somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুসাফিরের নামাজ

১৭ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষ ভ্রমণপ্রিয়। ভ্রমণ করতে ভালবাসে। অপরূপ প্রকৃতিপ্রেম আর দিগন্ত জয়ের স্বপ্ন মানুষকে ভ্রমণ পিয়াসী করে তুলে। তখন যাপিত জীবনে অন্য সাধারণ কাজের মত ভ্রমণ বা সফর হয়ে উঠে জীবনের নান্দনিক আয়োজন পরিপূর্ণ করার অন্যতম অনুষঙ্গ। সফরের মাধ্যমে নানা ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন হয়। শিক্ষা লাভ হয় । উপদেশ গ্রহণ করা যায়। কুরআনে কারীমের অনেক স্থানে দিকে দিকে সফর করার প্রতি উদ্বুদ্ব করা হয়েছে শিক্ষা লাভ করার জন্য,উপদেশ গ্রহণ করার জন্য।

ইসলামী শরীয়ত মানুষের দৈনন্দিন জীবনের পূর্ণতা বিধান করেছে। মুকীম অবস্থায় তার ইবাদত তথা নামাজ কেমন হবে তার বিস্তারিত বিবরণ যেমন দেয়া হয়েছে, ঠিক তেমনি সফরে তার নামাজ কেমন হবে তাও বিশদভাবে বিবৃত হয়েছে। বমান প্রবন্ধে সফর অবস্থায় মুসাফিরের নামাজ পলসন কেমন হবে তা নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।



শরয়ী মুসাফির কাকে বলে

কোন সফর বা ভ্রমণ শরয়ী সফর বা ভ্রমণ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত প্রয়োজন।
এক.
সফর কমপে এতটুকু দুরত্বে হতে হবে, যেখানে স্বাভাবিকভাবে হেঁটে পৌঁছতে তিনদিন অতিবাহিত হয়ে যাবে। যদিও বাস বা ট্রেনের মাধ্যমে উক্ত স্থানে এক ঘণ্টায় পৌঁছা সম্ভব। বর্তমানে এই দুরত্বের পরিমাণ ৪৮ মাইল বা সোয়া সাতাত্তর কিলোমিটার (প্রায়)। এই মাইল বা কিলোমিটারের বিধান পাহাড়ী পথ বা নদীপথের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। বরং সেক্ষেত্রেঅভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কিংবা অভিজ্ঞ ব্যক্তির মাধ্যমে তিনদিন পরিমাণ পথের দুরত্ব নির্ণয় করতে হবে এবং সে আলোকেই শরয়ী হুকুম প্রযোজ্য হবে।

দুই.
সফরের শুরু থেকেই সোয়া সাতাত্তর কিলোমিটার বা তার চেয়ে বেশি দুরত্বের পথ সফর করার নিয়ত করতে হবে। আলাদা আলাদাভাবে নিয়ত করার মাধ্যমে উক্ত পরিমাণ পথ সফর করলেও তা শরয়ী সফর বলে বিবেচিত হবে না।

তিন.
সফরের নিয়ত করার পর নিজ অবস্থানকৃত শহর বা গ্রাম থেকে বের হয়ে সফর শুরু করতে হবে। শুধু নিয়ত করার মাধ্যমে বা নিয়ত বিহীন সফরের মাধ্যমে কেউ মুসাফির হয় না। যদি বাস বা ট্রেন স্টেশন অবস্থানকৃত শহর বা গ্রামের মাঝেই হয়ে থাকে, তাহলে বাস বা ট্রেন স্টেশন ছেড়ে শহর বা গ্রামের সীমানা অতিক্রম করার পর থেকে শরয়ী সফর শুরু হবে। এর পূর্বে দীর্ঘণ স্টেশনে অপেমান থাকলেও সফরের বিধান কার্যকর হবে না। মোটকথা, উপরোক্ত তিনটি শর্ত যার সফরের মাঝে পাওয়া যাবে তাকেই শরয়ী মুসাফির বলে গণ্য করা হবে।

আধুনিক মাইল ও কিলোমিটারে সফরের দুরত্ব পরিমাপ

বিশুদ্ধ অভিমত অনুযায়ী শরয়ী সফরের দুরত্ব হলো ষোল ফারসাখ। এক ফারসাখের পরিমাণ তিন মাইল। সেই হিসেবে শরয়ী সফরের দুরত্ব ৪৮ মাইল। কিলোমিটারে যার দুরত্ব গড়ায় সোয়া সাতাত্তর(৭৭.২৪৮৫১২) কিলোমিটার প্রায়। নিচে গাণিতিক সূত্রসহ আধুনিক মাইল ও কিলোমিটার বের করা পদ্ধতি দেয়া হল।

* কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র:

এক. ৩৬ ইঞ্চি = ১ গজ।

১৭৬০ গজ = ১ মাইল (ইংরেজি)।

দুই. ১০০ সেন্টিমিটার = ১ মিটার।

১০০০ মিটার = ১ কিলোমিটার।

তিন. ১ ইঞ্চি = ২.৫৪ সেন্টিমিটার (প্রায়)।

উপরোক্ত সূত্রগুলো জানার পর এবার আমরা বলতে পারি-

১ ইঞ্চি =২.৫৪ সেন্টিমিটার।

১ গজ =২.৫৪দ্ধ ৩৬=৯১.৪৪ সেন্টিমিটার।

১ মাইল= ৯১.৪৪দ্ধ ১৭৬০= ১৬০৯৩৪.৪ সেন্টিমিটার।

৪৮ মাইল =১৬০৯৩৪.৪দ্ধ ৪৮ =৭৭২৪৮৫১.২ সেন্টিমিটার।

৪৮ মাইল = ৭৭২৪৮.৫১২ মিটার।

৪৮ মাইল = ৭৭.২৪৮৫১২ কিলোমিটার।

৪৮ মাইল =৭৭.২৫ কিলোমিটার (প্রায়)।



সফরে নামাজের বিধান

যে ব্যক্তি সোয়া সাতাত্তর কিলোমিটার বা তারচেয়ে বেশি দুরত্বের উদ্দেশ্যে নিজ শহর বা গ্রাম থেকে বের হয়, শরীয়তের দৃষ্টিতে তাকে মুসাফির বলা হয়। মুসাফিরের উপর যোহর, আসর ও এশার চার রাকাআত ফরজ নামাজ দুই রাকাআত আদায় করা ওয়াজিব। কিন্তুইচ্ছাকৃতভাবে যদি পূর্ণ চার রাকাত নামাজ আদায় করে ফেলে, তাহলে তার নামাজ হয়ে যাবে যদি সে দুই রাকাআত আদায় করার পর প্রথম বৈঠকে বসে। তবে সঠিক সময়ে সালাম না ফিরানোর কারণে গুনাহগার হবে। যদি সে দ্বিতীয় রাকাআতের বৈঠকে না বসে তাহলে তার নামাজ বাতিল হয় যাবে। তবে চার রাকাআত আদায় করার পর যদি সাহু সিজদা দেয় তাহলে উক্ত নামাজ নফল হিসেবে পরিগণিত হবে, ফরজ হিসেবে নয়। নতুন করে তাকে ফরজ নামাজ আদায় করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সকল সাহাবায়ে কেরামের আমল এমন ছিল যে, তারা সফরে চার রাকআত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ দু’রাকাআত আদায় করতেন।

কিছু জরুরী মাসায়েল

* যদি কোন ব্যক্তি নামাজের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার সময় মুকীম থাকে এবং নামাজ পড়ার পূর্বে সফর শুরু করে দেয় তাহলে সে মুসাফির ব্যক্তির ন্যায় নামাজ আদায় করবে। এমনিভাবে কেউ যদি ওয়াক্ত শুরু হওয়ার সময় মুসাফির থাকে এবং নামাজ পড়ার পূর্বে মুকীম হয়ে যায় তাহলে সে মুকীম ব্যক্তির ন্যায় নামাজ আদায় করবে।

* মুসাফির ব্যক্তি সফরের কোন স্থানে ধীর¯ি’রভাবে অবস্থানের সুযোগ পেলে সেখানে সুন্নাতে মুআক্কাদাগুলো আদায় করা উচিত। কিন্তুসফরে যদি তাড়া থাকে কিংবা গাড়ি ছুটে যাওয়ার আশংকা থাকে তাহলে এমতাবস্থায় সুন্নাত ছেড়ে দেওয়া উত্তম। এ বিষয়টিতে অনেক মানুষ অবহেলা করে থাকে। যার ফলে নিজে পেরেশান হয় এবং সফর সঙ্গীদেরকেও পেরেশানীতে ফেলে।

* মুসাফির ব্যক্তির ইমামতিতে মুকীম ব্যক্তির নামাজ এবং মুকীম ব্যক্তির ইমামতিতে মুসাফিরের নামাজ জায়েজ আছে। মুকীম ব্যক্তি যদি ইমাম হন তাহলে তার ইমামতিতে মুসাফির ব্যক্তি পূর্ণ নামাজ আদায় করবে। কিন্তুমুসাফির ব্যক্তি যদি ইমাম হন তাহলে নামাজের পূর্বে তিনি মুসল্লিদের জানিয়ে দিবেন যে, আমি মুসাফির। দু’রাকাআত নামাজ পড়ে সালাম ফিরাব। আপনারা সালাম না ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে যাবেন এবং নিজে নিজে বাকী দু’রাকাআত আদায় করে নিবেন। এরপর দু’রাকাআত পড়ে সালাম ফিরানোর পর মুসাফির ইমাম আবার ঘোষণা দিয়ে দিবেন। অতঃপর মুকীম মুসল্লিরা দাঁড়িয়ে নিজে নিজে দু’রাকাআত পড়ে নিবে। এই দু’রাকাআতে সূরা ফাতিহা বা অন্য কোন সূরা তিলাওয়াত করবে না বরং সূরা ফাতিহা পাঠ করা পরিমাণ সময় চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে রুকু- সিজদার মাধ্যমে নামাজ শেষ করবে।

* রমজান মাসের রোজা রাখার ব্যাপারে মুসাফির ব্যক্তি ই”ছাধীন। ই”েছ করলে রোজা রাখতে পারে আবার চাইলে ভাঙতেও পারে। তবে শর্ত হল, সফর শেষ হওয়ার পর সুযোগমত উক্ত রোজার কাযা আদায় করতে হবে। সফর থেকে ফিরার পর মুসাফির ব্যক্তি যদি কাজা রোজা করার সুযোগ না পায় এবং তার ইন্তেকাল হয়ে যায় তাহলে আল্লাহ তাআলা তার এই রোজা মাফ করে দিবেন।

* সফরে রোজা রাখলে দুর্বলতা ও কষ্ট বেড়ে যাবে- যদি এমন ভয় ও আশংকা থাকে তাহলে রোজা না রাখা উত্তম। আর যদি এ জাতীয় কোন আশংকা না থাকে তাহলে রোজা রাখা উত্তম।



গাড়িতে নামাজের বিধান

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত হাদীস (বুখারী,১১০৫) দ্বারা বুঝা যায় যে, সফরে নফল নামাজ যে কোন যানবাহনে কিবলামুখী না হয়েও আদায় করা জায়েজ। তবে ফরজ নামাজের বিধান একটু ব্যতিক্রম। যদি গাড়ি থামিয়ে নেমে রুকু-সিজদাসহ কিবলামুখী হয়ে নামাজ পড়া সম্ভব হয় তাহলে গাড়িতে নামাজ পড়া জায়েজ নয়। কিন্তুযদি এভাবে নামাজ পড়া সম্ভবপর না হয় বা প্রচন্ড ব”ষ্টিপাত হওয়ার ফলে জমীন কর্দমাক্ত হয়ে যায় এবং নামাজ পড়ার মত স্থান খুঁজে পাওয়া না যায়, কিংবা গাড়ি থেকে নামলে সঙ্গী সাথী ও গাড়ি চলে যাবে এবং পরবর্তীতে সে আর গাড়িতে একা উঠতে পারবে না বা তাকে নেয়া হবে না এমন আশংকা থাকে, এমতাবস্থায় গাড়িতে নামাজ পড়া জায়েজ। তার এই বিধান সেই অসুস্থব্যক্তির নামাজের বিধানের মত যে খাট থেকে নেমে নামাজ পড়তে সম নয়। উপরোক্ত কোন কারণ না পাওয়া গেলে গাড়িতে নামাজ পড়া জায়েজ হবে না। (বর্তমানে দূরের সফরে অনেক কোম্পানীর গাড়ি সুনির্দিষ্ট সময়ে নামাজের জন্য যাত্রা বিরতি করে। দূরের সফরেও এমন বাসের সিটে বসে নামাজ পড়া জায়েজ নয়। তাই বাসে উঠে প্রথমে নামাজের জন্য যাত্রা বিরতির সময় জেনে নেয়া উচিত)।


ট্রেনে নামাজের বিধান

ট্রেন স্টেশনে দাঁড়ানো কিংবা চলন্ত, উভয় অবস্থায় তাতে নামাজ পড়া যাবে। জমীনে বিছানো খাটে নামাজ পড়তে যেমন কোন অসুবিধা নেই, ঠিক তেমনি ট্রেনেও নামাজ পড়তে কোন বাধা নেই। চলন্ত ট্রেনে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া অসম্ভব হলে বসে নামাজ পড়তে কোন অসুবিধা নেই। তবে কিবলামুখী হওয়া জরুরী। মুসাফির ব্যক্তির ট্রেন স্টেশন যদি নিজ শহর বা গ্রামের বাইরে হয় তাহলে সে স্টেশনে অবস্থানের সময় থেকেই কসর করবে। কিন্তুস্টেশন যদি নিজ শহর বা গ্রামে অব¯ি’ত হয় তাহলে ট্রেন স্টেশন অতিক্রম করার পর থেকে সফর শুরু হবে। এর পূর্বে যত নামাজ পড়া হবে সবগুলো কসর করতে হবে। এটি যাবার বেলায় যেমন প্রযোজ্য তেমনি ফিরে আসার বেলায়ও প্রযোজ্য। হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বসরা থেকে নিজ শহর কুফায় ফিরে আসছিলেন। তিনি কুফার এত কাছে চলে এলেন যে, শহরের দালানকোটা দেখা যা”িছল। তখন নামাজের সময় হয়ে যাওয়ায় তিনি নামাজ পড়ে নিলেন এবং কসর করলেন।


জলপথে নামাজের বিধান

সমুদ্র বা নদীপথে সফরের বিধান স্থলপথে সফরের সাধারণ বিধানের মতই। চাই তা স্টিমারে হোক বা নৌকায় হোক। তবে কয়েকটি মাসআলায় উভয়ের মাঝে পার্থক্য রয়েছে। নিচে তা বিব”ত হল।

* স্থলপথে শরয়ী সফরের দুরত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৮ মাইল। নদীপথ বা পাহাড়িপথে এই দুরত্ব বা পরিমাণ গ্রহণযোগ্য নয়। ক্ষেত্রেদেখতে হবে, মাঝারি ধরণের একটি নৌকা তিনদিনে কতটুকু পথ পাড়ি দিতে পারে। পাড়ি দেয়া পথের সেই দুরত্বই হল শরয়ী দুরত্ব এবং নামাজ কসরের দুরত্ব। যদিও একটি বড় জাহাজ উক্ত স্থানে আধাঘণ্টায় পৌঁছে যেতে পারে।

* নদীপথের সফরে চলন্ত নৌকা বা স্টিমারের উপর বিনা ওজরে বসে নামাজ পড়া জায়েজ। তবে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া উত্তম। ট্রেনে নামাজ পড়ার বিষয়টিকে এর উপর কিয়াস করা যাবে না। ট্রেনে ওজর ব্যতীত বসে নামাজ পড়া জায়েজ নয়। পড়লে নামাজ পুনরায় পড়তে হবে। তবে নৌকা বা জাহাজ যদি তীরে বা ঘাটে নোঙর করা থাকে তাহলে ওজর ব্যতীত বসে নামাজ পড়া জায়েজ নয়।

* ট্রেনে নামাজ পড়ার সময় কিবলামুখী হওয়া যেমনিভাবে ফরজ তেমনি নৌকা বা জাহাজেও কিবলামুখী হয়ে নামাজ পড়া ফরজ। নদী বা সাগরে স্বাভাবিকভাবে কিবলা নির্ণয় করা সম্ভব না হলে চাঁদ, সূর্য, তারকারজি কিংবা ভিন্ন কোন উপায়ে কিবলা নির্ণয় করে নামাজ আদায় করতে হবে। বর্তমানে কিবলা নির্ণয়ক যন্ত্রের মাধ্যমে তা অত্যন্ত সহজসাধ্য ব্যাপার।

* নদীতে বা সাগরে প্রচন্ড ঢেউ থাকলে কিংবা জাহাজের ঘূর্ণয়নের ফলে যদি বসে নামাজ পড়াও অসম্ভব হয়ে পড়ে তাহলে শুয়ে শুয়ে ইশারায় নামাজ আদায় করতে হবে।


আকাশপথে নামাজের বিধান

বিমান যখন জমীনে অবতরণ করা অবস্থায় কিংবা জমীনের উপর চলমান অবস্থায় থাকবে তখন তাতে নামাজ পড়ার বিধান ট্রেনে নামাজ পড়ার বিধানের মতই এবং সর্বসম্মতিক্রমে তা জায়েজ। বিমান উড্ডয়ন কিংবা অবতরণ আরোহীর ই”ছানুযায়ী চলে না। তার জন্য নিদিষ্ট সময় স্থান ও গতিপথ রয়েছে। চাইলেই যত্রতত্র তা অবতরণ করা যায় না। তাই বিমানে অবস্থানকালীন সময়ে নামাজের সময় হয়ে গেলে ওজর থাকার কারণে তাতে নামাজ পড়া জায়েজ। এখানে ওজর হলো- নামাজে সিজদা করতে হয় জমীনের উপর কিংবা জমীনের সাথে লাগানো কোন বস্তর উপর। কিন্তুবিমানে তা সম্ভব নয়। তাই প্রথমে দেখতে হবে বিমান মাটিতে অবতরণ করার পর নামাজের ওয়াক্ত বাকী থাকে কিনা। যদি না থাকে তাহলে বিমানেই সফরের নামাজ আদায় করতে হবে।


কিছু জরুরী মাসআলা

* অধিকাংশ বিমানে ওজু বা ইস্তিঞ্জার জন্য পানির ব্যবস্থা থাকে। কিন্তুকোন অবস্থায় যদি পানি না পাওয়া যায় তাহলে সেখানে তায়াম্মুম করা জায়েজ আছে। তবে শর্ত হল, বিমান জমীনে অবতরণ করার পূর্বেই নামাজের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাবে এমন আশংকা বিদ্যমান থাকতে হবে।

* কোন ব্যক্তির বিমান সফর যদি দীর্ঘ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং সেই সাথে এই আশংকাও থাকে যে, হয়ত কোন সময় পানি নাও পাওয়া যেতে পারে এবং তায়াম্মুমের প্রয়োজন হতে পারে এমতাবস্থায় তার জন্য উচিত হল, কোন মাটির পাত্র তার সাথে রাখা। কিংবা কোন কাপড়ের টুকরায় করে কিছু মাটি সাথে নিয়ে নেয়া যাতে তায়াম্মুমের প্রয়োজনে তার মাধ্যমে তায়াম্মুম করতে পারে।

* ট্রেনে এবং জাহাজে নামাজ পড়ার সময় যেমনিভাবে কিবলামুখী হওয়া জরুরী তেমনিভাবে বিমানেও কিবলামুখী হওয়া জরুরী। যদি কিবলার দিক নির্ণয় করা সম্ভব না হয় কিংবা সঠিকভাবে বলে দেয়ার মত কেউ না থাকে তাহলে নিজে চিন্তা ভাবনা করবে এবং কোন যন্ত্র থাকলে তার মাধ্যমে নিজে নিজেই কিবলার দিক নির্ণয় করে নিবে। নির্ণিত দিকই হল তার কিবলা। পরবর্তীতে যদি নির্ণয়কৃত দিক ভুল প্রমাণিত হয় তাহলেও কোন সমস্যা নেই। নামাজ সহী হয়ে যাবে এবং পুনরাব”ত্তি করতে হবে না।


মুসাফির ব্যক্তি কখন মুকীম হবে

সফর শেষ করে আসা মুসাফির ব্যক্তি কখন মুকীম হবে তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মাঝে মাঝে এ বিষয়ে আমরা বিভ্রান্তিতে পড়ে যাই। তাই বিষয়টি ভালভাবে মনে রাখা উচিত। মুসাফির ব্যক্তি চার অবস্থায় মুকীম হয়ে যায়। যথা,

* প্রথম অবস্থা

ওয়াতনে আসলী তথা নিজ গ্রাম বা শহরে প্রবেশের মাধ্যমে মুসাফির ব্যক্তি মুকীম হয়ে যায়। চাই তা এক মিনিটের জন্যও হোক না কেন। অর্থাৎ তার অবস্থানের স্থায়িত্বকাল যত কমই হোক না কেন সে ওয়াতনে আসলীতে প্রবেশ করলে মুকীম হয়ে যাবে।



ওয়াতন এর প্রকার

ওয়াতন সম্পর্কিত ফিকহী কিতাবগুলোর আলোচনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ওয়াতন মোট তিন প্রকার।

এক. ওয়াতনে আসলী তথা প্রকৃত আবাসভূমি বা বসবাসস্থল।

দুই. ওয়াতনে ইকামী তথা সুনির্দিষ্ট সময়ব্যাপি অবস্থানস্থল।

তিন. ওয়াতনে সুকনী তথা ক্ষণিককাল বা অনির্দিষ্ট সময়ের অবস্থান ক্ষেত্র।

ওয়াতনে আসলীর বিশ্লেষণ ও বিধান

ওয়াতনে আসলী বলা হয়-যে স্থান মানুষের প্রকৃত জন্মভূমি অথবা যেখানে তার পৈতৃক বাড়িঘর ও জমিজমা রয়েছে কিংবা এমন কোন স্থান যেখানে মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করে এবং উক্ত স্থানে জীবন কাটিয়ে দেয়ার ই”ছা রাখে।

ওয়াতনে আসলী একাধিক হতে পারে। এ বিষয়টি পুরোপুরি ব্যক্তির নিয়তের উপর নির্ভরশীল। যেমন, কোন ব্যক্তির জন্মস্থান গ্রামে, সেখানে তার পৈতৃক ভিটা ও জমিজমা রয়েছে, যার মাধ্যমে সে উপকৃত হয়। কিন্তুজীবনের প্রয়োজনে সে পরিবার-পরিজন নিয়ে শহরে বসবাস করে এবং সেখানেই জীবন অতিবাহিত করার ই”ছা করে থাকে। এমতাবস্থায় উক্ত ব্যক্তি যদি উভয় স্থানকে ওয়াতনে আসলী হিসেবে গ্রহণ করে তাহলে উভয় স্থানই তার জন্য ওয়াতনে আসলী হিসেবে গণ্য হবে।


কিছু জরুরী মাসআলা

* ওয়াতনে আসলী সফরের দ্বারা বাতিল হয় না। কোন ব্যক্তি যদি সারাজীবন সফরের মধ্যে কাটিয়ে দেয়, তবু তার ওয়াতনে আসলী অবশিষ্ট থাকবে। কোনদিন যদি সে এক ঘন্টার জন্যও তার ওয়াতনে আসলীতে ফিরে আসে এবং নামাজ আদায় করে তাহলে তাকে পূর্ণ নামাজ আদায় করতে হবে।

* শুধু একটি পদ্ধতিতে মানুষের ওয়াতনে আসলী বাতিল হতে পারে। তা হল-নিজ ওয়াতনে আসলীকে চিরদিনের জন্য ছেড়ে দিয়ে পরিবার-পরিজনকে নিয়ে ভিন্ন কোন শহরে একেবারে স্থানান্তরিত হয়ে যাওয়া এবং সেখানেই জীবন কাটিয়ে দেওয়ার নিয়ত করে নেওয়া। যখন নিয়ত পূর্ণ হবে তখন পরিবর্তিত শহর তার ওয়াতনে আসলী হিসেবে ধর্তব্য হবে। পরবর্তীতে কখনো কোন কাজে যদি পূর্বের ওয়াতনে আসলীতে যাওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে উক্ত স্থানে নামাজ কসর করতে হবে। কেননা বর্তমানে এই স্থান তার ওয়াতনে আসলী নয়। তবে প্রথম ওয়াতনকে ছেড়ে দিয়ে দ্বিতীয় কোন স্থান বা শহরকে ওয়াতনে আসলী বানানোর পূর্ব পর্যন্ত প্রথম ওয়াতনই ওয়াতনে আসলী হিসেবে বাকী থাকবে।

* যদি কোন ব্যক্তির একাধিক স্ত্রী ভিন্ন ভিন্ন শহরে অবস্থান করে এবং সে তাদেরকে সেখানেই জীবন কাটিয়ে দেয়ার ই”ছা করে থাকে, তাহলে উভয় শহর তার জন্য ওয়াতনে আসলী হিসেবে গণ্য হবে। ওয়াতনে আসলীতে কেউ কোন ধরণের নিয়ত ব্যতিত প্রবেশ করলেও মুকীম হয়ে যায়। আবার কোন শহরকে ওয়াতনে আসলী থেকে বাদ দেওয়ার নিয়ত করার মাধ্যমেও ওয়াতনে আসলী বাতিল হয়ে যায়।

* যদি কোন ব্যক্তির বাবা-মা ও আত্মীয় স্বজন এক শহরে বসবাস করে (পৈতৃক ভিটা বা জন্মভূমি ব্যতীত) আর সে স্ত্রী সন্তান নিয়ে আলাদাভাবে ভিন্ন শহরে বসবাস করে এবং সেখানে জীবন কাটিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা রাখে। এমতাবস্থায় নিজ স্ত্রী সন্তান নিয়ে অবস্থঅনকৃত শহর তার জন্য ওয়াতনে আসলী হিসেবে বিবেচিত হবে। অন্য যে শহরে বাবা-মা বা আত্মীয় স্বজনরা রয়েছেন সেই শহর নয়।


ওয়াতনে ইকামীর আলোচনা ও তার বিধান

ওয়াতনে ইকামী বলা হয় -যে স্থানে মুসাফির ব্যক্তি পনের দিন বা তার চেয়ে বেশীদিন অবস্থানের নিয়ত করার মাধ্যমে মুকীম হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে শর্ত হল, অবস্থানকৃত স্থান স্বভাবগত ও প্রাক”তিকভাবে মানুষের নিকট বসবাসযোগ্য স্থান বলে বিবেচিত হতে হবে। কোন বন,জঙ্গল বা জাহাজ অবস্থানত্রে হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।

সুতরাং যে ব্যক্তি পনের দিন বা তার চেয়ে বেশী দিন কোন স্থানে অবস্থান করবে সে মুকীম ব্যক্তির ন্যায় পূর্ণ নামাজ আদায় করবে। কিন্তুযখন এই স্থান থেকে ৪৮ মাইল দুরত্বে সফরের নিয়ত করে বের হয়ে যাবে তখন আবার মুসাফির ব্যক্তির ন্যায় নামাজ আদায় করবে। সে যখন সফর থেকে ফিরে আসবে, তখন পুনরায় পনের দিন বা তার চেয়ে বেশী দিনের নিয়ত না করা পর্যন্ত মুসাফিরের ন্যায় নামাজ আদায় করবে। চাই তার নিয়তহীন ওয়াতনে ইকামা যত দীর্ঘই হোক না কেন। কেননা সফর করার দ্বারা ওয়াতনে ইকামা বাতিল হয়ে যায়।


কিছু জরুরী মাসআলা

* যেসকল শহরের মাঝে বাস বা ট্রেন স্টেশন অবস্থিত, সেসকল শহরের বাসিন্দারা সফর থেকে ফিরে আসার সময় ট্রেন বা বাস উক্ত শহরের সীমার মধ্যে পৌঁছার সাথে সাথে তারা মুকীম হয়ে যাবে। তারা যতি ৪৮ মাইল তথা সোয়া সাতাত্তর কি.মি. বা তার চেয়ে বেশী দূরত্বের পথ সফর করার উদ্দেশ্যে বের হয়, তাহলে বাস বা ট্রেন উক্ত শহর ত্যাগ করার পর থেকে তাদের শরয়ী সফর শুরু হবে। যদি এমন হয় যে, শহরের মধ্যখান থেকে উদ্দিষ্ট স্থানের দূরত্ব শরয়ী সফরের দূরত্বের সমান, কিন্তুশহরের সীমা অতিক্রম করার পর থেকে আর শরয়ী সফরের দুরত্ব থাকে না, এমতাবস্থায় সফরকারীব্যক্তি মুসাফির হবে না, বরং মুকীম থাকবে এবং তাকে পূর্ণ নামাজ আদায় করতে হবে। যেমন, কেউ ঢাকার গুলিস্থান থেকে কুমিল্লার চান্দিনা যাবে। যার মোট দুরত্ব ৮৮ কি.মি.। শরয়ী সফরের দুরত্ব সোয়া সাতাত্তর কি.মি.। কিন্তুসফরকারী ব্যক্তির ওয়াতনে আসলী বা ওয়াতনে ইকামী হলে ঢাকা। আর চান্দিনার দিকে সফরে ঢাকার শেষ সীমা হল কাঁচপুর ব্রীজ। গুলিস্তান থেকে যার দুরত্ব ১৩ কি.মি.। কাঁচপুর থেকে চান্দিনার দুরত্ব ৭৫ কি.মি.। সুতরাং ঢাকা সফরকারী ব্যক্তির নিজ শহর বা অবস্থানকৃত শহর হওয়ায় তার সফরের দূরত্ব গণনা শুরু হবে কুমিল্লার দিকে ঢাকার শেষ সীমা তথা কাঁটপুর ব্রীজ থেকে। চান্দিনা পর্যন্ত যার দুরত্ব ৭৫ কি.মি.। তাই শরয়ী উসূল অনুযায়ী উল্লেখিত দুরত্ব শরয়ী সফরের দূরত্বের সমান না হওয়ায় তাকে পূর্ণ নামায আদায় করতে হবে। নতুবা নামাজ সহীহ হবে না।

উল্লেখ্য,ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম বা কুমিল্লার দিকে যেতে ঢাকার শেষ সীমা কাঁচপুর ব্রীজ,ময়মনসিংহ অঞ্চলের দিকে যেতে আব্দুল্লাহপুর ব্রীজ,মাওয়ার দিকে যেতে পোস্তগোলা ব্রীজ এবং গাবতলী দিয়ে অন্য অঞ্চলের দিকে যেতে গাবতলী ব্রীজ।

* ঢাকায় অবস্থানকারী ব্যক্তি যদি আছরের নামাজের সময় সফর থেকে ফিরে আসে এবং কোন কারণে স্টেশনে নামাজ পড়ার পূর্বেই মাগরিবের নামাজের ওয়াক্ত হয়ে যায়, তাহলে পরবর্তীতে তাকে পূর্ণ চার রাকাত নামাজ আদায় করতে হবে। একটি বিষয় বিশেষভাবে ল্যণীয় যে, সফরকালে কোন নামাজ যদি কাযা হয়ে যায়, মুকীম হওয়ার পর উক্ত নামাজ কসরই আদায় করতে হবে। ঠিক তেমনিভাবে মুকীম অবস্থায় কোন নামাজ কাযা হয়ে গেলে মুসাফির অবস্থায় তা আদায় করতে চাইলে পূর্ণ নামাজ আদায় করতে হবে।


ওয়াতনে সুকনীর আলোচনা ও তার বিধান

মুসাফির ব্যক্তি মুকীম হওয়া ওয়াতনের সর্বশেষ প্রকার হল ওয়াতনে সুকনী। ওয়াতনে সুকনী বলা হয়- কোন স্থানে মুসাফির ব্যক্তি পনের দিনের কম সময় অবস্থান করার নিয়ত করা। এই সময়ের বিধান হল- অবস্থানের দিনগুলোতে ব্যক্তি মুসাফিরের হুকুমে বিদ্যমান থাকবে। নামাজ কসর করবে। যতদিন পর্যন্ত সে পনের দিন অবস্থান করার নিয়ত না করবে ততদিন পর্যন্ত তার এই হুকুম অব্যাহত থাকবে। এই সময়কালে সে নামাজ কসর করবে।

* যদি কোন ব্যক্তি প্রথম দশদিন অবস্থান করার নিয়ত করে, পরে আবার পাঁচ দিনের নিয়ত করে, পরবর্তীতে আবার কয়েক দিনের নিয়ত করে, কিন্তুএকসাথে পনের দিন অবস্থান করার নিয়ত না করে তাহলে তার নামাজ মুসাফির ব্যক্তির নামাজের ন্যায় চলতেই থাকবে। এভাবে সারা জীবন কেটে গেলেও তা বন্ধ হবে না। অর্থ্যাৎ তার উপর মুকীম ব্যক্তির হুকুম আরোপিত হওয়ার জন্য কমপে পনের দিন অবস্থান করার নিয়ত করা জরুরী। মূলত, শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে এই ওয়াতনে সুকনী কোন ওয়াতনই নয়।


* দ্বিতীয় অবস্থা

মুসাফির ব্যক্তি কোন স্থানে পনের দিন বা তার চেয়ে বেশি দিন অবস্থানের নিয়ত করার মাধ্যমে মুকীম হয়ে যায়।

বিশ্লেষণ
প্রথমত,সফরে মুসাফিরের হুকুম জারী হওয়ার জন্য নিয়ত করা জরুরী। এটা সফরের দুরত্বের ক্ষেত্রে যেমন প্রযোজ্য ঠিক তেমনি কোন স্থানে অবস্থানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কেউ যদি শরয়ী সফর পরিমাণ দুরত্ব একবারে সফর করার ক্ষেত্রে নিয়ত না করে কিংবা কোন স্থানে পনের দিন বা তার চেয়ে বেশি দিন অবস্থানের ব্যাপারে নিয়ত না করে তাহলে সে শরয়ী মুসাফির হিসেবে গণ্য হবে না। সুতরাং কেউ যদি সফরের নিয়ত ছাড়া একশত মাইলও সফর করে কিংবা কয়েক ধাপে উক্ত দুরত্বের পথ অতিক্রম করে কিন্তুএকবারে ৪৮ মাইল সফরের নিয়ত না করে তাহলে তাকে শরয়ী মুসাফির বলা যাবে না এবং মুসাফিরের বিধান তার উপর প্রজোয্য হবে না। যদি কেউ কোন স্থানে পনের দিন অবস্থানের নিয়ত না করে এবং চলে যাওয়ার ই”ছা করে, কিন্তুকোন কারণবশত প্রতিদিন চলে যাওয়ার নিয়ত করা সত্তে¡ও যাওয়া না হয়, এমতাবস্থায় এভাবে একমাস বা তার চেয়ে বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও সে মুকীম হবে না বরং মুসাফির হিসেবে নামাজ আদায় করতে থাকবে।

দ্বিতীয়ত, কোন শহরের ভিন্ন ভিন্ন এলাকা বা ওয়ার্ড থাকা সত্তে¡ও যদি তার বাজার, ঘাট, স্টেশন, সমাজ ব্যবস্থা ও রীতিনীতি এক থাকে তাহলে পুরা শহরকে এক এলাকার হুকুমে ধরা হবে। এমন শহরের একাধিক মহল্লা মিলিয়ে কেউ যদি পনের দিন বা তার চেয়ে বেশি দিন অবস্থান করার নিয়ত করলে সে মুকীম হিসেবে পরিগণিত হবে। উপরোক্ত শর্তগুলো যদি শহরের এলাকাগুলোতে আলাদাভাবে পাওয়া যায় তাহলে উক্ত শহরকে আর এক এলাকার হুকুমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। এমন শহরের প্রত্যেক এলাকায় কমপে পনের দিনের নিয়ত করা ব্যতীত কেউ মুকীম হবেনা; বরং মুসাফির থাকবে। উদাহরণসরূপ ঢাকা শহরের কথা বলা যায়। সেখানে আগত কোন মুসাফির ব্যক্তি প্রত্যেক এলাকায় আলাদাভাবে কমপে পনের দিন অবস্থানের নিয়ত করা ব্যতীত মুকীম হবে না। শরয়ী এই বিধান বড় গ্রামের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

তৃতীয়ত, যে স্থানে অবস্থান করার নিয়ত করবে,প্রথমে দেখতে হবে উক্ত স্থান শহর কিংবা গ্রামের ন্যায় প্রকৃতিগত ভাবে মানুষের নিকট বসবাসযোগ্য কিনা। বসবাসযোগ্য না হলে উক্ত স্থানে পনের দিন অবস্থানের নিয়ত করলেও মুকীম হওয়া যাবে না। সুতরাং দ্বিধাহীনচিত্তে এ কথা বলা যায় যে, কোন ব্যক্তি জনমানবহীন কোন জঙ্গলে কিংবা জাহাজ বা বিমানে পনের দিন অবস্থানের নিয়ত করলেও সে মুকীম হবে না বরং মুসাফির থাকবে। তবে যদি কোন ব্যক্তি সর্বদা বন-বাদাড়ে বা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ায় এবং বনে-জঙ্গলে তাবু স্থাপন করে বসবাস করে, তাহলে তার তাবু স্থাপনই তার মুকীম হওয়া বুঝায়। কেননা সাধারণত এ জাতীয় লোক নিজ অবস্থান বা এলাকা পরিবর্তনের মাধ্যমে সফরের ই”ছা করে না। তাই তাদের আবাসস্থল পরিবর্তন বা স্থানান্তরের বিষয়ের উপর কিয়াস বা ধারণা করে কোন ব্যক্তি নিজ আবাসস্থল স্থানান্তরিত করার মাধ্যমে মুসাফির হয় না বরং মুকীমই থাকে। এ বিষয়টি পুরোপুরি উপলব্দি করতে আমরা ‘বাংলার বেদুইন’ খ্যাত বেদে সমাজের জীবন যাপনের দিকে তাকাতে পারি। হ্যাঁ, এমন কেউ যদি একবারে ৪৮ মাইল বা তার চেয়ে বেশি দুরত্বের পথ সফরের ই”ছা করে তাহলে সে নি:সন্দেহে মুসাফির হয়ে যাবে।


* তৃতীয় অবস্থা

কোন ব্যক্তি পনের দিন বা তার চেয়ে বেশিদিন অবস্থানের নিয়ত করার দ্বারা তাকে অনুসরণ করা কিংবা তার অধীনস্থও অনুগামী ব্যক্তিরাও মুকীম হয়ে যাবে। যেমন, মনিবের নিয়তের মাধ্যমে গোলাম, স্বামীর নিয়তের মাধ্যমে স্ত্রী অথবা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা তাদের মন্ত্রী বা বসের নিয়তের মাধ্যমে মুকীম হয়ে যাবে। যদিও অধীনস্থরা অবস্থান করার ব্যাপারে কোন নিয়ত না করে থাকে।

লক্ষণীয় যে, অনুসরণকারী বা অধীনস্থব্যক্তি তখনই মুকীম হবে যখন সে অবস্থান করার ব্যাপারে তার নেতা বা অনুসৃত ব্যক্তির নিয়তের কথা জানতে পারবে। যদি তার অবস্থানের কথা জানার পূর্বেই মুসাফিরের ন্যায় নামাজ কসর করে তাহলে তার নামাজ আদায় হয়ে যাবে এবং কোন পুনরাবৃত্তি করতে হবে না।


* চতুর্থ অবস্থা

এমন কোন স্থানে অবস্থান করার নিয়ত করা, নিজ শহর থেকে যার দুরত্ব ৪৮ মাইলের চেয়ে কম। এমতাবস্থায় দুরত্ব শরয়ী সফরের দুরত্ব পরিমাণ না হওয়ায় সে মুকীম অবস্থায় বহাল থাকবে। উপরোল্লিখিত এই চার অবস্থায় মুসাফির ব্যক্তি মুকীম হয়ে যাবে।


তথ্যসূত্র:

* রদ্দুল মুহতার-২য় খন্ড,মাকতাবায়ে দারুল কুতুব আল ইলমিয়া।

* ফাতাওয়ায়ে আলমগীরি-১ম খন্ড, মাকতাবায়ে দারুল ফিকর।

* বাদায়েউস সানায়ে-১ম খন্ড,মাকতাবায়ে ইহইয়াইত তুরাস।

* আল বাহরুর রায়েক-২য় খন্ড, মাকতাবায়ে রশীদিয়া।

* আল ফিকহুল হানাফী-১ম খন্ড, মাকতাবায়ে দারুল কলম।

* জাওয়াহিরুল ফিকহ-৩য় খন্ড,মাকতাবায়ে দারুল উলুম,করাচী।

* ফাতাওয়ায়ে উসমানী-১ম খন্ড, মাকতাবায়ে মাআরিফুল কুরআন।

* ইমদাদুল ফাতাওয়া-১ম খন্ড, মাকতাবায়ে দারুল উলুম,করাচী।

*সমকালীন জরুরী মাসায়েল,মুফতী আবূ সাঈদ দা.বা. আল এসহাক প্রকাশনী।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:২৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মি. চুপ্পুর পক্ষ নিয়েছে বিএনপি-জামাত; কারণ কী?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬


বিএনপি গত ১৬ বছর আম্লিগের এগুচ্ছ কেশও ছিড়তে পারেনি অথচ যখন ছাত্ররা গণহত্যাকারীদের হটিয়েছে তখন কেন বিএনপি চু্প্পুর পক্ষ নিচ্ছে? অনেকেই বলছে সাংবিধানিক শুন্যতা সৃষ্টি হবে তার সংগে বিএনপিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এতো কাঁদাও কেনো=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৬




আয়না হতে চেয়েছিলে আমার। মেনে নিয়ে কথা, তোমায় আয়না ভেবে বসি, দেখতে চাই তোমাতে আমি আর আমার সুখ দু:খ আনন্দ বেদনা। রোদ্দুরের আলোয় কিংবা রাতের আঁধারে আলোয় আলোকিত মনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×