বুইড্যা হবার পর খালি মনে হয়, আহা বাল্যকালডা কতই না মজার আছিল। মাঝে মাঝে মনের দুঃখে চিক্কর পাইরা গান গায়, “দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইলো না” আরে সোনার খাচাঁর কেতা ফুরি, সিলভার,তামা,পিতলের খাঁচায়ও যদি বাইন্দা রাখতে পারতাম তাইলেও ইরাম কফাল চাপরাইতামনা। আহা কি সব দিন আছিল সেইসব দিন, যেরাম দড়ি ছিড়া গরুর মত এদিক ওদিক ফাল পারতাম এহন মনে চাইলেও তা কইরতাম পারিনা। যখন মন চাইত যার তার গাছের জিনিস নিজের মনে কইরা সাফা কইরা দেয়া আর তার লগে, ভরপেট খাওয়ার পর যদি হাগা ধরত তাইলে পেন্ট খুইল্যা বইস্যা যাও কোন জমিনের আইলের ধারে। দুনিয়াডা পুরাডাই আছিল এলিস ইন ওয়ানডারল্যান্ড। যাওগ্যা এই সব কইয়্যা আর কি অইবো, তারচেয়ে বালা একখান হাসির ইস্টোরি হুনাই।
ছোডকালে আমার ইয়ার দোস্ত আছিল ব্যাফুক কিসিমের। তারমইধ্যে,জানে জিগার মানে পেয়ারের দোস্ত আছিল মালেক। বাঁদরামি, পিডাপিডি আর যাবতীয় চুরি-চামারি এইডা কম বেশী সবাই পাকনা আছিলাম। তয় মালেক চুরি চামারির কামে আছিল একদম বিএসটিআই অনুমোদিত সিলমারা ট্রেডমার্ক করা মাল। হালার হাতের কাম দেইখ্যা আমরা নিজেরাই মাঝে মাঝে টাসকি খায়া যাইতাম। কারো জাম গাছের জাম, আম গাছের আম, লাউডা,কদুডা আর মুরগিটা এমন কইরা সরাই ফেলত, যেডারে আমরা কয়তাম ক্লু-লেস মার্ডার। কোন আকাম হবার আমরা সব চোরার দল ঘটনাস্থল ইনভেস্টিগেশনে যাইতাম। তয় গৃহস্থের ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান আর কামের ধরন দেইখ্যা আমরা বুইজ্যা যাইতাম, কোনডা পাকা হাতের কাম আর কোনডা শিক্ষানবীশ আবাল চোরার কাম। বলা বাহুল্য, প্রত্যেকটা বড় কামের পর মালেক আল-কায়েদা নেটওয়ার্কের মত দায় স্বীকার করত। তাই পুরা গিরামের মানুষ খাওয়াই মালেকের বাপে যে আব্দুল মালেক নাম রাখছিল তা হইয়্যা গেল চোরা মালেইক্যা। মোট কথা ফর্মুলা ওয়ান রেসিংয়ে মাইকেল শুমাকার যেরাম কিংবদন্তি আমাদের চোরা কম্যুনিটিতে মালেকের খ্যাতি আছিল সিরাম তুঙ্গস্পর্শী। সবাই মনে মনে মালেকের হাতের কামের প্রশংসা করত আর চাইত যাতে মালেকের চাইতেও ক্যামনে বড় চুরা হয়তে পারবে।
আমি নিজেও বেশ কয়েকটা বড় ধরনের অপারেশন সাকসেসফুল করার পর চুরা সমাজের মইধ্যে অশেষ খ্যাতি লাভ করছি। মাঝখান দিয়া আব্বা আম্মা আমারে সকাল বিকাল দুইবেলা ছ্যাঁচা দিত আর দাবড়ানির উপ্রে রাখত। আর গিরামের বেবাক মাইনষে আমারে দেখলে কেমুন কইরা জানি চোখ কোনা কইরা চাইয়া থাকতো। তাতে মোর কিবা আসে যায়, আমি আছি নিজের ধারায়। আমি এতদিন ছোড-মোড স্বতন্ত্র গেরিলা অপারেশন করলেও এইবার ঠিক করলাম একডা বড় কামে হাত দিমু। মালেইক্যার দাপটে চুরা সমাজে আর সবার মত আমিও মান ইজ্জত নিয়া টানাটানিতে আছি। তাই অস্তিত্ব সংকট কাটিয়ে উঠার লাইগা, এইবার ঠিক করলাম একখান বড় কামে হাত দিমু যাতে চুরা সমাজে আমার প্রেস্টিজ ফাল দিয়া উপ্রে উঠে। কিন্তু প্রইব্রেলেম হইল গিয়া এইসব কামে একা বেশী দূর যাওন যাইনা। টাইট সিকিউরিটি আর একজন ওয়াচম্যানের দরকার আছে। তয় এইবার ঠিক করলাম, এতদিন একা একা গেরিলা অপারেশনের করলেও এইবার জয়েন্ট ভেঞ্চারে চুরি করমু।তাতে সফলতার ব্যাফুক সম্ভাবনা আছে। লাভ যা হয় তা আধাআধি ভাগ কইরা লমু। বুদ্ধিটা মাথাত আওনের লগে লগে এমুন জোরে চিক্কুর পারলাম, খোদ আর্কিমিডিসও প্লবতার সূত্র আবিস্কার কইরা এইরহম গলা ফাডাইন্যা চিক্কুর দিছে কিনা সন্দেহ আছে। যাওগ্যা,যেই বুদ্ধি হেই কাম। দোস্ত মালেইক্যারে জরুরি তলব করলাম।
একদিন পুকুরপাড়ের বড় আমগাছটার নিচে দুইজনে বোর্ড মিটিংয়ে বইলাম। যেই আমগাছের আম কয়েকদিন আগে মালেইক্যা ঝাঁড়ে বংশে নির্বংশ কইরা রাখছে। মালেইক্যারে আমার প্ল্যান অফ অ্যাকশন বুঝাইয়া কয়লাম, হালায় দেহি সব হুইনা বলদ গরুর লাহান ব্যাকা হইয়া গেল। চোরাই কয়, আমি আর চুরি করুম না, আমি চুরি করা ছাইড়া দিছি। হুইনা আমার মাথা মুতা গেল গরম হইয়া, হালার চোরায় কয় কি? চোরার মুহে দেহি রিলিজনের ইস্টরি। মালেইক্যারে বালা মত চাইপ্পা ধরলাম। কাহিনী কিডা, তুই এতবড় চেলিব্রেটি চোরা হইয়া চুরি করবিনা ক্যান? পরতমে মনে করছি হালায় একলগে কাম না করার জন্য ভং ধরছে, হাজার হোক চুরা সমাজের গর্ব, এত সহজে সিংহাসন হাতছাড়া করতে চায়না। কিন্তু মালকা আমারে যা হুনাইল, তাতে আমার ব্রেন সর্ট সার্কিট খাইয়া গেল। অতি সম্প্রতি মালেইক্যা চোরা জনৈক ইদ্রিস সওদাগরের মাইয়্যা পঞ্চম শ্রেণী পড়ুয়া কুলসুম বানুর প্রেমে পইচ্ছে। কুলসুম বানুর কাছে মালকা কিরা কসম কাইট্টা কয়ছে এই জনমে আর চুরি করবে না যদি করে কুলসুম বানু নাকি তারে আর বিয়া করবেনা। আরে আবাল চুরার লাভ ইস্টরি হুইনা ত মাথায় গ্যাস্টিক হইয়া গেল। তয় আশা ছাড়লাম না। আমি জানতাম মালকারে ঠিক মত বুঝাইতে পারলে হালায় রাজি হইয়া যাবে। পরতমে মালকারে জয়েন্ট ভেঞ্চারে চুরির গুরুত্ব আর উপকারিতা বুঝায়লাম, দেখ মালকা দুনিয়া কতডা আগাওইয়া গেছে, দুনিয়ার বড় বড় সব কোম্পানি এই যেমুন ধর, সনি-এরিকসন, বেনকিউ-সিমেন্স একলগে মিল্লা কি সুন্দর সুন্দর মোবাইল বানায়, এইচপি-কম্প্যাক একলগে কি সুন্দর ল্যাপটপ বানায়। আর আমরা দুই প্রফেশনাল চুরা মিল্লা জয়েন্ট ভেঞ্চারে একটা বড় চুরি করতে পারুম না এইডা কেমতে হয়?? হালাই তাও দেহি বিলাইর মত মিনমিন করতাছে। আর দেরি করলাম না, দিলাম হালারে খাড়ার উপ্রে একখান দুইমণি থাবড়া। থাবড়ার চোডে মালকা দেহি ঝিম ধইরা হাইবারনেশন মুডে হান্দায়া গেছে। ওহ!! চোরার ভং কত ?? হালায় দেহি কথাই কয়না। আমি আবারও মালকারে বুজাইলাম, দেখ মালেইক্যা!! তুই হয়তে পারস চুরা সমাজের চেলিব্রেটি চুর কিন্তু তোর মাথায় যে একটা মুরগীর লাদার সমানও মগজ নাই এইডা মাইন্না নিতে আমার বুকডা ফাইট্যা যাইতাছে। তুই চুরি করবি জয়েন্ট ভেঞ্চারে আমার লগে, এইডি কুলসুম বানু ক্যামতে জানবো, যদি তুই তারে না কস। এই কথা হুইনা দেহি হালায় অটো রির্স্টাট খাইল। একখান মিচকা হাসি দিয়া কইলো, দোস্ত আমি রাজি আছি, তয় প্রফিটের ভাগ কিন্তু কয়লাম আধাআধি অইব। মালকারে কইলাম, তুই ইরাম বড় একখান উসঠা দিলি মনডায়, তুই আমারে চিনুস না ?? মনে ব্যাফুক বেদনা পাইলাম। চোরাই চোরাই ভাই বেরাদার এইডি তুই জানুস না ??
টিম ঠিক হওনের পর আমগো পরতম মিশন ঠিক কইরা ফেলাইলাম, জব্বার ব্যাপারির মুরগার খোয়াড়। মালকা হালকার উপ্রে কয়দিন ধইরা কইতাছিল, হালায় নাকি মুরগার রান রোস্ট খাওনের খোয়াব দেখছে, খোয়াব যহন দেখছে এহন যদি না খাইতে পারে তালি ক্যামনে হয় ?? কি আর করন যায়, এক রাইতে মালকা আর আমি মিল্লা জব্বার ব্যাপারির মুরগাগুলারে কম্বাইন অপারেশনে সাফা কইরা দিলাম। চুরি করনের খালি দেরি, মুরগা লগে লগে বার-বি-কিউ বানাইয়া শ্যাষ কয়রা দিছি, ডাক ছাড়নের টাইমও পাই নাই। তয় মালকা দেহি মুরগার রক্ত আর পালকডি একখান ডিব্বার ভিত্রে জমা করতাছে। আমার মাথার এন্টেনাই দেহি কিছুই ধরেনা, মালেইক্যা এই গুলান কি করবে ?? মালকারে কয়লাম, এইগুলান ফেলায় দে, হালা খাচ্চর কোনানহার!! খাইবিনি এডি?? মালকা কয়, আরে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগু, এইগুলান জব্বার ব্যাপারির খোয়াড়ের আশেপাশে ছিটাইয়া দিমু, যাতে হগলডি মনে করে, মুরগা রাইতের বেলা শিয়ালে লয়া গেছে আর আমরাও সেফ জোনে থাকমু। কেউ বুজতেও পারবোনা কোন শিয়ালে এই কাম করছে ?? হালার চোরার মাথায় হিটলারি বুদ্ধি দেইখা তো আমি খাড়ার উপ্রে চিত হইয়া গেলাম। এডিরে গ্র্যামারের ভাষায় কয়, মারবা স্নেক কিন্তুক ব্যাম্বু যাতে না ভাঙ্গে। মালেইক্যা রক্স। সাধে কি তোরে চোরা অব আনট্রেসেবল কয় হগলডি।
পরদিন জব্বার ব্যাপারির মুরগার শোকে আসমান জমিন ফাডাইন্যা কান্দন দেইখ্যা আমার নিজেরই খারাফ লাগতাছিল। আহা বেচারা!! যাওগ্যা প্রফেশনাল মাইনষের এসব ইমোশনাল ড্রামা দেহনের টাইম নাই। পরতম মিশন ফুল প্রুফ সাকসেস হবার লগে লগে আমাগো মনের বলও বাইরা গেল। শীতকালের শুরু, এইবার আশেপাশের জমিনে দুই একখান ঝটিকা অভিযান না চালাইলে তো মনের বাইচালামি কমে না।
(চলবে)
২য় পর্বে হান্দায়া যাবার জন্য এইখানে একখান হালকা গুতা দেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৩ রাত ৩:৪৮