সম্প্রতি আল-জাজিরা, বিবিসি, সিএনএন, স্কাই নিউজ সহ প্রায় সব নিউজ চ্যানেলে একটি খবর বেশ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে, আর তা হল, অস্ট্রেলিয়ার ভূখন্ডে যেই সব আদম সন্তান প্রান বাচানোর তাগিদেই হোক আর যেই কারনেই হোক অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করবে,তারা যদি কট খায় তাহলে তাদের আর কোনভাবেই অস্ট্রেলিয়ার মত পূণ্যভূমিতে থাকতে দেয়া হবেনা। তাদের গেডি ধইর্যা নিয়ে যাওয়া হবে পাপুয়া নিউগিনি নামক একখান বাল ফেলাইন্যা দ্বীপের রিফিউজি ক্যাম্পে। এরপর সেইখান থেইক্যা আবাল আদম সন্তানেরা যতই চিল্লা ফাল্লা করুক আর ছাগলের লাহান লম্ফ ঝম্ফ দেয়া শুরু করুক না কেন, শতকরা ৯৯.৯৯% সম্ভাবনা আছে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ক্যাঙ্গারু দেখার খায়েশ আর ইহজনমে পূর্ন হবেনা। বর্তমান অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী কেভিন রাড বিশাল এক মুলি বাশঁ নিয়া দন্ডায়মান আছে, যাতে তৈল মর্দন পূর্বক তা অস্ট্রেলিয়ায় যেসব এস্যাইলাম সিকার আসবে তাদের পিছনে কোন বলা কওয়া ছাড়াই হান্দায়া দেবার জন্য। সামনে আবার অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচন, এইটারে বড় একখান ইস্যু বানাইয়া আবার সরকারি দল আর বিরোধী দল গলাবাজি শুরু কইরা দিছে। হাসবো না কাদবো ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম। ওরে কেউ আমারে মাইর্যা লা, ভোতা দা দি কাইট্যালা। তোদের দেশে কি আর কোন ইস্যু নাইরে বাপ ?? বেকার সমস্যা, জনসংখ্যা বিস্ফোরন, লোকজন ঠিক ভাবে খাইতে পরতে পারেনা মানে দারিদ্রতা, কেয়ারটেকার গভর্মেন্ট/নির্দলীয় সরকার, আইন শৃংখলার অবনতি, লোকজন দিনে দুপুরে গায়েব হয়ে যায়, সেতু নিয়া চুরি চামারি, কালো ক্যাঙ্গারু, ব্যাংক থেকে লোন নিয়া আর ফেরত দেয়না, কুইক রেন্টাল, রাস্তা ঘাট ঠিক নাই এইসব কি কোন সমস্যা নাই তোদের ??
আসলেই তাদের কাছে এই ধরনের কোন সমস্যা আছে বলে মনে হয়না। যদি থাকত তাহলে সেইসব বাদ দিয়া এইরকম আবাল ইস্যু নিয়া ফাল পারতনা। শুধু অস্ট্রেলিয়া না এই মহা বিশ্বের সব দেশেই প্রায় একই ধরনের অভিবাসন আইন প্রচলিত। দিনের পর দিন তা কঠোর থেকে কঠোরতর হচ্ছে। আম্রিকা(আমেরিকা),কান কাডা(কানাডা), ইউরোপের প্রায় সব দেশ আর এশিয়ার কিছু নব্য বড়লোক দেশ ( যেইসব দেশে একসময় লোকজন খাওনের অভাবে হাগা ভুইল্যা গেছিল ) যেমন মালেশিয়া, জাপান এই সব দেশের কথা হইতাছে, মামু আমার দেশে আসার খোয়াব দেখছ ভাল কথা, কিন্তু সিধা পথ দিয়া আস, যদি বাংলাদেশের টেকনাফের লাহান জলপথ, নদী,খাদা খন্দ দিয়া কিংবা স্থল বা আকাশ পথ দিয়া ডাংকি মাইর্যা চোরের মত আস তাহলে খবর আছে। যদি কোন কারনে কট খাও তাহলে কিন্তু লুঙ্গী পরার টাইম কিন্তু পাবেনা শুধু আন্ডু পইরা দেশে ফেরত পাঠানো হবে। আর আমাদের প্রতিবেশী ইন্ডিয়ার কথা বাদ দিলাম। ফেলানি হতে শুরু করে কত মানুষকে যে গুলি করে মারছে তার যদি সঠিক সংখ্যাটা প্রকাশিত হয় তা হবে শিউরে উঠার মত। আমেরিকা, কানাডা আর ইউরোপের প্রায় সব দেশের অভিবাসন আইন গুলো দিনের পর দিন এমন করা হচ্ছে যাতে করে এইসব দেশ হয়ে উঠছে দুর্ভেদ্য দূর্গের মত। ওবামা প্রশাসনের দীর্ঘদিনের মাথা ব্যাথার কারন হচ্ছে ক্যামনে একটি চলনসই অভিবাসন আইন করা যায় যাতে করে দেশের মানুষকেও খুশি রাখা যায় আবার আমেরিকায় ঢুকার দরজায়ও বন্ধ রাখা যায়। এইটা দোষের কিছু না। সব স্বাধীন দেশেরই অধিকার আছে নিজ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য, নিজ দেশের নাগরিকদের বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষার জন্য এবং নিজ দেশের ভূখন্ড বাইরের যে কোন ধরনের হামলার হাত থেকে সুরক্ষার জন্য এই ধরনের অভিবাসন আইন প্রণয়ন করার। দেশের গুরুত্বপূর্ন তথ্য ও স্থাপনা বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষার জন্য অভিবাসন আইন একটি অনন্য ভূমিকা পালন করে। যে কোন দেশই তা কঠোরভাবে মেনে চলে আর নতুন ভাবে কঠোর থেকে কঠোরতম আইন প্রণয়ন করে যাতে করে বাইরের উটকো কোন লোক দেশের ভেতর কোন কারন ছাড়াই ঢুকতে না পারে।
কিন্তু রোহিঙ্গারা আমাদের দেশে যেইভাবে অভিবাসন আইনের মুখে ঝাটা মেরে দল বেধে মগের মুল্লকের মত টেকনাফ আর বিভিন্ন সীমান্ত পথ দিয়ে ঢুকে তাতে মনে হয়না আমাদের দেশে এই ধরনের কোন আইন প্রচলিত আছে বা রোহিঙ্গারা সেই সব আইনের কোন থোড়াই কেয়ার করে। এই ঈদের দুই তিন দিন পর হতেই পত্র-পত্রিকা খুললেই দেখা যাচ্ছে এই কয়েকদিনে অগনিতক সংখ্যক রোহিঙ্গা আমাদের দেশে ঢুকেছে কোন রকম অভিবাসন আইনের তোয়াক্কা না করেই। সেই আদিকাল হতেই পত্র-পত্রিকায় দেখে আসছি বিডিআর , নব্য বিজিবি কর্তৃক বাংলাদেশ থেকে এতজন রোহিঙ্গা পুশব্যাক তাও আবার খাবার পানি সমেত সহি সালামতে। বাংলাদেশে চোরের মত ঢুকার সময় একজন রোহিঙ্গাও গুলিবিদ্ধ হয়েছে আজ পর্যন্ত এই ধরনের কোন উদাহরন নেই। ঠিক এই জায়গাটায় আমরা কত উদারচিত্ত আর সহনশীল জাতি তা আমরা আমাদের আচরন দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছি।
এই রকম নজির বিশ্বের আর কোথাও নাই, হবেও না। শুধু একটা ঘটনা বলি তাহলে বুঝতে পারবেন বাংলাদেশিদের মর্যাদা কত উপরে। ইউরোপে দীর্ঘদিন থাকার কারনে ইলিগ্যাল ইমিগ্র্যান্টদের সাথে কি ধরনের আচরন করা হয় তা সচক্ষে দেখার সুযোগ হয়েছে। ফিনল্যান্ডে কোন একটা কাজে গিয়েছিলাম, একদিন কাজ শেষে রাস্তায় বের হলাম চারপাশটা দেখতে। আমি কোন নতুন দেশে গেলেই প্রথম সুযোগেই সেই দেশে বাংলাদেশী ভাইরা কেমন আছে তা জানার চেষ্টা করি। সেইরকম বাংলাদেশী কম্যুনিটির খোজেঁ এদিক ওদিক ঘুরা ফেরা করতে করতে এক সাবওয়ে দিয়ে আসার সময় যা দেখলাম তা আমি কোনদিন ভুলতে পারব না। হঠাৎ কিছু লোকের জটলা দেখে সামনে এগিয়ে গেলাম কি হয়েছে দেখার জন্য। দেখলাম চার পাচঁ জনকে একদল লোক ঘিরে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে আর কিল ঘুষি লাথি দিচ্ছে দমাদম নির্দয়ের মত। এর ভেতর ফিনিশ পুলিশও আছে। ভাল করে তাকিয়ে দেখলাম এরা আমার দেশেরই ভাই মানে হতভাগ্য বঙ্গ সন্তান। এর ভেতর একজন মেয়েও আছে যার বয়স ২৫ এর মত। যাই হোক, আমার অবশ্য করনীয় হিসেবে যা করা দরকার তাই করলাম, প্রথমেই ইংরেজি,জার্মান আর রাশিয়ান ভাষায় আক্রমণকারী দলকে জিজ্ঞেস করলাম, ঘটনা কি তা জানার জন্য ??? সৌভাগ্যক্রমে একজনকে পাওয়া গেল যে রাশিয়ান বলতে পারে। সে প্রথমেই এই উপমহাদেশীয় বঙ্গ সন্তানদের চৌদ্দ গোষ্টি উদ্ধার করল। তারপর বলা শুরু করল, কিভাবে এইসব লোকজন তাদের দেশের সম্পদ নষ্ট করছে আর দেশের অর্থনীতির বারটা বাজাচ্ছে। কিন্তু এই চার পাচঁ জন কি করেছে তা বলছে না। অনেকক্ষন চাপাচাপি করার পর যা বলল তা হচ্ছে, এইসব ইলিগ্যাল ইমিগ্র্যান্টরা প্রায় রাতেই সাবওয়ে দখল করে ঘুমায় তাই তাদের চলাফেরার অসুবিধা হয় এই জন্য তারা একটি এন্টি ইলিগ্যাল ইমিগ্র্যান্ট খেদানো গ্রুপ করেছে যার কাজই হচ্ছে এইসব পাবলিকদের খুজেঁ খুজেঁ বের করা আর যথাসাধ্য উওম-মধ্যম দেয়া। আজকে তাদের সাথে পুলিশ বাহিনীও আছে। ফিনিশ জাতির মত একটি উন্নত রুচির আর প্রগতিশীল জাতির এইরকম রেসিজম দেখে মনটা ঘৃণায় বিষিয়ে উঠল। তারপর কথা বললাম আমার বাংলাদেশী ভাইদের সাথে, সেই পুরাতন কাসুন্দি। উন্নত জীবনের আশায় তারা দালালের মাধ্যমে নানা প্রতিকুল পথ পাড়ি দিয়ে এতদুর এসেছে। দালালরা এক একজন থেকে প্রায় পনের চৌদ্দ লাখ টাকা করে নিয়েছে এবং মাঝপথে এক পাহাড়ের পাদদেশে অভুক্ত অবস্থায় তাদের রেখে পালিয়েছে। তারপর থেকে তারা ভবঘুরের মত ঘুরছে। সারাদিন কাজের খুজেঁ হয়রান হয়ে অভুক্ত অবস্থায় এই সাবওয়েতে শুয়ে পড়ে। বলাবাহুল্য তারা সবাই এই দেশে নতুন এবং সাথে টাকা পয়সাও নাই আর ফিনিশ ভাষাও জানেনা। এমনি করেই চলছিল কিন্তু ইদানিং তাদের উপর এই সব ছেলে পুলেরা প্রায় সময় চড়াও হচ্ছে। মনটা একদম ভেঙ্গে গেল এইসব দেখে। সবার দিকে ভাল করে নজর দিলাম, এদের একজনের হাত প্রায় ভেঙ্গে গেছে আর একজনের নাক মুখ থেকে রক্ত ঝরছে। সবচেয়ে করুণ অবস্থা হচ্ছে মেয়েটির, উগ্রবাদী রেসিষ্ট গ্রুপটার ভেতর দুইটা মেয়েও ছিল তাদের ক্রমাগত চুল টানাটানি আর চড় কিল লাথির কারণে আমার বাংলাদেশী বোনটা বেহুশ হয়ে গেছে। এদিকে পুলিশরা কিছু বলছে না, নির্বিকার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে। হায়রে ইউরোপিয়ান পুলিশ তোদের এত গুনগান শুনি এখন আমার ইচ্ছে করছে তোদের মাথার উপর মুথে দিই।
(চলবে)
২য় পর্বে যাবার জন্য এইখানে ক্লিক করেন
--------------------------------------------------------------------