টি পার্টি এখনও মুখোশের আড়ালে
টি পার্টি এখনও মুখোশের আড়ালে
সাব প্রাইম সঙ্কট নামে পরিচিত বাড়িঘরের বাণিজ্যে লালবাতি জ্বলার কাহিনী দিয়েই শুরু হয়েছিল মার্কিন অর্থনীতির সাম্প্রতিক সঙ্কটপর্ব। সেই কাহিনীতে অবশ্য বন্ধকীর ব্যবসা যারা করতো, ঋণ যারা দিয়েছিল তাদের দুর্ভোগের কথাই শোনানো হয়েছে বেশি। বন্ধক দিয়ে বাড়ি যারা নিয়েছিল সেই মানুষদের ব্যথা চাপা পড়েছে ব্যাঙ্কের পর ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার চাঞ্চল্যকর শিরোনামে। সঙ্কট-সাব প্রাইমে সীমায়িত থাকে নি, বাড়িঘরেও না। অর্থনীতির প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়েছে দাবানলের মতো। আর্থিক ক্ষেত্র থেকে বৃহৎ উৎপাদনে, মূলধনী বাজার থেকে কাজ ছাঁটাইয়ের ঘণ্টাপ্রতি হিসেবে। আর এইভাবে আরো নীরবতার পাথরে চাপা পড়েছে ঘরহারা মানুষের কথা।
বন্ধকী ঋণের ফাঁদে গৃহহারা মানুষের সংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে। হয় বন্ধকী ঋণের কিস্তির টাকা শোধ করতে পারছেন না অথবা বাড়ি বিক্রি করেও ঋণ শোধ হবে না কেননা বাড়ির দাম দারুণ ভাবেই কমে গেছে। ব্যাঙ্কের কাছে বাড়ি সমর্পণ করে চলে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। পরিভাষায় ‘ফোর ক্লোজার’।
মার্কিন সাম্রাজ্যের অন্দর মহলে এই সঙ্কটের দিনগুলির প্রতিক্ষায় ছিলো একটা অংশ। সম্প্রতি ‘টি-পার্টি’ নামেই সেই অংশের আত্মপ্রকাশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন নাগরিক অধিকার আন্দোলন এখন মার্কিন রাজনীতিবিদদের চিন্তার কারণ। মার্কিন মুলুকের ডাকসাইটে পত্রিকাগুলিতে বলা হচ্ছে, ‘টি-পার্টি’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা কারণে সরকারি নীতি-কৌশলে হতাশ ও ক্ষুব্ধ নাগরিকদের আন্দোলনের নাম। টি-পার্টির নামে হাতে এখন ব্যানার, ফেস্টুন। মুখে ক্ষুব্ধ স্লোগান।
মূলত রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে যারা তীব্র রক্ষণশীল, গোঁড়া, ধর্মভীরু তাঁদের নিয়েই নতুন এই সংগঠন টি-পার্টির আত্মপ্রকাশ, ২০০৯-র গোড়ায়। রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই এই রক্ষণশীল ঘরানার সমর্থকরা বিক্ষিপ্ত প্রতিবাদ শুরু করে। ফেব্রুয়ারির ১৯তারিখে সংবাদসংস্থা সি এন সি বি-র রিক সানটেলি শিকাগো মার্কেন্টাল এক্সচেঞ্জের ফ্লোরে দাঁড়িয়ে বন্ধক রাখা বাড়ির মালিকদের নতুন করে আর্থিক সহায়তা দিতে ওবামা প্রশাসনের প্রস্তাবের সমালোচনা করে বক্তৃতা দেন। সেদিন থেকেই এই টি পার্টি আন্দোলনের জন্ম। ভিডিও এবং ফেসবুক ও টুইটারের মতো নেটওয়ার্কিংয়ের সহায়তায় এই আন্দোলন নিমেষে এক বিশাল জন-সমর্থন পায়।
২০০৯-র ২৭শে ফেব্রুয়ারি আমেরিকার ৪০টি নগরে একসঙ্গে টি-পার্টি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি ব্যয় কমানোর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর বসানো ও আর্থিক ঘাটতির প্রতিবাদে এইসব সমাবেশ নিছকই কিছু ক্ষুব্ধ মানুষের অসংগঠিত প্রয়াস বলে মনে করা হয়েছিল। ২০০৯সাল জুড়ে ওবামা যখন তাঁর সংস্কার উদ্যোগ নিয়ে প্রচারে ব্যস্ত, তখনই পালটা জবাবে টি-পার্টির নামে স্থানীয় কিছু মানুষ জড়ো হয়ে প্রতিবাদ করতে শুরু করে। অর্থনৈতিক মন্দায় কর্মহীন, গৃহঋণে জর্জরিত হতাশ ও ক্ষুব্ধ মধ্যবিত্ত লোকজনের সমাবেশ দিন দিন লক্ষণীয় হয়ে ওঠে। আন্দোলনের পেছনে রিপাবলিকানদের উসকানি ক্রমশ প্রকাশ হয়ে পড়ে। রিপাবলিকান দলের নেতারাও এই আন্দোলনকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সাহায্য করা শুরু করে।
আন্দোলনের জন্য ‘টি পার্টি’ নামটি বাছার অবশ্য ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে। ১৭৬০সালে বোস্টনে ব্রিটিশ উপনিবেশের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বহু মানুষ। সেই আন্দোলন সরাসরি বিদ্রোহের রূপ নেয় ১৭৭৩সালে। ওই বছরের ডিসেম্বরে ব্রিটিশদের চা-নীতির প্রতিবাদে বোস্টনে বিক্ষোভ করে সাধারণ মানুষ। সেই বিক্ষোভ 'বোস্টন টি পার্টি' নামে পরিচিত। বিক্ষুব্ধ মানুষ ব্রিটিশ সরকারের অন্যায় আইনের প্রতিবাদ করে জাহাজ থেকে চা ফেলে দেয় সমুদ্রে। বোস্টনের এই বিক্ষোভ অনুপ্রাণিত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষকেও। তারা স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। বোস্টন টি পার্টি আন্দোলন শুরুর কিছুদিন পরই ১৭৭৫সালে শুরু হয় আমেরিকার স্বাধীনতাযুদ্ধ। মূলত ১৭৭৩সালের ওই ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই নাকি ‘টি পার্টি’ আন্দোলন শুরু হয়েছে। এ আন্দোলনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘এ নিউ আমেরিকান টি পার্টি’। বিভিন্ন সংবাদপত্রের বক্তব্য অন্তত তাই।
‘আমেরিকা এখন নতুন বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত।’ নবনির্মিত ‘টি পার্টি’ আন্দোলনের প্রথম জাতীয় সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে পরাজিত প্রার্থী সারাহ পেলিন-এর বক্তব্যে এমনই সুর। সরকারের বিভিন্ন নীতির প্রতিবাদ করে রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামাকে উদ্দেশ করে পেলিন বলেন, ‘অনেক কথা বলেছেন। এবার নিজের মুখ বন্ধ করে মানুষের কথা শুনুন।’ সম্মেলনের মূল বক্তাও ছিলেন রিপাবলিকান পার্টির এই নেতা। ওবামার ক্ষমতা গ্রহণের পর নিউ জার্সি, ভার্জিনিয়া ও ম্যাসাচুসেটসে ডেমোক্র্যাটদের পরাজয়ের কথা উল্লেখ করে পেলিন বলেন, ‘০-৩ ব্যবধানে হারার পর আর কথা বলা মানায় না আপনার।’
আন্দোলন শুরুর এক বছরের মাথায় ম্যাসাচুসেটস উপনির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রার্থীর পরাজয়। সিনেটর পদে নির্বাচিত হয়ে আসেন জাতীয় রাজনীতিতে অখ্যাত স্কট ব্রাউন। নির্বাচনে টি-পার্টি আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায়। স্কট ব্রাউনের বিজয়কে টি-পার্টি আন্দোলনের প্রথম বিজয় বলে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো মন্তব্য করে। নিউইয়র্ক টাইমস-এর মতে, স্কট ব্রাউনের বিজয়ের মধ্য দিয়ে নবযুগের টি-পার্টি আন্দোলনের রাজনৈতিক সাফল্য সূচিত হয়েছে। টাইমস-এর প্রতিবেদক ডেভিড বারসটোর মতে, তৃণমূল পর্যায়ের নানা ঘরানার লোকজনই এখন টি-পার্টির সঙ্গে ক্রমশ সম্পৃক্ত হচ্ছে।
অভিবাসনবিরোধী হিসেবে পরিচিত প্রাক্তন রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান টম টেনক্রেডো। নামাভিল নগরের টি-পার্টি কনভেনশনে বক্তব্য রেখেছেন টম। বলেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অতীত দিনের নিয়ন্ত্রিত ভোট পদ্ধতি চালু থাকলে বারাক ওবামার নির্বাচিত হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। অনেক লোক ইংরেজিতে ভোট উচ্চারণ করতে পারেন না। তাঁরাই ভোট দিয়ে বারাক হোসেন ওবামাকে হোয়াইট হাউসে পাঠিয়েছেন।’ এটাই ‘টি পার্টি’-র আপাত অবস্থান।
বলা হচ্ছে ‘টি পার্টি’ আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হলো, স্থানীয়ভাবে সাধারণ জনগণ মিলিত হয়ে সরকারি নীতির প্রতিবাদ করা। আন্দোলনকারীরা দাবি করে, প্রত্যেক মার্কিনির অধিকার রয়েছে সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে তার মত প্রকাশের। একজন ব্যক্তি পুরো দেশের সমস্যার সমাধান করতে না পারলেও নিজের মন্তব্য জানানোর মাধ্যমে প্রতিবাদ করতে পারে। তারা ওয়েবসাইট, সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইট ও ব্লগ ব্যবহার করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আন্দোলনের পক্ষে প্রচার চালায়। যদিও ইতোমধ্যেই অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন রক্ষণশীল সংগঠন এই আন্দোলনের জন্য অর্থ যোগান দিচ্ছে।
কী বলছেন টি পার্টির কর্মীরা? ওয়াশিংটন পোস্টকে দেওয়া গ্রেস নামে এক টি পার্টির কর্মী যেমন বলছেন, ‘যারা ঈশ্বর বিরোধী, যারা মার্কসবাদী, কমিউনিস্ট, বামপন্থী, শ্বেতাঙ্গ বিরোধী তাদের দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিন। ওরা চায় কমিউনিস্টরা দুনিয়া নিয়ন্ত্রণ করুক। তারা মার্কিনীদের নিরস্ত্র করতে চায়।...’ গ্রেসের এই বক্তব্যই আসলে টি পার্টির আসল চরিত্র। ওবামার বিরোধিতার মুখোশের আড়ালে গোঁড়া সাম্রাজ্যবাদী শক্তির তল্পিবাহক।


বৃথা হে সাধনা ধীমান.....
বৃথা হে সাধনা ধীমান.....
বিএনপি মিডিয়া সেল এর সদস্য সচিব ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানী সকল পত্রিকা কতৃপক্ষের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ কর্মসূচি শুরু করেছেন- বিএনপির এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি কি দু’জন ভারতীয়র আচরণ দিয়ে পুরো ভারতকে বিচার করব?
সাম্প্রতিককালে একটি আন্তর্জাতিক কমিউনিটিতে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার সুযোগ হয়েছে। এই আন্তর্জাতিক কমিউনিটিতে ভারত এবং চীনের জনসংখ্যাগত আনুপাতিক কারণে অংশগ্রহণ বেশি। এই কমিউনিটিতে ভারত, চীন ছাড়াও পাকিস্তান, নেপাল, ইউক্রেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন
যুদ্ধের মঞ্চে রাজনীতির খেলা: জনগণের বেদনা ও শাসকের বিজয়গাথা
দীর্ঘ তিন বছরের কূটনৈতিক আলোচনার পর ৬ মে ভারত ও যুক্তরাজ্য একটি ঐতিহাসিক বাণিজ্য চুক্তি সাক্ষর করে, যা উভয় দেশের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তার মাঝে... ...বাকিটুকু পড়ুন
"মা বড় নাকি বউ বড়", প্রসঙ্গ এএসপি পলাশ সাহার মৃত্যু
এএসপি পলাশ সাহার আত্মহত্যা নিয়ে অনলাইন গরম। কেউ মা'কে দোষারোপ করছে কেউ বউকে। আর কেউ অভাগা পলাশকে দোষ দিচ্ছে। অনেকটা শাবানা জসিমের বাংলা ছবির মতো, "মা বড়... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যত কি?
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি নামে যে দল গঠন করেছিলেন, তা থেকে বিএনপির অবস্থান যোজন যোজন দুরত্বে। তবে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে সুশাষন প্রতিষ্ঠিত না করলেও বিএনপির বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন