somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তনু, আমরা, সেনাবাহিনী এবং হয়তো

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একটি লাশ পড়ে আছে যাতে শত ক্ষতের চিহ্ন, জামাটা ছেঁড়া-ফাটা, রক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, তার পাশে জুতো, লাশটি একটি মেয়ের। ছেঁড়া জামাটা আর ক্ষত-বিক্ষত মেয়েটা যেন বলে দিচ্ছে আমি ধর্ষিতা আর ঘৃণা ছুঁড়ে দিচ্ছে ধর্ষকের প্রতি। তাই আমরা জেগে উঠলাম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, পথের ধুলোয়, ব্যানারে, মশালে, ঝাড়ুতে আমরা জেগে উঠলাম। ধিক্কার দিতে থাকলাম ধর্ষককে। তবে সবচেয়ে রহস্য হয়ে রইল একটি বিষয়, কে এ নিকৃষ্ট, যে এমন কোমল এক নারীকে ধর্ষণ করেছে অতঃপর খুন, কে এ পাষণ্ড! এ রহস্য জানার আশায় আমরা প্রহর গুনতে শুরু করলাম, তবে টের পেলাম না সব কিছু পানশে করার চেষ্টা চলছে।

শেষ অবধি আজকে খবর পেলাম, এ খবর যে সে খবর নয়, হয়তো এ খবরটি হয়ে যেতে পারে আগামীকালের প্রিন্টেড বিভিন্ন পত্রিকার প্রথম পাতার উপাদান। খবরটি হলো, মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয় নি। ডাক্তার মশাই যে খুব রঙ চঙ মাখিয়ে এসব করেছেন তা বুঝতে কারো বাকী নেই, বুঝতে বাকী নেই আমার কিংবা আপনার। হয়তো আরেকটু পরিষ্কার করে বলতে হলে বলতে হয়, তাকে দিয়ে এটা করানো হয়েছে। এছাড়া ডাক্তারদের এসব কাজ করায় বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দিতে হয় ময়না ঘরে। তা না হলে ময়না ঘরে টেকা দায়। বিষয়টা অনেকটা এরকম, দুর্নীতি করো নয় ফোটো, দুর্নীতি করার মত লোকের অভাব নেই এদেশে। তুমি গেলে এমন একজনকে এনে বসাবো, যে শুধু খাবে না পুরোদস্তুর গিলবে।

সে যাই হোক, এ খবরে আপনি অবাক হতে পারেন, রাগান্বিত হতে পারেন, ক্ষোভে ফেটে পড়তে পারেন। তবে এ খবরটা কেন জানি আমার কাছে অতিশয় প্রত্যাশিত মনে হয়েছে। তনু নামের মেয়েটার হত্যাকে নিয়ে যত জল্পনা-কল্পনা হয়েছে, তাতে একটি বিষয় অনেকে শক্তভাবে তুলে আনার চেষ্টা করা হয়েছে, সেটা হচ্ছে সেনাবাহিনী এর সাথে জড়িত। এই জল্পনা-কল্পনা যে একদম মিথ্যা নয় তা বুঝি আজকের খবরটিই বলে দিচ্ছে। তবে একটা সত্য কথা হচ্ছে, আমরা যেভাবে সেনাবাহিনী নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করেছি সেটা এদেশের প্রধান প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য সুখকর নয়। যদি এ হত্যাকাণ্ড সেনাবাহিনীর কেউ করে থাকে তবুও এর দায় মেনে নেওয়া কতটা বিধ্বংসী তা অন্তত অতি সাধারণ অনেকের পক্ষে বুঝে ওঠা কঠিন।

সেনাবাহিনী যে আমাদের গর্বের একটা বিষয় তা একদম মিথ্যে নয়, এটা আমজনতা সবাই মান্য করে তবে সুযোগ পেলে যে আমজনতা একে আক্রমণও করতে পারে তা বুঝি নতুন করে আবার প্রমাণ হলো। নীতি-নৈতিকতা যে নলের মুখকেও ভয় পায় না, এজন্য এমনটি হয়েছে। এদেশের মানুষেরা বড্ড নীতিবান বড্ড সমালোচক। মানুষের এই সমালোচনাতে হয়তো তনু হত্যার অপরাধী ধরা পড়বে না, পড়লেও সেটা সাজানো নাটক ছাড়া কিছু হবে বলে মনে হয় না। চারিদিকে রব চলতেই থাকবে এ নিয়ে, তারপর ধীরে ধীরে একসময় সব নিস্তব্ধ হয়ে যাবে। তনুর লাশ তখন হয়তো জৈব সার হয়ে কোন উদ্ভিদকে পুষ্টি জোগাবে।

এত হয়তো সংশয়ের ভীড়েও একটি ঘটনা হয়তো ঘটে যাবে, (হয়তো) দোষী সেই সেনাবাহিনীর সদস্য/সদস্যগুলোকে শাস্তি দেওয়া হবে, নয়তো ইতিমধ্যে শাস্তি দেওয়া হয়ে গেছে, কেননা সেনাবাহিনীর মত সুশৃঙ্খল বাহিনী এরকম ঘটনা সৃষ্টিকারীকে ছেড়ে দেবে এটা অবিশ্বাস্য। এই হয়তো নয়তো সত্য হলেও কেউ কখনো জানতে পারবে না, কেননা এটা প্রকাশিত হলে মহা কেলেঙ্কারি রটে যাবে দেশ থেকে দেশান্তরে। আমি এবং আপনারা কখনো চায় না এদেশের মান নুয়ে পড়ুক, এদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী দাগী হোক। সংগোপনের কোন বিষয় থেকে থাকলে সংগোপনেই হোক, তবু যেন তনু হত্যার বিচার হয় এটাই আমার প্রত্যাশা।

সেনাবাহিনী পুলিশবাহিনীর ঘটনায় আমরা উপচে পড়ি প্রতিরোধে, পড়াও স্বাভাবিক কেননা রক্ষক ভক্ষক হলে তা কেই বা সহ্য করে। তবে আড়ালে আবডালে এমনকি প্রকাশ্যে নারী নির্যাতন হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত, যেসবের পিছনে মাঝে মাঝে পড়লে সমাজের সংস্কার হবে, ধর্ষকেরা ভীত হবে, নারী নির্যাতন করতে পুরুষের হাত কাঁপবে।

ওদিকে ধারাবাহিকভাবে নারী নির্যাতন, শিশু শ্রম ইত্যাদি চলতে থাকবে, সুতরাং আমাদের থেমে থাকলে চলবে না। যে যার অবস্থান থেকে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখতে হবে। মাঝে মাঝে একান্তে ভাবি, নারীরা এত বোকা কেন, এত নীরব কেন, এত সহনশীল কেন? সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে যে মহানুভবতার পরিচয় নারীরা দিয়ে যায় তার প্রতিদান সব পুরুষেরা দিতে চায় না। যে দিতে পারে সেই সুপুরুষ।

বিঃ দ্রঃ লেখাটির কোন অংশ কোন সংবাদ মাধ্যম কিংবা ব্লগে প্রকাশের জন্য অনুমতি দেওয়া গেল না- মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:১১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিচারের জায়গা না পেলে মানুষ প্রেত হয়ে ওঠে

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ১২ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:৩৯


(সামাজিক অবিচার, রাষ্ট্রীয় অনুপস্থিতি এবং আন্ডারওয়ার্ল্ড কাঠামোর মধ্যে সাধারণ মানুষ কীভাবে হারিয়ে যায়।)

মানুষ যখন বারবার অবিচারের শিকার হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

=একদিন এসো সন্ধ্যে ফুরোলেই=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১২ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৫



ভালোবাসা ছড়ানো পাতায় পাতায়, সবুজাভ স্নিগ্ধ প্রহর আমার
এখানে উঁকি দিলেই মুগ্ধতারা চুয়ে পড়ে টুপটাপ;
ধূসর রঙ প্রজাপতিরাও এখানে রঙিন ডানায় উড়ে,
কেবল অনুভূতির দোর দিতে হয় খুলে, চোখগুলো রাখতে হয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

চীনের জে-১০ যুদ্ধবিমান কোনো চকচকে ল্যাব বা বিলাসবহুল ফ্যাক্টরিতে জন্মায়নি

লিখেছেন নাঈম আহমেদ, ১২ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:২৬

চীনের জে-১০ এর পেছনেও রয়েছে সেই ত্যাগ আর সংকল্পের গল্প—
১: গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) দলের অক্লান্ত পরিশ্রম।
২: বাইসাইকেলে চেপে কাজে যাচ্ছেন প্রধান প্রকৌশলী সু চিশৌ।
৩: প্রথম উড্ডয়নের পর কেঁদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Bangladesh bans ousted PM's Awami League under terrorism law

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ১২ ই মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫৬





হায়রে এরেই বলে কর্মফল। ১৭ টা বছর গুম , খুনের মাধ্যমে এক ভয়ের রাজ্য তৈরী করে কেড়ে নেয়া হয়েছিল মানুষের বাকশক্তি। চোখ, কান, মুখ থাকতেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিন গেলে আর দিন আসে না ভাটা যদি লয় যৌবন

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১২ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:২৬


এমন কোনো ইস্যু আছে, যা নিয়ে জাতি পুরোপুরি একমত? ৫০%ও একমত এমন কোনো বিষয় চোখে পড়ে না। একপক্ষ রবীন্দ্রনাথের গান জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মনেপ্রাণে ধারণ করে, আরেক পক্ষ বদলাতে চায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×