আমাদের চারপাশটা পুরোপুরি পচেঁ গেছে অনেক আগেই। এখন তা পচেঁ গলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কি পরিমান অসুস্থ চিন্তা ধারা নিয়ে এক ধরনের মেয়ে বড় হচ্ছে তা ভাবতেও বড় ঘেন্না হচ্ছে। দেশের বাইরে থাকার সময়ই এক মেয়ের সাথে ফেসবুকে পরিচয়, মেয়ে নিজেই উপযাজক হয়ে আমার সাথে পরিচিত হয়। আল্লাহ তায়ালা জানিনা আমাকে বানানোর সময় কিভাবে বানাইছে, নিজের খোমার রুপচর্চার সময় আর সুযোগ কোনটায় আমার হয়না। গোবেচারা টাইপের এই চেহারা নিয়ে আমি বড়ই সুখী একজন মানুষ। আমার চেহারা দেখে আজ পর্যন্ত কোন মেয়ে হার্ড ব্রেক কষে নাই, কিংবা উদাস বা তন্ময় হয়ে তাকিয়ে ছিল কোন মেয়ে,এমন কোন সুখ স্মৃতিও মনে পড়ছে না। তারপরও পাবলিক বাস বা ট্যাক্সিতে উঠলে মাঝে মধ্যে দেখতাম এই অধমের দিকে কিছু কিছু রমনী তাকিয়ে আছে নিতান্তই আশাহত দৃষ্টিতে। আহা সেইসব সুললনার দৃষ্টিসীমা অনুসরন করে মাঝে মাঝে বুকের মাঝে সুখের মত কি জানি আছড়ে পড়ত। কিন্তু কাহিনী আর কাহাতক এগোত ?? স্টপেজ শেষ তো প্রেম খানাও শেষ।
আহা একবার যদি কেউ ভালবাসত, আমার নয়ন দুটির জল দিয়ে তাহার জন্য প্যাসিফিক ওশান বানিয়ে ফেলতাম!!!!!!!
সে যাই হোক, ফেসবুকে আমি চেলেবেট্রিও না ;-( আবার পাংকো কোন আইডি দিয়াও উড়া ধুড়া কোন স্ট্যাটাসও দেই না যা পড়িয়া রমনীরা অগ্রপশ্চাত চিন্তা না করিয়া আমার সাথে ভাব সাব বিনিময় করবে। এমন আশা আমি ইহকালেও করি নাই। তারপরও এই রমণী কিভাবে যে আমারে খুজেঁ বের করল আর ফট করিয়া রিকু পাঠাইল তা আমার কাছে এখনও বারমুড়া ট্রায়াঙ্গলের মত রহস্যময়।
মেয়ের রিকু পাইয়া তো আমি তো মনে মনে কই, ধরনী তুমি দ্বিধা হও, আমি তাহাতে ঢুকিয়া যাই(অতি লইজ্জাই ভাইরে)। অল্প সল্প আলাপ আলোচনার পরেই জানিলাম, মেয়ে চিটাগাং কলেজে রাজনীতি বিজ্ঞানে পড়ে। বাহ বাহ, ভালোই তো !!!
কিন্তু আরও কিছুক্ষন লিখন আলাপ করার পর জানলাম, মেয়ের ভাব গতিক সুবিধার না। মেয়ে ফ্রেন্ড হবার সাথে সাথেই আমার প্রোফাইলের আগা পাশ তলা পড়িয়াছে আর একের পর এক তার ধারা বিবরনীও শুনিলাম। আহা মেয়ের উৎসাহ দেখিয়া আমারও মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন ?? কাহিনী কিডা ??
উসাইন বোল্টের গতির রেকর্ডও ফেল মারিল, মেয়ে তার চেয়েও দ্রুততার সহিত আমাকে প্রেম নিবেদন করিয়া বসিল। আহা এই বান্দার এতদিনে একটা গতি হইল ভাবিয়া মনে মনে বেশ পুলক অনুভব করিলাম।
মিথ্যা বলব না, মেয়ের চেহারা সুরত মাশাআল্লাহ খারাপ না। যে কোন ছেলেই এই রমণীর প্রেম দৃষ্টিতে গলিয়া যাবে, আমি তো কোন ছাড় !!!!
এইদিকে কম্পিত মনে আমি রবীন্দ্রনাথ জপিতে লাগিলাম, আমি পাইলাম ইহারে অবশেষে পাইলাম!!!
দুই মাসেরও অধিক লিখন আলাপের(চ্যাট) পর তা আরও পাকাপোক্ত হইল।
আমার হাবা গোবা মার্কা ছবিতে রমণীর লাইকের বন্যা বহিয়া গেল।
ইনিয়ে বিনিয়ে উনি আমার কোন কোন ছবি মনে ধরেছে তার ব্রেকিং নিউজ দিতে লাগলেন। হেলেনের জন্য ট্রয় নগরী ধূলায় মিশেছে, আর আমার তো ইকারাসের ডানা গজিয়া গেল।
সে যাই হোক জানা শোনা প্রয়োজন মনে করলাম। রমণীর উৎসাহের কোন কমতি ছিলনা। আমি ঘর পোড়া গরু, লাল মেঘ দেখলেই ভয় পাই। তাই প্রেমের তরী ভাসাবার আগে কোন সাগরে ভাসাব তাই মনে মনে ভাবতে লাগলাম।
দয়াপরবশত হয়ে রমণী ব্যাকুল আগ্রহে দর্শন দেবার জন্য রাজি হইল। আমার মনে তো রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।
দুরু দুরু বক্ষে, সুগন্ধির ডিব্বা খালি করিয়া,দুইবার ফেসিয়াল সহকারে, উত্তম বস্ত্র পরিধান পূর্বক গেলাম পরিদর্শনে থুক্কু পরীদর্শনে।
জায়গা রমণীই ঠিক করিয়া দিছিল, কেয়ারী ইলিশিয়াম নামক প্রেমকাননে। বলাবাহুল্য ইহা একখানা পাবলিক প্লেস। উল্টা পাল্টা চিন্তা আবার মাথায় আনিয়েন না। শত শত যুগলের মাঝে নিজেকে নায়ক সলোমান খান ভাবিয়া যার পর নাই খুশিতে বাক বাকুম হইয়া গেলাম।
একটু পরেই ভুলখানা ভাঙ্গিল, বসা মাত্রই রমণীর খাদ্য বিষয়ক জ্ঞান বিতরণের পালা। আমিও মনে মনে বললাম সময় থাকতে ব্যাটা পালা।
আহা কি সেই মধুর বানী !!! এইখানকার ফুচকাগুলো না খেতে বড়ই চমৎকার, সাথে লাচ্ছি আর কফি হলে জমবে ভালো। মরছি রে কোন খাদকের পাল্লায় পড়লাম রে বাবা।
বুঝলাম ফুটা প্রেম এই যুগে অচলরে ভাই। প্যায়সা ফেক তো তামাশা দেখ। মানিব্যাগের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করিয়া চোখে ঘোর বর্ষার আন্ধার দেখিতে লাগিলাম।
ইতিমধ্যে রমণীর খাদ্য বিষয়ক বেশ বড় একখানা লেকচার গলধঃকরণ করিলাম। বুঝলাম আজকে কপালে শনির দশা আছে ।
ইয়া মাবুদ তুমি রক্ষা করো।
টাকা পয়সা খারাপ ছিলনা পকেটে কিন্তু রমণীর আবদার মেটাতে পারব কিনা সেই চিন্তায় অস্থির হইয়া গেলাম। পাছে প্রেমখানা যদি ছুটিয়া যায়। খাবার দাবার আসামাত্র রমণী তার উপর দ্বিগুন উৎসাহে ঝাপাইয়া পড়িল। একেবারে অলিম্পিক ডাইভারদের ডাইভ রে ভাই।
নিজেরটা তো খাইলোও, আমারটাও ছাড়িলো না।
ইয়া মাবুদ কোন দুনিয়াই আসলাম, কোথায় তাহার চোখে চোখ রাখিয়া, আমি যাব হারাইয়া, খাবারের ঠেলায় তাহার সুযোগ মিলিল কি ভাইয়া ???
মুখভর্তি খাবার চাবাইতে চাবাইতে এরপর রমনী আমাকে যা শোনাইল তা শুধু ভয়ংকরই না, আমার হৃদয়ে তা হিরোশিমা আর নাগাসাকির এটম বোমার মত ফাটিল।
অতীতে তার একখানা কঠিন প্রেম ছিল। এমনই কঠিন যে, শরীর বিনিময় পর্যন্ত হয়ে গেছে।
ওহ মাবুদ ইহা কি শুনিলাম ????
পায়ের তলার মাটি আস্তে আস্তে সরিয়া যাচ্ছে টের পেলাম।
প্রথমে বলতে না চাইলেও, পরে ভালমত অক্টোপাসের মত চেপে ধরাতে এক এক করে নির্বিকার ভাবে সব বলতে লাগল, চুম্মা চাট্টি হতে শুরু করে স্তনযুগল মর্দনের রসালো বর্ননা কোনটায় বাকি রাখে নাই। রসময় গুপ্তের চটি বই ফেলরে ভাই। অবশ্য এই কথাগুলো তার পেট থেকে বের করতে আমাকে কম ঘাম ঝরাতে হয় নাই। আরও শুনলাম কতবার কোথায় শয়ন করেছে তার রগরগে বর্ননা।
ইজ্জত নিয়া বাড়ির পথ ধরতে চাইলাম। ইতিমধ্যে আমার পাঁচশত ট্যাকসো রমনী মিনিট দুয়েকের ভেতর উত্তম হজমি বড়ি সহকারে হজম করে ফেলেছে।
টাকা পয়সা যাক, তা হাতের ময়লা,মান ইজ্জত আগে। বেশ কড়াভাবেই প্রত্যাখান করার জন্য প্রস্তুত হলাম। আর যাই হোক এই মেয়ে আমি অধমের জন্য একটু আলট্রা ফাস্ট ক্লাসেরই বটে। এমন সুপার স্পীড জাপানী ট্রেনের সাথে আমি বাংলাদেশী রেলগাড়ি কিছুতেই পাল্লা দিতে পারবোনা।
রাগে, দুঃখে আর ক্ষোভে তৎক্ষনাক প্রেমকানন থেকে পালাবার জন্য এক পায়ে খাড়া হয়ে গেলাম।
এদিকে উনি আমাকে কচ্ছপের কামড় দিয়ে ধরে রাখার পুরো প্রস্তুতি নিয়েই এসেছেন। হাত ধরে আমাকে আবার টেনে বসালেন। আমি চোখে লাল,নীল,কাল সব কালারের সরিষার ফুল দেখতে লাগলাম। এইবার উনি আমাকে ছলে,বলে আর কৌশলে আটকাতে চাইলেন।
বারংবার বলতে লাগলেন, আমি কেন এত রেগে যাচ্ছি, এই যুগে এই সব আর এমন কি জিনিস। ওইটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট ছিল। এমন ভাব করতে লাগল শোয়াটা যেন প্রতিদিনের ডাল ভাতের মত কোন একটা আইটেম।
আমি হাল ছেড়ে দিচ্ছি দেখে নানাভাবে বুঝাইতে লাগল, যখন তার এক্স লাভারের সাথে ব্যাপারগুলো হচ্ছিল, তখন উনি নাকি অনেক ছোট ছিলেন। উনি নাকি ইমম্যাচিউরডও ছিলেন। ছেলেটাও নিতান্তই তার সমবয়সী ছিল, তাই নাকি এইসব শরীর বিনিময়ের ব্যাপারগুলো বুঝার মত বুদ্ধিই নাকি উনার ঘিলুতে ছিল না।
ছেলেটা তার সমবয়সী তাই রমনীর বিয়ের সময় পর্যন্ত স্ট্যাবলিশ হবার কোন চান্সই নাই। ততদিনে নাকি কয়েক হালি আণ্ডা বাচ্চা হয়ে যাবে। এইসব জেনেই রমনী তাকে আলগোছে ছেড়ে এসেছে। সেটা নিয়ে নাকি তার বিন্ধুমাত্র আফসোস নাই। ছেলে বার বার তার মধু খেতে চাচ্ছিল, কিন্তু উনি নাকি নিজেই ছেড়ে এসেছেন। এই কথাটা জোর দিয়ে বললেন বেশ কয়েকবার।
হুবুহু কথা গুলো তুলে দিচ্ছি,”ছেলেদের স্বভাব তো জানেনই, তাহলে আমার সব ভুলগুলো মেনে নেন। প্লিজ আমি জীবনেও আর এমন ভুল করবনা, যদি আপনার ভালবাসা আমাকে দেন, প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাইয়েন না। আমার কোন দোষ ছিলনা। আমাকে মন থেকে ক্ষমা করে দেন।“ আহারে যে কোন প্রেম প্রত্যাশী ছেলেরই গলে পানি হয়ে যাবার কথা। কিন্তু আমি যে ভাই অন্য মেটাল দিয়ে গড়ারে ভাই। প্রেম ভালবাসার চেয়েও নৈতিকতার স্থান আমার কাছে অনেক উপরে।
কথা বলার রুচিটুকুও হারিয়ে ফেললাম। একটা ব্যাপার ঠিক বুঝলাম না, রমণী বার বার একটা কথা জোড় দিয়ে বলতে লাগল, আমাকে নাকি সত্যি যদি ভাল না বাসত এইসব চরম গোপনীয় কথা নাকি সে মুখ দিয়ে বেরও করত না। এই যুগে কম বেশী সব মেয়েই নাকি এই আকামটা করে, উনার মত সত্যটা নাকি অবলীলায় কেউ বলেনা।
নাউজুবিল্লাহ ইহা আমি কি শুনিলাম রে মাবুদ ???? পুরাই মাননীয় স্পীকার হয়ে গেলাম !!!!
আগেই বলছি আমার মেটালটাই কেমন জানি, এইসব হাবিজাবি কথা বলে আমাকে টলাতে পারলো না। বহু কষ্ট করে আমাকে আটকানোর চেষ্টা করতে লাগলো। নিজেকে শেয়াল বনের মুরগী মনে হতে লাগলো। পিরিতি করার যে খোয়াব দেখছি তা কবেই উড়ে চলে গেছে এখন মানে মানে পালাতে পারলে বাঁচি।
রমনী এরপর স্ট্র্যাটেজি চেঞ্জ করল, এইবার ব্যবহার করল মোক্ষম অস্ত্র, আগে নাকি যতবারই শয়ন পর্ব হয়ে থাকুক না কেন, এখন নাকি শুধু আমাকে ভালবাসে, আর আমাকেই বিয়ে করে আমার বাচ্চার মা হতে চায়। ভাইরে এত বড় পল্টি হজম করার শক্তি খোদা তায়ালা আমাকে দেয় নাই।
আমার ততক্ষনে ছাইড়া দে মা কাইন্দা বাঁচি অবস্থা।
মনে মনে পালানো কিভাবে যাই তাই ভেবে ভেবে সদর দরজা খুঁজতেছি। এইরকম আকাম কুকাম করার পরও এইরুপ সগর্ব স্বীকারোক্তি বলে দেয় আমরা যে সমাজে বাস করছি তা পঁচে গলে গেছে অনেক আগেই। কোন পরিবার থেকে এইসব মেয়েরা উঠে আসছে আমার জানা নেই।
পারিবারিক শিক্ষা, নৈতিক মূল্যবোধের বালাই, জীবন সমন্ধে পরিমিত বোধ কোন কিছুই আর অবশিষ্ট নাই এইসব
মেয়েদের কাছে।
অনেক কষ্ট করে দোযখ থেকে বের হয়ে আসলাম। আর বাসায় এসে বেশ খানিকটা রগড়ে রগড়ে হাতটা ধুয়ে ফেললাম। রমনীর হাতের ছোয়ায় বিষ্টার দলা লেগে আছে মনে হল।
ইয়া মাবুদ তুমি বাচাইছো। কানে ধরছি আর জীবনেও প্রেম করব না।
বিঃদ্রঃ আট মাস আগের ঘটনা। এরপর যমুনার জল আরও গড়াইছে। পরে সময় করে বলব।