এই জোকসটা কোথায় পড়েছিলাম ঠিক মনে করতে পারছি না, তবে সামুর পাঠকদের সাথে শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারছিনা। প্রিয় ভাই ও বোনেরা জোকস ভাল না লাগলে এই নাদান ব্লগারকে প্যাঁদানি দিয়েন না। কথা না বাড়িয়ে আসুন শুনি জোকসটা।
প্রচলিত রূপকথাঃ
এইটা আমাদের অতি পরিচিত বহুল চর্চিত, চর্বিত একখানা রুপকথা। সবাই জানেন তারপরও আবার বলি। এক সৎ ও গরিব কাঠুরিয়া প্রত্যেকদিন এক নদীর ধারের বনে কাঠ কাটতে যেত। গরিব হলেও এই কাঠুরিয়া ছিল খুব সৎ আর সত্যবাদী। তো একদিন হয়েছে কি, সেই কাঠুরিয়া যথারীতি বনে কাঠ কাটছে, হঠাৎ হাত ফসকে তার হাত থেকে লোহার কুঠার খানা নদীর পানির ভেতর পড়ে যায়। অনেক খুজাখুজি করার পরও আয় রোজগারের একমাত্র উৎস কুঠারখানা না পেয়ে মনের দুঃখে কাঠুরিয়া নদীর ধারে বসে অঝোর নয়নে কাঁদতে থাকে। সেই নদীতে বাস করত এক জলপরী। কাঠুরিয়ার কান্না শুনে দয়াবশত নদীর ভেতর থেকে উঠে এসে কাঠুরিয়াকে জিজ্ঞেস করল সমস্যা কি তার ? জবাবে কাঠুরিয়া তার কুঠার হারানোর কথা বলল আর মনের দুঃখে কাঁদতে লাগল। সব শুনে জলপরীর দয়া হল কাঠুরিয়ার উপর, তাই তাকে কাঁদতে নিষেধ করে তার কুঠার খানা নদীর ভেতর থেকে খুজেঁ এনে দিতে সম্মত হল। কিন্তু তার আগে কাঠুরিয়ার সততাটাও একটু পরীক্ষা করে নিতে চাইল। তাই প্রথমবার নদীতে ডুব দিয়ে নিয়ে এল একটি সোনার কুঠার এবং কাঠুরিয়াকে জিজ্ঞেস করল এইটা তার কুঠার কিনা ? সৎ কাঠুরিয়া লোভ করল না এবং জলপরীকে বলল যে এইটা তার কুঠার না, সে এইটা নিতে পারবে না। তাই জলপরী আবার ডুব দিয়ে নিয়ে এল একটা রুপার কুঠার এবং কাঠুরিয়াকে জিজ্ঞেস করল এইটা কি তার কুঠার ? ? সৎ কাঠুরিয়া এইবারও লোভ করা থেকে বিরত থাকল এবং জলপরীকে বলল যে এইটাও তার কুঠার না, সে এইটা নিতে পারবে না।
তাই তৃতীয়বার ডুব দিয়ে জলপরী কাঠুরিয়ার লোহার কুঠারখানা নিয়ে এল আর কাঠুরিয়াকে বলল, এইটা তার কুঠার কিনা ? এইবার ভাল করে তাকিয়ে কাঠুরিয়া তার লোহার কুঠারখানা চিনতে পারল এবং বলল যে এইটাই তার কুঠার। এদিকে জলপরী কাঠুরিয়ার উপর খুব খুশি হল আর কাঠুরিয়ার সততার নিদর্শন স্বরুপ তাকে সবগুলো কুঠার উপহার দিল। এরপর কাঠুরিয়া সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।
নীতিকতাঃ সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা।
এরপর মডিফাইড আধুনিক রুপকথাঃ
আমাদের সেই একই কাঠুরিয়া এখন সেরাম বড়লোক। স্বর্ণ আর রুপার কুঠার বিক্রি কইরা গঞ্জে দোকান দিছে, গ্রামে দুই তালা পাকা বাড়িও বানাই ফেলছে। অভাব বলতে কিছুই নাই। কিন্তু এখনও পুরাতন অভ্যাস বশত নদীর ধারে কাঠ কাটতে যায়। কিন্তু এইবার প্রত্যেকবার তার সাথে থাকে তার পেয়ারের চাঁদ কা টুকরা বউ কমলা বানু। উদ্দেশ্য কিছুই না তার বউ জলপরীকে একবার দেখতে চেয়েছে আর কাঠুরিয়ার নিজের উদ্দেশ্য হল আবার যদি জলপরীর দেখা পায় তাহলে তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য একবার মন থেকে ধন্যবাদ দিবে। তো সেই জন্য কাঠুরিয়া তাদের অভাব না থাকলেও মাঝে মাঝে বউকে নিয়ে নদীর ধারে কাঠ কাটতে যায়। তো একদিন ঘটল এক আশ্চর্য ঘটনা, কাঠুরিয়া যথারীতি কাঠ কাটছে আর এদিকে তার বউ নদীর ধারে বসে প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখছে। হঠাৎ করে ওগো!! দেখছ নি!! কি সুন্দর ইলিশ মাছ!! বলে হঠাৎ এক্সসাইটেড হয়ে গেল। আরও ভাল করে ইলিশ মাছ দেখার লোভে যেই না নদীর ধারে গিয়ে কানায় গিয়ে দাড়াল তারপরই ঘটনা ঘটে গেল। পা পিছলে একেবারে নদীতে তলিয়ে গেল। এই দিকে আমাদের কাঠুরিয়া বাবাজি তো আকাশ বাতাস ফাটিয়ে চিৎকার করে কাঁদা ধরল। কাঁদার চোটে তার প্রান যায় যায় অবস্থা। হাজার হোক তার জানের জান একমাত্র বউ কমলা বানুকে ছাড়া সে কোন ভাবেই বাচঁতে চায় না। এদিকে নদীতে যে জলপরী থাকে তার কানে কিন্তু সেই কান্নার আওয়াজ ঠিকই গেল। ঘটনা কি জানার জন্য সে নদীর ধারে উঠে এল। এসে দেখে যে, সেই আগের কাঠুরিয়াই ইনিয়ে বিনিয়ে কান্নাকাটি করছে। কাঠুরিয়ার উতাল পাতাল কান্না দেখে জলপরী জানতে চাইল এইবার কি হয়েছে ? তোমার কুঠার না একবার উদ্ধার করে দিয়েছিলাম, কুঠার তো দেখি ঠিক আছে তাহলে আবার কি ? জবাবে কাঠুরিয়া একেবারে জলপরীর পায়ের উপর লুটিয়ে পড়ে বলল “ আফামনি কুঠার না, এইবার আমার জানের জান, চাঁদ কা টুকরা কমলা বানু নদীতে পড়ে গেছে। আফামনি আমার বউটারে এনে দেন, আমার আর কিছু চায় না।“ এই বলে আকাশ বাতাস ফাটিয়ে একেবারে মরাকান্না শুরু করে দিল। এইসব দেখে জলপরী কিছুটা ক্ষেপে গেল কাঠুরিয়ার উপর আর কিছুটা রেগে বলল, কেমন মানুষ তুমি মিয়া ? নিজের কুঠার ঠিকমত রাখতে পার না, বউরেও আবার ঠিকমত দেখে শুনে রাখতে পারনা। আমার আর খায় দায় কাম নাই আর কি, সবসময় খালি তোমার জিনিসপাতি খুঁজে এনে দিব, এইবার নিজের রাস্তা মাপ।”
তারপরও কাঠুরিয়া নাছোড়বান্দার মত জলপরীর হাতে পায়ে ধরে তার বউকে এনে দেবার জন্য কান্নাকাটি করতে লাগল। জলপরী এইবারও কাঠুরিয়ার কান্না শুনে আর স্থির থাকতে পারলো না, তার মন গলে গেল। সে যাই হোক, জলপরী এইবারও কাঠুরিয়াকে তার বউকে এনে দিতে সম্মত হল। কিন্তু কাঠুরিয়া আগের মত সৎ আছে কিনা তাও পরীক্ষা করে দেখতে চাইল। তাই এইবার নদীতে ডুব দিয়ে জলপরী প্রথমেই নিয়ে এল ঐশ্বরিয়া রায়কে আর কাঠুরিয়াকে জিজ্ঞেস করল এইটা তার বউ কিনা ??
কিন্তু এইবার কোন চিন্তা ভাবনা ছাড়াই কাঠুরিয়া বলে দিল, “ জি আফামনি এইটাই আমার বউ, দেন আমার বউরে দিয়া দেন, আমি বাড়ি যাই। ” এই কথা শুনে জলপরী খুব রাগ করল, আর কাঠুরিয়াকে বলল, তুমি তো মিয়া আগে ভালা আছিলা, এইবার আমার সাথে মিছা কথা কেন কইলা ? কামডা কি ঠিক করলা ?
এইবার কাঠুরিয়া তার জবাব দিল, আফামনি আমি তো জানি আপনি আমার ভাল চান, তাই এই বার যারে আনছেন তারে যদি আমার বউ না বলি, তাহলে আবার ডুব দিয়া হয়ত নিয়ে আসবেন আমাদের বর্ষা ম্যাডামকে( ওয়াইফ অফ মি.পম গানা) , তারপর তারেও যদি বউ না বলি তারপর আবার ডুব দিয়া আমার আসল বিবি কমলা বানুকে নিয়ে আইবেন। আর তারপর তিনডারে আমারে গছাইয়া দিবেন।
এমনে এক বউয়ের জ্বালায় বাচিনা , তার উপর তিন বউ মিয়া আমি তো মার্ডার হই যামু। এখন আপনি কন আমি কি করুম ??
নীতিকতাঃ একাধিক বিবাহ করে খাল কেটে নিজের ঘরে কুমির আনবেন না।
ফুটনোটঃ এই লেখাটা আমার একজন শুভাকাঙ্খী ব্লগার সোনাবীজ অথবা ধুলোবালিছাই ভাইকে উৎসর্গ করলাম। রম্য রচনা লেখার সময় বেশ ভয়ে আর আতংকে থাকি যে, কখন আমার এই প্রিয় ব্লগারটি মন্তব্য করে বসে যে, “জীনের বাদশা ভাই, এইবারের গল্পটা খুব একটা জমে নাই, কারন প্রচলিত একটা গল্পকে আপনি টেনে অনাবশ্যক লম্বা বানিয়ে ফেলেছেন। ” এইবার এই ভয় আর নাই কারন, এইবার আমার সহজ সরল আর অকপট স্বীকারোক্তি যে, একটি প্রচলিত রুপকথাকে টেনে আমি অনাবশ্যক লম্বা বানার কাজটা বেশ সযতনে করেছি। আপনি ভাল থাকবেন আর সুস্থ থাকবেন এই কামনা রইল।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:২৫