সাধারণ শব্দের ইংরেজি করলে দাড়ায় অর্ডিনারী। কিন্তু এই সাধারণ শব্দটি যখন মানুষ শব্দটির প্রিফিক্স হিসেবে বসে তখন তার বাংলা করলে শব্দার্থ শুধু সাধারণ থাকে না। হয়ে যায় সকলের দ্বারা অত্যাচারিত হওয়া একটি গোষ্টী। যারা প্রতি পদে পদে শোষন ও নির্যাতনের স্বীকার হয়। সাধারণ মানুষের জীবনের মূল্য একটা মুরগীর ডিমের মতো। প্রগতিশীলরা ভেঙে ভেঙে প্রতিনিয়ত পোচ করে খাচ্ছে।
রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ গাড়ী চাপা পড়ে মরছে কোন সমস্যা নেই। সাধারণ মানুষকে বাস চাপা দিয়ে মারা, লঞ্চে চড়িয়ে ডুবিয়ে মারা, পুড়িয়ে মারার জন্য কেউ দায়ী নয়। তাদের জন্য কথা বলার কেউ নেই। কিন্তু একজন ড্রাইভারের নিঃশর্ত মুক্তির জন্য আজ পুরো দেশ অচল হয়ে যাবার যোগাড়। যে সমস্ত অনভিজ্ঞ লোকদের ধরে ধরে লাইসেন্স দিয়ে গাড়ী ভর্তি মানুষের জীবনের কর্নধার বানিয়ে রাস্তায় নামিয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের জীবনের মূল্য আসলেই হয়তো অনেক বেশী। তা না হলে একটি ডাকাতির ঘটনায় গাড়ীভর্তি যাত্রীদের সাক্ষ্যর ভিত্তিতে একজন ড্রাইভার, একজন সুপারভাইজার ও একজন হেলপারকে পুলিশি আটকের ঘটনায় এভাবে পুরো দক্ষিনাঞ্চলের ১৮ টি রুটের গাড়ী চলাচল বন্ধ হয়ে যেত না।
আসলেই ঘটনাটি অবাক হবার মতো। পুলিশ সন্দেহের কারনে যে কাউকে আটক করছে এবং করতে পারে। কেউ আইনের উর্ধে নয়। আটকের পর দোষী এবং নির্দোষী প্রমানের একটা নির্দিষ্ট পন্থা আছে। কিন্তু কোনরুপ কোন আইনি প্রক্রিয়ার তোয়াক্কা না করে আটককৃতদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবীতে দেশ অচল করার মাধ্যমে হাজার হাজার সাধারণ মানুষকে চরম দূর্ভোগে ফেলে দিয়ে পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ প্রশাসনের সাথে একটি বন্দীমুক্তি খেলা খেলছে। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে তারা তাদের স্বার্থ হাসিল করছে। প্রশাসন এবং পরিবহন মালিক শ্রমিকের মধ্যকার মুক্তিপণে দরকষাকষিতে পণ্য হয়ে বলি হচ্ছে আমজনতা।
মুল ঘটনাটি শুরু হয় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুরের মধুখাল উপজেলায় বেনাপোলগামী সোহাগ পরিবহনের একটি বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটার পরে। ২৯ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে বেনাপোলগামী সোহাগ স্ক্যানিয়া পরিবহনের (ঢাকা-মেট্রো-ব ১৪-৬২২৭) একটি বাস রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসে। ফরিদপুরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড় পার হলে যাত্রীবেশি সাত ডাকাত অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে তাদের সর্বস্ব লুটে নেয়। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে তারা ঢাকা-খুলনা মহসড়কের মধুখালী উপজেলার মাঝকান্দি-পরীক্ষিতপুর এলাকায় আলতু খান জুট মিলের কাছে নেমে যায়। ডাকাতের কবলে পড়া সাধারণ যাত্রীদের অধিকাংশই কলকাতাগামী ছিল।
ডাকাতরা তাদের কাছ থেকে ৭ হাজার ২শ’ মার্কিন ডলার, ২২ হাজার ভারতীয় রুপি ও ১৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ নগদ প্রায় ৪ লাখ টাকা এবং ২৫টি মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ, ডাকাতির ঘটনায় বাসের চালক ও তার সহকারী জড়িত থাকতে পারে। কারণ ডাকাতির সময় তারা প্রতিরোধের কোনো চেষ্টাই করেননি। এবং পথিমধ্যে ড্রাইভারকে কয়েকবার ফোনে কথা বলতে শোনে তারা।
যাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোহাগ পরিবহনের চালক আয়নাল হোসেন (৪০) ও তার সহকারী শাকিলকে (২৬) আটক করা হয়। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা করা হয়।
উপরোক্ত এই ঘটনার একটি আইনি সমাধান হতে পারে। আমরা জানি ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সকল গাড়ীর মধ্যে থেকে সকল যাত্রীর ছবি সংগ্রহ করে বাস কতৃপক্ষ। এবং সকলের মোবাইল নাম্বরও থাকে টিকেটের সাথে। মোট কথা ঘটনার তদন্ত পুলিশ কিভাবে করবে সেটা তাদের বিষয় এবং তার জন্য প্রয়োজনে যদি গাড়ীর ড্রাইভার সুপারভাইজারকে আটকেরও প্রয়োজন পড়ে সেটা তদন্তের স্বার্থেই। তার জন্য এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে প্রশাসনের দিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবী করে ১৮ টি রুটে গাড়ী চলাচল বন্ধ রেখেছে পরিবহন মালিক। তাদের এই দাবী আদায়ের মাধ্যেমে রাস্তায় আপনাকে গাড়ী চাপা দিয়ে মারার লাইসেন্সের পাশাপাশি গাড়ীর ভেতরে আপনাকে কুপিয়ে আপনার সর্বস্ব কেড়ে নেবার লাইসেন্স পাবে।
সামান্য একটা ব্যাক্তিগত স্বার্থের জন্য তারা তাদের ঐক্য দেখিয়ে দিচ্ছে। গ্রেফতারকৃত একটা আসামীকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার কিছু আইনি জটিলতা আছে নিশ্চয়। কিন্তু এই ব্যাপারটি নিয়ে প্রাশসনকে পরিবহন শ্রমিক-মালিকদের সাথে নেগোশিয়েশনের জন্য মিটিংয়ে বসতে হবে। কি ক্ষমতা (স্পর্ধা) তাদের !!! জাতীয় কোন স্বার্থের জন্য তারা এটা করছে না। দেশকে অস্থিতিশীল অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কিংবা কোন সম্মিলিত নাগরিক অধিকার আদায়ের জন্য নয় সামান্য একটা ড্রাইভারও সুপারভাইজারের মুক্তির জন্য আমরা সাধারণ মানুষ চরম দূর্ভোগে পড়েছি। জয়তু শ্রমিক ইউনিয়ন, জয়তু আমাদের নাগরিক অধিকার।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৫ রাত ১২:০০