তেজগাঁও আড়ং-এর উলটো পাশে দেশী দশের একটা বড় শোরুম আছে । কিছু কেনাকাটি করবো, আমি আগেই এসে গেলাম আর বউকে বাসা থেকে আসতে বললাম ।দেশী দশের সামনে গাড়িটা পার্ক করে নেমেই দেখি রাস্তার উল্টোপাশে অনেক লোকের ভীড়।ট্রাফিক সার্জেন্টের মাথাও দেখা যাচ্ছে ।আর সব ভীড় তাদের সামনেনীচু কিছু একটা জিনিশ কে কেন্দ্র করে , যেটা আমি এই পাশ থেকে দেখতে পাচ্ছিলাম না । ভীড় আমি এড়িয়ে চলি , এই পাশে আমি সিগারেট ধরিয়ে চুপচাপ টানতে লাগলাম। পিছনে থেকে দুই জনের কথা শুনে বুঝলাম , ভীড়ের উতস একজন মৃত মানুষ।চমকে উঠে তাড়াতাড়ি দেখতে গেলাম ।একজন মধ্যবয়স্ক লোক শুয়ে আছে , দেহে প্রাণ নেই , শরীরের অর্ধেক অংশ রাস্তায় আর বাকী অর্ধেক ফুটপাথে ।যে দোকানের সামনে লোকটার মৃত দেহ পড়ে আছে ,তার দারোয়ান বল্লো, লোকটি একটি রিকশা থামিয়ে দামাদামি করেছিলো। ওই অবস্থায় হঠাত লোকটি বুকে হাত দিয়ে রাস্তার পাশে রাখা সারিবদ্ধ ইটের স্তুপের উপর ভার রাখতে চেষ্টা
করে , আর আস্তে আস্তে নীচে বসে পড়ে , এক সময় মিনিট দুয়েকের মধ্যে শুয়ে পড়ে। দারোয়ান পুরো ঘটনাটি দেখেছিলো,সে তার কাছে এসে সে বুঝতে পারে লোক্টির শরীরে আর প্রাণ নেই ।কিছুক্ষণের অনেক লোকজন এসে যায় , জানা যায় , মৃত লোকটির অফিস পাশেই নির্মাণ ইন্টারন্যাশনাল। অল্প কিছুদিন আগেই সে তার চাকুরিটি হারিয়েছেআর তার দেশের বাড়ি বরিশাল। উপস্থিত কারো কথায় বুঝা গেলো লোকটি কার্ডিয়াক এটাক কিংবা ষ্ট্রোক এ রকম কিছু একটায় মারা গিয়েছে ।
আবার ভালো করে মৃত লোকটির দিকে তাকালাম। তার হয়ত আমার মতোন দুইটি ফুটফুটে মেয়ে রয়েছে , বাসায় একজন মমতাময়ী স্ত্রী রয়েছেন , রাতের বেলায় সবাইকে সাথে দুই মুঠো ভাত খাবেন- ঠিক আমি যেমনটি খাই। বাবা মায়ের সাথে হয়ত লোক্টির খুব মমতাময় সম্পর্ক ছিলো, হয়তো বাসায় ফিরেই সে জামা কাপড় খুলতো , সন্তানের কেউ গামছা টাএগিয়ে দিত আর এইযে লোকটা এখন হঠাত মরে পড়ে আছে ,কাজটা কি ঠিক হলো ? কতো গুলো আশা ভরসা স্বপনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল লোকটি। দুই মিনিটেই সব ফিনিশ হয়ে গেলো।আমি কাঁপা কাঁপা গলায় তার অফিসের উপস্থিত লোকদের খালি একবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কোন ধরনের সাহায্য লাগবে কিনা ( কিছু টাকা দেওয়া ছাড়া অবশ্য কোন সাহায্য করার কিছু ছিলো ও না )
তারা না করলেন। রাস্তা কোনোমতে পার হয়ে আবার দেশী দশের সামনে গিয়ে দাড়াঁলাম, একটু পরেই বউ আসলো। ঘটনাটা শেয়ার করলাম । বেশ খানিকক্ষণ দেশী দশের সিড়িঁর সামনে আমরা দুই জন স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।কিছুক্ষণ পরে থানার ভ্যান এসে একটা মৃত দেহ ভ্যানে তুলে নিয়ে চলে গেলো, যে মৃত দেহটি ৩০ মিনিট আগেই একজন মানুষ ছিলো ।
দেশী দশে ঢুকতেই হলো। গিফটের জিনিশ , কিনতেই হবে ।
কোন মৃত মানুষের জন্য এই রুঢ় ,কঠিন পৃথিবী
কখনোই অপেক্ষা করে না ।
২৩শে নভেম্বর ২০১৩