somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা কবিতার দেশপ্রেম

২৬ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশপ্রেমমূলক কবিতার মানদণ্ড এদেশে শামসুর রাহমারের ‘স্বাধীনতা তুমি’। দেশ নিয়ে যে কবিতা লিখিত হয়েছে বাংলাদেশে তা আবেগ উত্থিত, ‘স্বাধীনতা তুমি’র মত, রাহমানীয় । মানে আবেগের এমন অতি কথন ছাড়িয়ে অধিকাংশ কবিই তেমন কিছু লেখেন নাই, সেটা বলাই যায়। আমাদের দেশপ্রেমের কবিতা আবেগ নির্ভর। ফলে দেশপ্রেম বলতে আমরা আবেগটাকেই যুক্তি মনে করি। অধিকাংশ রাজনীতি অসচেতন। আমাদের দেশবন্দনামূলক কবিতা ভক্তি গান বা কীর্তনের মত, ভাববাহী ভারী, মাথা দোলানো নমঃ নমঃ। ভক্তের অন্ধ আনুগত্যের উপর কবিরা এইটারে তৈয়ারি করেছেন, মানে কবিরা হৃদয় থেকে আবেগরে বেশি নারিশ করেছেন। সো, এই তাদের মুগ্ধ কাব্য তৈয়ার কারখানার জন্য আমাদের দেশপ্রেম কিশোরীর অবাধ সাঁতরানির চেয়ে বেশি কিছু না। শুধু কি দোষ শামসুর রাহমানের? না। দেশ স্বাধীনতার পূর্ববর্তী বা পরবর্তী অধিকাংশ বাংলাদেশী দেশপ্রেম জাগানিয়া কবিতা আবেগ আক্রান্ত, যুক্তিহীন, শব্দনান্দনিক। রাহমান জির কাছে স্বাধীনতা হলো :

স্বাধীনতা তুমি
রবি ঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো
মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা
স্বাধীনতা তুমি
পতাকা-শোভিত স্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।
স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
স্বাধীনতা তুমি
রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।
স্বাধীনতা তুমি
মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ গ্রন্থিল পেশি।
স্বাধীনতা তুমি
অন্ধকারের খাঁ-খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শাণিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি
চা-খানায় আর মাথে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ।
স্বাধীনতা তুমি
কালবোশেখির দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা।
স্বাধীনতা তুমি
শ্রাবণে অকুল মেঘনার বুক
স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।
স্বাধীনতা তুমি
উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন।
স্বাধীনতা তুমি
বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদি রঙ।
স্বাধীনতা তুমি
বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার।
স্বাধীনতা তুমি
গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল,
হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।
স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা,
খুকির অমন তুলতুলে গালে
রৌদ্রের খেলা।
স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান,
বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।


এমন আবেগী আরও কতকিছু না জানি স্বাধীনতা অপরাপর কবিদের কাছে! মানে বর্ণণার বর্ণের নিচে বাংলাদেশটাকে কেন যেনো পাওয়া যায় না। আমাদের দেশপ্রেম বর্ণনাময়, জীবাত্মা আর পরমাত্মার লীন হওয়া মত ব্যাপান স্যাপার, মেটাফিজিকাল । রবীন্দ্র দেশপ্রেমে দেশ মাতৃস্বরূপা, ভারতীয় নারীর মত অবগুন্ঠিতা, ভয়ার্ত। অবলা শিশুও কি ভীষণ সাহসী, মা নামক নারীকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথের ছোট বাচ্চাটা অনেক দূরদেশে যায়, সেই বীরপুরুষ, মা যেনো কেমন ভয়ে ভয়ে পার হচ্ছে তেপান্তরের মাঠ। শিশুতোষ দেশপ্রেম দিয়া আর কি হবে! আমাদের এই বর্ণনা আক্রান্ত স্বদেশিকতায় কোন রাজনৈতিক সত্য নাই, কোন হৃদয় নাই। সো , ত্রিশের কবিতার পর পঞ্চাশ থেকে শত্তরের দেশবন্দনামূলক কবিতায় রবীন্দ্র ভাবের রেজারেকশন। যেহেতু এই সবে কোন সত্য অনুভূতি নাই, আবেগী রুচীর বাইরে শোনার কান তৈরি হয় নাই, সেকারনে এখানে সচেতন পলিটিকাল কোন দেশ ও কবিতা গড়ে ওঠে নাই। বাংলাদেশ ধারণাটাই ন্যারেটিভ। অধরা উপমায় দ্যুতিময়। দেশপ্রেমময়তার কোন বিচার বিশ্নেষণ নাই। আবহমানতার নতুন কোন উৎসারণ এই কবিতায় নাই। আমরা দেশপ্রেম বিষয়ে এখনও রবীন্দ্রিক পরাধীন যুগে বাস করি।

কবি, শিল্পী, সাহিত্যক, গাইয়ে, নাটকলেখক, চিত্রকর প্রতিটা দেশের নার্ভ তৈরি করে। আমাদের স্বাধীনতা পূর্ববর্তী বা তৎপরবর্তী কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, গাইয়ে, নাটকলেখক, চিত্রকররা এই দেশের আবেগ সংবেদী নার্ভ তৈরি করেছে। সো এইখানে তৈরি হয়েছে দেশপ্রেমের ইল্যুশান হৃদয়কে বাদ দিয়ে। আমাদের হৃদয় অবিকশিত ঐতিহাসিক কারনে। এই হৃদয়হীনতার সুযোগ নিয়ে এইখানে দেশপ্রেমের চেতনা আর নিম্ন জাতীয়তাবাদের ব্যাকে আমাদের আবেগী শিল্প সাহিত্য ব্যাকগ্রাউণ্ড মিউজিক দিতে থাকে। আমাদের কেমন কেমন ভালো লাগে। কর্পোরেট কোম্পানীর আবেগঘন অ্যাডে ভারাক্রান্ত হবার জন্যই দেশাত্মবোধ আমাদের।
রাষ্ট্র একটা রাজনৈতিক কাঠামো, ভূখণ্ড। এইটা কোন নারীমূর্তি না বা কবিতার খাতাও না। রাজনীতি সচেতন বাংলাদেশ ও তার কবিতার বিকাশ হতে না জানি আর কয়টা প্রজন্ম খরচ হয়। এরশাদ পতনের পর আশির কবিরা ঘরে ফিরে গেছে। নব্বই, প্রথম ও দ্বিতীয় দশক এই রাজনৈতিক কবিতা লিখতেই নারাজ। দেশে কি তাহলে কোন রাজনীতি নাই? ‘জীবনে রাজনৈতিক ভাবে হেরে যাওয়া ছাড়াতো আর কিছু হারাবার নাই।’
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

১. ২৭ শে মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: বাজে একটা নিবন্ধ| যে কথায় কথায় সো বলে এমনকি লিখেও তার বাংলা কবিতা নিয়ে লেখার অধিকার নেই| আর সাহিত্য শেষ পর্যন্ত হৃদয়ের ব্যাপার| মাথা দিয়ে আর যাই হোক কবিতা হয় না

২. ২৮ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:০১

মৃদুল মাহবুব বলেছেন: @আরণ্যক রাখাল ,
আপনার ’সো’ বোঝার রুচী জন্মাইতে সময় লাগবে। সো, লেখা পাঠ করে যান। পুরাটা পড়ার অভ্যাস করুণ।

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইহাকেই বলে আগবাড়িয়ে মাড়া খাওয়া

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৯


শিক্ষিত জঙ্গি মোদী ভোটের মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই হাসিনার মতো জঙ্গি নাটক সাজায়; দুজনের পার্থক্য হলো হাসিনা নিজদেশের জনগন হত্যা করে নিজদেশের জনগনকেই দোষ দেয় অপর দিকে মোদী নিজদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=চায়ের আসরে গল্প বলার দিনগুলো সেই= (চায়ের কাপে টুংটাং সুর-৮)

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৫ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:৪১



হারিয়ে গেল কালের অতলে বিকেলের চায়ের আয়োজন
গোল বৈঠক উঠোনে, চারপাশে কত প্রিয়জন
উষ্ণ চা সাথে মুড়ি
ঠোঁটে উড়তো কত কথার ফুলঝুরি।

টিভি সিরিয়াল আর ইন্টারনেট
ইনবক্স আর চ্যাট
কেড়ে নিল সুন্দর সময়গুলো
আন্তরিক সম্পর্কগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণহত্যাকারী দল জামাত শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হোক!

লিখেছেন সৈয়দ তাজুল ইসলাম, ১৫ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৫:৫০



জামাত শিবির সুযোগ পেলে আবারও প্রকাশ্যে বাঙালী গণহত্যায় যুক্ত হবে, আওয়ামিলীগের পূনর্বহালের কথা ভাবতে গেলেই এই বিশ্বাসটা দৃঢ় হয়। এই হিসেব মিলাইতে গেলে আপনার রকেট সাইন্স... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাসুদ(শাহবাজ ) তোমরা কি আর ভালো হবা না ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৯


বাংলাদেশপন্থীরা ভারত ও পাকিস্তানপন্থীদের হাউকাউতে অতিষ্ঠ। ভারত ও ভাদা রা মনে করে ১৯৭১ সালে ভারত বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। অন্যথা বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শ্বশুর বাড়ীর ভূতের যাতনা: সত্য ঘটনা অবলম্বনে

লিখেছেন অপলক , ১৫ ই মে, ২০২৫ রাত ১১:৪১

নিচের ঘটনাটা দিনাজপুর, উপশহরের। ঘটনাগুলো জেনেছি আমার স্ত্রীর কাছে।



আমার শ্বশুর শহরের পাশে একটি পুরাতন টিনের বাড়ি কেনেন। বাড়ির প্রথম মালিক ছিলেন একটি হিন্দু পরিবার। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×