জাহাজের ইনমারসাট সি’র মেসেজে ২৬ তারিখ জিএমটি ১৮০০ টায় প্রথম জানতে পারি বঙ্গপোসাগরের বাংলাদেশীয় উপকুলে লো প্রেসার ফরমেশন হচ্ছে। সেই মেসেজে উল্লেখ থাকে এটি ডিপ ডিপেরশনে রুপ নিতে পারে। এবং তারপর স্ট্রোম। সাগরের কোথাও লো ফরমেশনের পরে তার গতি প্রকৃতি লোয়ার অরবিটিং উপগ্রহের দ্বারা নির্নয় করে বলে দেয়া যায় সেটি কোন দিকে যাবে, কি গতি বেগে যাবে। এর থেকে খুব সহজেই ডিপ্রেশনটির একটা রাস্তা তৈরি করে ফেলা সম্ভব হয়। মাঝ সমূদ্রে এই ধরনের পূর্বাভাস দেখে আমরা লো প্রেসারটির রাস্তা নির্নয় করে সেই পথ বাচিয়ে চলি।
জাহাজের ইনমারসাট সি রিসিভারে পাওয়া ইন্ডিয়া মেট্রোলোজিক্যাল অফিসের মেসেজ।
কিন্তু আমরা ২৬ তারিখ থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশের অবহাওয়া অধিদপ্তর তথা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়ে কোন পদক্ষেপ তো দূরে থাকা কোন পূর্বাভাসই দেখছিলাম না। এমনিতে সাধারণ একটা তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত দিয়ে রেখেছিল তারা যেটি সাধারনত জুন জুলাই মাসে সবসময় দিয়ে থাকে। একেবারে শেষ মূর্হুতে এসে তারা ঘূর্নিঝড়ের আগাম বার্তা দেয়।
ঘূর্নীঝড়ের কথা উঠলেই একানব্বইয়ের কথা মনে হয় না এমন কোন লোক খুজে পাওয়া যাবে না চট্টগ্রামে। ১৯৯১ সালের ২৯ শে এপ্রিল বাংলাদেশের দক্ষিন পূর্ব উপকুল চট্টগ্রামে ঘণ্টায় প্রায় ২৫০ কিমি বেগে আঘাত হানে। এক লক্ষ আটত্রিশ হাজার মানুষ নিহত হয় তাতে। এবং ১ কোটি মানুষ তাদের সর্বস্ব হারায়। নিহতের সংখ্যা বিচার করলে এটি স্মরণকালে ভয়াবহতম ঘূর্নীঝড় ছিল। তখন প্রযুক্তি আজকের মতো এমন উন্নত ছিল না। সতর্কতা বার্তা পৌছানো যায়নি মানুষের মধ্যে। তাই হয়তো ক্ষতির পরিমান বেশী ছিল। কিন্তু আজ ২০১৫ সালের ৩০শে জুলাই এ ঐ ঘটনার ২৪ বছর পরে আমরা কতটা প্রস্তুতি নিতে পেরেছি? আমাদের দেশের আবহাওয়া বিদরা আমাদের জন্য গতানুগতিক পূর্বাভাস ছাড়া তেমন কোন আগাম বার্তা দিতে পারেনি। যেখানে বে অফ বেঙলে সৃষ্টি হওয়া এই ঘূর্নিঝড়ের সতর্কতা আরো চারদিন আগে থেকে আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থা গুলো জানাচ্ছে সেখানে আমাদের দেশে গত কাল রাত ৯ টায় তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত কে হঠাৎ করে বাড়িয়ে ৭ নম্বর করে ফেলে। এছাড়া ইউএস নেভির জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার থেকে যেখানে ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয় সেখানে আমাদের অবহাওয়া অধিদপর জানাচ্ছে ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতার উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হরে পারে।
আমরা যেন আর একটি একানব্বইয়ের দিকে না যায় তার কোন কোন প্রস্তুতিই ছিল না আমাদের এবার। এছাড়া আমরা স্বরণ করতে পারি সিডরের কথা। আসলে প্রাকৃতিক দূর্যোগে আমাদের বাঙালীর প্রানহানী হবে এটা নিয়ে এত বেশী ভাবার কোন সময় নেয় আমাদের। তাই এই আস্ফালন বেশী না করায় ভাল।
গভীর সমূদ্রে হয়তো আমরা আরো অনেক বেশী খারাপ আপহাওয়ার মুখোমুখি হই। কিন্ত বন্দরে এই ধরনের আবহাওয়া এই প্রথম ফেস করছি।
চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি বার্থ এ আমার জাহাজ থেকে তোলা কিছু ছবিঃ
বন্দরের ডক অফিসে সতর্কতা সংকেত দেখানো হচ্ছে।
স্থগিত করা হয়েছে সমস্ত কার্গো অপারেশন।
চারিদিক অন্ধকার করে বৃষ্টি হচ্ছে।
ছবিটি তোলার সময় বাতাসের বেগ ছিল ঘণ্টার পঞ্চাশ কিমি।
এছাড়া চট্টগ্রাম বর্হিনোঙরে সমূদ্রের অবস্থা খুবই উত্তাল
ফিসিং বোর্ট সহ সকল নৌযান কে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিশাল ঢেউগুলো আসছে পড়ছে জাহাজের গায়ে।
ঘূর্নীঝড়টি আজ বিকাল ছয়টায় চট্টগ্রাম থেকে ৫০ কিমি দক্ষিণে অবস্থান করছিল। বর্তমানে এটি উত্তর দিকে যাচ্ছে। আজ মধ্যরাতে আঘাত হানতে পারে স্বন্দীপে। ল্যান্ডে আঘাতের পরে ঘূর্নিঝড়টি যেতে থাকবে উত্তর-পশ্চিমে। যদিও বাংলাদেশ মেট্রলোজিকাল ডিপার্টমেন্ট থেকে জানানো হয় কোমেন দূর্বল হয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত। খুব বেশী ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। যদিও আমাদের আবহাওয়া অধিদপ্তরের রিপোর্ট এর ওপর আস্থা রাখার মতো বিশ্বাস তারা অর্জন করেনি তবু আমরা আশা করি তাদের কথায় যেন সত্যি হয়। একানব্বই এর ঘূর্নীঝড়ের ছবি খুজতে গেলে খালি লাশের ছবি পাওয়া যায়। গাছের মগ ডালে ঝুলছে মানুষের লাশ। মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে হাজার হাজার লাশ, সাগরের পানিতে ভাসছে হাজার হাজার লাশ। আমি চাইনা এমন সব ছবি দিয়ে আর একটি লাইভ ব্লগিং করতে। ঘূর্নিঝড়টি সাধারণ মৌসুমী বৃষ্টিপাতে রুপ নিয়ে কেটে যাক এই কামনা রইলো। নিরাপদ থাকুক আমার দেশ, আমার দেশের সব মানুষ।।