মার্ক স্ট্যান্ড আর আর ডাব্লিউ. এস. মারউইনের সাথে আপনার সুসর্ম্পক ছিলো। আপনার কাজের সাথে যদি তাদেও কাজের তুলনা করা হয় তবে বিষয়টাকি আপনি কিভাবে দেখবেন?
ট্রেড হিউজ: মারউইনের লেখার সাথে আমি বেশ পরিচিত ছিলাম। মার্ক স্ট্যান্ডের সাথে পরিচয় হওয়ার আগ পর্যন্ত তার কাজ সম্ভন্ধে তেমন কিছু জানতাম না। পরিচয়ের পর বেশ গুরত্ব সহকারে তার লেখা পড়েছি। আগে থেকেই বিল মারউইনের সাথে সম্পর্ক ছিলো। পঞ্চাশের দশকে জ্যাক সুইনির মাধ্যমে তার সাথে আমার পরিচয় হয়। জ্যাক সুইনি হাবার্ডের ল্যামন্ট পোয়েট্রি লাইব্রেরীর পরিচালক ছিলো। লন্ডনে তাদের বাড়ি ছিলো। আমি আর সিলভিয়া ১৯৫৯ সালের শেষের দিকে লন্ডনে ফিরে আসি তখন তার আমাদের নানা ভাবে প্রচুর সাহায্য করেছিলো। ডিডো মারউইন আমাদের ফ্লাট খুঁজে দিয়েছিলো। আমাদের মেয়ের জন্মের পর সে খাবার রান্না করে নিয়ে আসতো। বিলের সাথে আমাদের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিলো। সে তখন আমার কাছে খুব গুরত্বপূর্ণ একজন লেখক ছিলো। সে সময়টা তার কবিতার উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় ছিলো -- সে সময় তার কবিতার বেশ কিছু বিবর্তন ঘটেছিলো। কীটের ভেতর থেকে যেমন প্রজাপতির জন্ম হয় ঠিক তেমনি তার কবিতার নবজন্ম ঘটছিলো তখন। আমারা খুব ঘনিষ্ঠ ছিলাম, মাত্র কয়েকশ গজের ব্যবধানে আমারা থাকতাম। খুব ধীরে ধীরে আমাদের অনুভূতির পরিবর্তন ঘটছিলো। সময়টা ছিলো আমার জন্য খুবই গুরত্বপূর্ণ। সেই সময় আমি আমার দ্বিতীয় আর তৃতীয় কাব্য সংকলনের বৈশিষ্ট্য থেকে বের হতে চাচ্ছিলাম। এরই ফলাফল উডো । এর কিছুদিন পর সিলভিয়া ১৯৬২ তে যখন এরিয়াল লিখছিলো তখন তিনি সিলবিয়ার জন্য গুরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলো। বিল তখন বিবিসি এর জন্য পাবলো নেরুদার কিছু কবিতা অনুবাদ করেছিলো। যা এরিয়াল এর মধ্যে সংগোপনে ব্যবহৃত হয়েছে। এখনও সেই কপি আমার কাছে আছে। যা সিলভিয়া কে সাহায্য করেছিলো তা ঠিক নেরুদার কবিতা নয়। বিল যেভাবে নেরুদাকে দেখেছিলো সিলভিয়াও সেই দৃষ্টিতে নেরুদা কে দেখেছিলো। আমার মনে হয় বিলের সমকালীন আমেরিকান অথবা ব্রিটিশ লেখকদের মধ্যে তিনিই সবথেকে বেশি নানা দেশ ঘুরেছিলেন। আশ্চার্য রকম দক্ষ আর সহযোগিতাকামী মনোভাবের অধিকারী ছিলেন তিনি।
অনেক কবিই ' স্বীকারোক্তি মূলক ' কবিতা লিখেছেন। এ সম্ভন্ধে আপনি কি মনে করেন?
ট্রেড হিউজ: গেত্যে বলতেন তার প্রত্যেকটা কাজ একএকটা স্বীকারোক্তি, তাই নয় কি? একটা বড় দৃষ্টি নিযে তার লেখালেখির দিকে তাকাও, শেক্সপিয়ার সম্ভন্ধেও তুমি একই কথা বলতে পারো। সম্পূর্ণ আত্ন-নিরীক্ষা আর আত্ন-অভিযোগ, খুব নগ্ন ভাবে স্বীকারোক্তি। আমার তাই মনে হয়। তুমি তাকালেও দেখতে পাবে। আমার মনে হয় কবিতায় বাস্তব কাব্য জীবন থাবকেই পারে। আর আমার আরও মনে হয় প্রতিটি প্রকৃত কবিই আমাদেও ভাসিয়ে নিয়ে যায়, সংযোগ তৈরি করে এমন এক জায়গার সাথে যা হয়তো লেখক বোঝাতেই চাননি। তবে তা আমাদেও সাথে যোগাযোগ তৈরি করতে চায়, পাঠককে সে কিছু দিতে চায়। সম্ভবত লেখার বার্তাটাকে লেখার মধ্যে খুব সংগোপনে বুনে দিতে হয়। এই গোপনীয়তাই হয়তো কবিতা সৃষ্টি করে। আর কবিতার ভেতর থাকা চাই এক গোপন চোরাপথ যার ভেতর দিয়ে নিষিদ্ধ ভাবে ডুকে পড়তে পারে নানা দৃশ্য। আমরা আমাদের ধারণা থেকে লিখি, প্রকৃত পক্ষে আমার কিন্তু কিছু বলতেই চাই আমাদের লেখার মাঝে। খুব গভীর ভাবে আমারা একে অন্যেও সাথে যোগাযোগ করতে চাই। গভীর একটা রহস্য থাকা চাই কবিতার মধ্যে। কেন আমারা লুকিয়ে পড়ছি না? চুপ হয়ে যাচ্ছি না? কেন আমরা বগ বগ করে যাচ্ছি? কেন মানুষ স্বীকারোক্তি দেয়? আমার মনে হয় কী জানো যদি তুমি তোমার কবিতায় গোপন স্বীকারোক্তি দিতে না পারো তবে তুমি কবি হয়ে উঠতে পারবে না। এমনকি কোন গল্পও লিখতে পারবে না। তবে অধিকাংশ কবিতা সেই অর্থে স্বীকারোক্তি মূলক নয়, এর কারণ ছদ্মবেশের ভেতর বহু কিছু লুকিয়ে থাকে -- এই ছদ্মবেশই কবিতার সফলতা বয়ে আনে। অদ্ভুত একটা কার্গোতে করে নিজের গোপন ইচ্ছার মালামাল কবিতার মধ্যে ডুকে পড়ে -- সাধারণ একটা কৌতুহল থেকেই এমন হয়। প্যারাডাইস লস্ট আর স্যামসন অ্যাগোনিস্টার একদম তলানীর দিকে তাকাও দেখবে কী মিল্টনকে পরিচালিত করেছে। রবার্ট লোয়েলের লাইফ স্ট্যাজিস এর অধিকাংশ লেখা, অ্যানি সেক্সটনের কবিতা আর সিলভিয়ার কবিতায় তাদের জীবনের নানা দৃশ্য খুব আটোসাটো ভাবে সুনিদিষ্ট ভাবে ঢুকে গেছে। সিলভিয়া কাজটা তো দূর পর্যন্ত করেছিলো যে তার গোপনীয়তা তার জন্য খুব ভয়াবহ হয়ে উঠেছিলো শেষ দিকে। সে খুব ভয়াবহ ভাবেই এগুলো উন্মোচন করতে চেয়েছিলো। এভাবে তার আত্ন-শক্তি অতিমূল্যায়ন তুমি করতে পারবে না। সে বিষয়ে তার আগ্রহ ছিলো না, সে বিষয়ে সে লিখেছে। দ্য বেল জার আর এরিয়াল এর কবিতা গুলো তার জীবন কে কোথায় নিয়ে গিয়েছিলো তা সে মৃত্যুও আগের দিন গুলোতে বুঝতে পেরেছিলো। সে এসমস্তেও ভেতর থেকে বের হতে চেয়েছিলো। নেটিভ আমেরিকানরা যেমন কদিন পর পর বলে পুরো সমাজের মধ্যে তাদেও জীবনই সবথেকে বেদনাদায়ক তেমনি সিলভিয়া প্রায় প্রায় এমন কথা বলতো। সবার চোখের সামনে সে এমন করতো। নির্ভৃতে এমন করতো তা কিন্তু নয়। একারণেই একটা নির্দিষ্ট সময় পর কবিদের বই প্রকাশ করতে হয়। কারণ তারা জানে খ্যাতি কি জিনিস। না, যতক্ষণ না এটা প্রকাশিত হচ্ছে ততখন যেনো তাদেও মুক্তি নেই। সব কিছুর পর আমার মনে হয় সিলভিয়া তার চরম অবস্থায় উপনীত হয়েছিলো।
(চলবে.....)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ১:৫৭