এক.
ইসলাম শান্তির ধর্ম। সম্প্রীতির ধর্ম। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, সমাজের মানুষের মাঝে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব ও সুখ-সম্পর্ক ইসলামের প্রতিশ্রুতি। ইসলাম সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ধনী-গরিব, শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গের ভেদাভেদ ইসলামে নেই। পৃথিবীকে একটি সুন্দর শান্তি-সুখের ঠিকানা হিসেবে গড়ে তুলতে চায় ইসলাম। কিন্তু শ্বাশ্বত ধর্ম ইসলামের এ অনুপম আদর্শ স্থাপনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় বাতিল সম্প্রদায়। তারা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশৃঙ্খলা ও বিভেদ সৃষ্টি করে। পরস্পরের মাঝে সৃষ্টি করে দূরত্ব। ফলে সমাজে দেখা দেয় অশান্তি, অরাজকতা, অবিচার ও ঝগড়া-বিভেদ। আবহমানকাল থেকেই এ ধারাবাহিকতা চলে আসছে। এ সত্য অবধারিত। এ সত্য চিরায়ত।
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই শান্তির ধর্ম ইসলামেরই ধারক ও বাহক ছিলেন। তিনি শান্তির অগ্রদূত হিসেবে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তিনি তাঁর মক্কী জীবন শেষে আল্লাহ তাআলার ইশারায় হিজরত করেন। মদীনায় গিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সর্ব প্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন এবং মসজিদকে কেন্দ্র করে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা কায়েম করেন। সকলের মাঝে সৃষ্টি করেন ভ্রাতৃত্ব ও মমত্ববোধ । যা আমরা তাঁর জীবন চরিত পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই।
দ্বিধাহীনচিত্তে এ কথাতো সকলেই স্বীকার করেন যে, ইসলাম হল শান্তি ও মানবতার ধর্ম। ইসলাম শব্দের মূল ধাতু ‘সালমুন’। যার অর্থ- ‘শান্তি ও নিরাপত্তা’। এ জন্যই একজন মুসলমানের সাথে আর একজন মুসলমানের সাক্ষাত হলে ‘আসসালামু আলাইকুম’- ‘শান্তি বর্ষিত হোক আপনার উপর’ শব্দগুচ্ছ দ্বারা শুভেচ্ছা জানাতে শিক্ষা দেয় ইসলাম। নবীজী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আবির্ভাবের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল-‘আখলাক ও নৈতিক চরিত্রের উৎকর্ষ সাধন ও এর পূর্ণতা বিধান’। যেমনটি তিনি বলেছেন যে, ‘আখলাক ও নৈতিক চরিত্রের উৎকর্ষ সাধন ও এর পূর্ণতা বিধানের জন্য আমি প্রেরিত হয়েছি’। আল্লাহ তাআলাও কুরআন মাজীদে তাঁর স্বরূপ বর্ণনা দিতে গিয়ে ঘোষণা করেছেন- ‘হে নবী! আপনাকে আমি সারা বিশ্বের জন্য রহমত ও করুণা স্বরূপ প্রেরণ করেছি’।
দুই.
হযরত আজীবন শান্তি ও মানবতার আধার ছিলেন। তিনি যখন কৈশোর পেরিয়ে যৌবনের রূপালী দ্বীপে পদার্পণ করলেন, তখন আরব সমাজের বাস্তব চিত্র তার চোখে এসে পরিপূর্ণরূপে ধরা দিল। তিনি দেখতে পেলেন সমাজের দুর্দশা, মানবতার বিলুপ্ত সাধন ও হীন চরিতার্থের সকল আয়োজন। তিনি যখন এ ধরায় আগমন করেন তখন সমাজের মানবচরিত্র পশুচরিত্রকেও হার মানিয়েছিল। মানবতা ছিল ভূলুন্ঠিত। মারামারি কাটাকাটি ছিল নিত্যকার চিত্র। সমাজে নারীদের কোন সম্মান বা অবস্থান ছিলনা। কন্যা শিশুর জন্মগ্রহণকে অশুভ মনে করে তাকে জীবন্ত পুতে ফেলা হত। নারীরা বিবেচিত হত ভোগ্যপণ্য হিসেবে। তুচ্ছ থেকে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে যুদ্ধ চলত যুগের পর যুগ। মোটকথা, সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা ও মানবতা বলতে কিছুই ছিলনা। ছিল হীন কর্ম চরিতার্থের লালসা ও লাগামহীন পাশবিকতা।
যুবক মুহাম্মদ সা. ভাবতে লাগলেন সমাজের এই অবস্থার কী করা যায়? কীভাবে তিনি তাদেরকে বের করবেন এই দুর্বিপাক থেকে? তার এই ভাবনা ও মনোবৃত্তিকে আরও বাড়িয়ে দিল আরবের একটি যুদ্ধ। সেকালে আরবের বিশেষ বিশেষ স্থানে মেল বসত। তন্মধ্যে ‘ওকাজ’ মেলাই ছিল প্রধান। এই মেলাতে একটি কলহের সৃষ্টি হল এবং সেই কলহই এক সময় ভীষণ যুদ্ধে পরিণত হয়ে আরবের গোত্রে গোত্রে ছড়িয়ে পড়ল। র্দীঘ পাঁচ বছর ধরে চলল এই যুদ্ধ। হাজার হাজার লোক মারা গেল। ইতিহাসে এই যুদ্ধ ‘হরবে ফোজ্জার’ বা ‘অন্যায় সমর’ নামে পরিচিত।
হযরতের গোত্রও এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ল। তিনি পিতৃব্যের সাথে যুদ্ধে গমন করেছিলেন। কিন্তু যুদ্ধ করেননি। আরবদের বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতা তাঁর চোখের সামনে দেখতে পেলেন। ফলে তিনি অস্থির হয়ে উঠলেন। একদিন যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটল। কিন্তু তিনি শান্ত হলেন না। তিনি দেখলেন আরবের প্রথানুযায়ী স্বগোত্রের কেউ কোন অন্যায় করলে দলগতভাবে তাকে সমর্থন করা হয়। তাদের এই কুৎসিত মনোবৃত্তিই যে সকল সর্বনাশের মূল- তা তিনি অনুভব করলেন। সেই সাথে দৃঢ়পণ করলেন তা রোধ করার। এই উদ্দেশ্যে কতিপয় শান্তি প্রয়াসী যুবকদের নিয়ে একটি ‘সেবাসংঘ’ গঠন করলেন। তারা সকলেই এই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেন-
১. আমরা নিঃস্ব, অসহায় ও দুর্গতদের পাশে দাঁড়াব এবং তাদের সেবা করব।
২. অত্যাচারীকে প্রাণপণে বাধা দিব।
৩. অত্যাচারিতকে সাহায্য করব।
৪. দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রা করব।
৫. বিভিন্ন গোত্রের সাথে সম্প্রীতি বজায় রাখার চেষ্টা করব।
হযরতের এই ‘সেবাসংঘের’ নাম দেয়া হল-‘হিলফুল ফুযূল’ বা ‘শান্তিসংঘ’।
তারুণ্যের কী সুন্দর ও শ্বাশ্বত আদর্শ! শান্তির অগ্রদূত যুবক মুহাম্মদ সা. এখনও নবুওয়াত পাননি ঠিক; কিন্তু আর্তকে সেবা করা, অত্যাচারীকে বাধা দেওয়া, উৎপীড়িতকে সহযোগিতা করা, দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মাঝে মিল ও মৈত্রী স্থাপন করা- এটাতো সেই ঐশী আলোকরেখারই পূর্বাভাস। আশ্চর্য হলেও সত্য যে, তার এই সেবা, এই আত্মত্যাগ, এই মানবপ্রীতি, কল্যাণ চেষ্টা ও নিঃস্বার্থ সেবায় দুর্ধর্ষ আরবরাও আকৃষ্ট হতে লাগল। এক পর্যায়ে তারা তাঁর চরিত্র, আদর্শ ও বিশ্বস্ততায় মুগ্ধ হয়ে তাঁকে স্বতঃস্ফুর্তভাবে ‘আল-আমীন’ উপাধিতে ভূষিত করল। সত্যিই, বিচিত্র তাঁর জীবন! যুবক বয়সেই নিজেকে এমনভাবে সমাজের বুকে প্রতিষ্ঠা করার ইতিহাস পৃথিবীতে বিরল।
তিন.
হযরত মুহাম্মদ সা. ছিলেন শান্তি-শৃঙ্খলার প্রতীক। একজন দক্ষ সমাজ সংস্কারক। তিনি যখন নবুওয়াত পেলেন এবং আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে সত্যবাণী প্রচারের ব্যাপারে আদিষ্ট হলেন- তখন তিনি সকলকে আহবান করলেন আল্লাহর একত্ববাদ স্বীকার করে নিতে এবং তাঁকে রাসূল হিসেবে মেনে নিতে। তিনি সকলকে দাওয়াত দিলেন। তাঁর দাওয়াত ছিল সমাজ সংস্কারের দাওয়াত। মানুষে মানুষে সাদা-কালো, ধনী-গরীব ও উঁচু-নিচুর তফাৎ ভুলে গিয়ে পরস্পর মারামারি-হানাহানি, অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নির্যাতন পরিত্যাগ করে ন্যায়নিষ্ঠা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার দাওয়াত। হযরত সা. এর আহবান ছিল এমন এক আহবান, যার মাঝে ফুটে উঠেছিল একটি সুন্দর সমাজের অপূর্ব চিত্র। যাতে কোন দাঙ্গা-হাঙ্গামা নেই । আছে শুধু শান্তি, ভালোবাসা ও নির্মল বিশ্বাসের বর্ণিল আয়োজন। তাই ইরশাদ হয়েছে-‘মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং দুই ভাইয়ের মাঝে দ্বন্ধ দেখা দিলে তোমরা তা মিটিয়ে দাও’।
সময়ের পরিক্রমায় রাসূল সা. সমাজের বুকে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছিলেন। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে, তাঁর পবিত্র সান্নিধ্যের স্পর্শ পেয়ে আরবের হিংস্র-কঠিন হৃদয়ের মানুষগুলো এত সুন্দর চরিত্র ও সভ্যতার অধিকারী হয়ে উঠেছিল, যার নজির ইতিহাস পূর্বেও দেখেনি, ভবিষ্যতেও দেখবে না। পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ ছিল যাদের অভ্যাস, তারাই হয়ে গেল মানবতার নিদর্শন। তারা পরিণত হল শান্তি প্রতিষ্ঠায় রাসূলের সবচে’ বড় সহযোগী হিসেবে।
কীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হয় তা যেন হাতে কলমে শিখিয়েছেন রাসূল সা.। তিনি মক্কার মুশরিকদের সীমাহীন কষ্ট ও লাঞ্চনা ভোগের পর হযরত মদীনায় হিজরত করলেন। তার আগে থেকেই সাহাবায়ে কেরাম একে একে মদীনায় গিয়ে পৌঁছলেন। প্রথমে শান্তি ও সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে তিনি সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করলেন। যাকে ঘিরে চলল সমাজের বুকে শান্তি প্রতিষ্ঠার সকল আয়োজন। দিন বেড়ে চলল। মুসলমানদের সংখ্যাও দিন দিন বাড়তে লাগল। মদীনার ইহুদী-নাসারারা তাদের ধর্ম ও সমাজের মাঝে এই নতুন ধর্ম ইসলামের শক্তি বর্ধন দেখতে পেল। এতে করে তাদের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃৃষ্টি হল। কিন্তু হযরত তাদের ডেকে নিয়ে অভয় দিলেন। মুসলিম, ইহুদী ও নাসারাদের মাঝে আন্তঃসাম্প্রদায়িক সন্ধি স্থাপন করে নবগঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তি গাঁথলেন। সকল সম্প্রদায়কে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও শান্তিময় জীবন যাপনের অধিকার দিলেন। বিনিময়ে চাইলেন মদীনার এই ইসলামী শাষণ ব্যবস্থার প্রতি আনুগত্য এবং আন্তরিক সদিচ্ছা।
হযরতের ঐতিহাসিক সন্ধিচুক্তির সংক্ষিপ্ত রূপ ছিল এই- ‘মুসলমান এবং অন্য সকল ধর্মীয় গোত্র একই জাতীয়তাবাদের অন্তর্গত। শান্তি ও সংগ্রামে সবাই একসাথে অংশগ্রহন করবে। সকলের নাগরিক অধিকার সমান। ইহুদী, নাসারা ও পৌত্তলিকরা- সবাই নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। কেউ তাতে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। তাদের প্রতিমা ধ্বংস করা যাবে না। কেউ কারও উপর কোন প্রকার অত্যাচার করবে না। মদীনা আক্রান্ত হলে সকলে সম্মিলিতভাবে তা প্রতিহত করবে। কেউ হযরত মুহাম্মদ সা. এর অনুমতি ব্যতীত যুদ্ধ করতে পারবে না। নিজেদের মধ্যে কোন বিরোধ হলে আল্লাহ ও তার রাসূলের মীমাংসার উপর নির্ভর করতে হবে। কেউ অপরাধ করলে সে নিজেই তার অপরাধের জন্য দায়ী থাকবে। অন্য কেউ নয়। নিজেদের মধ্যে কেউ বিদ্রোহী হলে অথবা শত্রু পক্ষের কেউ কোনরূপ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলে তার সমুচিত শাস্তি বিধান করা হবে। যদি সে আপন পুত্র হয় তবুও তাকে মাফ করা হবে না। এই চুক্তি যে বা যারা ভঙ্গ করবে, সে বা তাদের উপর রইল আল্লাহর অভিশম্পাত।’
এভাবেই তিনি সকলকে স্বাধীনতা দিলেন। ব্যক্তি স্বাধীনতা। ধর্মীয় স্বাধীনতা। মত প্রকাশের স্বাধীনতা। আপন অধিকার সংরক্ষণের স্বাধীনতা। শুধু শান্তি ও সহমর্মিতা প্রতিষ্ঠার জন্য। তার এই ঐতিহাসিক চুক্তিটি ‘মদীনার সনদ’ নামে পরিচিত। হযরতের এই উদার নীতির তুলনা জগতে বিরল। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘প্রত্যেক জাতিরই রয়েছে স্বতন্ত্র বিধান, স্বতন্ত্র প্রথা। আল্লাহ তাআলা যদি চাইতেন তাহলে তিনি সকল মানুষকে একই গোত্রভূক্ত করে সৃষ্টি করতেন। কিন্তু তার অভিপ্রায় ভিন্নতর।’ যেখানে এই বাণীর বাহক স্বয়ং রাসূল সা., সেখানে কিভাবে তিনি কেড়ে নিবেন অন্যের অধিকার? কেমন করে তিনি অন্যধর্মের উপর হস্তক্ষেপ সমর্থন করবেন? তিনি কিভাবেইবা অনুমোদন করবেন মানুষের প্রতি নির্মম ব্যবহার? না, তিনি এগুলোর কোনটিই করেননি, বরং ঘোষণা করেছেন- ‘লা ইকরাহা ফিদ্দীন’ অর্থাৎ ধর্মীয় ব্যাপারে কোন জোর-জবরদস্তি নেই। ধর্মীয় স্বাধীনতার এই অনুপম বাণী কুরআনের। হযরতের মুখ দিয়ে এই বাণী গুরুত্বের সাথে উচ্চারিত হয়েছে। কেননা পৃথিবীর বুকে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এই বিধি-চিরন্তনের কোন জুড়ি নেই। এ কারণেই ইসলামের সৌন্দর্য ও সৌকর্যের কথা মুসলিম-অমুসলিম সকলের মুখে পুনঃ পুনঃ উচ্চারিত হয়েছে।
শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর হযরত একবার মনোনিবেশ করলেন সমাজের মানুষের নৈতিক চরিত্রের উৎকর্ষ সাধনের প্রতি। যা সত্য ও সুন্দর এবং শান্তি ও নির্মল বিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি হিসেবে পরিগণিত হবে। সে লক্ষ্যে তিনি মানুষে মানুষে সদয় ব্যবহার ও কোমল আচরণ শিক্ষা দিলেন। ওয়াদা রা, লেনদেনে স্বচ্ছতা, প্রতিবেশীর সাথে উত্তম আচরণ এবং যৌন পবিত্রতা আবশ্যক বলে ঘোষণা করলেন। তিনি সকলকে বুঝিয়ে দিলেন- সৎ ও মহৎ, সত্য ও সুন্দর জীবন যাপন মুসলমানের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই ইসলাম মানুষকে কর্তব্যে দায়িত্বশীল হতে শেখায়। প্রেমে-পূণ্যে মহান হতে বলে এবং তাকওয়া অর্জনে অজেয় হতে উদ্ধুদ্ধ করে।
বিশ্বের সকল অনু-পরমানু আল্লাহর হুকুমে মানুষের আজ্ঞাধীন। তারা তাদের জ্ঞানপ্রেয়সী। জ্ঞানের অভিসারী। আপন সত্ত্বার সবকিছু মানুষকে উপহার দেয়ার মাঝেই তার সার্থকতা। তাই মানুষ ভোগী, বৈরাগ্য যাপনে আগ্রহী নয়। এই বিশ্ব-জগতে সভ্যতার যত উপাদান রয়েছে অর্থাৎ শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান ইত্যাদি সবকিছু সংযত ভোগবাসনা ও ব্যবহারের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। কোন অনিয়ন্ত্রিত কামনা-বাসনার জন্য নয়। কেননা প্রতিটি মানুষের মাঝে দু’ধরনের প্রবণতা রয়েছে। একটি মানবসুলভ প্রবণতা। অপরটি পশুসুলভ প্রবণতা। যখন কারো মাঝে প্রবৃত্তির চাহিদা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে তখন তার মানবসুলভ প্রবণতা দুর্বল হয়ে যায়। জেগে উঠে পশুসুলভ প্রবণতা। তার মাধ্যমে সমাজে ছড়িয়ে পড়ে অন্যায়-অবিচারের বিষবাষ্প। আবার মানুষের কামনা-বাসনা, চাওয়া-পাওয়া, ভোগ-বিলাস ইত্যাদি সবকিছুকে ঝেড়ে ফেলে ব্যক্তির পূর্ণ বিকাশও সম্ভব নয়। তাই ইসলাম এসবের নিবৃতি কামনা করে না। বরং সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। এই নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনার দিকে ধাবিত হওয়ার নামই হল ‘তাকওয়া’। একদিন এই তাকওয়াকে অবলম্বন করেই মুসলিম জাতি বিশ্বের বুকে এক অপূর্ব সভ্যতার জন্ম দিয়েছিল। এটা সম্ভবপর হয়েছিল ইসলামের পরিচ্ছন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এবং হযরতের অনুপম নৈতিক শিক্ষাদানের ফলে।
চার.
তৎকালীন আরব সমাজে নারীরা ছিল সবচেয়ে অবহেলিত ও নিগৃহিত জাতি। নারীজন্ম ছিল যেন আজন্ম পাপ। ‘নারী অধিকার’ বলে তাদের কিছুই ছিল না। তারা ছিল শুধুই ভোগসামগ্রী। ভোগ শেষে তাদের যত্রতত্র ছুঁড়ে ফেলা হত। তাদের অবস্থা দেখে মানবতা ডুকরে কেঁদে উঠত। এমন বিভীষিকাময় ছিল যখন সমাজচিত্র, শান্তি ও মুক্তির অগ্রদূত হযরত মুহাম্মদ সা. তখন উপেক্ষিত ও অবহেলিত নারীজাতিকে অধিকার দিলেন। যারা ছিল পুরুষের কামনা ও হীন চরিতার্থের সামগ্রী, তাদেরকে তিনি যেন হাতে ধরে মানুষের আসনে বসালেন। স্বামী ও পিতার সম্পত্তিতে অধিকার দিলেন। স্বামীর গৃহে এবং পিতার গৃহে তাদের জন্য স্বাধীন ও স্বতন্ত্র অবস্থান রচনা করলেন। নারীর চরিত্রে কেউ অযথা কালিমা লেপন বা অপবাদ আরোপ করলে তার জন্য শাস্তি বিধান করলেন। নারীবিদ্ধেষ, নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানী, ব্যভিচার এবং কন্যাহত্যাকে জঘন্য অপরাধ বলে ঘোষণা দিলেন। নর-নারী উভয়েই যেন রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারে পুতঃপবিত্র, শান্তিময় ও নির্ভীক জীবন যাপন করতে পারে; কপটতা ও মিথ্যাচার থেকে শত যোজন দূরে থেকে আপন আপন ভূবনে যেন স্বর্গরাজ্য স্থাপন করতে পারে- তিনি সেই ব্যবস্থা করলেন । তার সাক্ষরিত মদীনার শান্তিচুক্তি ও এই আদর্শসমূহ যেন অন্যান্য এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ে সে লক্ষ্যে তিনি আশেপাশের এলাকাগুলোতে সফর করতে লাগলেন এবং সকলকে সন্ধির পক্ষে সাক্ষর করতে আহবান করলেন।
মোটকথা, হযরত চাইলেন- অশান্তি, যুদ্ধ-বিগ্রহ, অত্যাচার ও অনাচারের শেকড় দেশ থেকে তুলে দিতে এবং মানুষের সংঘবদ্ধ জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে তুলতে। কিন্তু সত্যের সাথে মিথ্যার লড়াই চিরায়ত। এই সত্যটি হযরতের জীবনে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। মদীনার মুনাফিকদের কুটিলতা ও ইহুদীদের হীন ষড়যন্ত্র সত্তে¡ও মদীনার প্রধান দুই গোত্রের মাঝে শান্তি ও সম্প্রীতি স্থাপনে সফল হলেন। অথচ ইতোপূর্বে তাদের মাঝে সারা বছর কলহ-বিবাদ ও রক্তপাত লেগেই থাকত। কিন্তু তিনি পরষ্পরের বিবাদ মিটিয়ে দিয়ে একজনকে অপর জনের ভাই করে তুললেন। এরই মাধ্যমে মদীনার আকাশের অনাহুত এক ভবিষ্যতের সমাপ্তি ঘটল। মিথ্যার মোকাবেলায় সত্যের বিজয় ঘটল। মদীনায় শান্তি প্রতিষ্ঠা হল। সেই সাথে এই শান্তির মৃৃদু সমীরণ বয়ে চলল দিক-দিগন্তে।
দিন বয়ে চলল। মুসলমানদের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে লাগল। দেখতে দেখতে আটটি বছর কেটে গেল। শান্তির বিমল হাওয়া মদীনার চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। সমাজে শান্তি বিনির্মাণের অগ্রদূত হযরত মুহাম্মদ সা. এবার মক্কার দিকে দৃষ্টি দিলেন। নিজের ভূমি। মাতৃভূমি। প্রাণের ভূমি। সেখানে আজও শান্তি-সুখের কোমল হাওয়া, সত্যের অমলিন পবিত্র হাওয়া মানুষের মনে দোল খায়নি। এটা কেমন করে সইবেন তিনি? এ নিয়ে তার ভাবনার অন্ত ছিল না। সময়ের পালাবদলের মাধ্যমে মক্কায় ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের সুযোগ এসে গেল। কাফের-মুশরিকরা রাসূলের সাথে কৃত অনেক চুক্তি ভঙ্গ করল। বিভিন্ন স্থানে মুসলমানদের মিত্রশক্তির উপর অন্যায়ভাবে আক্রমন করল। এতে বেশকিছু হতাহতের ঘটনা ঘটল। যা সর্ম্পূণ বেআইনি ও চুক্তিবিরোধী। আক্রান্ত মিত্ররা রাসূলের কাছে এর প্রতিকার চাইলেন। রাসূল সা. এর প্রতিশোধ নিতে মক্কাভিমুখে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিলেন। বলাবাহুল্য, হযরতের এই যুদ্ধ সমরশক্তি প্রদর্শন কিংবা রক্তপাতের উদ্দেশ্যে ছিল না। ছিল সমাজে শান্তি ও শৃংঙ্খলা রক্ষার লক্ষ্যে।
পাঁচ.
ইসলামের সূর্য আজ মধ্য গগনে বিকীর্যমান। জনবল, অস্ত্রবল কিংবা আত্মিক শক্তিবল-কোন দিক দিয়েই পরাভবের চিহ্ন নেই। প্রায় দশ হাজার সৈন্য প্রস্তুত হল মক্কাভিমুখে অভিযানের জন্য। হযরত প্রস্তুতি শুরুর আগে থেকেই মদীনার চারপাশে কড়া পাহারা বসালেন। যাতে মুসলমানদের এই সমরপ্রস্তুতি সম্পর্কে মক্কার কুরাইশরা জানতে না পারে। এমনকি জ্ঞানবৃদ্ধ আবু বকর রা.ও প্রথম প্রথম এ অভিযানের ব্যাপারে কিছুই জানতেন না।
প্রশ্ন জাগতে পারে, হযরত এমনটি করার উদ্দেশ্য কী? উদ্দেশ্য আর কিছু নয়, মক্কা অভিযানের সংবাদ যদি কুরাইশরা আগে জানতে পারে তাহলে তারাও বিপুল পরিমান সমরায়োজন করবে। ফলে একটা ভীষণ রক্তক্ষয়ী অবস্থার সূত্রপাত হবে। কুরাইশরা নির্মূল হয়ে যাবে। তাদের নিয়ে হযরতের এতদিনের স্বপ্নগুলোও ধুলোয় ধুসরিত হয়ে পড়বে। তাই তিনি চাইলেন প্রেম দিয়ে, মানবতা দিয়ে তাদের হৃদয়কে জয় করতে। অশান্তির অনল প্রবাহে শান্তির শীতল পরশ বুলিয়ে দিতে।
দীর্ঘপথ পেরিয়ে প্রায় দশ হাজার সশস্ত্র সৈন্যবাহিনী নিয়ে তিনি মক্কা উপকন্ঠে ‘মার-উজ-জাহরান’ নামক উপত্যকায় ঘাঁটি স্থাপন করলেন। মক্কাবাসী তাদের উপস্থিতির কথা জানতে পেরে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে গেল। কিন্তু হযরত আবু সুফিয়ানের প্রতি রহমদিল হয়ে বললেন, যাও ঘোষণা করে দাও- যে কাবা গৃহে অথবা তোমার গৃহে আশ্রয় নিবে সে নিরাপদ। অথবা যে নিজ গৃহে থাকবে সেও নিরাপদ।
কুরাইশরা আতঙ্কে অস্থির হয়ে উঠল। সকলেই আপন আপন নিরাপদ স্থানে অবস্থান করতে লাগল। তারা একথা ভেবে ভয়ে শিউরে উঠল যে রাসূল সা. ও তার সাহাবাদের উপর ইসলামের সূচনাকাল থেকে আজ পর্যন্ত কত অমানবিক আচরণ করেছে! কত অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে! সে সকল অত্যাচারের স্বাভাবিক পরিণাম ও ন্যায়সঙ্গত বিচারের চিত্র তাদের চোখের তারায় ভেসে উঠল। তাদের ভাবনায় আবার এমনটিও খেলে গেল যে, হযরত তাদের সমস্ত অপরাধ ভুলে গিয়েছেন। কারণ, তিনিতো তাদেরকে অভয় দিয়েছেন। তাহলে সত্যিই কি তিনি আমাদেরকে মাফ করবেন? এমনটি ভেবে ভেবে মক্কাবাসীর চিত্ত সংশয়-সন্দেহে দোল খেতে লাগল। আবার তার প্রশান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আশায় বুক বাঁধল।
বিজয়ের দিন যোহর নামাজান্তে হযরতের নজর পড়ল ভীড় করে থাকা কুরাইশ নর-নারীর দিকে। সকলকে সম্বোধন করে বললেন ‘বল, কী ভাবছো তোমরা? আমরা আমাদের অদৃৃষ্টের কথা ভাবছি। আমরা তোমার উপর যে অত্যাচার করেছি, আজ তুমি তার কী প্রতিফল দিবে- তার কথা ভাবছি। তারা উত্তর দিল। স্বজাতি ও আপন দেশবাসীর এমন অসহায় অবস্থা দেখে হযরতের হৃদয়ে করুণার ঢেউ খেলে গেল। তিনি গলে গেলেন। এত অত্যাচার, এত আঘাত করা সত্তে¡ও তিনি হাসি মুখে বললেন,‘আজ তোমাদের প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই। তোমাদের সব অভিযোগ মাফ করে দিলাম। যাও, তোমরা সকলেই স্বাধীন।’
বিস্মিত পৃথিবীর ঘূর্ণয়ন যেন কিছু সময়ের জন্য থেমে গেল। কী অদ্ভুত, কত সুন্দর আজকের এই আচরণ! এত বড় করুণা, এত বড় মহিমা কে কোথায় দেখেছে! জগতে এত বড় ক্ষমা কে কোথায় করেছে! প্রতিপক্ষকে বাগে পেয়েও প্রতিশোধ গ্রহণের কোন ইচ্ছা নেই। জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করারও কোন মতলব নেই। যারা বারবার তার বিরূদ্ধে হীনতম ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল, এমন প্রেম-ক্ষমার দিনেও তার সাথে লড়তে চেয়েছিল- তিনি আজ তাদেরকে বিনাশর্তে মাফ করে দিলেন ।
আবু সুফিয়ানের স্ত্রী রাসূলের চাচা হামযার কাচা কলিজা চিবিয়েছিল। ওয়াহশী বর্শাঘাতে হামযার পিঠ ভেদ করেছিল। ইকরামা এই মক্কা প্রবেশের সময়ও খালিদ রা. এর গতিরোধ করেছিল। আবু সুফিয়ান বারবার হযরতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। তিনি আজ সকলকেই বিনাদন্ডে অব্যাহতি দিলেন। হযরতের কন্ঠে ধ্বনিত হল- ‘পাপ ঘৃণার পাত্র, পাপী নয়’। শত্রুকে এভাবে যিনি মাফ করতে পারেন, তিনি কত মহৎ! কত মহান! কত মহীয়ান! একথা ভাবতেও অকূল দরিয়া পারি দিতে হয়।
অবশেষে সকল ঘটনা প্রবাহের মাঝ দিয়ে হযরতের হাতে মক্কা বিজয় হল। বিশ্ব প্রকৃতিতে এই বিজয়ধ্বনি রণিত হল। বিশ্বলোক অনিমেষ দৃষ্টিতে দেখল এক মহান বিজয়ের সরোবর। কত সুন্দর, কত অদ্ভুদ এই বিজয়। রক্তপাত নেই। ধ্বংস বিভীষিকা নেই। প্রেম দিয়ে, পূণ্য দিয়ে, ক্ষমার মধ্য দিয়ে অর্জিত হল মহাবিজয়। পৃথিবীর ইতিহাসে কত চমকপ্রদ বিজয় কাহিনী গ্রন্থিত আছে। কত বীর কতভাবে যুদ্ধ করে ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। কিন্তু কেউ এত বড় রক্তপাতহীন শান্তিপূর্ণ মহাবিজয় অর্জন করতে পারে নি। ইতোপূর্বে কোন মানবচক্ষু এমন কোন মহারণের স্বপ্নীল চিত্র দেখে নি। পৃথিবীর ইতিহাস এমন কোন বিজয়ের সাক্ষী হয়ে থাকে নি। ভবিষ্যতেও থাকবে না।
সমাজে শান্তি বিনির্মাণের অগ্রপথিক হযরত মুহাম্মদ সা. আমাদেরকে দেখিয়ে দিলেন শান্তিপূর্ণ মহারণের এক অপূর্ব দৃশ্য। বুঝিয়ে দিলেন যুদ্ধ মানেই রক্তপাত নয়; বিশেষ করে শান্তির জন্য যে যুদ্ধ হয়। শুধু তলোয়ারের মাধ্যমেই বিজয় অর্জিত হয় না। বরং প্রেম, ভালোবাসা ও উদারচিত্ত দিয়েও অর্জন করা যায় মহাবিজয়। মক্কা বিজয় তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করলেন। শান্তি প্রতিষ্ঠা করলেন। গোত্রে গোত্রে ছড়িয়ে দিলেন শান্তির অমিয় বাণী। এতে ইসলামপূর্ব মক্কার চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে গেল। যেমন পাল্টে গিয়েছিল সোনার মদীনা। দিকে দিকে ইসলাম ছড়িয়ে পড়ল। ঘোষিত হল ইসলামের চিরসত্য শান্তির বাণী।
এক অভাবনীয় সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে হযরত আরবকে অজ্ঞতা ও মূর্খতা থেকে বের করে আনলেন। বর্বরতা ও পাশবিকতাকে নিষিদ্ধ করলেন। তিনি যে সত্যিই শান্তির অগ্রদূত- তা সকলেই মনে প্রাণে বিশ্বাস করে নিল। তার শান্তিমিশন চ‚ড়ান্ত সফলতার মুখ দেখল। শিক্ষার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করলেন। সকলের মাঝে সম্প্রীতি ও ভালবাসা সৃষ্টি করলেন। সমাজের বুকে চির প্রতিষ্ঠিত করলেন শান্তিকে, শান্তির ধর্ম ইসলামকে। শেখালেন নৈতিক চরিত্রের উৎকর্ষ সাধন পদ্ধতি ও অনুপম চরিত্র মাধুর্যতা। যার ফলে অন্ধকারাচ্ছন্ন আরবে আলোর ঝর্ণা ছুটল। মরুভূমিতে রচিত হল স্বর্গীয় দ্যুতির পুষ্পিত কানন। নব আরবের আকাশে-বাতাসে সমান তালে বইল শান্তির সুরভিত মৃদু সমীরণ। এমনকি পুরো জগত জুড়ে বইতে লাগল শান্তির সেই হাওয়া।
আজ আমরাও যদি শান্তির আকর ও অগ্রদূত হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে জীবন আলোকে পথ চলতে পারি, নিজেদেরকে তার সীরাত অনুযায়ী গড়ে তুলতে পারি- তাহলে আমাদের ভুবনেও তৈরী হবে সেই স্বর্গীয় শান্তিময় উদ্দ্যানের ফুলেল কানন। ইসলামের শ্বাশ্বত বাণী ছড়িয়ে পড়বে সমাজের প্রতিটি মানুষের মাঝে। তবে প্রয়োজন শুধু- সেই মহামানবের শান্তিমিশনের পথ ধরে চলা।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:২৮