শিল্পের উদ্দেশ্য কি? এ প্রশ্ন আর নতুন কিছু নয়। এবং এর নানা রকম উত্তরও অতি পুরাতন কিছু নয়। আর ব্যক্তি আমার কথা ধরলে আমি এ বিষয়ে উম্মি নাবালক। বুঝি কম, তবে ভাবতে দোষ দেখি না। শিল্পের উদ্দেশ্য যখন খুঁজেই পাচ্ছি না তখন হে লেখক তোমাকে প্রশ্ন কারি, তোমর দায় কি? তোমার কি কোন দায়ই নেই। হ্যাঁ, আমার মনে হয় শিল্প হলো দায়িত্বহীন এক নিরাকার দশা, এর প্রয়োজন খুব বেশি নাই। তবে লেখকের দায় আছে। তাকে ঋণ শোধ করতে হয়। তবে বাবা তা কার কাছে? তা কারও কাছে নয়, নিজের কাছে। ফলে রোল বার্থের Death Of the Author নিয়ে মাঝে মাঝে বেশ গোলমালে পরে যাই। আমার তো মনে হয় শেষ পর্যন্ত লেখকের দায় বা দায়িত্বই বেঁচে থাকে! টেক্সটটা কিছু নয়। লেখকই মুখ্য। ফলে আমাদের সামাজিক বাস্তবতায় শিল্পের খুব বেশি মূল্য দেখি না। অথবা শেষ পর্যন্ত সারা বিশ্ব জুড়ে শিল্পী বা লেখক নামক যাদু কাঠির কেনাবেচা। তবে কাউকে কাউকে কেনা বেঁচা করা খুব কঠিন হয়ে যায়। এক্ষেত্রে তাদের কে নানা তকমা দেওয়া হয়। তবু বিকোক না লেখাগুলা। তখন টেক্সট আর টেক্সট থাকে না, লেখককে প্রধান করে তোলা হয়। আর এর ফলে দুটি কাজ হয়, এক. লেখককে বিক্রি করা গেলো (বাণিজ্য) আর দুই. লেখককে এমন এক জন বিচ্ছিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেওয়া গেলো যেখান থেকে লেখক যাই বলুক তা আর সাধারণ জনগন নিতে পারলো না। এটা লেখককে মাত্র লেখক হিসাবেই স্বীকৃতি দেয়। তার লেখার রাজনীতি লোকে বোঝার আগেই রব ওঠে, " ইয়া রব ইয়া রব।"
শাসক শ্রেণী বা যারা শাসন ভার নেবার জন্য উন্মুখ এরাই নানা ভাবে নানা কিছিমে লেখককে ভুল বোঝায়। আমাদের বসবাস সর্বদা মহারাজনীতির মধ্যে ফলে তৃতীয় চিন্তার উদয় হয় না। আমারাও বুঝে না বুঝে তাদেরই কথা কায়েম করি। লেখককে আর ঠিক মত চেনা যায় না। অতি হন প্রতিক্রিয়াশীল লেখক। তার গর্দান কাটো বা নিবার্সন দাও। এই গর্দান কাটা বা নির্বাসন প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্র এবং জনগন উভয়ে জড়িয়ে পড়ে। রাষ্ট্রের শাসক শ্রেণী বোঝে তারা জিতলেন আর হে আম জনতা তুমি আরও অবনত হও আমার প্রতি। এবং পাঁচ বছর শেষে আমি একটা সিল চাইই চাই তোমার কাছ থেকে। এই পর্যন্তই আমাদের দায়িত্ব শেষ। কিন্তু তারপর? কি ঘটতে থাকে? আমরা যেখানে ছিলাম ঠিক সেখানেই রয়ে যাই বা শ্যাওলা ধরা পাথরের মত পড়ে থাকি বিশ্বায়ন নামক নদীর কিনারে। সব হলো বা কি যে হলো তা কি বোঝার মত অবস্থা আমাদের আছে? আমরা বরং মাঝে মাঝে চিৎকার তরতে ভালোবাসি, ভালোবাসি একারণে যে লোক কে শোনানো যায় আমিও কথা বলতে পারি, আমিও বিশ্বের মানুষ। হায় আমি মানুষ!
আসল কথাটা হলো শিল্পের ভেতর মিশে আছে গভীর গভীরতর রাজনীতি। বড় লেখক এই রাজনীতিকে এড়িয়ে যেতে পারে না। এই রাজনীতি সম্পর্কে কথা বলেই ব্যস। শাসক শ্রেণী তাকে কোন ঠাসা করে দিবে। তার ধর্ম আর যৌনতাকে জনগনের কাছে এমন ভাবে দেখানো হবে যেনো লেখক এগুলোকে "তার উত্তেতি কলম দিয়ে কাল রাতে, আর বলো না........, তোমরা জেগে ওঠো বীরপুরুয়ের দল, এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না, চলতে থাকলে তোমার আমার মা বোন আর........নারায়ে তকবির আল্লা হুয়াকবার........"
কিন্তু কোন লেখককে আক্রমন করার জন্য যৌনতাকে বেছে নেওয়া হয় বা ধর্মকে? বা একজন লেখকের আক্রমনের জায়গা কেন হয় যৌনতা বা ধর্ম?
কারণ আমাদের যৌনতা আর ধর্ম শিক্ষা আদি আমলের। সব থেকে পুরাতন ঐতিহ্য যা আমরা আজও বহন করে নিয়ে বেরাচ্ছি। মনে হয় যতদিন বিশ্ব আছে ততদিন যৌনতা আর ধর্ম পাশাপাশি থাকবে। জ্ঞানের সাথে যৌনতার সম্পর্ক তাহলে বহুদিনের। আর কিছু বুঝি না বুঝি আমরা যৌনতা ঠিকই বুঝি। জন্ম নেই যৌনতার ভেতর দিয়ে। ফলে আমার কাছে ধর্ম থেকেও যৌনতা মূখ্য হয়ে ওঠে। কেননা একটা আমার মগজেই বসানো ছিলো আর আরেকটা আমি পৃথিবীতে এসে অর্জন করি। আমার মৌলিক এই জৈবিক জ্ঞান এক নিষিদ্ধ গন্ধম ফলের মত ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। আমার ধরা বারণ। এবং এর প্রতি গড়ে ওঠে আমার মায়া মমতা, ভয়, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, উৎকন্ঠা, প্রতিক্রিয়াশীলতা। ফলে যৌনতা মানুষের আরেক ধর্ম, ধর্ম থেকেও যা আরও বেশী কঠিন। নাস্তিক আস্তিক সবার এই মৌল জ্ঞানে কিছু না কিছু সংবেদনশীলতা আছে। ধর্ম থেকে এই পৃথিবীতে যৌনতা আরও বড় এক ধর্ম প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে। এতে সবাই সাড়া দেয়। ফলে তোমাকে আক্রমনের ভাষাটা শুধু ধর্ম দিয়ে হয় না। তার থেকেও বড় হাতিয়ার যৌনতার হাতিয়ার। ধর্ম আর যৌনতার ভালো কম্বিনেশন হলো আক্রমন। তোমাকে বিনাশ করতে খুব বেশি সময লাগবে না। যুগে যুগে যুদ্ধ জয়ের পর দেখা যায় মূখ্য আক্রমনটা করা হয় ধর্ম আর যৌনতার উপর। ফলে দলে দলে লোককে ধর্মান্তরিত হতে হয়, হাজারে হাজার নারীকে ধর্ষণের স্বীকার হতে হয়। এই যুদ্ধের নিয়ম আজকের নয় বহু পুরাতন।
এ কারণেই ধর্ম আর যৌনতা দিয়ে আক্রমন করা হয় লেখককে। তাতে লাভ বা ফলাফল সহজেই চোখে পড়ে।
আর লেখককে ধর্ম এবং যৌনতাকে আক্রমন করতে হয় কেননা মানুয়ের বোধ ধর্ম এবং যৌনতা নির্ভর। বোধ পরিবর্তন করতে হলে আমাদের ধর্ম এবং যৌন জ্ঞানের পরিবর্তন অবসম্ভাবী হয়ে পড়ে। যেমন ধরা যায় একজন নাস্তিকও তার ঐতিহাসিক যৌন জ্ঞান থেকে বের হতে পারে না। বের হওয়াটা বেশ কঠিন। কারণ খুব বেশি কিছু না, কারণ সে ধর্ম ত্যাগ করতে পারলেও তার যৌনতার জ্ঞান পরিত্যাগ করতে পারে নি। যে লেখক সমাজ পরিবর্তন করতে চায় ফলে স্বভাবতই তাকে যৌনতার পাঠশালার বেড়া ভেঙে বের হতে হয়ে। আর এজন্যই আক্রমনটা গিয়ে পড়ে আমাদের ধর্ম আর যৌন ব্যবস্থার উপর।
ধর্মীয় মূল্যবোধের পাশাপাশি যৌনতা জ্ঞানেরও পরিবর্তন আবশ্যক। তা না হলে ধর্মের কুহকী জাল থেকে আমি নয় মুক্ত হলাম, কিন্তু আমার যৌনতা জ্ঞান আমাকে মুক্ত হতে দিবেনা। সে ক্ষেত্রে সব কথা হবে মাটি। এজন্যই লেখকের লক্ষ ধর্ম ও যৌনতা।