somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পের শিরোনাম নেই

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জসীমের মা যেইদিন মারা গেলো , জসীম সেই দিন এপার্টমেন্টের সিঁড়ি ঝাড়ু দেয় আর এক পাশে মুখ চেপে মাঝে মাঝে কাঁদে ।কিছু কিছু সকালে আমাকে কঠোর সিডিউল মেন্টেইন করতে হয়, বাচ্চাদের স্কুলের টাইমিং নিয়ে ।এটা ছিলো তেমন এক সকাল, গাড়ীতে উঠার ফাঁকে হাসান কে জিজ্ঞাসা করলাম জসীম কাঁদতেছে ক্যান ? তার থেকেই তখন শুনলাম , গেলো রাতে দেশের বাড়ীতে জসীমের মা মারা গেছে । উচ্চ মধ্যবিত্ত হলে , মা মারা যাওয়ার দিন কেউ কাজ করে না , দূর দূরান্ত থেকে আত্মীয়স্বজন আসে, ভদ্রোচিত ভাবে কান্না কাটি চলে , কিন্ত জসীম উচ্চ মধ্য বিত্ত না । সে নিম্ন বিত্ত , তার চার ছেলে মেয়ে , এক ছেলে মাদ্রাসায় পড়ে , সে ছেলের খরচের টাকা আমাকেই দিতে হয়।
জসীমের মা মারা গেছে , কিন্ত তার কাজের থেকে তার মুক্তি নেই , এই এপার্টমেন্টের সবচেয়ে পরিশ্রমী দারোয়ানের সে একজন । কিছু এক্সট্রা টাকা আয়ের জন্য তাকে অনেক এক্সট্রা কাজ করতে হয়, সিড়িঁ ঝাড়ু দেওয়া তার অন্যতম একটা কাজ ।
আমি তার ছেলের মাদ্রাসায় পড়ার খরচ দেই এম্নেতেই না , সে আমার কিছু কাজ করে দেয় ।
আমাদের উচ্চ মধ্য বিত্তদের মধ্যে প্রচলিত আছে , দরিদ্রকে বেড়ার ফাঁক দেখাতে নেই , আমি উচ্চ মধ্য বিত্ত কিনা জানি না , তবে সেটা হওয়ার জন্য আমার প্রাণপণ চেষ্টা থাকে ।উচ্চ মধ্য বিত্ত বা বড় লোকেরা যা যা করে , আমি তাই প্রানপনে করে যাই ।

সকাল আমার অনেক ব্যস্ততায় কেটে যায় , দুপুরে ফিরে আসি । গাড়ী থেকে নামার সময়েই ম্যানেজার আমার খুব কাছে এসে ফিসফিস করে বলে ,

স্যার , একটু কথা আছে ।

আমি অবাক হয়ে যাই, ম্যানেজার আবুল আস্তে কথা বলার লোক না , সে ঢাকা এবং রংপুরে - দু জায়গায় দুটো বউ মেইনটেইন করে, এবং তার বেতন মাত্র ৭৫০০ টাকা । সে দশাসই কন্ঠে এটা প্রায় জাহির করে ।

আবুল অবশ্য জানে না, তার এই ব্যবস্থাপিক দক্ষতার জন্য আমি তাকে মনে মনে কতোটুকু সমঝে চলি ।

- স্যার , জসীমের বউ আজকে , এইখানে এসে কাহিনী করেছে ।
ঃ কি কাহিনী ? পকেটে চাবি পুরতে পুরতে আমি বলি ।
- জসীমের বউ জসীমকে মেইন গেইটের সামনে অনেক মার ধর করেছে । মারধর করেছে , তার কারণ হল জসীমের মা মারা গেছে, জসীম দেশে তার বোনকে বলেছে , তিনদিনের খাওয়া সে খাওয়াবে , তাতে ১১ হাজার টাকা খরচ হবে কিন্ত জসীমের এই টাকা নাই , সে ধার করে মায়ের জন্য গরীব মানুষ খাওয়াবে । তার বউয়ের কথা হল , জসীমের সামর্থ্য নাই , সে কেনো এই টাকা খরচ করবে ?

জসীমের বউকে আমি গোড়া থেকেই পছন্দ করি না । বিভিন্ন ঈদে চাঁদে সে বাসায় আসবে , বিভিন্ন ফন্দি ফিকির করবে টাকা পয়সার জন্য , আমরা জানি তার চার টি বাচ্চা , সে নিজে ও চাকুরি করে , তাদের অনেক টাকা লাগে ।
তার আবদারে ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে সব সময়েই তাকে কিছু দিতে হয়।

তবে জসীম কে সে মেরেছে শুনে , আমার পৌরুষ অহংবোধে ঘা পড়ে ।
আমার উচ্চ মধ্যবিত্ত যাত্রার পথে জসীমের বউকে বিশাল বাধা মনে হলো । সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম , সে সালাম দিলে ও আমি সালাম নিবো না ।

জসীম তার মার খাওয়ার ব্যাপারে আমাকে কিছু বলে না , খালি সালাম দিয়ে জানায় , তার মায়ের দাফন হয়ে গেছে , সে তিন দিন পরে বাড়ীতে যাবে ।

জবাবে আমি কিছু বলিনা , খালি মাথা ঘুরিয়ে এপাশ ওপাশ করে বাইরে চলে যাই ।

যেতে যেতে লক্ষ্য করি জসীমের চোখের কোনে পানি জ্বল জ্বল করছে ।বাসায় যেতে যেতে চিন্তা করতে লাগলাম , জসীমের মানসিক অবস্থা এখন কেমন যাচ্ছে ?

তিনদিন পরে জসীম বাড়ীতে গেলো , যাওয়ার সময় আমাকেও সেই ১১০০০ এর কিছু দিতে হলো , সেটা নিয়ে সমস্যা নেই , আমি বড় লোক হতে চাচ্ছি কিন্ত জসীমের মায়ের তিনদিনের খানাতে টাকা দেবোনা , সেটা তো হয় না ।

জসীমের বউ কিন্ত এখানেই রইলো , আমাকে দেখলেই জড়োসড়ো হয়ে সালাম দেয় , আমি চোখ গরম করে তাকিয়ে থাকি , কিন্ত কিচ্ছু বলি না ।

জসীম ফিরে এসেছে , দেশের কাজ সে সহি সালামতেই শেষ করে এসেছে ।সিড়ি ঝাড়ু দেয় আর চোখের কোনে পানিও নেই । শোকের আয়ু নাকি তিনদিন , এটা অবশ্য ঠিকই আছে , শোকের আয়ূ কম হওয়াই উত্তম , নইলে মানুষ কাজ কর্ম করতে পারতো না ।

সব কিছুই ঠিক আছে , কিন্ত আজকে গেট পার হয়ে আসার সময় নারী কন্ঠের সশব্দের হাসি শুনে তাকিয়ে দেখি জসীম আর তার বউ কি নিয়ে যেনো হেসে হেসে গড়াগড়ি যাচ্ছে ।

মেজাজ খুব খারাপ করে উপরে উঠতে উঠতে ভাবলাম, নিম্নবিত্তের মান সন্মানবোধ না থাকলেও , ভালোবাসা বোধ খুব আছে , নইলে চার চারটি সন্তানের বাবা -মা এম্নেতেই হওয়া যায়না
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৯
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×