েই ফিরে আসতে হয় সসীম বাস্তবতায়।

আজ রূহানের বাড়ী আসার কথা। তার একমাত্র আদরের পুত্র। ঢাকার নামকরা ইংলিশ মিডিয়িাম স্কুল স্কলাষ্টিকার অষ্টম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র। গুলশান শাখায় পড়ে। যাত্রাবাড়ী থেকে গিয়ে প্রতিদিন কাস করা কঠিন। তাই নতুনবাজারে চাচার বাসায় থাকে। অনেকদিন হল ছেলেকে দেখেন না আলেয়া বেগম। ও না থাকেলে ঘরটা খাঁ খাঁ করে। একদিন এক মাসের সমান দীর্ঘ মনে হয় তার কাছে। ছেলে আজ আসবে শুনে তার হৃদয়ে ভোরের আলো ছড়িয়ে পড়েছিল। শিশিরভেজা ভোর থেকে অপেক্ষা করছিলেন কলিজার টুকরাটা কখন আসবে, একসাথে নাস্তা করবেন। আদর করবেন। মনভরে আদরের দুলালটাকে দেখবেন। আরো কত কী......! এসব ভাবতে ভাবতে মায়ের মনে পবিত্র খুশির আবেশমাখা ঢেউ বয়ে চলল।

একটু বেলা হয়ে এলে জানতে পারলেন ওর আসতে বিকেল হবে। সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ। পুলিশ ব্যারিকেট দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ, উপরের নির্দেশ। যেন সেই উপরের কোন তল নেই। কেবল শূন্যতায় অতল। কথাটা শুনে আলেয়া বেগমের মনটা খারাপ হয়ে গেল। মায়ের মনটা যেন ভোরের স্নিগ্ধতায় মাখা। একটু কিছু হলেই চোখ দুটো রক্তজবার মত ফুলে উঠে। অনবরত শিশিরবিন্দু ঝরতে থাকেন। আলেয়া বেগমেরও চোখ দুটো শিউলী ফুলের মত হয়ে গেল। তিনি চোখ মুছলেন। এমন অবস্থা যারা সৃষ্টি করেছে তাদের প্রতি ঘৃণার আগুনটা ছড়িয়ে পড়ল পুরো সত্ত্বা জুড়ে। তাই কী আর করা! মায়াবী বিকেলে ওর অপেক্ষায় জানালার পাশে একাকী বসে রইলেন; সামনের বিশাল শূন্যতা আর একরাশ নির্মম বাস্তবতা নিয়ে।

সন্ধ্যার আকাশটা গায়ে কালো চাদর জড়িয়ে নিচ্ছিল মাত্র। এমন সময় সিএনজিতে চেপে বাসায় এল রূহান। দরজা খুলে মা ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন। আহা, কতদিন পর সোনামুখটাকে দেখলেন! আবেগে চোখ দুটো ছলছল করে উঠল। বললেন, রাস্তায় কোন সমস্যা হয়নিতো বাবা?
-কী বল মা, সমস্যার অভাব নেই। পদে পদে বিপদ। মোড়ে মোড়ে পুলিশ, র‌্যাব আর লাঠি হাতে গুন্ডাবাহিনী। আমাকেতো একবার আটকে ফেলেছিল। স্কুলের আইডি কার্ড দেখিয়ে ও বাবার কথা বলে ছাড়া পেলাম।
- বলিস কি! তোর বাবার কথা বলার পর কী বলল?
- বলল, তোমার বাবা কোন চ্যানেলের বার্তা সম্পাদক? আমি বললাম, চ্যানেল বাহাত্তরের। এ কথা শুনে ছেড়ে দিল।
- ঠিক আছে, তুমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি খাবার দিচ্ছি।

ছেলেকে পেয়ে দেহের মন্থর কোষগুলো হঠাৎ গতিময় হয়ে উঠল মার। নিথর অঙ্গগুলো প্রাণ চঞ্চলতা ফিরে পেল। নানা আয়োজনে ভরে উঠল খাবারের টেবিল। রূহানের এমনিতে মায়ের হাতের রান্না খুব পছন্দ। খেলে শুধু খেতেই মনে চায়। মায়ের হাতের রান্নায় যে তৃপ্তি পরশ তা অন্য কোন খাবারে পাওয়া যায় না। হাজার টাকার রেষ্টুরেন্টের খাবার মায়ের হাতের ভর্তার সামনে মূল্যহীন। রূহান তৃপ্তিভরে খাচ্ছিল। মা বসে বসে ছেলের খাবারের দৃশ্য দেখছিলেন। এ দৃশ্যটা মায়ের কাছে বড় প্রিয়। নিজ হাতে রান্না করে সামনে বসিয়ে খাইয়ে মা সীমাহীন তৃপ্তি লাভ করেন। তার মনটা ভরে যায়। নিজে না খেয়ে সন্তানকে খাওয়ানোর মাঝে কী যে পরম তৃপ্তি তা কেবল মা-ই উপলব্ধি করতে পারেন।

খাবার শেষ হওয়ার পর শুরু হল মা-ছেলের গল্পের পালা। রূহানেরর প্রিয় মুহূর্তগুলোর অন্যতম হল- মায়ের সাথে গল্প করা। মায়ের সাথে গল্প করলে অনেক কিছু জানা যায়। তার মনে জমে থাকা প্রশ্নগুলোর সমাধান সে কেবল মায়ের কাছেই পায়। মা যেভাবে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে উত্তর দেন সেভাবে আর কেউই দিতে পারে না। মায়ের উত্তরটা শুনলে মনে হয় আমি এই উত্তরটাই চাচ্ছিলাম। এ পর্যন্ত ক্লাসের বাইরে ধর্মীয় বিষয়ে সে যা কিছু সে শিখেছে সবকিছুর পেছনে রয়েছে মায়ের হাত। তাই এমন সুযোগের জন্য সবসময় মুখিয়ে থাকে সে।

আলেয়া বেগম ছেলের পড়াশোনার খোঁজ-খবর নিলেন। এরপর নানা বিষয়ে আলোচনা উঠল তাদের মধ্যে। উঠে এল রাজনৈতিক প্রসঙ্গও। এক পর্যায়ে রূহান জিজ্ঞেস করল, মা, তুমি কি শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে গিয়েছিলে? প্রশ্নটা শুনে একটু হাসলেন তিনি। সাথে সাথে বিচলিত বোধও করলেন। উৎকন্ঠার সাথে বললেন, কেন তুমি গিয়েছিলে নাকি?
-হ্যাঁ মা, আমরা সবাই গিয়েছিলাম। স্যাররা বলেছেন সবার যাওয়া বাধ্যতামূলক। না গেলে সমস্যা হবে। তানি মেম বললেন, আমরা আগে বই মেলায় যাব। সারাদিন ঘুরে দুপুরে শাহবাগে এসে বিরানী খাব। এখানে সবার জন্য বিরানীর ব্যবস্থা আছে। বিকেলে ছবি তুলে চলে আসব।
- আর কখনো আমার কাছে না বলে যাবে না।
- কেন, ওরা কি খারাপ?
- না, ওদের সবাই খারাপ না। তবে গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোক্তাদের মধ্যে কিছু ব্লগার আছে নাস্তিক। ওরা খারাপ।
- নাস্তিক কী মা?
- যারা নামে মুসলমান হয়েও আল্লাহকে বিশ্বাস করে না, পরকালকে অস্বীকার করে, তারা নাস্তিক। তারা ধর্মদ্রোহী।
- ব্লগার কাকে বলে মা?
- তুমি না ইংলিশ মিডিয়ামে পড়, ব্লগার কাকে বলে তা জান না? আচ্ছা শোন। ব্লগার শব্দটি ইংরেজী ব্লগ শব্দ থেকে এসেছে। ব্লগ হল, আমরা যেমন প্রতিদিন রোজনামচা বা দিনলিপি লিখি, নিজের মতামত বা অনুভূতি স্বাধীনভাবে মুক্তমনে লিখে রাখি, তেমনি ব্লগ হল একটি অনলাইন ডায়েরী বা ব্যক্তিগত জার্নাল। আর যে ব্লগে লিখে তাকে বলা হয় ব্লগার।
- শাহবাগেতো সবাই যুদ্ধাপরাধের বিচার চায়, আমরা কি তাহলে তাদের বিচার চাই না?
- অবশ্যই চাই, প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক এটা সবাই চায়। যারা আমার দেশের অস্তিত্ব বিরোধী ছিল, তাদের বিচারতো আমরা চাইবোই। কিন্তু সেখানকার যারা আয়োজক তাদের একটা বড় অংশ ধর্মদ্রোহী বøগার। তারা আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি কুৎসা রটনা করেছে। অবমাননা করেছে। ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ ছড়িয়েছে এবং ছড়াচ্ছে। ব্লগে তারা ধর্ম নিয়ে কূরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও লেখা পোষ্ট করেছে দিনের পর দিন। এখনো অব্যাহত আছে তাদের অশুভ চিন্তা ও ভয়ংকর মিশন। আমরা বিচার চাওয়ার নামে তাদের সঙ্গ দিয়ে তাদের কুকর্মকে সমর্থন করতে পারি না। একজন মুসলমানের কাছে আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ভালবাসা সবকিছুর উর্ধ্বে।
- মা, হুযুররা গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন কেন? তারা কি যুদ্ধাপরাধীর বিচার চান না?
- যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারদের বিচার হোক এটা হুজুররাই বেশী চান। সবাই নিজেদের স্বার্থে তাদের সাথে জোট করলেও হুজুররা কখনো তাদের সাথে জোট করেন নি। তাদের আক্বীদা ও বিশ্বাস ভ্রান্ত হওয়ায় কখনো তাদেরকে মেনে নেননি। তাই ওদের বিচার হলে হজুররা সবচেয়ে বেশী খুশী হবেন। আর তোমাকে কে বলল যে, তারা গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন? তারা গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন না। তাদের আন্দোলন সেই মঞ্চের সাথে সংশ্লিষ্ট ধর্মদ্রোহী কিছু নাস্তিক বøগারদের বিরুদ্ধে। ওদেরকে ধরে শাস্তি দিলে তারা আর কোন আন্দোলন করবেন না।
- তারা এত্তো খারাপ! তাদের ধরে শাস্তি দিলেইতো হয়। তাহলে হুজুররা আর আন্দোলন করতে পারবেন না....।
- তুমি ঠিক বলেছ। কিন্তু তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে না। শাস্তি দেয়া হলেতো মঞ্চ বন্ধ হয়ে যাবে। এটা তারা চায় না। তাই যারা সেখানে যায় তাদের জন্য ফ্রি বিরানীর ব্যবস্থা আছে। তোমরাতো শুধু বিরানী পেয়েছ। যারা দিনরাত ষেখানে কাটায় তাদেরকে অনেক টাকাও দেয়া হয়।
- গতকাল স্যার বললেন, ধর্মের নামে যারা লংমার্চ করছে তারা চীনের মাও সে তুংয়ের অনুসরণ করছে। ইসলাম ধর্মে নাকি কোন লংমার্চ নেই! কথাটা বলে একটু বিস্মিত চোখে মায়ের দিকে তাকাল রূহান।
মা বললেন, শোন, ইসলাম ও ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে তোমার স্যারের তেমন কোন জ্ঞান নেই বলেই তিনি এমনটি বলেছেন। লংমার্চ শব্দের অর্থ হল ‘দীর্ঘ অভিযাত্রা’। ব্যবহারিক অর্থে লংমার্চ বলতে আমরা বুঝি- কোন শুভ উদ্দেশ্যে অল্পসংখ্যক কিংবা বিপুল সংখ্যক মানুষের দীর্ঘ অভিযাত্রা করাকে। পৃথিবীর ইতিহাসে আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম মক্কা থেকে মদীনায় লংমার্চ করেছেন। যা ‘হিযরত’ নামে আমাদের কাছে পরিচিত। এখন যারা লংমার্চ করছেন তারা আমাদের নবীকে অনুসরণ করে শুভ উদ্দেশ্যে অশুভ কাজের প্রতিবাদে এই দীর্ঘ অভিযাত্রা করছেন। চীনা নেতাকে অনুসরণ করে নয়। আমি মনে করি চীনা নেতাই বরং আমাদের নবীর কাছ থেকে লংমার্চ শিখেছেন।
- লংমার্চে যারা যাবে তাদের কি সওয়াব হবে মা?
- অবশ্যই... অনেক সওয়াব হবে। আল্লাহ অনেক খুশি হবেন। তারাতো কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ বা দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে নয় বরং আল্লাহ ও তার রাসূলে প্রতি অকুন্ঠ ভালবাসার কারণে, তাদের ইজ্জত ও ও সম্মান রক্ষা করার উদ্দেশ্যে এই দীর্ঘ অভিযাত্রা করছেন। এমনকি কেউ যদি এখানে গিয়ে শহীদ....!

শব্দটি বলতে গিয়ে থেমে গেলেন তিনি। গলায় আঁধারের বিলাপী সুর নেমে এল। ‘শহীদ হওয়া’ প্রসঙ্গ উঠতেই একমাত্র সন্তান কলিজার টুকরা রূহানের চেহারাটা ভেসে উঠল। সাথে সাথে পুরো পৃথিবীর সমস্ত অন্ধকার এসে যেন তাকে চেপে ধরল। তিনি কেঁপে উঠলেন। ঈমানী ঝর্ণাধারার পাশ দিয়ে স্নেহ ও মমতার খরস্রোতা নদীটাও যেন বিপুল স্রোতে বয়ে চলল। দ্রুত নিজেকে সামলে নিলেন। মায়ের চেহারায় আচানক পরিবর্তন রূহানের চোখে ধরা পড়ল। সে বলে উঠল, কী হয়েছে মা তোমার?
-না, কিছু না। বলছিলাম যে, এমন অভিযাত্রায় গিয়ে কেউ যদি মারা যায় তাহলে সে প্রকৃত শহীদের মর্যাদা পাবে। তিনি আর কথা বাড়ালেন না। ভেতর থেকে কে যেন কণ্ঠটা থামিয়ে দিল।
রূহান প্রশ্ন করার পাশাপাশি তন্ময় হয়ে মায়ের কথাগুলো শুনছিল। মার বিজ্ঞোচিত জবাব তাকে নতুন দিগন্তের সন্ধান দিল। এমন জ্ঞানী মা ক’জন পায়! আগামীকালের অভিযাত্রার কথা ভেবে সারা শরীরে এক অভূতপূর্ব শিহরণ খেলে গেল তার। ইতিপূর্বে কোন কথা শুনে তার হৃদয় এতটা আলোড়িত হয়নি, আজ যতটা হল।

আজমল খান এলেন রাত এগারটায়। এসেই ছেলের সাথে কুশলাদি বিনিময় করলেন। তবে অন্য যে কোন সময়ের মত উচ্ছসিত কণ্ঠে নয়। আলেয়া বেগমের চোখে পড়ল বিষয়টি। তিনি ব্যাপারটি বুঝার চেষ্টা করলেন। আজমল খান আর কোন কথা না বলে পোশাক পরিবর্তন করে শুয়ে পড়লেন। খাবার দিবেন কিনা জিজ্ঞেস করতেই উত্তর এল, খেয়ে এসেছেন। এখন খাবেন না।
কথাটি শুনে আলেয়া বেগম বিস্মিত হলেন। রূহানের বাবা সাধারণত বাহিরে খান না। বাসায় খেতেই তৃপ্তি বোধ করেন। আবার আছে ডায়াবেটিস সমস্যা। তাই ব্যাপারটি বুঝার জন্য একটু ঘনিষ্ট হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, বলতো কী হয়েছে তোমার?
- আচ্ছা, আমরাতো মুসলমান, তাই না? হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান নাতো! আমাদের আল্লাহ ও রাসূল বলতে কিছু একটা আছেনতো নাকি বল?
আলেয়া বেগম স্বামীর চেহারা ও কণ্ঠে নিরন্তর পাড়ভাঙা সমুদ্রের বিক্ষুব্ধতা দেখতে পেলেন। কৌতূহলী হয়ে বললেন, হ্যাঁ, তো কী হয়েছে? একথা বলছ কেন?
- ভাবছি....চাকরিটা ছেড়ে দিব। এমনিতেই ঠিকমত নামাজ-কালাম পড়তে পারি না। তার উপর আল্লাহ-রাসূলের ভালবাসা অন্তরে যতটুকু আছে সেটুকুও শেষ হতে চলেছে।
- কেন কী হয়েছে? আলেয়া বেগমের চোখে মুখে বিস্ময়।
- জানইতো আমাদের চ্যানেল শাহবাগপন্থী। হেফাজতের আন্দোলন নস্যাৎ করা এখন তাদের প্রধান কাজ। দিনের পর দিন সর্বৈব মিথ্যা সংবাদ তৈরি করে দিতে হচ্ছে আমাকে। আগামীকালের প্রোগ্রামও একজন নারী সাংবাদিকের মাধ্যমে বিতর্কিত করতে হাতে নিয়েছে ভয়াবহ পরিকল্পনা। আজ সব শুনে এলাম। হলুদ সাংবাদিকতারও একটা সীমা থাকার দরকার। এসব কর্মকান্ডকে আমি মন থেকে ঘৃণা করলেও জীবনের প্রয়োজনে তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছিনা। তাই কিছুতেই মনকে বুঝ দিতে পারছিনা। হাশরের মাঠে আল্লাহর সামনে কী জবাব দিব....কী হবে আমার....একথা বলেই ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলেন আজমল খান। আলেয়া বেগমও আচলে চোখ মুছলেন।

ভোরের স্নিগ্ধতা ছাপিয়ে দিবামনির গা তাতিয়ে উঠছে মাত্র, এমন সময় নিযুত কণ্ঠধ্বনি ভেসে এল। রূহান জানালার পাশে গিয়ে দেখল সমুদ্র গভীর জনতা বিপুল উচ্ছাসে ধীর পদে এগিয়ে যাচ্ছে। রোড বরাবর যতদূর চোখ যায় শুধু শুভ্রতার ঢেউ। চারদিকে যেন সাদা আগুন ঢেউ খেলছে। রূহান একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল। গতরাতে শোনা মায়ের কথাগুলো নতুনভাবে তার হৃদয়ে ঝড় তুলল। এতদিন ঘুমিয়ে থাকা প্রকৃত চেতনা তারুণ্যের বিপুল শক্তি নিয়ে জেগে উঠল। কাউকে কিছু না বলেই সে বেরিয়ে এল। মিশে গেল পবিত্র অভিযাত্রার বিপুল স্রোতে। কী যেন মনে হতেই আলেয়া বেগম জানালার পাশে এসে দেখলেন, রাস্তায় ঈমানদীপ্ত জনতার স্রোত। তার কলিজার টুকরা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে সীমাহীন গভীর সেই স্রোতে। যে স্রোতের গতিবেগ ও গভীরতা পৃথিবীর ইতিহাস আজও নির্ণয় করতে পারেনি।

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৪৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মি. চুপ্পুর পক্ষ নিয়েছে বিএনপি-জামাত; কারণ কী?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬


বিএনপি গত ১৬ বছর আম্লিগের এগুচ্ছ কেশও ছিড়তে পারেনি অথচ যখন ছাত্ররা গণহত্যাকারীদের হটিয়েছে তখন কেন বিএনপি চু্প্পুর পক্ষ নিচ্ছে? অনেকেই বলছে সাংবিধানিক শুন্যতা সৃষ্টি হবে তার সংগে বিএনপিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এতো কাঁদাও কেনো=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৬




আয়না হতে চেয়েছিলে আমার। মেনে নিয়ে কথা, তোমায় আয়না ভেবে বসি, দেখতে চাই তোমাতে আমি আর আমার সুখ দু:খ আনন্দ বেদনা। রোদ্দুরের আলোয় কিংবা রাতের আঁধারে আলোয় আলোকিত মনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×