টিএসসিতে ঘটনা ঘটেছে, অতি নেক্কারজনক ঘটনা। এই ঘটনার সূত্র ধরে মিছিল হচ্ছে, মিটিং হচ্ছে, পত্রিকার পাতা-ফেসবুকের পাতা ভরে যাচ্ছে। একেকজন একেক সমাধানের ফতোয়া দিচ্ছে। তবে কোন ফতোয়াতেই কাজ হবে না, সব আগের মত ঠান্ডা হয়ে যাবে। তারপর সবাই ঘরে ঘুমটি মেরে বসে থাকবে আরেকটি ঘটনা ঘটার আশায়। যেই না ঘটবে সেই শুরু হবে বামদের বৃথা আস্ফালন, লেখক-কবিদের বৃথা সাহিত্যশ্রম আর সাধারণের মানসিক নিন্দা জ্ঞাপন। এভাবে যদি বৃত্তাকারে সব কিছু ঘটতে থাকে, তাহলে নারীদের কোন লাভ নেই। তারা অতীতে যেভাবে নির্যাতিত হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। সেই আদিযুগ থেকেই নারীদের পিঠে শালীনতার ছিল ছাপ্পর মেরে, নারীদের দুর্বল বলে তাদের এমন অবস্থা করা হয়েছে যে তাদের প্রতিবাদ করার মতও যোগ্যতা নেই এখন। শারীরিক দুর্বলতার চেয়ে মানসিক দুর্বলতা তাদের প্রবল।
হলফ করে বলতে পারি, টিএসসির ঘটনা নিয়ে যারা প্রতিবাদ জানিয়েছে তাদের অধিকাংশই পুরুষ। যে দেশে নারী পুরুষের সংখ্যা প্রায় সমান সেখানেতো এমনটি হবার কথা নয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে, নারীদের বিষয়ে নারীরাই বেশি অসচেতন। তা না হলে এ ঘটনার পর ঢাকার রাস্তায় লাখ লাখ নারী নেমে আসত। প্রসঙ্গত বলে রাখি, ঢাকার নারীদের আপনি অশিক্ষিত অন্তত বলতে পারবেন না, তাদের বেশির ভাগই শিক্ষিত।
এতো গেল নারীর দুর্বলতার কথা। এবার আসি এদেশের তরুণ সমাজের কথায়। এদেশের তরুণ সমাজের সিংহভাগ পাশ্চাত্য ও ভারতীয় নগ্ন সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত। এছাড়া বর্তমান তরুণ সমাজ ইন্টারনেট প্রযুক্তির উষ্যালগ্নে পড়ায় তারা এটা দ্বারা মানসিকভাবে নেগেটিভলি প্রভাবিত হচ্ছে। এই প্রভাবের মাত্রা দিনে দিনে একদিকে বাড়ছে আর অন্যদিকে টিএসসিতে যেরকম ঘটনা ঘটেছে এরকম ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বাড়ছে। এখন মনে হয় স্পেডকে স্পেড বলাই ভালো।
এযুগের অনেক তরুণরাই এখন নারীকে 'হট কেক' ছাড়া কিছুই মনে করে না। অবাক হবার মত কথা হলেও এটা সত্য যে, তরুণদের অনেকে ট্রেড ফেয়ার, পূজা, পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে শুধু নারী দর্শন এবং পরিমাপ করার জন্যই যায়। তরুণদের এই হীন মানুসিকতা নিয়ে আজ অবধি কেউ কিছু বলে নি, সুতরাং এটি বাড়তেই থাকছে।
দেশের বড় বড় লেখক-কলামিস্টরা তাদেরকে উদ্দেশ্য করে জীবনে কখনো কলাম লেখেন না, নারীদের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিৎ সেটাও তারা বলেন না। এই বিরাট তরুণ সমাজকে সঠিক দিক-নির্দেশনাও দিতে ভুলে যান তারা। সুতরাং এই বিরাট তরুণ সমাজের মাঝে কিছু দুষ্ট তরুণের উৎপত্তি হলে অবাক হবে কেন? অথচ আজ তারা তরুণদের কলমের দাঁত দিয়ে পিষ্ট করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। মনে রাখতে হবে নিন্দা করে, গালি দিয়ে কাউকে কখনো সঠিক পথে আনা যায় না। কাউকে সঠিক পথে আনতে হলে তাকে বুঝাতে হয়।
শেষকথা, অবশ্যই সকল পুরুষদের (তরুণ এবং বয়স্ক) নারীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ করা উচিৎ। নারীকে শুধু যৌনউত্তেজক সামগ্রী না ভেবে নারীকে স্বাভাবিকভাবে নেবার অভ্যাস করতে হবে, তা না হলে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে 'রেপিস্ট ইন্ডিয়ান'-এর মত গালি বাঙালীদেরও শুনতে হতে পারে।