অনেক অনেক দিন আগে পৃথিবীতে অনেক রাজ্য ছিল, আর এখন পৃথিবীতে আছে অনেক দেশ। এই অনেক অনেক দেশের ভিতর একটা দেশ ছিল যার নাম সুখীদেশ। সুখীদেশে ছিল দুই ভাই একজনের নাম ‘অ’ আর একজনের নাম ‘ক’। অ আর ক-এর ভিতর ছিল গলায় গলায় ভাব। কিন্তু একদিন তারা দেশ চালানোর জন্য দুটি দল খুললো, একটার নাম অ-দল আর একটার নাম ক-দল। অ-দল বলে আমরা স্বরবর্ণের দল, আমাদের ছাড়া ক-দল অচল। ক-দল বলে আমরা ব্যঞ্জনবর্ণের দল, আমাদের সংখ্যা অ-দলের চেয়ে বেশী তাই আমরাই শক্তিশালী। এই নিয়ে দ্বন্দ্ব চলতেই থাকলো। যত দ্বন্দ্বই চলুক না কেন, সুখীদেশের লোকেরা সুখেই ছিল। একবার অ-দল ক্ষমতাই আসে, আরেকবার ক-দল ক্ষমতায় আসে। অ-দল ক্ষমতায় এসে শুধু একটা কথাই প্রচার করার চেষ্টা করে তা হল, তারাই সেরা। ক-দল ক্ষমতাই আসলেও তাই। এসব কথা বলতে গিয়ে দেশের মানুষের কথা ভুলে যেত।
তবে দেশের মানুষেরা তাদের কথা শুনে অনেক বিনোদন পায়। এমন বিনোদন নাকি পৃথিবীর কোন অভিনেতাও দিতে পারে না। তাই দেশের লোকজন সব অনুষ্ঠান-সংবাদ বাদ দিয়ে তাদের কথা হা করে শোনে আর হা হা করে হাসে। এরকম নিখাদ বিনোদন দানের জন্য দেশের লোকজন তাদের খুব ভালোবাসে। সেই দেশে এ, বি, সি, ডি, ই, এফ ইত্যাদি দল থাকলেও তারা অভিনয় করতে পারে না, তাই দেশের লোকজন তাদেরকে দলই ভাবে না। তবে বিপত্তি দেখা দিল, অ-দল তখন ক্ষমতায়। অ-দল ঘোষণা দিল যেহেতু আমাদের ছাড়া কোন ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণ করা সম্ভব নয়, তাই দেশে শুধু একটা দল-ই থাকবে তা হল অ-দল। একথা শুনে তো ক-দল গেল ক্ষেপে। তারা নানান ভাবে দেশের জনগণকে বুঝাতে লাগল, ব্যঞ্জনবর্ণ ছাড়া কথা বলা সম্ভব নয়, কেননা প্রতিটি বাক্যে ব্যঞ্জনবর্ণই এখন বেশী দেখা যায়। দ্বন্দ্ব হতে হতে দ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেল। তখন অ-দল আর ক-দল গেল দানবদেশের কাছে।
দানবদেশ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ। দানবদেশের কাজ বিভিন্ন দেশকে নিজের কব্জায় আনা। দানবদেশের প্রেসিডেন্ট অ-দল আর ক-দলের সব কথা শুনে পড়ে গেল বিপাকে। কীভাবে এই সমস্যার সমাধান হবে এটা নিয়ে কাজ করার জন্য দুইজন এজেন্ট নিয়োগ করলো দানবদেশ। একজনের নাম কিলি আরেকজনের নাম বিলি। কিলি-বিলি ছিল দুই ভাই। তারা ছিল দানবদেশের দুই বিশিষ্ট পরামর্শক। কিলি-বিলিকে ডেকে দানবদেশের প্রেসিডেন্ট বলল, ‘কিলি, তুমি গোপনে অ-দলের সাথে যোগাযোগ করো। আর বিলি, তুমি ক-দলের সাথে যোগাযোগ করো। আমাদের মিশন সুখীদেশকে অসুখীদেশ বানানো। এ কাজটা করতে পারলেই আমরা সুখীদেশকে কব্জায় এনে বিভিন্ন স্বার্থ উদ্ধার করতে পারব।’
বেচারা অ-দল, ক-দল এসবের কিছুই জানত না। কিলি আর বিলি দুই দিক থেকে কুবুদ্ধি দিতে লাগলো দুইদলকে। কিলি অ-দলকে বলত, আমি যা বলছি তা সব অ-দলের ভালোর জন্য করছি। বিলি ক-দলকে বলত, আমি যা বলছি তা ক-দলের ভালোর জন্য। কিলি-বিলির পরামর্শ শুনেতো অ-দল আর ক-দল বেজায় খুশী। তবে অতি দ্রুতই সুখীদেশের আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা শুরু হল। অ-দল আর ক-দলের দ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেল। এমনকি স্বরবর্ণ আর ব্যঞ্জনবর্ণ একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলো। যুদ্ধ বেধে গেল সুখীদেশে।
ওদিকে দানবদেশের প্রেসিডেন্ট কিলি আর বিলিকে ডেকে গোল্ড মেডেল উপহার দিল। কিলি-বিলিতো মহাখুশী। এখন কিলি আর বিলি সুখীদেশ চালায় দানবদেশের একটি রেস্টুরেন্টে বসে। দু’জন সুখীদেশ চালায় আর ব্যাপক বিনোদন পায়। কিন্তু সুখীদেশের জনগণ আর বিনোদন পায় না, এই বিনোদনের অভাবে তারা এখন অসুখী। তারা কোন কাজে-কর্মে আনন্দ পায় না। এখন তারা আর অ-দল আর ক-দলের দ্বন্দ্ব দেখে না। এখন তারা নিরসভাবে কমেডি নাটক-সিনেমা দেখে মন ভালো করার চেষ্টা করে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:০২