আপনি কি মানুষ? শিরদাঁড়া সোজা আছে কি?
ধর্ষণ, ইভটিজিং যেন সিডরের গতিতে আমাদের সমাজে আঘাত হানছে। তবুও না দেখার ভান করে আমরা এগিয়ে চলেছি। আশেপাশে যেন কিছুই হয় নি এমনি একটা ভাব আমাদের। এর ফল যে কতটা মারাত্মক হতে পারে সেটা নিয়ে কি একবারো ভাবেন নি?
ক্যান্টনমেন্টের মত স্থানে ধর্ষণের ঘটনা ঘটলো এবার। রাস্তার ওপর পড়ে আছে জুতা, ছেড়া চুল, একটু দূরে মোবাইল ফোন আর একটু দূরে গলা কাটা লাশ, কান থেকে তখনো রক্ত ঝরে পড়ছে, ধর্ষনের পর হত্যা করা হয়েছে তনুকে। জ্বি, দেশের সবথেকে নিরাপদ স্থান বলা হয় ক্যান্টনমেন্টগুলোকে তেমনই একটা ক্যান্টনমেন্টে ধর্ষণ করে হত্যা করা হলো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ইতিহাস বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুকে। সেদিন কিন্তু আর বেশি দূরে নয় যখন আপনার বাসার মধ্যে ঢুকে আপনার বাসার কাউকে ধর্ষণ করে যাবে ধর্ষকের দল।
আমরা তো আবার ধর্ষণে ধর্ষিতার দোষও খুঁজে পাই। ধর্ষিতার পোশাক কেমন ছিল, সে পর্দা করতো কিনা, সে রাতে বাইরে বের হয় কেন, খাবার আলগা থাকলে মাছি বসবেই। হয়তো আমাদের মধ্যে মানুষরূপী কিছু শূকরশাবক এরমধ্যেই তনুরও দোষ খুঁজে পেয়েছে। সে মেয়ে হয়ে রাতে বাইরে কেন টিউশনি করতে যেত, হিজাব পরে কিন্তু বোরকা পরে নাই কেন, বেগানা মেয়েটা নাট্যকর্মী ছিল!!!
এমন দোষ দিয়ে আর কতদিন চলবেন? সবাইকে কি আপনার মত শূয়োরশাবক ভেবেছেন?
এদেশে গরু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। গরুরও কি পর্দার দরকার ছিল?
গুগুলে সার্চ দিয়ে দেখেন মসজিদে আরবী পড়তে যাওয়া দশ বছর বয়সী ছাত্রী মসজিদের ইমামের কাছে ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
দশবছর বয়সী ছাত্রীর কি এমন খারাপ পোশাক ছিল?
আমি যে কলেজিয়েট স্কুলে পড়তাম সেখানে দ্বিতীয় শ্রেনীর বাচ্চাদের জন্য নতুন করে ইংলিশ মিডিয়াম+হেফজখানা খোলা হয়েছিল। ঐ বাচ্চাদের স্কুলের আবাসিকে থাকতে হতো। ঐ বাচ্চাদের মধ্যে চারটা বাচ্চাকে হেফজখানার দায়িত্বে থাকা মাওলানা রাতে ধর্ষণ করে।
তো কি বলবেন? ছেলে বাচ্চাদেরও পোশাক খারাপ ছিল?
বাঙালি সেটেলারদের দ্বারা প্রতিনিয়ত পাহাড়ে যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে সেটা নিশ্চয় জানেন। তাদের দোষটা কোথায় বলবেন কি? অবশ্য পাহাড়ি ধর্ষিত হলে আমাদের কি!!!
আর একটা কথা মেয়েরা না খাবার নয়। তারা মানুষ। তাদের সাথে খাবার তুলনা কোনদিকেই যায় না। নিজের মা অথবা বোনকে কোনদিন খাবার ভেবেছেন?
ধর্ষণকে জায়েজ করার জন্য পোশাকের দোহায় বহুৎ দিয়েছেন। দয়া করে আর দিয়ে নিজেকে পশুশাবক হিসেবে পরিচয় দিয়েন না।
আজ আমি আমার মায়ের সাথে রাস্তায় বের হলে মায়ের পিছন পিছন হাঁটতে হয় যদি কেউ পিছন থেকে হাত দেয়। আজ আমার মা বাসে উঠলে তার শরীর হাতানো হয়। আজ আমার বোনটা পড়তে যাওয়ার সময় গলিতে কুরুচিপূর্ণ কথা শোনে। রাতে আমার বোনটা বাসায় এসে কাঁদে। আজ আপনার মেয়েটা ভয়ে স্কুলে যেতে চায় না। আজ আমাদের বাড়ির মেয়েরা বাইরের কোন অনুষ্ঠানে যেতে ভয় পায় যদি ভিড়ের মধ্যে একলা পড়ে যায়! টিএসসির কথা নিশ্চয় ভুলে গেছেন?
এগুলো দেখে আমি কিন্তু কাঁদি। ভাবি আমার বোনটা কত অসহায়। রাস্তায় হাঁটতে হয় ওকে কতটা কষ্ট নিয়ে। ধর্ষণের কথা শুনলেই ভাবি এটা যদি ওর সাথে হয়!
আমার বোনটার কাছে আমি আজ বড় অসহায়। আমার মায়ের সামনে আমি আজ অসহায়। আপনার মেয়ের সামনে আপনি একজন কিছু না করতে পারার দোষে অপরাধী বাবা।
কোন মেয়ে কি পোশাক পরলো, রাতে টিউশনি করে নাকি জব করে, হিজাব পরে নাকি বোরকা পরে, কোন রাজনৈতিক দলের লোক ধর্ষণ করলো, মেয়েটা তো আমার কেউ না.... এগুলো ভেবে আর কতদিন চোখ বন্ধ করে ভিক্টিমের পাশ দিয়ে হেঁটে নরম বিছানায় ঘুমাবেন? বিবেকের উপরে কি এতই ময়লা পড়ে গেছে?
আপনাদের পায়ে পড়ছি দয়াকরে আশেপাশের মেয়েকেগুলো বোন অথবা নিজের মা ভাবুন। মেয়ে দেখলে স্লেজিং করার সময় নিজের বোনটার কথা শুধু একবার মাথায় আনুন। ধর্ষিতা বোনটার পাশে দাড়ান। গ্রাম্য সালিশে ধর্ষিতাকে যখন অপদস্থ করা হয় প্রতিবাদ করুন। এটা মাথার ঢুকিয়ে নিন যে আপনার ধর্মের কোথাও লেখা নেই যে পোশাক দেখে ধর্ষণ করা জায়েজ। তনু বোনটার হত্যাকারীদের বিচারের জন্য নিজ জায়গা থেকে দাবি তুলুন। নিজের এলাকার ছেলেদের নিয়ে ছোট ছোট সংঘ গড়ে তুলুন বোনদের রক্ষায়। অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ুন।
আর্মি ইন্টেলিজেন্সগুলো বেশ চৌকস। চেষ্টা করলে তারা ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে তনুকে ধর্ষণ করে হত্যাকারীদের ঠিক খুঁজে বের করতে পারবে। তবে এরজন্য চাই একটু জোরালো দাবি। একসাথে নিজের জায়গা থেকে প্রতিবাদ করা। আজ যদি তনুর জন্য দাবি না তোলেন একদিন হয়তো আপনার আদরের ছোটবোন অথবা বড় বোনটার লাশ নিয়ে একা একা কাঁদতে হবে। আপনার ভবিষ্যৎ কন্যা সন্তানের কাছে অপরাধী হয়ে থাকতে হবে।
আর কয়টা তনুদের হারিয়ে যেতে দেবেন? বোনদের কষ্ট কবে বুঝতে শিখবেন? কবে সাহস করে রাস্তায় স্লেজিং করা শূয়োরগুলোকে ধরে চপেটাঘাত করবেন বোনের ভাই হয়ে? যে মায়েদের জন্য পৃথিবীর আলো দেখলেন তাদের বিষয়ে আপনি এতটা চুপ থাকবেন? শরীরে কিসের চামড়া?
প্রতিদিনের নিউজপেপারগুলো চোখে পড়ে? ধর্ষণ কিংবা ইভটিজিং এর খবরগুলো দেখেন? পাহাড়ি মেয়েদের দুর্ভোগের কথা শুনেছেন? রাস্তায় হাঁটার সময় চোখ খোলা থাকে? একটা মেয়েকে যখন রাস্তায় বাজে কথা বলা হয় তখন না শোনার ভান করে পাশ কাঁটিয়ে চলে যান? সুযোগ পেলে নিজেও মেয়েদের যৌন হয়রানি করেন? কিংবা ধর্ষণের ইচ্ছা জাগে?
বাড়িতে নিশ্চয় মা আছে? আদরের ছোট বোন আছে? কিংবা ভবিষ্যতে কোন কন্যা সন্তানের পিতা হবেন? তাদের কথা মাথায় আছে নাকি চোখ কান বন্ধ রেখে অপেক্ষা করছেন কবে আপনার বোন, মা অথবা আদরের লক্ষী মেয়েটার অবস্থা তনুর মত হবে? প্রতিবাদ করবেন কবে যেদিন নিজের বাসায় ধর্ষণ ঘটবে? প্রতিরোধের সময় আসে নি? মেয়েদের বোন ভেবে ঝাপিয়ে পড়ার সময় কি এসেছে?
.
শূণ্য থেকে এক আসে। তারপরে ২,৩,৪........ শুরু হয়। আপনি উঠে আসুন। প্রতিবাদ করুন, প্রতিরোধ গড়ে তুলুন, দিনের শেষে দেখবেন লাইনটা অনেক বড় হয়ে গেছে...... আসুন তনুদের পথ থেকে কাঁটাগুলো ফেলে দিয়ে তাদের পথের আলো হয়ে দাড়িয়ে যাই.... আমি কিন্তু আমার বোনের কথা মাথায় রেখে চলাচল করি।
লাইনটা কি বড় করবেন? প্রকৃত ভাই কিংবা সন্তান হয়ে উঠতে পারবেন? বিবেকের ময়লাটা এবার ঝেড়ে ফেলবেন না? নপুংসক হয়ে আর কতদিন? প্রশ্ন রেখে গেলাম মাননীয় স্পীকার......
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ২:২১