somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টেড হিউজের সাক্ষাৎকার ( বাকি অংশ)

১৪ ই জানুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ড্রু হেইনজ : সিলভিয়া প্লাথ সম্পর্কে আরও কিছু বলবেন কি ?

টেড হিউজ : সিলভিয়া আর আমার দেখা হয়েছিল কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার কিছু বন্ধুর প্রতি তার উৎসাহ ছিল আর আমার ছিল তার প্রতি উৎসাহ। আমি লন্ডনে কাজ করতাম তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলো কেমব্রিজেই কাটাতাম। সেখানে ৬-৭ জনের একটা কবি-গ্রুপ ছিল আমাদের। আমাদের কাজ ছিল একসঙ্গে মদ খাওয়া। সহমর্মিতা কিংবা পারস্পরিক আকর্ষণের চেয়ে আমাদের মূল আগ্রহ ছিল আইরিশ, স্কটিশ আর ওয়েসের লোকগীতি আর লোকসংগীতের সুর লেখা কাগজগুলোর প্রতি। আমরা অনেক গান গেয়েছি। রেকর্ড করা লোকগীতি সেই সময় বেশ দুর্লভ ও দুষ্প্রাপ্য ছিল। কবিতা নিয়ে কথা বলার চেয়ে পারস্পরিক উপলব্ধিটাই মুখ্য ছিল তখন। তবে আমরা ব্রডশিটে সাহিত্য সমালোচনা ছাপাতাম। কোনো এক সংখ্যায় আমাদের ওয়েলস ম্যান ড্যানহোয়স সিলভিয়ার-কে খুব বাজেভাবে সমালোচনা করেছিল। অবশ্য সিলভিয়া পরে তার খুব ভাল বন্ধু হয়েছিল। তার মৃত্যুর পর সিলভিয়া চমৎকার একটি এলেজি লিখেছিলেন তাকে নিয়ে। ওই সমালোচনাই সিলভিয়ার মনোযোগ কেড়েছিল। লুকাস মাইয়ার আমেরিকান, যে ছিল আমাদের গ্রুপের সদস্য তার সঙ্গেও সিলভিয়ার যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল। লুকাস মায়ার আবার আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। লুকাস ছিল কৃশকায় আর মদ্যপ। সে খুব বন্য প্রকৃতির উচ্ছৃঙ্খল ছিল। টেনেসি থেকে আগত ব্যক্তির কাছে তুমি যেমন আশা করো। তবে কবিতায় আমরা মুগ্ধ থাকতাম। হার্ট ব্রেন, ওয়েন্স স্টেভেনস ভোকাবুলারি কবিতাগুলো খুবই নতুন শৈলীর কবিতা ছিল। সিলভিয়ার প্রতি সে অনুরক্ত ছিল। সিলভিয়ার মাঝে মাঝে স্বপ্ন বিষয়ক জানার্ল লিখত-- সেখানে লুক কে সে দেখেছে একজন ভ্রমাতীত ব্যক্তি হিসেবে। নিজেদের লেখা নিয়ে একটি ম্যাগাজিন করেছিলাম আমরা সেন্ট বোটলফস রিভিউ নামে, মাত্র একটি সংখ্যাই। প্রকাশনী উৎসবে বড় ডান্স পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল। সিলভিয়া আমাদের পার্টিতে এসেছিল। এর আগে সিলভিয়ার দিকে কখনই চোখ তুলে তাকাইনি। আমার এক ইংরেজ বান্ধবীর কাছ থেকে সিলভিয়া সম্বন্ধে প্রচুর শুনেছি। তবু সেই অনুষ্ঠানে লুকের কবিতা আর আমার কবিতা নিয়ে সে বেশ উৎসাহ দেখিয়েছিল।
হঠাৎ করেই তাকে চিনতে শুরু করি। তার কবিতা পড়ি। আমার মনে হয়েছিল কিছু কিছু দিক দিয়ে সত্যিই সে জিনিয়াস ছিল। এবং হঠাৎ করেই একদিন আমরা পরস্পরের কবিতা আর একে অপরের প্রেমে পড়ে যাই। এর আগের বছর আমি আবার লেখা শুরু করি। বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে তার পরের বছর যে কবিতাগুলো লিখেছিলাম তা The Thought Fox, The Gaguar's Poems, Wind সংকলনের বেশ কিছু কবিতা। আমার এখন মনে হয় সিলভিয়ার সঙ্গে পরিচয়ের পর ওর মতো আমার কবিতারও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে যায়। আমার কবিতায় অন্বেষার দেখা দিল। অবশ্যই সে শুধু আমার জন্য বা তার নিজের জন্য নয়; সে আমেরিকান এবং আমেরিকান সাহিত্যের গর্ব। আমি জানি না আমি তার কী ছিলাম। তলস্তয়, দস্তয়ভস্কি বা এরকম কিছু ধ্রুপদী শিল্পের কথা বাদ দিলে আমার পড়াশোনা তার থেকে বেশ আলাদা ছিল। কিন্তু খুব সহজেই আমাদের ভাবনা-জগৎ একটি বৃন্তে দুটি ফুল হয়ে গেল। আমরা বহু যৌথ স্বপ্ন দেখতাম। অমর কীর্তিময় ছিল আমাদের স্বপ্ন। না চাইলেও একে অন্যের মন বুঝে যেতাম। যদিও আমাদের একে অন্যের ওপর বেশ প্রভাব ছিল তবুও কবে যে আমাদের কবিতা পরস্পর থেকে আলাদা হতে শুরু করেছে তা আমার মনে নেই। তবে প্রথমদিকে এমন ছিল না। অন্যরাও এটা নিশ্চয়ই দেখে থাকবেন আমাদের কবিতায়। আমাদের পদ্ধতি এক ছিল না। নানা রকম সেরা বস্তু, সুন্দর শব্দে ভরা এক সংগ্রহ তার কবিতার কবিতন্তু। খুব গভীর এক সংবেদনের জায়গা থেকেই উঠে আসত তার কারুকাজ। এর সঙ্গে মিশে থাকত মিথ। পাঠককে সে অর্ধচেতনায় দ্বন্দ্বের ভেতর নিয়ে আসে। আমার পদ্ধতি হলো একটা দড়ির শেষ প্রান্ত খুঁজে বের করা এবং গোপন ত্রিভুজটাকে এঁকে ফেলাই আমার ল্য। তার পদ্ধতিটা অনেক বর্ণিল চিত্রিত আর আমারটা মনে হয় অনেক বেশি বর্ণনাত্মক। ১৯৬২-এর অক্টোবরে যখন আমরা আলাদা হয়ে যাই, তার আগে এরিয়ালের কবিতা পর্যন্ত আমরা পরস্পরের কবিতা খুব সরাসরি দেখেছি।

ড্রু হেইনজ : আপনি কী জানেন সিলভিয়া কীভাবে তার জার্নাল লিখত? সেগুলো কী ডায়েরি নাকি কবিতা বা ফিকশন লেখার নোট ছিল?

টেড হিউজ : ভালো কথা, আমার মনে হয় জেনেট ম্যালকম দ্য নিউ ওর্য়াকার এ জার্নালগুলো সম্পর্কে সবচেয়ে যথার্থ কথাগুলো বলেছে : ‘জার্নালগুলোর ভেতর এমন কিছু চর্চা আছে, যা একটু ঘষামাজা করলেই উপন্যাস হয়ে উঠতে পারত। উপন্যাসের ছোট ছোট পরিচ্ছেদ ছিল, যা ঘটছে তা নিয়ে সর্বদা কিছু না কিছু আঁকিবুকি সে করতই এবং তার কিছু না কিছু উপন্যাস ব্যবহার উপযোগী ছিল। শেষপর্যন্ত সে তার জার্নালকে উপন্যাসের নোট বই হিসেবেই ভাবত।’ তারপরও প্রকৃতপক্ষে আমার মনে হয় না যে এর কোনো অংশ তার বেলজার এর মধ্যে প্রবেশ করেছে। সে সেগুলো নিয়ে কাজ করার সময় একটু পরিবর্তন করে ব্যবহার করত, অনুভূতির প্রতীকী উপস্থাপন ছিল তার মধ্যে। প্রকৃত ঘটনা সে কখনই লিখত না। শৈশব, বস্তু এমন অনেক অতীতের নানা ব্যবচ্ছেদ নিয়ে সে লেখার চেষ্টা করত । তার কিছু কিছু ছোটগল্পেও এ টেকনিক দেখা যায়। অতীত অনুভূতিকেই সে প্রকাশ করতে চেয়েছে।

ড্রু হেইনজ : তার শেষ উপন্যাস কী ছিল, যা প্রকাশিত হয়নি?

টেড হিউজ : এটা ছিল প্রায় সত্তর পৃষ্ঠার একটা উপন্যাসের খণ্ডাংশ। তার মা বলেছিলেন, তিনি পুরো উপন্যাসটাই দেখেছিলেন। কিন্তু আমি তা জানি না। আমার জানা মতে ষাট, ঐ বইয়ের সত্তুর পৃষ্ঠা হারিয়ে গিয়েছিল। আমি তোমাকে সত্যি বলছি-- আমার সব সময় মনে হয়েছে, তার মা তা সরিয়ে ফেলেছেন কোনো একবার ঘুরতে এসে।

ড্রু হেইনজ : সিলভিয়া প্লাথের জার্নাল পোড়ানো সম্বন্ধে আপনি কী বলবেন?

টেড হিউজ : শেষ অথবা দুই-তিন মাস বা মাত্র শেষ মাসের জার্নালগুলোই আমি ধ্বংস করেছিলাম। এতে শুধু দুঃখ ছিল। আমি ওর সন্তানদের এগুলো দেখতে দিতে চাইনি। বিশেষ করে তার শেষ দিনগুলোকে ওদের জানতে দিতে চাইনি।

ড্রু হেইনজ : এরিয়াল কাব্যগ্রন্থটি সর্ম্পকে কী বলবেন? আপনি কি সে কবিতাগুলোর পুনর্বিন্যাস করেছিলেন?

টেড হিউজ : সে যেভাবে সেগুলো রেখেছিল ঠিক সেভাবে আমেরিকার কেউই তা ছাপাতে চায়নি। সেই সব প্রকাশকের মধ্যে একজনই এটাকে বিশটি কবিতায় নিয়ে এসে ছাপতে আগ্রহ দেখিয়েছিল। সেইসময় তুমি জান, মাত্র কয়েকজন ম্যাগাজিনের সম্পাদক এরিয়ালের কবিতা ছেপেছিল। তারা মাত্র কয়েকটি কবিতা পছন্দ করেছিল। সেই সময় সেগুলোর বৈশিষ্ট্য খুব বেশি আলাদা কিছু ছিল না। ফলে প্রথম থেকেই একটি প্রশ্ন ছিল বইটির মধ্যে বিশেষভাবে প্রত্য করার মতো এমন কী ছিল। আমার ইচ্ছা ছিল বইটি সম্পূর্ণ তার বৈচিত্র্য নিয়ে প্রকাশিত হোক। আমার এখনো মনে আছে, যে ব্যক্তি ওই কবিতাগুলোকে কেটেকুটে বিশটা কবিতায় আনতে বলেছিল তাকে আমি একটা দীর্ঘ অসংযত চিঠি লিখেছিলাম আর তাকে বলেছিলাম কাজটা অসম্ভব। কিছু কবিতা বাদ দিয়ে তার মধ্যে আরও কিছু কবিতা ঢোকাব কি না এ প্রশ্নে বেশ দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম তখন। কিন্তু সমস্যা হলো সিলভিয়ার কবিতার বইয়ের পাণ্ডুলিপি যে অবস্থায় ছিল ঠিক সেভাবে আমেরিকান কোনো প্রকাশক বইটি প্রকাশ করতে রাজি হয়নি। তবে ইংল্যান্ডের ফেবার প্রকাশনী যে কোনো ফর্মেই বইটি প্রকাশ করার জন্য রাজি হয়েছিল। শেষমেশ আমি একটি আপোসে পৌঁছে যাই, বইটির কিছু কবিতা বাদ দিয়ে তাতে নতুন কিছু কবিতার সংযোজন করি। এর ফলে আমি তার কবিতা নষ্ট করেছি এবং যেভাবে সিলভিয়া তার কবিতা বিন্যাস করেছিল তা আমি উল্টে-পাল্টে দিয়েছি এমন একটা তীব্র দোষারোপ আমার ওপর করা হয়। তবে এ ঘটনা ঘটেছিল সিলভিয়ার আত্মহত্যার বিশ-ত্রিশ বছর পর। তবে এর ছয় বছর পরই সিলভিয়া সমগ্র প্রকাশিত হয়-- সেখানে হুবহু তার এরিয়েল ছাপা হয়েছে, সিলভিয়া যেমন রেখে গিয়েছিল ঠিক সেই অনুসারে। এক বছর আগে আমি সব কনটেইন আর তার কবিতার ক্রমানুসারে এরিয়েল প্রকাশ করেছি। এ বিষয়ে কৌতূহলী যে কেউ এটা দেখতে পারেন। অপরপ,ে কেমন ছিল তার কবিতার ক্রম? সে প্রতিনিয়ত তার কবিতার পাণ্ডুলিপি নানাভাবে সাজাত-- সব থেকে ভালোভাবে সেগুলো সে সাজাতে চাইত। সে জানত সব সময়ই নতুন নতুন সম্ভাবনা থেকে যায়।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×