somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুরুপের তাস কিংবা দ্যা ফাইনাল ডেসটিনেশন !!!

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ২৫ অক্টোবর ঘটে যাওয়া একটা অসুবিধার কথা দিয়ে শুরু করা যাক । আমার অগ্রজ মেরিন প্রকৌশলী । এবার দেশে আসার জন্য জাহাজ থেকে ভিয়েতনামে নামবে । সিঙ্গাপুর হয়ে দেশে ফিরবে ২৫তারিখ রাতে । অজ্ঞতা বের হতে হলো সন্ধ্যায় । মোহাম্মদপুর থেকে এয়ারপোর্ট যেতে যে কষ্ট ও দুর্ভোগ আমাকে পোহাতে হলো তাতে কাওকেই না দুষে নিজের ভাগ্যকেই দোষারোপ করা ছাড়া আমার উপায় ছিল না । আমাদের এই দেশের সব ভালো কিন্তু শাসক ও নীতিনির্ধারকদের ব্যর্থতা আমাদের পিছিয়ে দেয় । ইতিহাসে প্রত্যেক সফল শাসকের পৃথিবীতে রয়েছে কিছু ভুল আর কিছু দোষ । সেটা আমাদের দেশের রাজাদের মেনে নেওয়ার প্রবণতা এখনও তৈরী হচ্ছে না । এটা দুঃখজনক । ইতিহাস যে কোন কথা ভুলে যায় না । সচেতন প্রবীন নাগরিকদের অসম্মানিত হওয়ার ভয়ে নিশ্চুপ থাকাও এখন সাপেবর । বাইরের দেশের মানুষ(রাষ্ট্রদূত)কে দেদারছে বলতে দিচ্ছি অনেক কিছুই কিন্তু নিজেদের প্রবীণ যে কেও বললেই মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগের সাইট সহ সব খানে নোংরা আক্রমন খুবই বেদনাদায়ক । সবার সব কথা পছন্দ না হওয়াই স্বাভাবিক তাই বলে তাকে আক্রমনটাও হওয়া উচিত রুচিবোধ রেখে , উপযুক্ত সম্মান রেখে । যার মুরুব্বী নেই তার ধ্বংস অনিবার্য হয়ে দাড়ায় ।



মোঘলদের শাসন নিয়ে বলি । আমি লাহোর গিয়ে দেখেছি মোঘলদের সেই শাসনের রঙ্গমঞ্চ , দেখেছি শিশমহল , দেখেছি বিশাল রাজবাড়ির পাশেই উপমহাদেশের বৃহত পতিতালয় হীরামন্ডি । শাসকের সমস্যা থাকবেই তাই বলে গনতন্ত্রের এই সহবস্থানের দিনে নিজেকে বেশী চতুর ভাবাই যে কত বোকামী তা বুঝা যায় অনেক পরে ।


আমার এক বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের একটা লাইভটাইম উক্তি বলে রাখি । তিনি ১৯৯২ দিকে একবার , ২০০৪ এ একবার এবং ২০০৮ এ একবার এই দেশে এসেছিলেন । তিনি বলেছিলেন “তোমাদের দেশে একটা যাদু ঘটে গিয়েছে । তোমরা টের পাওনি হয়তো । সব দিক দিয়ে এতো ইতিবাচক অর্জন অনেকটা মিরাকলের মত” । আমি হেসে বলেছিলাম দেখেন এখন পাকিস্তানের কি অবস্থা ??? ১৯৭১ এর পর আমাদের অর্জন ও তাদের অর্জন দেখলে বুঝা যায় কি পেয়েছি আমরা । অর্জন অনেক । অর্জন এর মাঝে বিসর্জন হলো নৈতিক অবস্থার ।

দুইটি বৃহত শক্তির সাথে ছোট ছোট দল নিয়ে যে দুটো জোট তৈরী হয়েছে তাতে দুই পক্ষ ছাড়া আর কিছুই দৃশ্যমান হচ্ছে না । নীতির সাথে বার বার হেরে যাচ্ছে শাসনে যারা আসছে তাদের দুর্নীতির কাছে । তৃনমূল থেকে উপর পর্যন্ত শুধু অর্থবিত্তের প্রতি ছুটা । মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই ছিল সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যেটা থেকে আমরা দূরে সরে এসেছি । মুক্তিযোদ্ধাদের কি দিতে পারছি জানি না কিন্তু চাকরী ক্ষেত্রে নাতিপুতির কোটায় মেধাবীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কিনা ভাবার সময় হয়েছে । আমি নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমার পিতার এই অদদানের জন্য মন থেকে শ্রদ্ধা কিন্তু বাবার কর্মের জন্য আমাকে নয় আমার পিতাকে পুরস্কৃত করলেই বেশী খুশি হবো আমরা তরুন প্রজন্ম । আর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা করাটা খুব কষ্ট দেয় আমাকে ।

আমার অগ্রজ ঘুরে এলেন এবার রাশিয়া , চীন এবং ভিয়েতনাম । তিনটি দেশেই সোস্যালিজমে বিশাসী । তাদের রাষ্ট্রিয় অর্জনে বড়ভাই উচ্ছসিত । আমরা পুজিবাদীও হলাম না আবার সম অধিকার প্রতিষ্ঠা থেকে দূরে রইলাম । বিপ্লব যেন বেহাত হয়ে যাচ্ছে । আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর ইগো সমস্যার কারনে দেশ যে কি পরিমান ক্ষতিগ্রস্থ হয় প্রতিবার । কোথায় যেন বারবার ভুল হয় আমাদের । মার্কা দেখেই পাগল হয়ে যাওয়ার প্রবণতা ভাল মানুষগুলোকে দূরে ঠেলে দেওয়ার নামান্তর ।

আমাদের নেতা পছন্দ করা অযোগ্যতা আমাদের পিছিয়ে দেয় বারবার । কবে আমরা নিজেদের ভালটা বুঝতে শিখব কে জানে । অন্যের পেট ভরাতে নিজেরাই লড়ি, নিজেরাই মরি ।

সাধারন নাগরিক হিসেবে আমাদের চাহিদাটি আদায় করে নেওয়ার দায়িত্ব আমাদেরই । যে দেশের জনগন যেমন শাসক চায় তারা সেরকমই শাসক পায় । আমদের জনগনের চাওয়া পাওয়ার ফারাকটা তাই এতো বেশী মনে হয় ।

চায়ের দোকানে এক চাচা বলে ফেললেন
“পাটা পোতার ঘষাঘষি , মরিচের জান লইয়া টানাটানি”
(মরিচ যেই শীল ও পাটায় বাটা হয় তাতে মরিচের জান যায় , পাথরের কিছুই হয় না) ।
“ঐক্য, শ্রম ও ত্যাগ – এই তিনের সংযোগে গনতন্ত্র মানবজাতির ইতিহাসে এক প্রভাবশালী মতবাদ।” বলেছেন রিচার্ড ই বায়ার্ড । এই তিনটি গুনই আমাদের গনতন্ত্রে অনুপস্থিত । ঐক্য প্রায় অস্মভব , শ্রম শুধু এক পক্ষ দিবে মধু খাবে আরেক দল । আর ত্যাগ আমাদের ইগোর কাছে প্রতিবার হেরে যায় ।

আর কত এভাবে তাদের নাটক দেখবো ?? সমঝোতার জায়গা বা স্পেস রাখা হয় না । অঢেল সম্পত্তির মালিক বনে জান ৫ বছরে তারা । প্রতিবার একই ঘটনা ঘটে । ভারতে আমি সাতবার গিয়েছি । আমার উপলব্ধি হলো ভারত পাকিস্থান থেকে বাংলাদেশের অর্জন কোন অংশে কম নয় । আমার তরুন বয়সে প্রতিবছর আমার সামার ভেকেশনে ভারত পাকিস্থান ঘুরে মনে হয়েছে আমরা ভালই এগুচ্ছি তবে “কিন্তু” আছে একটা । বারবার একই “কিন্তু” এর উভ্যোদয় । সেই রাজনৈতিক অস্থিরতা । বাংলাদেশের কিছু শিল্প এতদূর এগিয়ে গেছে যে আমরা তা কল্পনা করতে পারব না । আমাদের বাংলাদেশের মাল্টি ন্যাশনাল ও সরকারি কোম্পানি তে কাজ করার সুযোগ হয়েছে আমার । আমাদের শিল্প এর গতিতে আগামির চেলেঞ্জ হলো জ্বালানী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা । সে ব্যাপারে রাজনীতিতে আলোচনা নেই , বিশ্বে কুটনৈতিক সম্পর্ক কিভাবে আরো জোরদার করা যাবে , অর্থনীতি কিংবা গবেষণানীতি কিছুই আলোচনা হয় না এই দেশে । ছায়া মন্ত্রনালয় কাজ করতে দেখি না কখনও । এটাই দেখছি । শুধু গদিই কি সব দু দলের কাছে । ভারতে কয়েকদিন আগে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে সংসদে বিল পাশ করার সময় দেখলাম গনতন্ত্র কাকে বলে । জনগনের বৃহত মঙ্গলের কথা ভেবে তারা এক হতে জানে । আমরা পারি না ।

পাল এস বাকের একটা কথা বলি । ভদ্রলোক বলেছেন
“ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় – মানুষের বিপদ ও দুঃখ দুর্দশা যেখানে কিছুমাত্র লাঘব করা হয় – কেবল সেখানেই গনতন্ত্র বিকাশ লাভের সুযোগ পায়।”

কিসের যে গনতন্ত্র আর কিসের যে রাজনৈতিক দর্শন তাই তো বুঝতে পারে নি এই নতুন প্রজন্ম । তাহলে কবে হবে নীতির খেলা । তুরুপের তাসের খেলাতে কবে “আমাদের জানমাল নিয়ে খেলা” বন্ধ হবে । তুরুপের তাস খুজতে খুজতে খেলার উদ্দেশ্যই কি ভুলে গেছি আমরা । জনগন বিচ্ছিন্ন কথা ভাল আর কতদিন লাগবে । পেয়াজ ১০০টাকা । প্রত্যেক সরকারের সময় আমরা মাসের বেতন তুলে অথৈ সাগরে ভাসি আর তারা ৫বছরে ভাসেন অগাধ সম্পদে । যেন এটাই হওয়ার ছিলো । ভাগ্য হিসেবে মেনে নিয়েছি ।

আমরা নশ্বর এই পৃথিবীতে ভুলে যাই এই আর্থিক আর বাহুবল চিরদিন থাকে না । অমর হয় গুটি কয়েক নেতা । বঙ্গবন্ধু , জিয়ার ক্ষমতা থেকেও অঢেল সম্পত্তি করেন নি কিন্তু তাদের অর্জন এখন তাদের পরিবার পাচ্ছে । এটাই নিয়ম । এদের উত্তরসূরি রা আবার ভাসানী, সোরহার্দী, শেরে বাংলা, তাজউদ্দীন সহ অনেক কেই মানেন না বা প্রকৃত সম্মান দেন না । ফাইনাল ডেসটিনেশন নিয়ে চিন্তা ভাবনাও নেই । একটুও ভাবেন না আপনি অন্য কে স্বরন না করলে আপনার অবর্তমানে আপনাকেও কেউ স্বরন করবে । ইতিহাস প্রতিশোধ নেবে ভবিষ্যতে । জেনে রাখুন ।

শুভবুদ্ধির উদয় আবশ্যম্ভাবী । নতুন সূর্য্যের নতুন কিরনের প্রতিক্ষা ফুরাবে হয়তো একদিন ।

৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার ভাঙ্গা ল্যাপটপ

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৫ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:০৬


শুক্রবার রাতে আমার মনে হলো, আমি আমার ল্যাপটপে লিনাক্স ওএস সেটআপ দেব। যদিও আমি সারা জীবন উইন্ডোজ ব্যবহার করে এসেছি এবং লিনাক্স সম্পর্কে তেমন কিছুই জানি না। রাতে শুয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'মামলেট’ ‘ওমলেট’ ডিম ভাজা, ডিম পোচ, এগ ফ্রাই, এগ রোল আরও কতো কী .....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:৩০

'মামলেট’ ‘ওমলেট’ ডিম ভাজা, ডিম পোচ, এগ ফ্রাই, এগ রোল আরও কতো কী .....

মাছে ভাতে বাঙালির আমিষ হেঁশেলে সেকেন্ড চয়েস গরুর গোসত আর মুরগি। কিন্তু ডিম? তাকে কি বাঙালি কখনও... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বৈপ্লবিক ছন্দ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৫ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১:১২




বছর তিনেক আগে রাজু ভাস্কর্যের সামনে উড়ন্ত ভঙ্গিতে ছবি তুলেছিলো একটা মেয়ে। তার নাম ইরা।

ইরার ওই ছবিটাই হওয়া উচিত বাংলাদেশের মেয়েদের প্রতীক। আমাদের মেয়েদের মেধা আছে, অদম্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের ইসলামিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম ও তার আসল বাস্তবতা

লিখেছেন নীল আকাশ, ০৫ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭







বাংলাদেশের ইসলামিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার নামে যে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো দেশের মানুষের সাথে ভন্ডামি করে বেড়াচ্ছে তাদের জন্য উপরের ছবিগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ‌এই সমস্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

কওমি সমস্যার সমাধান কি?

লিখেছেন প্রফেসর সাহেব, ০৫ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:২৪

দেশে বিশ হাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিপরীতে কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা কত জানেন? অসংখ্য। এর নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা কেউ দিতে পারেনাই, নামে বেনামে নিবন্ধিত অনিবন্ধিত মাদ্রাসার সংখ্যা ২০ হাজারেরও বেশি, মার্কিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×