নারী বা দ্বিতীয় লিঙ্গ এই জাতীয় লেখা পৃথিবীতে আরও হয়েছে। বোভোয়ারের সেকেন্ড সেক্স পড়ে দেখতে পারেন। প্রায় একই রকম কথা। কথা সেটা না, কথা হলো হুমায়ূন আজাদের কথা গুলো বা অন্যন্য নারীবাদীদের কথাগুলো অসহ্য ঠেকতে পারে পুরুষ তান্ত্রিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে। কিন্তু বাস্তব চিত্র অনেক বেশী ভিন্নতর । নারী শুধু বাংলাদেশ নয়, বোধ হয় সারা পৃথিবীতেই পন্য, পশুর মত তার শরীরের রক্ত মাংস বিক্রি করা যায় এখনও এখানে ওখানে। এক নারী রক্তে ভেজা এক কশাই খানায় আমরা কিনে নিচ্ছি মিষ্টি নরম সুস্বাদু মাংস। আর হুমায়ূন আজাদের নারী বইটা বাংলাদেশে আনেক বেশি প্রাসঙ্গিক এই অর্থে যে আমার সমাজ কাঠামো নারীদের মাত্র মাতৃত্ত্বের মেডেল দিয়ে তার সমস্ত কাজ করা থেকে ঘরের কোনে লুকিয়ে রাখতে চায়। এই মাতৃরূপ চার দেওয়ালের বাইরে যাওয়া বারণ। ফলে এই জায়গা থেকে নারী বা নামে মাত্র পুরুষ হিজরাদের (ভেকী পুরুষ) আর পশুর মধ্যে কোন পার্থক্য দেখি না। কারণ নারী বা মাতৃমঙ্গল গাঁথা এই সমস্ত পুরুষ বা নারীদের দ্বারা গাওয়া সম্ভব না। এই সমাজের অনেক নারীই জানে না জন্ম ব্যাপার টা কি। তারপরও তারা মা হয়ে যায়। এই পদ্ধতি আর পশু প্রজননে মধ্যে ফারাক কই? আমি অন্তত দেখি না। ফলে হুমায়ন আজাদের কথাগুলো আসলে আমরা যে সমাজে বাস করি সেই সমাজের প্রেক্ষিতে থেকে বলা হয়েছে। কথা গুলোকে লিনিয়ার দশা থেকে নিলে মুশকিল। আসলে ইনাদের কে এভাবেই ভুল বুঝিয়েছে সমাজের সুবিধাবাদী শ্রেণী, মোল্লা গোষ্ঠি। হুমায়ূন আজাদরা আমাদের ঘুম ভাঙ্গাতে চেয়েছিলেন। কিন্ত ঘুমের দেশের রাজা আমি ফলে এই ঘুম আমি কেন ভাঙতে দিবো। যে স্বপ্ন বাস্তবতার ভেতর আমরা চলছি , আমাদের রঙীন মাংস খেকো পোকার ঘর বসত, সেই ঘরই থাক, তাই চলুক না। ঘুম ভেঙে বাস্তবতা না দেখাই ভালো। ধর্মান্ধদের গড়া স্বপ্ন খামার ভেস্তে যেতে পারে তাই তারা ভুল ভাবে ব্যাখা করে নানা বিষয়। আসলে কেন তারা হুমায়ন আজাদের ভুল ভাবে ব্যাখা করার চেষ্টা করে? কারণ জাতীয় ঘুম না ভাংলেই ভালো, পৃথিবীর ঘুম না ভাঙলেই ভালো । আমাদের স্বপ্নের ভেতর রেখে ক্ষমতার চোরাচালানের খেলাটা ভালোই খেলে নেওয়া যায়। খেলাটা চলছেই, চালিয়ে নিছ্ছেই তারা। আর যে দিন আমাদের ঘুম ভাঙবে সেদিন উঠে দেখবো এক খাচার পাখির মত আমিও গান গেতে পারি, শুধু উড়া আমার বারণ। ক্ষমতা আর নারী পরস্পর সন্ধিবদ্ধ। ভোগ এবং ভোগের যন্ত্র যখন পরস্পর নির্ভর তখন দুটোরই যত্ন আত্তি করে এরা।
তথাকথিত নারীবাদে আমার রুচি নাই। আসলে নারী বা পুরুষ যে যাই হোক না কেন পরস্পারিক আত্নিক উপলব্ধি দরকার, যে নারী অথবা সে পুরুষ। পুরুষত্ব না যেনো হয় শ্রেণী শোষণের হাতিয়ার আর নারী না যেনো হয় সেই যুদ্ধের মাঠ।
হুমায়ন আজাদরা আমাদের দূরবতী কেউ নন। তারা আমাদেরই লোক। তাদের দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে অতি কৌশলে আমাদের ঘুমের ভেতর। ঘুম ভেঙে গেলে আমাদের আর কী বা বলার থাকে। বলবো তিনি ভালো নন। তিনি নারী এবং পুরুষ এবং সমাজের শত্রু। নব মূল্যায়ন দরকার। না হলে স্বপ্ন চোরেরা সব হাতিয়ে নিয়ে যাবে। আমাদের জন্য হীরে বসানো সোনার খাচার কারিগর তারা প্রস্তুত করতে চলেছে।