খুনি প্রস্তুত।
এখন শুধুমাত্র শিকার মওকা মত পাওয়ার অপেক্ষা । পুরো অফিস ফাঁকা। ছুটির পরে কেউ নেই। কেবলমাত্র লোকটা তাঁর রুমে বসে টিভি দেখছে। আমি আমার রুমে আছি মোক্ষম সময়ের অপেক্ষায়। এখনি ঢুকে পড়বো শিকার বরাবর। আর দেরি করা যায় না। কোমরের ধারালো ছোরাটা জায়গামতই আছে। আরেকবার পরখ করলাম। আমি উঠে দাঁড়ালাম।
........................................................................................................................................................................................
আমি লোকটার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে। দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকবো। নির্জন রুমে 'স্যার' নামের দানবটার পেট ছিঁড়ে এফোড়-ওফোড় করে ফেলবো। দরজা হালকা নাড়িয়ে মাথা গলিয়ে প্রবেশের অনুমতি চাইলাম। লোকটা সহাস্য বদনে আমাকে অভিবাদন জানালো। তার বিস্তৃত দাঁতের পাটি প্রকাশিত হয়ে পড়েছে।
'আপনাকে অনেক কষ্ট দিচ্ছি মুশফিক সাহেব, তাই না?
'না না স্যার ইট’স ওকে, ইট’স ওকে' ! আমি যথাযথ বিনম্র হয়ে লোকটাকে আশ্বস্ত করলাম।
লোকটা খুশি হলো।
'বসেন বসেন। একটা আর্টিকেল লিখলাম দারিদ্র বিমোচনের উপর। আপনারতো ভাষা জ্ঞান টনটনে। একবার পরখ করে দেখুন তো'।
'নিশ্চই, নিশ্চই স্যার। আমি দেখছি'।
আমি নীচের দিকে হাত বাড়ালাম। ধারালো ছোরাটা বাঁটে ধরে বাম হাতে সেটা কোমর থেকে বের করে ডান হাতে হারামির অখাদ্য আর্টিকেলের পাতা উল্টাতে লাগলাম। আসল কাজটা এখনই করতে হবে। আর দেরি করা উচিত নয়। ছোরাটা কী তলপেটে মারবো নাকি ঘাড়ের দিকে, ভাবতে হচ্ছে। তলপেট খুঁজে পেতে দেরি হবে। এত দেরি করা যাবে না। বরং ঘাড়েই মারবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম।
'আর্টিকেলটাতো স্যার অসাধারণ হয়েছে। এত তথ্য উপাত্ত আপনার মত করে আর কে সংযোজন করতে পারবে। আপনিতো স্যার চমৎকার একটা......
বাম হাতের কবজি ঘুরিয়ে ছোরাটা উঠালাম।
এ্যাকশন।
এমন সময় দরজায় টোকা বাজলো।
'বুল শিট ! ইউ ব্লাডি হেল' !
'আসতে পারি'?
আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। মিস ইলোরা এসে পড়েছেন। এখন আর আমাকে লোকটার সঙ্গ দেবার দরকার নেই। তিনিই অন্তরঙ্গ সময় দিবেন। লোকটা অভ্যর্থনা জানালো, 'আসেন আসেন। পথে কোন অসুবিধা হয়নিতো !’
মিস ইলোরা ততটুকু মিষ্টি হেসে জবাব দিলেন।
এইম নষ্ট হয়ে গেল। শালার কাবাব মে হাড্ডি ! এত বড় সুযোগ মিস করলাম। উফ ! কুত্তাটার বয়স বেড়ে গেল।
লোকটা কুৎসিত লুইচ্চা টাইপ হেসে আমার দিকে তাকালো।
'মুশফিক সাহেব, কোন ভিজিটর আসতে দিবেন না। আমরা একটু নীরবে কথা বলবো। আপনি রুমে আপনার ডেস্কে গিয়ে বসুন'।
-'ইয়েস স্যার'।
............................................
ধুশ শালা!
শরীরটা অবসাদে ধরে আসছে। সারাদিন অনেক ধকল গেছে শরীরের উপর দিয়ে। অফিসে কাজের ভীষন চাপ। সন্ধ্যা হয়ে গেছে অনেক আগেই। সারাদিনের ক্লান্তিতে আমি টেবিলে মাথা ঢেলে ঝিমুতে লাগলাম। পাপের প্রতীক্ষা। মেজাজটা তিরিক্ষে হয়ে গেল। আচ্ছন্ন। আমার চোখ ঝিমঝিম করতে লাগলো। আর টিকতে পারছিনা। কিন্তু মিশনটাও ইনকমপ্লিট! ঘুম ঘুম ঘুম।
... ঘুম অনেক গভীর হতে লাগলো। নানান রঙ আমার চোখে খেলা করতে লাগলো। লাল,নীল শাদা,কালো, হলুদ। আমি শাদা আর কালো বাচাই করলাম। রঙের আবরণ সরাতে সরাতে আমি রঙের অতলে হারিয়ে গেলাম।
...... এবার নতুন খুনিসহ দু’জন জেগে উঠলো। শাদা বিবেক ও কালো বিবেক। দু’জনই রুম থেকে দ্রুত বের হয়ে গেল। বিলম্ব করার এতটুকু সময় অবশিষ্ট নেই।
*********************************************************************
কালো বিবেক ভয়ানক গোঙাতে লাগলো। ক্রুদ্ধ বিক্ষুব্ধ!
'শালা পুরা প্ল্যানটাই মাটি করে দিল। মাগী আসার আর সময় পাইলোনা’।
শাদা বিবেক বললো, 'এত গালাগালির কোন মানে হয় না। তুমি যে কাজটা করতে যাচ্ছো সেটা অবশ্যই একটা মোটা দাগের পরিকল্পনা। তোমার মত মাথা মোটা লোক কীভাবে এমন ভয়ানক একটা প্ল্যান নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আমার মাথায় ধরছেনা'।
কালো বিবেক জ্বলজ্বলে লালচোখে তাকালো শাদা বিবেকের দিকে । তার মুখ দিয়ে লালা ঝরছে। চোখগুলো দপদপ করে জ্বলছে।
'তুমি ত হলা পুণ্যের সারথি। পুণ্য লইয়া থাকো। নাক গলাইবা না। এইসব কান্ডারিগিরি আমার ভাল লাগেনা বলে রাখছি'।
'আচ্ছা, তুমি তোমার প্ল্যানটা সাজানোর পর কি একবারও ভেবে দেখেছো এর পরিণতি' ?
' পরিণতি ভেবে আমি কাজ করিনা, সেটা তুমি ভাল করে জান শাদা বিবেক। তারপরও যদি হস্তক্ষেপ কর, আমি সহ্য করবোনা।
'ধর তুমি খুনটা করলে। এরপর কীভাবে তুমি বাঁচবে ? সবাইতো জানে ছুটির পর অফিসে শুধু বস আর তুমি ছিলে'।
'হাঁদারামের বাচ্চা ! চুপ থাক। আমাকে আমার কাজ করতে দে। বেশি ভ্যাজর ভ্যাজর করবি না'।
........................................................................................................................................................................................
কালো বিবেক আবার লোকটার দরজায় টোকা দিল।
'আসেন’
মিস ইলোরা আঁচল গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
'সরি স্যার ডিস্টার্ব করার জন্য। বাসা থেকে ম্যাডাম ফোন দিয়েছেন। আপনার সেল ফোন মনে হয় বন্ধ। খুব জরুরী সম্ভবতঃ’।
'বলে দিন মিটিং এ। ব্যস্ত আছি।
.... আপনি শেভ করছেন না কেন? ক্ষ্যাত দেখাচ্ছে। আর হ্যাঁ, আমি ডাকার আগে রুমে ঢুকবেন না। যা বলার ইন্টারকমে বলবেন । ওকে......?’
'মাদারচোৎ! মুহুর্তে তোর লেঙ্গুয়েজ চ্যাঞ্জ? তোর রক্ত খলবল করতেছে। আইজ আমি তোর রক্ত ছুটামু’!
'এটা করতে যেওনা । তুমি ফেঁসে যাবে। ভেবে দেখ'।
'জ্ঞান দিবি না মাদারচোৎ। তোর জ্ঞান তোর ফুটকি দিয়া মারা। আমার কাজে বাধা দিবি না। আই'য়্যাম ডিটারমাইন্ড'।
'এক রক্তপাত কতটুকু সমাধান দিবে বল ! রক্তপাত নয়; বরং অন্যভাবে অগ্রসর হও। পরিবর্তন আনো'।
'আই এম ব্লাড থার্ষ্টি নাও। তোর বিবেক তুই পকেটে পুরে রাখ। কোথায় থাকে তোর বিবেক যখন ঐ কুত্তাটা দরিদ্রে মানুষের রক্তভেজা ঘামগুলো চুষে চুষে খায়। দারিদ্র বিমোচন আর্টিকেল ! আন্ডা !
'আমি সে জানি কালো বিবেক। তাই বলে খুন কোন সমাধান নয়'।
'মাদারচোৎ! তোর বসের মাইয়ার নাম নীতি, পোলার নাম বিবেক। নিজের নীতি-বিবেক নাই, নামে বিবেক ফলাস!
শাদা বিবেক মাথা নীচু করে নিল।
হায় বাস্তবতা।
........................................................................................................................................................................................
শাদা বিবেক চুপ করে থাকে।
কালো বিবেক ছোরার ধার পরীক্ষা করে নেয়।
তারপর সে আবার উদ্যত হয়।
খুনের নেশা তাকে পেয়ে বসেছে। খুন ছাড়া সমাধান নেই। একটা কুত্তার রক্ত অন্ততঃ ঝরবে, এই তার চিন্তা। কালো বিবেক নিজেকে সর্ম্পূণ প্রস্তুত করে সামনে এগোয়। ফাইলটাতে কোনমতেই সই করতে দেয়া যাবে না। দরিদ্রের প্রকল্প। যা করার এখনি করতে হবে।
কালো বিবেক কোন শব্দ না করে কক্ষে প্রবেশ করলো। দু’টি আনন্দভারে ক্লান্ত দেহ সোফায় আরাম নিদ্রায় আচ্ছন্ন। কালো বিবেক সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল দু’জনকেই শেষ করে দিবে। দু’জনই পৃথিবীতে বাসের অযোগ্য।
খুনি প্রস্তুত।
কোমরে অনেক্ষণ ধরে বয়ে চলা চকচকে ধারালো ছোরা। ডান হাত ঘুরিয়ে বের করে আনলো ছোরাটা। লোকটার নাক ডাকা শুরু হয়েছে। মুখটা হা হয়ে আছে। আর দেরি নয়। কালো বিবেক তার ছুরি উদ্যত করলো।
এমন সময় শাদা বিবেক প্রবেশ করলো।
'এটা করো না কালো বিবেক। ঘুমন্ত মানুষ নিষ্পাপ । কেন তুমি এমন বিবেকহীন কাজটা করছো' ?
'ইউ ব্লাডি হেল ! অনেক সহ্য করেছি তোর প্যাঁনপ্যাঁনানি। আগে তোকে শেষ করবো'।
আর কোন কথা বলার সুযোগ ছিল না। তিনবার নির্মম আর্তনাদ তুলে ছুরিকাঘাতে শাদা বিবেকের রক্তাক্ত দেহটা ঢলে পড়লো ফর্সা মেঝেতে। ঘুমন্ত দু’জন লাফিয়ে উঠলো। তারা চিৎকার করতে লাগলো। একে অপরকে ভয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁপতে শুরু করলো। কালো বিবেক হিংস্র দৃষ্টিতে দু'জনের দিকে তাকিয়ে শাদা বিবেকের অসাড় দেহে আরো দু’বার ছুরি চালালো।
রক্তে সমস্ত কক্ষ ভেসে যাচ্ছে। বাকি দু’জন বাকরুদ্ধ হয়ে আছে। কোন কথা ফুটছে না মুখে। রক্ত গড়িয়ে যেতে লাগলো সারা মেঝেতে। কালো বিবেক গোঙাতে লাগলো। সে ঘর্মাক্ত। তার মুখ দিয়ে অমানসিক চিঁ চিঁ শব্দ বের হতে লাগলো। ছোরা উদ্যত করে এগিয়ে যাচ্ছে ভীত অপর দুই শিকারের দিকে ।
........................................................................................................................................................................................
আমি চমকে জেগে উঠলাম। আমার ডেস্ক ইন্টারকম অনবরত বেজেই চলেছে। কখন থেকে কে জানে! টেবিলের উপরে রাখা মিনারেল ওয়াটারের ছিপি খুলে পানি ছড়িয়ে পড়েছে সমস্ত টেবিলে। আমার কান,মাথা ভিজে গেছে। রিসিভার কানে তুলতে তুলতে আমি টেবিলের পানি মুছতে লাগলাম।
'ইয়েস স্যার' !
'আপনার কাছে কি আগুন আছে ? এখানে ম্যাচবক্স খুঁজে পাচ্ছি না'।
'আমার কাছে আছে স্যার'।
........................................................................................................................................................................................
আমি কক্ষে প্রবেশ করলাম। মিস ইলোরা তার চুল বাঁধছেন। শাড়ী পরিপাটি করছেন। ক্লান্ত চোখ-মুখ।
লোকটা পাপ হাতে ফাইলটা সই দিয়ে আমার দিকে ঠেলে দিলো। তার মুখ থেকে উচ্চারিত হলো 'ক্লোজড'। আমি দপ করে জ্বলে উঠলাম। আমার রক্ত কেঁপে উঠলো। চোখ দিয়ে আগুনের হলকা বের হতে লাগলো। মাথা ঘুরতে শুরু করলো। আমি কোমরের দিকে হাত বাড়ালাম। আমার কোমরে গোপনে রাখা ছুরিটার উপর। দু'টোকেই ফেলে দেবো। কিন্তু কোমরে হাত দিয়ে আমি কোন ধারালো ছুরি পেলাম না।
'ইউ শি...ট'!