এটা আমার যেকোন ধরনের বাংলা ব্লগে দ্বিতীয় বারের মত লেখা। প্রথম লেখাটা ছিল আমার জীবনে ঘটে যাওয়া একটা হাস্য-রসের ঘটনা। শুরু করার জন্য এর চেয়ে ভাল কিছু মাথায় আসছিলনা। এইখানে বলে রাখা ভাল যে,এমনিতে আমি প্রচুর লেখালেখি করি,কিন্তু অন্য কাউকে আমার লেখা মেলে ধরতেই যত অনিহা। খালি মনে হয়,আমার এইসব ছাইপাশ পড়ে যদি পাঠক সমাজ পাগল ঠাওউরাই। সে যাই হোক,এবার থেকে লেখালেখি নিয়ে Seriously ভাবছি। লেখার শিরোনাম দেখে জানি অনেকের অবাক লাগছে। আসলে অবাক লাগাটাই স্বাভাবিক,এইবার একেবারেই অন্যরকম একটা প্রসঙ্গ নিয়ে লিখছি। আমার একটা অতি গোপন ডায়েরী আছে যেটা আমি কোনদিনও কাউকে দেখাইনি,পড়তে দেবার প্রশ্নই আসেনা। এতদিন পর্যন্ত এই ডায়েরীর লেখকও আমি,পাঠকও আমি ছিলাম। প্রথমবারের মত সেই ডায়েরী থেকেই কিছু লেখা একেবারেই কোন ধরনের সংযোজন-বিয়োজন ছাড়াই তুলে ধরছি। আগেই বলে রাখি,কাউকে আঘাত করার জন্য এই লেখাগুলি নয়।
“এটা ২০১২ সাল,প্রায় চারটি বছর গত হল,তোমাকে দেখিনা। কিন্তু তোমার বলা কথাগুলো,তোমার মানসিক কষ্ট দেবার ব্যাপারগুলো এখনও ভুলতে পারি নাই। তোমার বিয়ের পর একবারই তুমি আমার সাথে দেখা করতে এসেছিলে। বিয়ের পর তোমার হাসিমুখ দেখে,সুখী চেহারাটা দেখে আমারও ভাল লাগছিল। তখনই বুঝে গিয়েছিলাম,মেয়েরা আসলে এমনিই,ভালবাসার মানুষকে এরাই ছুড়ে ফেলে আবার পারে নতুন করে একজনকে ভালবাসতে। আমি দেশের বাইরেও ঘুরে এসেছি,Eastern Europe বেশ কিছুদিন থেকে এসেছি। সেখানে দেখেছি এই ব্যাপারটা একদমই নেই। Russian,Georgian,Armenian মেয়েগুলো দেখলে মনে হয়,আল্লাহ এদের এক একজনকে অনেক সময় নিয়ে বানিয়েছে আর পরোক্ষভাবে এদের অতুলনীয় রুপের পেছনে মাইনাস ডিগ্রী উইন্টার সিজনও অনেকাংশে প্রভাবক হিসাবে কাজ করে। বাইরে গিয়ে ভালবাসার ব্যাপারগুলো আরও ভালভাবে জেনেছি। মেয়েরা অতি অল্প বয়সে জীবনসঙ্গী বাছাই করে। বিশেষ করে,রাশিয়ান মেয়েরা জীবনসঙ্গী বাছাই করার ক্ষেত্রে কারও ধার ধারেনা। প্রেমের শুরুতে এরা যে কাণ্ডগুলো করে তা হা করে তাকিয়ে থাকতে হয়। রাস্তা-ঘাটে চলাফেরার সময় জুটিগুলোকে দেখলে মনে হয়,পুরা দুনিয়াতে তারা দুজন ছাড়া আর কেউ নেই। বনে বাদাড়ে,পার্কে,শপিংমলে এদের কাণ্ডকারখানা দেখলে হয় যে কারও মাথা খারাপ হয়ে যাবে কিংবা কেয়ামত অতি সন্নিকটে কিনা ভেবে সন্দিহান হয়ে যাবে। কিন্তু যে যাই বলুক এইসব দেশের প্রেক্ষাপটে এটাই স্বাভাবিক বলেই মনে করি,অন্তত সত্যিকারের প্রেমের ব্যাপারে এদের ভেতর কোন ধরণের ভণ্ডামি আর ভান-ভনিতার লেশমাত্র আমি দেখি নাই। জর্জিয়ার Capital City হচ্ছে Tbilisi। এই শহরের একটা চমৎকার স্লোগান আছে পর্যটক আর প্রেমিক-প্রেমিকাদের আকর্ষণ করার জন্য ”The city that love you”,এই দেশটা যখন সোভিয়েত ব্লক থেকে আলাদা হয়ে যায়,তখন থেকেই এই দেশের আলাদা কৃষ্টি-কালচার ও সংস্কৃতি গড়ে উঠে। তারপরও ভাষা,পোশাক ও লাইফ স্টাইলে এখনও রাশিয়া ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর উল্লেখযোগ্য প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এখানে একটা কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করার মত,জর্জিয়ার মেয়েদের মত সুন্দর মেয়ে আমি জীবনেও দেখিনাই,আর দেখব সে আশাও করিনা। এটা আমার একান্তই নিজস্ব অভিমত,মতবিরোধ থাকতেই পারে। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। অবশ্য রাশিয়ান মেয়েদের সৌন্দর্যের আলাদা সুখ্যাতি আছে পুরো দুনিয়া জুড়ে আর জর্জিয়াও এক সময় রাশিয়ান ব্লকের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাই ভৌগলিক ও জাতিগত একটা প্রভাব থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে একটা ব্যাপার দেখে সত্যিই মুগ্ধ হলাম,এই দেশের মেয়েরা একবার কাউকে যদি প্রকৃত অর্থে ভালবাসে তাকে কচ্ছপের কামড় দিয়ে ধরে রাখে।কচ্ছপের কামড় মানে হচ্ছে একবার কামড়ে ধরলে আর সহজে না ছাড়া। মূলত রাশিয়ান কালচারটা এমনভাবে গড়ে উঠেছে যেখানে আছে কিছুটা রক্ষনশীলতা,কিছুটা আধুনিকতা এবং কিছুটা খামখেয়ালিপনা। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে,গোটা Georgia আর Armenia ঘুরেও আমি অর্ধ-উলঙ্গ কোন মেয়ে দেখিনি। এরা প্রচণ্ড ফ্যাশন সচেতন ও শালীন একটা জাতি। যেটা আমরা Western Culture নামে প্রায়শঃই শুনে থাকি,মেয়েরা বেহায়া,লাজ-শরমের বালাই নেই,উগ্র পোশাক পড়ে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করে,এটা যে কত বড় একটা ডাহা মিথ্যা কথা ও Propaganda তা আমি এদেরকে গভীরভাবে না দেখলে কোনদিনও বুঝতাম না। এরা এত মার্জিত ও শালীন পোশাক-আশাক পড়ে যে,খোদ বাংলাদেশেও এতটা শালীনতা বজায় রেখে তরুণীরা চলাফেরা করে কিনা আমার সন্দেহ আছে। পৃথিবীর সব দেশেই Red Light Zone বা ব্রথেল আছে,সেখানে যদি ব্রা আর প্যান্টি পড়ে নিশিকন্যারা খদ্দেরের জন্য দাড়িয়ে থাকে,তাহলে পুরা দেশ বা পুরা জাতি খারাপ হয়ে যায়না। এমনটা হলে আমার দেশের আনাচে-কানাচে,রেলস্টেশনে,আবাসিক হোটেলে হেন কোন জায়গা নেই যেটাকে সন্ধ্যার পর মিনি পতিতালয় বলা চলেনা। ঢাকা যাবার পথে চিটাগাং রেলস্টেশনে এইরকম উগ্র সাজ-পোশাকের অনেক নিশিকন্যাকে আমি দাড়িয়ে থাকতে দেখেছি।তাই বলে পুরা বাঙালি জাতি খারাপ হয়ে যায়নি। যেটা আমরা সাধারনত বলে থাকি,পশ্চিমা জাতি খারাপ,নগ্নতা আর যৌনতাই ঢাকা এইসব জাতি। যেইসব মানুষ জানেনা তাদের নির্বুদ্ধিতা দেখে নিজেই হাসি। একটা জাতিকে সভ্যতার বিচারে মাপার মাপদন্ড হল, জ্ঞান-বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সে জাতি কতটা এগিয়ে। খোদ Toronto শহরে মিনিবার আর নাইট ক্লাব আছে বেশুমার অংকের। Edmonton, Quebec কিছু জায়গাই আছে যেখানে সন্ধ্যার পর Hookers দের জ্বালায় হাটা পর্যন্ত যায়না। তাই বলে পুরা Canadian জাতি রসাতলে যায়নি। যাই হোক,প্রসঙ্গ থেকে অনেক দূরে সরে এসেছি। যা বলছিলাম আমি, জর্জিয়ান মেয়েদের ভেতর কোন ধরনের ভান-ভনিতা দেখি নাই অন্তত প্রেমের ব্যাপারে। যাকে ভালবাসবে তার সাথে দরকার পড়লে দুর্গম গিরি,কান্তার মরুও পাড়ি দিবে আর যাকে ভালবাসবেনা সেই ছেলেকে বিন্দুমাত্র সুযোগও দিবেনা কিছু করার জন্য। প্রেমের মত সিরিয়াস ব্যাপারে এরা প্রচন্ড Passionate আর কাউকে কেয়ারও করেনা। টিনা নামে এক মেয়েকে চিনি,যে কিনা ভালবাসার মানুষকে বিয়ে করার জন্য এক বস্ত্রে বড়লোক বাপের ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে গেছে। টিনা যে ছেলেকে ভালবাসত সে ছিল মোটামোটি হত-দরিদ্র ঘরের ছেলে। এই ছেলের শুধুমাত্র ইউনিভার্সিটি ডিগ্রিটাই সম্বল ছিল। বিয়ের পর একটা চাকরীর জন্য এই ছেলের সংগ্রাম আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। যে মেয়েকে আমি চার হাজার সিসির আমেরিকান Wrangler Jeep গাড়িতে চড়তে দেখেছি,সেই একই মেয়েকে আমি Subway Metro Station দেখেছি নিজের প্রেমিকের হাত ধরে হাসিমুখে গাদাগাদি করে Metro ট্রেনে উঠে যেতে। এই ধরনের পরিবহনকে ইউরোপে গরিবের যানবাহন বলা হয়। এই রকম ভুরি ভুরি উদাহরন আছে,ভালবাসার মানুষকে পাবার জন্য সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে পথে বেরিয়ে যেতে, এই মেয়েরা অন্তত এইটুকু ভরসা রাখে আজ না হোক কাল কিছু একটা হবে। ইউরোপের মেয়েদের এই ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা অনেক বেশি সাহসিকতাপূর্ণ ও স্পষ্ট। টিনার চিন্তা-ভাবনা যে কতটা দূরদর্শী ছিল তার প্রমান পেয়েছি পরের বছরই,টিনা ও তার হাসব্যান্ড সিসাইডে বিশাল এক বাড়ি কিনে,হয়ত latest মডেলের গাড়ি তারা কিনতে পারে নাই,কিন্তু পুরানো মডেলের ভক্সওয়াগনে চড়ে তাদের মুখে যে ভালবাসার হাসি দেখেছি,যে পরিতৃপ্তি আর স্বর্গীয় সুখে ভেসে যেতে দেখেছি তা আমি কোনদিনও ভুলবনা। পরে আস্তে আস্তে বুঝতে পেরেছি,পুরো দুনিয়াতে জর্জিয়ান আর আর্মেনিয়ান মেয়েগুলো কেন এত সুখী,নিজের প্রেমকে জয় করার জন্য এরা যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত থাকে। এই কাজটাই বাংলাদেশের একটা মেয়ে সামাজিকতা,বাস্তবতার দোহাই দিয়ে কখনও কোনদিনও করবেনা প্রকৃতঅর্থে সাহসের অভাবে। নিজের ভালবাসার মানুষটাকে নিয়ে রিক্সাই চড়তে চড়তে,গাড়িতে চড়ার সুখের স্বপ্ন দেখবে আর স্বস্তা কোন হোটেলের কোনে ফুচকা বা চটপটি খেতে খেতে ভবিষ্যতে ফাইভ স্টার হোটেলে খাওয়ার স্বপ্নের জাল বুনবে,কিন্তু যখনই বিয়ে করার সময় আসবে তখন নিজের ভালবাসার মানুষকে অকপটে বলে ফেলে তুমি এখনও ঠিকমত নিজের পায়ে দাড়াতে পারনি তাই তোমাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না। হায়রে বঙ্গ ললনা স্বপ্ন দেখবে ঠিকই কিন্তু স্বপ্ন যাত্রায় সহযোগী হতেই যত ভয়। ভালবাসার নামে এতবড় ভণ্ডামি আর কোথাও আমি দেখিনি। অথচ একটু চেষ্টা করলেই হয়তো নিজের ভালবাসার মানুষটাকে নিয়ে সুখের গৃহকোণ সাজানো যেত,কিন্তু বঙ্গ ললনারা স্বপ্ন দেখেই শেষ,তারপর স্বপ্ন পূরণের সময় আসলেই পগার পার। তাই আজ ধিক্কার জানাই সেই সব বঙ্গ ললনাকে যারা সমাজ আর বাস্তবতার দোহাই দিয়ে নিজের ভালবাসার মানুষটাকে লাথি মেরে অন্য একজনকে মালা পরিয়ে দিয়ে ভালবাসার ভান করে জীবন পার করে দেয়। সুখের অভিনয় করতে করতে এরা একসময় টের পায়,আসলে পুরাটাই ফাঁকা জীবনে,কিছুই নেই অর্জনের খাতায়। সত্যিই আজ মন থেকে এসব মেয়েদের জন্য একরাশ ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই আমার অবশিষ্ট নেই। আমি নিজে এ অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে না গেলে কোনদিনও ব্যাপারগুলো গভীরভাবে বুঝতে পারতাম না। পুরো ব্যাপারটাই কতটা হৃদয়বিদারক আর চূড়ান্ত অপমানজনক তা কেউ কোনদিনও জানবেনা একমাত্র ভুক্তভোগি ছাড়া।”
পুনশ্চঃ টিনা কে একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম, After all this, are you happy? জবাবে সে আমাকে উত্তর দিয়েছিল, Life will be never be better and never be sweeter than this, I am so much happy never before.আরও বলেছিল, I love him so much because I want to be with him.ভালবাসা সম্বন্ধে এত সোজা-সাপ্টা জবাব আর Clear Concept আমি আজ পর্যন্ত কোথাও দেখিনি।
আজ এই পর্যন্তই, নিজের কিছু কথা বললাম,পরে কোন একসময় আরও বলব। সবাইকে নিরন্তন শুভেচ্ছা।
১. ০৮ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:১১ ০