somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সালতামামি ২০১১ : বছর জুড়ে গল্প, কবিতা ও উপন্যাস লেখা পাঠকপ্রিয় সৃজনশীল ব্লগারেরা

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বছর শেষ। এসেছে ২০১২। সবাইকে শুভ নববর্ষ। ২০১১ এর ঘটনাবহুল দিন গুলো চোখে ভাসে। এ সময়টাতে ব্লগে ধুম লেগেছে সংকলন পোস্টের। বহুমাত্রিক পোস্টের ভিড়ে এই সংকলনটি আরেকটি পাতা মাত্র। ২০১১ বিদায় নিয়েছে, ব্লগে নানা ঘটনা রটনা গুজব, রহস্য উন্মোচনের জন্ম দিয়ে। কেউ বা স্বেচ্ছায়, কেউবা বাধ্য হয়ে ব্লগ ছেড়েছেন। সে সব বাদ থাক। আসুন আমরা ডুবে থাকি আমাদের স্বপ্নরাজ্যে।

ব্লগ সাহিত্য ধারা এবং সৃজনশীলতা

আজকের পোস্টটা বছরজুড়ে ব্লগে আলোড়ন তোলা সৃজনশীল সাহিত্য ধারার আলোচিত ব্লগারদের নিয়ে। সৃজনশীল ব্যাপারটা ব্যাখা করতে চাই। সাহিত্য ধারার লেখা প্রধানত দুই প্রকার - সৃজনশীল এবং মননশীল। সৃজনশীল বলতে আমরা গল্প, কবিতা, উপন্যাস, রম্য ধারা - এগুলোকে বুঝি যা লেখক নিজের ঘটমান জীবন কাহিনী অথবা কল্পনাকে প্রাধান্য দিয়ে তার প্লটের উপরে ভিত্তি করে লিখেন। আর মননশীল বলতে বুঝি যে কোন বিষয়ের উপর রচিত প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা, ভ্রমণ কাহিনী, এ ধরণের লেখা।

যিনি সৃজনশীল লেখা লেখেন তিনি যেমন সৃজনশীল তেমনি যিনি মননশীল লেখা লেখেন তিনি আরো বেশি সৃজনশীল। সৃজনশীল ধারার সাহিত্য আমাদের আনন্দ, বিরহ, কল্পনা এবং ভাবনার খোরাক আবার মননশীল ধারার সাহিত্য আমাদের ভাবনার জগতে অনুরণন তোলে এবং আমাদের ভাবনাকে পরিশুদ্ধ করে থাকে।

এ পোস্টটি তৈরিতে সৃজনশীল সাহিত্য বিবেচনা করা হয়েছে। সৃজনশীল সাহিত্য এর সঙ্গায় রম্য ধারা একটি শক্তিশালী ধারা। সামাজিক অসঙ্গতি তুলে ধরতে এর জুড়ি নেই। সমকালীনতার বিচারে এর গ্রহনযোগ্যতা পাঠক সমাজে অনেক বেশি। ব্লগে যারা রম্য চর্চা করে ব্লগরম্য ধারাকে অন্য স্তরে নিয়ে গেছেন তাদের অভিনন্দন । সৃজনশীল ধারার অন্য ব্লগ লেখাগুলো যেমন গল্প, কবিতা, ছড়া, মুক্ত গদ্য এবং উপন্যাস- ব্লগে পাঠকদের অনেক বেশি মনোযোগী পাঠ দাবি করে। তাই এই ধারার লেখার পাঠক ব্লগে বরাবরই কম। রম্য ধারার লেখার পাঠক ব্লগ জুড়ে বরাবরই বেশী ছিল এবং থাকবে। এই পোস্টে ব্লগ সাহিত্যের অপরাপর মাধ্যম গুলোর উপরে আলোকপাত করা হচ্ছে, তাই রম্য ধারাকে বিবেচনা করা হয় নি।

কিছু কথা

ব্লগিং আসলে কি, তা সত্যিকার অর্থে কারো পক্ষেই নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। বহুমাত্রিক দিক নিয়ত সামু নিয়ে আসতে সক্ষম হচ্ছে, যা সত্যিই নবীন বাংলা ব্লগ সাইটের জন্য ঈর্ষণীয়। এই বছরে ব্লগ কন্টেন্ট পর্যালোচনা করলে মোটা দাগে বলা যায়, বিশেষ বিশেষ দিবস ছাড়া সামুতে প্র্রতিদিন প্রায় ৩০-৩৫ % পোস্ট ছিল সৃজনশীল সাহিত্য তথা- গল্প, কবিতা, ছড়া, মুক্তগদ্য ইত্যাদি। বিশাল সংখ্যক মননশীল পাঠক তৈরি এবং লালনে সামুর গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

সৃজনশীল এ লেখার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অনেক সময়েই। অনেক নব্য লেখক কবিকে দেখা গেছে ব্লগের পাতাকে রাফ খাতার মত ব্যবহার করতে, যা একই সাথে ব্লগ পাঠকদের বিরক্তির উদ্র্রেক করেছে, তেমনি প্রশ্ন সাপেক্ষ করেছে ব্লগ সাহিত্যের মানকে। তবে ব্লগ যেহেতু খুব ভাল ভাবেই নবীন লেখকের জন্য স্কুলিং এর কাজটা করে আসছে, তাই আমরা এই বিষয়টাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখবো।

এ বছর ব্লগার সংখ্যা ধাই ধাই করে বাড়া এবং অতিরিক্ত রিপোস্ট এবং আয় করুন জাতীয় বেহুদা পোস্টের ভিড়, যে কোন ধরণের পোস্টের জন্য ক্ষতিকর হলেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর ছিল সাহিত্য ধারার পোস্টের জন্য। অনেক ভাল ভাল লেখা এবং লেখনী আমাদের চোখ থেকে নিমেষে হারিয়ে গেছে। এর সঠিক মূল্যায়ন না হবার দায় সামুর কাধেই বর্তায়। সাধারণ ব্লগারদের দীর্ঘদিনের দাবি, আলাদা বিভাগ ওয়ারী ট্যাব এ বছরেও হয়নি যা এই সমস্যার মূলে আরো জল ঢেলেছে। যাদের আলাদা করে সাহিত্য পড়বার জন্য ব্লগে ঢোকা তাদের খুজে বের করার উপায় রাখা হয়নি, যা দু:খজনক।

এত সকল প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়েও অসংখ্য লেখক কবি আলাদা করে দৃষ্টি কেড়েছেন পাঠকের। অনেকেই আছেন আগের বছর গুলোর মত বছরাব্ধি ধারাবাহিক ছিলেন। আবার অনেকে নতুন লেখনী নিয়ে এগিয়ে এসেই পাঠক চিত্তে দোলা দিয়েছেন। বর্ষ জোড়া সৃজনশীলতার উদাহরণ রাখা এ সব ব্লগারদের তালিকাটি দেয়া হল। বলা বাহুল্য এই তালিকাটি কোন রেসের প্রতিযোগিতার বিজয়ীর লিস্ট নয় যে তালিকায় পজিশনটা গুরুত্বপূর্ণ। না থাকাও তেমন কোন সমস্যা না, যে নেই বলে তাদের লেখার মান নেমে গেছে।

হাসান মাহবুব : বাংলা ব্লগ জগতে ছোট গল্পে পরাবাস্তবতার একটা ভিন্ন জগত তৈরিতে এই লেখকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তার ছোট গল্প সমূহ একেবারেই ব্যক্তিক্রমধর্মী বলে প্রতীয়মান হয়েছে বছর জুড়ে আমজনতা থেকে শুরু করে বোদ্ধা পাঠকদের কাছে। মোটামুটি একটি জেনারের মধ্যে থেকেই কত প্রকারের বৈচিত্র্য আনা যায় গল্প রচনায়, পাঠককে কি করে কল্পনার জিয়ন কাঠি দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে গল্পের শেষে আনা যায় তা উনি দেখিয়ে যাচ্ছেন উনার ব্লগ পাতায়।

এ বছরে উনার উল্লেখযোগ্য গল্প - ডিসটোপিয়া , স্নাফ , ক্রীড়া, ক্রীড়াবিদ অথবা ক্রীড়নকেরা , ঝড়বাস্তব এবং ফ্যাকাশে ভোরের গল্প , অসংবৃত অবমোচন , ক্রীড়া, ক্রীড়াবিদ অথবা ক্রীড়নকেরা , নরকের রাজপুত্র ,দুই বনাম দুই প্রভৃতি।

স্বদেশ হাসনাইন: সব্যসাচী এই ব্লগারের কবিতা, গল্প এবং মুক্তগদ্য সর্বধারার লেখা বছর জুড়ে পাঠকদের মুগ্ধ করে এসেছে। উনার কবিতা গুলো যেমন উপমায় ভরপুর, তেমনি উনার গল্প গুলো একেবারেই আলাদা ধাচের। এত সহজে আমাদেরকে ভিতরে টেনে নিয়ে যায়, যে কখন পাঠ শেষ বুঝে ওঠা দুষ্কর। কবি ইদানিং তার আরেকটি গুনের কথা আমাদের জানিয়েছেন। উনার জলদ গম্ভীর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনে আমার ভীষণ হিংসে হয়।

উল্লেখযোগ্য গল্প - যমুনা এক্সপ্রেস ও একজন করিমন , বোকা , কানাই , সে বঞ্চিত হতে শুরু করেছে , নীল নখ , আইসক্রিম প্রভৃতি
উল্লেখযোগ্য কবিতা - স্বদেশ চলে গেলে কার কি আসে যায়, রূপকথা বলি , প্রকাশিত কবিতাসমূহ, প্রতি: আদি পিতা , কয়েদির ধাঁধাঁ ,502 Bad Gateway , হোম সুইট হোম ,মৌনতা এবং আহত টেবিল-মাছি

ইমন জুবায়ের: ব্লগার ইমন জুবায়েরকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার কিছু নেই। ব্লগ দিবস পুরস্কারে ভূষিত শ্রদ্ধেয় ইমন জুবায়ের একমাত্র ব্যাক্তি, যার পুরষ্কার প্রাপ্তি নিয়ে কোন রকম বিতর্ক তৈরি হয় নি। ইতোমধ্যে ইমন জুবায়ের ইমনোপিডিয়া নামে অনেকের কাছেই অভিহিত। উনার মূল পরিচিতি উনার মননশীল পোস্ট গুলোর জন্য হলেও উনি গল্প লেখায় বেশ দক্ষতার ছাপ রেখেছেন।
উল্লেখযোগ্য গল্প - খোঁজ , একদিন, গৌতম বুদ্ধ , রক্ত ও নীলপদ্ম , শীতে মৃত্যু , পতন, নাট্যকার প্রভৃতি

মাহি ফ্লোরা: বর্তমান ব্লগে সক্রিয় নারী সাহিত্যধর্মী ব্লগারদের মধ্যে মাহির নাম আসবে সবার আগে। বৈচিত্র্য পূর্ণ কবিতা লিখে অনেক আগেই সে পাঠকের চোখ কেড়েছে। ইদানিং সে গল্প লেখায় যে পারদর্শিতা দেখিয়েছে তা সত্যিই চমৎকার। সত্যিকার অর্থে আমি তার কবিতার থেকে গল্পের ভক্ত অনেক বেশি। মাহির প্রতি আমার একটা অভিযোগ হল, সে তার ষাটটির মত পোস্ট গর্তে লুকিয়ে রেখেছে। বিষয়টা বিরক্তিকর। ফিরিয়ে আনবে সে আশা রাখি।

উল্লেখযোগ্য গল্প - এ জীবন ফড়িঙের , শরতের একদিন অথবা শেষ দিনটাতে , হারানো সেই দিনের কথা , এক ঝলক আলো প্রভৃতি
উল্লেখযোগ্য কবিতা এবং মুক্তগদ্য - বিছিয়ে দিলাম সূর্যসঙ্গ

রিয়েল ডেমন: অসম্ভব প্রাণোচ্ছল এই ছেলেটি এই বছরের ব্লগের বিস্ময় বালক। আগে যাদের নাম উল্লেখ করেছি তারা সকলেই দীর্ঘদিনের ব্লগার। এই ছেলেটি এই বছরে এসেই নিজেকে প্রতিষ্ঠত করেছে ব্লগে। ব্লগ রচনার শুরুতে সে শুধু গল্প লিখত, ইদানিং সে কবিতাও লিখতে শুরু করেছে। বাঘা বাঘা ব্লগারদের সাথে পা্ল্লা দিয়ে সে লিখে যাচ্ছে সমান তালে। কফিশপ বিষয়ক কিছু ইউনিক আইডিয়া দিয়ে ব্লগ সাহিত্য ধারাকে আরেক মাত্রা দিয়েছে ।

উল্লেখযোগ্য গল্প : মদ্যপ এক রাতের শেষে তীর্যক দ্যুতি , কফিশপ , বীরঙ্গনা, শুধু কি গল্পের প্রয়োজনে একটি গল্প , গ্রোভ এন্ড দ্যা ক্রিমিন্যাল প্রভৃতি

ত্রাতুল: ত্রাতুল আমার সমসাময়িক ব্লগার এ ব্যাপারটা আমাকে ভীষণ আনন্দ দেয়। প্রথমদিকে ছাড়া ছাড়া দু চারটি কবিতা লিখলেও এ বছরে এসে উনি নিয়মিত কবিতা লিখে নিজেকে কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। শব্দ নিয়ে নিরন্তর খেলা উনার কবিতাকে দিয়েছে আলাদা মাত্রা

উল্লেখযোগ্য কবিতা - নিঃসীম বিরল , শ্লেটের শৈশব , চারুলতা'র অষ্টপ্রহর , সুসময় চলে গেছে কবে প্রভৃতি

সমুদ্র কন্যা: একজন ভিন্ন ধারার লেখিকা। প্রধানত গল্প লেখেন এবং সাথে সাথে কবিতাও। ভিন্ন ধারার ভাবনার একটা জগৎ তৈরিতে তার প্রচেষ্টা অনেকাংশেই সফল। তার লেখায় সমাজ সচেতনতা আর পরাবাস্তবতা উঠে আসে সমান তালে।

উল্লেখ যোগ্য গল্প - স্বপ্নে দেখা পিস্তল এবং একটি বনরুই , একটি ইনসমনিয়াক্রান্ত ব্যর্থ চুরি চোখের ভেতর তেপান্তরের চোখ রোজ রাতে শয়তান আসে আমার কাছে , কবিতার দাহে ওড়ে ভালবাসার ভস্ম ,
মরন্তের বিপন্নতা প্রভৃতি
উল্লেখযোগ্য কবিতা সমূহ- তোমার জন্য অপেক্ষা , নীল জল বালিকা প্রভৃতি

শামীম শরীফ সুষম: বছর জুড়ে চমৎকার সব কবিতা উপহার দিয়েছেন আমাদের। কবিতার পাশাপাশি উনি গল্পও লিখেন। এই বছরে উনার একটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক গল্প স্টিকি হয়েছিল যা ব্লগের ইতিহাসে সম্ভবত প্রথম। সাধারণত সৃজনশীল লেখা বিশেষ কোন কারণ ছাড়া স্টিকি হয় না। সেই দিক থেকে বিচার করলে এটা বিশাল ব্যাপার।

উল্লেখযোগ্য কবিতা - পালতোলা রাইফেল , মেটামরফিস অথবা মথজীবন , সময় অথবা সকালের গল্প , নর্তকী প্রভৃতি
গল্প- শিরোনামহীন এক মানুষের শিরোনামহীন কোন গল্প


সজল শর্মা : দীর্ঘ দিন ধরে ব্লগিং করে যাওয়া আরেকজন সব্যসাচী লেখক হলেন সজল শর্মা । কবিতা এবং গল্প রচনা উভয় ধারাতেই তিনি লিখছেন স্বচ্ছন্দে। তিনি পারস্য সাহিত্যকলা এবং গজল বিষয়ে বেশ গবেষণা করেছেন, যা তার ব্লগিংকে করেছে সমৃদ্ধ।

উল্লেখযোগ্য পোস্ট : গতকাল , স্মৃতি ও বর্তমান , একদা নদী এক ভালবেসেছিল দিল-ই-নাদানের শের , হে জলস্থ মহাগরু প্রভৃতি

নষ্ট কবি: নষ্ট কবি নামে কবি হলেও তিনি যে শুধু মাত্র কবিতাই লেখেন এমন নয় । তার হাংরিয়ালিস্টিক কাব্য ধারার পাশাপাশি লিখিত ভৌতিক গল্প গুলো অগনিত ব্লগারের দৃষ্ট কেড়েছে। বলা চলে এই ভূতের গল্প গুলোই তাকে আলোচনায় এনেছে। উনার কাব্য ধারা আর গদ্যধারা সম্পূর্ণ ভিন্ন। মাঝে মাঝে ভীষণ অবাক লাগে আমার কাছে।

উল্লেখযোগ্য গল্প- পরিবার , চরিত্র , লাশের অভিনেতা , প্রতিশোধ প্রভৃতি
উল্লেখযোগ্য কবিতা- আদ্রক্ষ নিনাদ ,কান্না , ঈশ্বরের বিনাশ ,হে মৃত্যু আমাকে গ্রহণ করো , নিঃসঙ্গ ড্রাফট কিনবা নিখিল ড্রাফট প্রভৃতি

পাপতাড়ুয়া: বছর জুড়ে নিরলস ভাবে মুক্ত গদ্য আর কবিতার চর্চা করে যাওয়া আরেকজন ব্লগার হলেন পাপতাড়ুয়া। উনি বেশ কিছু গল্পও লিখেছেন । উনার লেখায় উপমার বলিষ্ট ব্যবহার এবং বক্তব্যের অদ্ভুত প্রকাশভঙ্গী প্রকৃত কাব্যপ্রেমীর জন্য ভীষণ চিত্তাকর্ষক।
উল্লেখযোগ্য কবিতা এবং মুক্তগদ্য - গল্পটা তারপর গ্রহণ লাগা ঘোরের ,শীতগ্রস্থ শরীরের বিনষ্ট অনুবাদ , মেঘের ঘরে মদের গেলাস কে রেখেছে... ,কুয়াশা ও শাদা কাকের বিভ্রমে একটি ওড়নার ক্যানভাস প্রভৃতি

নস্টালজিক: শুধুমাত্র গানের লিরিক লিখেই সারা বছর আলোচনায় ছিলেন এই সর্বজন প্রিয় আধুনিক ধারার গীতি কবি নস্টালজিক ভাই। তার লিরিক গুলো একই সাথে উচ্চ মানের কাব্য এবং শ্রুতিমধুর গান। লিরিক পোস্ট ছাড়াও তিনি বেশ কিছু স্মৃতিকথা লিখেছেন যা পাঠককে আলোড়িত করেছে।

উল্লেখযোগ্য পোস্ট সমূহ- ফুটবলের জন্য গান! গোল.. , জ্বলছে সিগার , সব রাজাকার ! ,নস্টালজিয়া ... বিষাদী আকাশ ও মেঘবালিকা' , শষ্য দানার মত কিছু ঘুম প্রভৃতি

নির্ঝর নৈঃশব্দ্য: ব্লগে মুক্তগদ্য চর্চাকে যারা অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন তাদের মধ্যে আমি যদি তিন জনের নাম করি, তারা হলেন, মতিউর রহমান সাগর, ফাহাদ চৌধুরী এবং নির্ঝর নৈ:শব্দ্য। আমাদের ভীষণ দুর্ভাগ্য বছর জুড়ে ফাহাদ এবং সাগর ভাই অনিয়মিত ছিলেন। তবে নির্ঝর ভাই চালিয়ে গেছেন এটা সুখের ব্যাপার। মুক্তগদ্যের কঠিন ভাষারীতির কারণে অনেকেই দেখেছি মুক্তগদ্য বিষয়ে আগ্রহী নন। তবে এটা অনুভব করে নেয়াই শ্রেয়।

উল্লেখযোগ্য মুক্তগদ্য এবং কবিতা - যে বৃষ্টির ভিতর তুমি, সে অথবা তারা এবং আমি প্রতিদিনই হারিয়ে যাই , বজ্রপাত থেকে যে ফুল কুসুমিত হয়, তার নাম মনে মনে ভাবি ম্যাগনোলিয়া নয়, একই বিষয়ে দুই কবিতা: একটি আমার মতো করে লেখা, অন্যটা তাহাদের, ভয়ানক নৈসঙ্গের ভিতর পাওয়া কাব্যগুলি-২ প্রভৃতি


আহসান জামান : দীর্ঘ প্রায় চার বছর ধরে ব্লগ পাতায় নিরলস কাব্যচর্চা করে যাচ্ছেন আহসান জামান ভাই। একেবারেই নিভৃতচারী এই কবি আরো অনেক দিন লিখে যাবেন তার সুন্দর কবিতা গুলো আমরা এই আশা রাখি।

উল্লেখযোগ্য কবিতা- ঘুরে দাঁড়াতেই , নোঙর ফেলেছো কবেই, পান্থপথিক , আমাদের দেহভাঁজে , বৃষ্টি; তুমি বন্ধু থেকো, আঁখিজলে , ফেরারি ফেরে না ঘরে , এলোমেলো কাব্যকথক

সায়েম মুন : সারা বছরই ছোট ছোট লাইন বিন্যাসের কবিতা ছড়া এবং সহজ সরল ভাষারীতির গদ্যের কারণে আলোচনায় ছিলেন সায়েম মুন। উনি আগের বছরে বহুমাত্রিক ব্লগিং করলেও এ বছর তাকে দেখা গেছে শুধুমাত্র সাহিত্য ধারায় সক্রিয় থাকতে।

উল্লেখযোগ্য পোস্ট - হারানোর গানঃ কলম-ডায়েরী ও ২৯ এপ্রিল , সাবরিনা , রোদ জানালায় অন্য আলো , দিকভ্রান্ত পথিকের শেষ ডায়েরী , নামশূন্য এপিটাফ , অবজ্ঞার অংগুটি ও জানি একদিন প্রভৃতি
সকাল রয় : জীবনকে তিনি দেখেছেন অতি অল্প বয়স থেকে। জীবনের সাথে নিরন্তর সংগ্রাম করে বেড়ে ওঠা সব্যসাচী এই লেখক কবিতা লিখে গেছেন স্বপ্নচারী হয়ে। যা তার একান্তই স্বাপ্নিক মনের পরিচায়ক। কবিতা ও মুক্তগদ্য উনার হাত ভীষণ ভাল। উনার গদ্য রীতিতে অনেকটাই পশ্চিমা ধাচের যেটা আমাদের সচরাচর গল্প পাঠের থেকে কিছুটা বৈচিত্র্যময়। বিষয়টি আনন্দদায়ক।
উল্লেখযোগ্য কবিতা এবং মুক্তগদ্য - যে কথা বলা হয়নি , দুয়ারে হাজার তারার পুকুর , ধূপমিশালির ঘাটে প্রভৃতি
উল্লেখযোগ্য গল্প - অনিলা তুমি ভালো নেই , এটা কোন প্রেমের গল্প নয়

জুন: ভ্রমণ বিষয়ক পোস্টের জন্য উনার খ্যাতি থাকলেও উনার ঝরঝরে গদ্যরীতি পাঠকের দৃষ্টি কেড়েছে। লেখণীতে আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার দূরুহ বিষয়। উনি তা করেছেন সাবলীল ভাষায়।

উল্লেখযোগ্য পোস্ট- জীবন যেমন , ব্যারেন্ট সাগরের কান্না , আলো আর অন্ধকার... বাস্তব আর স্বপ্ন , কে প্রথম কাছে এসেছি ! , কেউ কোথাও নেই , অপেক্ষার প্রহর প্রভৃতি

সুপান্থ সুরাহী: ছন্দতত্ব এবং কবিতার ভাষারীতি সম্পর্কে সজাগ দৃষ্টিসম্পন্ন কবি সুপান্থ সুরাহী। কবিতায় সমাজ দেশের কথা এসেছে চমৎকার ভাবে। এ বছরে এসেই পাঠক মনে বেশ আলোড়ন তুলেছেন কবিতায়।
পূণ্যাত্মার মিছিল তুমি... উপমায় অনন্য , বাংলাদেশ আমার , আবার কামুকের দৃষ্টি সীমায় আমার ‘মা’ , ভালবাসা এবং নিরুপায় শূন্যতা , প্রাগৈতিহাসিক সুখ অথবা প্রত্নতাত্ত্বিক দু:খ.

ড়ৎশড়: দীর্ঘদিনের ব্লগীয় অভিজ্ঞতায় হৃদ্ধ এই ব্লগার চমৎকার সব গল্প লিখে ব্লগ মাতিয়েছেন দীর্ঘদিন। এই বছরে তিনি মোটামুটি নিয়মিত ছিলেন আগের বছর গুলোর তুলনায়।

উল্লেখযোগ্য গল্প- অহনার ভালোবাসা , তিস্তা , আঁধারে স্বপ্ন; আর সূর্যের গল্প , রাত্রি , কয়েকজন উদ্ভ্রান্ত মনুষ্যের ভালবাসার জন্য লড়াই প্রভৃতি

এ টি এম মোস্তফা কামাল: নিভৃতচারী এই ব্লগার, রুবাইয়াৎ ব্লগারদের কাছে পরিচিত করে তোলায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। উনার পরে যারা ব্লগে রুবাই চর্চা করেছেন তারা অনেকেই উনার কাছ থেকে রুবাই ছন্দতত্ব এবং ভাষারীতি সম্পর্কে জেনেছেন। বাংলা ব্লগিং এ রুবাই চর্চার পথিকৃৎ বলা চলে। তবে উনি অনেক পোস্ট দেন, যা ব্যক্তি আবেগের বহি: প্রকাশ, সে গুলো একটু কমালে আমার মনে হয় পাঠক কূলের পক্ষে উনার লেখা পাঠ আরেকটু সহজতর হত।

উল্লেখযোগ্য পোস্ট - রুবাই সংকলন

এছাড়াও আরো অসংখ্য কবি লেখক বছর জুড়ে আমাদের আন্দোলিত করে গেছেন তারা হলেন সোহরাব সুমন, কথক পলাশ, পোয়েট ট্রি, সোনাবীজ অথবা ধূলোবালিছাই, ডলুপূত্র, নেক্সাস, এম এম ওবায়দুর রহমান ইত্যাদি। আরো অনেক পাঠকনন্দিত লেখক বাদ পড়ে গেছেন আমার স্বল্প পাঠজনিত দূর্বলতার কারণে। সে জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।

আগামী দিনের যারা:

উপরে উল্লেখিত লেখক এবং কবিরা ছাড়াও উদীয়মান অনেকেই আমাদেরকে তাদের লেখনী শক্তির সম্ভাবনা দেখিয়ে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে কবিতার ক্ষেত্রে প্রথমেই বলব প্লিওসিন অথবা গ্লসিয়ার ( আমার অজস্র মৃত্যুর গল্প , জোৎস্না অভিযান এবং অন্ধকারের শুয়োর বিষয়ক অসুস্থ পঙক্তিমালা , রোদের সিড়ি বেয়ে উঠে যাই শুন্যতার পথে! ) এর। কবিতা রচনায় তার সাম্প্রতিক কালের দক্ষতা ঈর্ষণীয় । এছাড়া নিভৃতচারী শাহেদ খান (নরম ধোঁয়া ! , MBA ক্লাসরুমে... , অন্য কোনও জুলিয়েট'দের গল্প, পথ ), শব্দ সচেতন জামিনদার (আশ্রমে যাবার পূর্বাভাস , কেউ একজন অপেক্ষা করুক অতন্দ্র প্রহর , আমার দু'চোখে আলোর দ্যুতি ) , প্রতিবাদী মরুর পাখি ( হাইস্পিড ট্রেনে গলা কাটা ছিন্ন লাশটা আমারই হয়তো, ডাস্টবিনের গন্ধে তুষ্টি খুঁজেছিলাম -- পাইনি। , এসেছি মরুর পাখি-তোমার জলজ শাদ্বলে মিশে একাকার হতে। ) , রু আদে ( সমূদ্রচারিণীর জন্য কয়েক পঙতি ) , শাহরিয়ার রিয়াদ (দেয়ালের মৃত্যুতে জন্মায় সত্য ), অনেকটা অপরিচিত আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির ( হয়ত হাজার বছর আগে এখানে সমুদ্র ছিল , বাজারে-বাজারে মানুষ জোসনা ডুবায় , উঠান ছেড়ে দেব পাখিদের কাছে , গভীর মেঘ ঠাণ্ডা কদম ফুলের মতো ছিঁড়ে ছিঁড়ে পড়ে ) , মহাবিশ্ব ( উদভ্রান্ত স্বপ্নের রঙ , রূপসা নদীর চর , ঘাসের উপর গানের শিশির ) উল্লেখযোগ্য। এরা এদের লেখনী শক্তির উন্নতি করছনে ক্রমশ। আশা করা যায় এরা খুব ভালভাবেই আগামীতে ব্লগের সম্পদ হয়ে উঠবেন।

গল্প রচনার ক্ষেত্রে অনেকেই দেখিয়েছেন নৈপুন্যের ঝলক এদের মধ্যে আছেন নীরব ( নিষাদের অর্ধদিবস , আহ... )। তার লেখনীতে পশ্চিমা ভাষারীতির ছোয়া পাওয়া যায় যা সুখপাঠ্য বোধ হয় । সরলতা ( মেয়েটার রোল ছিল আনলাকি থারটিন , রক্তমাখা কাটা হাত , পুতুল বউয়ের আত্মকথন) খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নিজের লেখার আলাদা একটা সাক্ষর নেবার পর্যায়ে এসেছে। এছাড়া আরো অনেকেই আলাদা করে দৃষ্টি কেড়েছেন যাদের মধ্যে রয়েছেন, জলমেঘ ( রুপালী রঙের জল , দ্বিতীয় প্রত্যাবর্তন ), ত্রিনিত্রি ( মা, কবি , অভিশপ্ত আয়না , কফিশপ ) , নিথর শ্রাবণ শিহাব ( জানালার ওপাড়ে , ক্যাথেড্রাল , এখানে পৃথিবী নেই ) , মিরাজ ইজ ( দুঃস্বপ্নের দুঃসময় , খুঁজে ফিরি তারে, সময়ের প্রয়োজনে), আরিশ ময়ূখ রিশাদ ( বিষণ্ণতার বিচ্ছিন্নতায়, যে আকাশে পাখি নেই, যে পাখির আকাশ নেই ! , ফিসফিসিয়ে জোনাকিরা যে কথাটি বলে যায় ) , নোমান নমি , ( আমাকে জন্ম দেয়া এক রাত্রী , তোর "ক" অথবা "খ" অথবা "অন্যকিছু" ) , স্মৃতির নদীগুলো এলোমেলো (নতুন রাজতন্ত্র , তোকে নয়, খুঁজে ফিরছি আমাকেই), শশী হিমু । এরা এদের প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন এবং নিজেদের ক্রাগত ভাঙছেন। তার পরেও আমার ব্যক্তিগত মত কবি যত এসেছে গল্পকার তার থেকে অনেক কম এসেছে এবং নিজেকে তুলে ধরতে পেরেছে।

লেখার মান এবং সম্ভাবনা:

ব্লগে বর্তমানে রেজিস্টার্ড সদস্য সংখ্যা লক্ষাধিক। পুরোনো বছর গুলোতে ব্লগে যে ধরণের মান সম্পন্ন কবি এবং লেখকদের দেখা মিলেছে এই বছর তা কিছুটা কমই দেখা গেছে। হাতে গোনা দু চার জন ছাড়া বেশির ভাগই লিখে গেছেন নীরবে, সেই অর্থে পাঠক সমাজে আলোড়ন তুলতে পারেননি । এই ক্ষেত্রে সিনিয়র লেখকদের ভূমিকাও প্রশ্ন বিদ্ধ। লেখক বা কবি প্রতিষ্ঠিত লেখক হিসেবে মূল ধারায় সংযুক্ত হবার পরে ব্লগের প্রতি বিমাতা সুলভ আচরণ করেছেন। কিছু লেখককে দেখেছি পোস্ট দিয়ে নিজের দায়দায়িত্ব শেষ করেছেন। কমেন্টের জবার দেবার সময়টুকু দেন নি। এ দিক থেকে ব্লগ সাংবাদিকেরা নতুনদের তৈরির ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। যা সাধুবাদ পাবার যোগ্য। তবে নিভৃতচারী লেখকেরা তাদের জগতেই থাকবেন এটাও সত্যি। তবে তাদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, নিজের ভাল লাগা গন্ডির লেখকদের লেখা শুধু না পড়ে সকল উদীয়মান ব্লগারদের প্রতি দৃষ্টি দেবেন।

অনিয়মিত ছিলেন যারা:

গত বছরটিতে অনেক বড় লেখক ব্লগ ছেড়ে গেছেন বিভিন্ন কারনে। কেউ পেশাগত, ব্যক্তিগত কারনে কিংবা অভিমানে। অনেক নবীন এই স্বল্প সময়ে আলাদা অবস্থান তৈরি করে নিয়েই আবার অনিয়মিত হয়ে গেছেন। অনিয়মিত ভাবে ব্লগে ছিলেন যারা তাদের মধ্যে কবিদের ক্ষেত্রে বলব হানিফ রাশেদীন ( ঈশ্বরের প্রতিচ্ছবি , ঈশ্বরের স্বর্গবাস , দেবদূতগণ , অন্ধকারের উৎসব ) ভাইয়ের। বছরের মাঝের দিকে তিনি হারিয়েই গিয়েছিলেন। এখন আবারো নিয়মিত হয়েছেন। আরেকজন সুখপাঠ্য কবিতার কবি নিমা ( কবিতা , প্রতীক্ষার পরে , নখতন্ত্রী ), বছর জুড়ে উনি লিখে গেলেও কিছুটা অনিয়মিত ছিলেন। সুলতানা শিরীন সাজি ( কিছু সুরভিত সুখের অনুভবে রাখালের জন্য কবিতা , ভোরের স্বপ্নঘোরে জেগেছিল দেবদারু সময় , আমি কিংবদন্তী হবো তোমার কবিতায়! ) জুনের পরে আর পোস্ট দেননি। আন্দালীব (গোলাপ ও বারুদবিষয়ে একটা কাব্যিক ভনিতা , হাওয়ালেখ ২ , মাংসের গভীরে ), আমি উঠে এসেছি এক সৎকার বিহীন ( আমাদের বর্ষাক্রান্ত ক্ষ্যাপা নাগরিক ভাবনাগুলো , এই শহরের ভেতর একটা দানব ঘুমিয়ে আছে )আর নিয়মিত হবেন বলে মনে হয় না। পরাবাস্তব ধারার একজন শক্তিমান লেখক অন্ধ আগুন্তক ( ত্রিশংকু , অর্কেষ্ট্রা, প্রগাঢ় পাপের লুপ্তশব্দ ) উনি সেপ্টেম্বরের পরে আর ব্লগ মুখো হননি। কালপুরষ আঙ্কেল তার নিজের নিক এ লেখা বন্ধ করে অনীক এ শুর করলেও খুবই অনিয়মিত ছিলেন। ছাইরাছ হেলাল ( বিষণ্ন রূপকথা , মৃত্যুর সাথে দেখা ) নতুন ব্লগারদের কাছে একটি প্রিয় নাম। সারাবছর ব্লগে থাকলেও পোস্ট দেবার বেলায় ধারাবাহিক ভাবে অনিয়মিত ছিলেন। এছাড়া মতিউর রহমান সাগর ( কপালকুন্ডলার দেশে এক রাত্তির , লা জোকোন্দে , সূর্যদাগ এবং বিবিধ খরাচিহ্ন )ভাই খুব কম কম পোস্ট দিয়েছেন। গ্যাব্রিয়েল সুমন ( অচিন মেঘনৃত্য ও কুয়াশা কাশবন ও কাগজের শাদা মিথ , মুক্ত গদ্য সংকলন ), ফাহাদ চৌধুরী ( বিষন্ন রবিবার , ঘুমসময়ের স্বেচ্ছাচারিতা, বিপ্রতীপ ) , বাবুল হোসেন ( যে চোখে আকাশ নেই, ব্রহ্মাণ্ড ও নয় , অপেক্ষার মৃত্যূ অথবা সোনালী সন্ধ্যার গান এবং চোখের গহবরে সমুদ্র পোষার গল্প , আকাঙ্খার অপমৃত্যু কবিতার জমিনে ), শিরীষ ( আমি কোন শব্দকর নই , অতন্দ্রিতা, একদিন তুমিও ঘুমিয়ে ছিলে , দৃষ্টিদহন থাকে অস্ত আলোয় ), সোমহেপি ( তুমি অপেক্ষায় থেকো কবিতা , ) এরাও এ বছরে ব্লগিং অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছেন। নাজনীন খলিল ( এটি একটি গল্প হতে পারে ), অমিত চক্রবর্তী ( কবিতাদলঃ খয়েরি পাখিদের আজ বাড়ি ফেরার তাড়া নেই , রিকশাপেইন্টার ও অন্যান্য কবিতা ) একেবারেই আর আসবেন না বলে সিগ্ধান্ত নিয়েছেন। যা ব্লগের কাব্য চর্চাকারীদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।

গল্পকারদের মধ্যে নাম করব সবার প্রিয় আহমেদ মোস্তফা কামাল ( অশ্রুপাত শেষ হলে নষ্ট করো আঁখি ) এর। এছাড়া সিনিয়রদের মধ্যে আকাশ অম্বর ( ম্রো কথন ) কে দেখা যায়নি মার্চের পরে। আরেক জন গল্পকার দ্যা ডক্টর ( সহাবস্থান বা প্রস্থানের গল্প! , একচিলতে নিশ্চিন্ত মৃত্যু! , প্রতিস্থাপিত জানালা, ভালোবাসায় নদী ) অনেকটাই অনিয়মিত ছিলেন। অদৃশ্য সত্তার বাক্যালাপ ( বিক্ষিপ্ত সত্তাদের এলোমেলো কিছু খন্ড খন্ড ভাবনা.. , অদৃশ্য এক বাড়ি... , আমার বিস্তৃত অনুভূতির দ্বার- রায়ান ) বেশ সুন্দর গল্প লিখতে শুরু করে অনিয়মিত হয়ে গেছেন। এই ধারায় অর্থাৎ এ বছরেই লিখতে শুরু করে পাঠক দৃষ্টি নিজের দিকে সরিয়ে নিয়ে আবারো থেমে গেছেন এমন আরো হলেন মেঘ মেঘা ( অন্যারণ্য , আজ আমি ঘরে যাবো না ) , ইনকগনিটো ( দ্যা পিয়ানো প্লেয়ার , দ্যা লাইফ ইন অ্যান ইজেল , থটলেস ) । পুরোনো লেখকদের মধ্যে আজমান আন্দালিব ( একটি রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইস ও শূন্য বাটন , চিৎকাত, ব্লাইন্ড এবং মাইন্ড গেম) , হিমালয়, শান্তির দেবদূত সহ আরো অনেক প্রিয় প্রিয় গল্পকার ভীষণ অনিময়িত ছিলেন।

নবীন ব্লগারদের উদ্দেশ্য

এই পোস্ট তৈরি একমাত্র নবীন ব্লগারদের জন্য। আশা রাখব এ সকল আলোচিত ব্লগারের লেখা পড়ে বুঝবেন নিজেদের কেমন করে তৈরি করতে হবে। নিজেদের লেখনীকে কোন মাত্রায় নিলে পাঠক দৃষ্টি পড়বে। আমি মনে করি, ব্লগে নিরন্তর লিখে যাবার আগে, পাঠ এবং নিবিড় পাঠের পরবর্তী প্রতিক্রিয়া লেখকের সাথে বিনিময় করে নিজেকে পরিচিত করবার পরেই লেখা উচিত। কারণ যত যাই হোক, একটি ব্লগ নিক একটা ক্রেডিবিলিটির ব্যাপার। সকল নবীন ব্লগারকে ভেবে দেখার অনুরোধ রাখবো। আশা রাখব নবীনে প্রবীনে আড্ডা জমবে ব্লগ পাতায়।

উৎসর্গ : আসা যাওয়া জীবনেরই অংশ। আমরা দেখেছি অনেকেই এসেছেন আবার চলেও গেছেন। কিন্তু এর মাঝে গত বছরে এক কবি ব্লগার রাকিবুল হক ইবন কে, আমরা হারিয়েছি। সে চলে গেছে না ফেরার দেশে। সে আজ স্বর্গত কিন্তু তার লেখা গুলো রয়ে গেছে সামুর শাদা হলুদ পাতায়। আশা রাখছি সামু তাকে মনে রাখবে তার ব্যাপ্তিকালের পুরোটা অব্দি।

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:১২
২৪৪টি মন্তব্য ২৪৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×